নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - সূর্যের রশ্মি থেকে কিভাবে আমরা মহাজাগতিক শক্তি গ্রহণ করতে পারি? মানুষ্য জীবনে সূর্যের গুরুত্ব কি? সূর্য রশ্মির কি কি গুন রয়েছে? এরই সাথে আমরা জানবো সাধুবাদ বা sant therapy- কী?
বন্ধুরা বেদে এবং শাস্ত্রে সূর্যকে জীবনদাতা অর্থাৎ জীবনের দানকারী বলা হয়েছে। চারটি বেদেই সূর্যকে শক্তির একটি বড় মাধ্যম হিসাবে গন্য করা হয়েছে। যে হাজার হাজার বছর ধরে এই সংসারকে আলোকিত করে রেখেছে। আয়ুর্বেদিক জরিবুটি বা গাছগাছরা যার মাধ্যমে বড় বড় রোগের চিকিৎসা হয় - সেই সমস্ত গাছ-গাছড়া গুলিও সূর্যের কিরণের সংলগ্নে আসার পরই মোটাসোটা হয় ও বিস্তার লাভ করে। যা পরবর্তীতে একটি ঔষধির রূপ ধারণ করে। যেখানে যেখানে সূর্যকিরণ পৌছায় সেখানে-সেখানে সকল প্রকার নোংরা দূষিত পদার্থ বা জীবাণু নষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ এই ব্রহ্মাণ্ডে সূর্য না থাকলে জীবনের কল্পনা করা বৃথা। শুধু তাই নয় সূর্য কিরণের মাধ্যমে অনেক রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। আয়ুর্বেদে সূর্য এমন একটি প্রাকৃতিক শক্তি যার মাধ্যমে অনেক বড় বড় রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব। আয়ুর্বেদে এমন ২২টি রোগের কথা বলা হয়েছে, যার চিকিৎসা সূর্যকিরণের মাধ্যমেই করা হয়। সকাল বেলায় যখন সূর্য ওঠে তখন তার প্রথম কিরণ পৃথিবীতে থাকা মানুষদের জন্য অমৃতের মত।
ঋকবেদে লেখা রয়েছে সূর্যের প্রথম কিরণের মাধ্যমে - হার্টের রোগ ও অ্যানিমিয়া রোগকে ঠিক করা যায়। এছাড়াও হাঁটুর ব্যথা, শরীরে হওয়া ব্যথা, জ্বর, সর্দি-কাশি ও বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয় সকালের প্রথম সূর্যকিরণ। সূর্য কিরণের মধ্যে- "Vitamin D" থাকে, যা শরীরের হার কে শক্ত করে। শুধু তাই নয়, সূর্যকিরণের মধ্যে - "Vitamin A" ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। অথর্ববেদে লেখা রয়েছে, সূর্য কিরণ এর ফলে মানুষের আয়ু বৃদ্ধি পায়। আবার পুরাণের বর্ণনা থেকে জানা যায় সূর্যদেবের রথের সঙ্গে সাতটি ঘোড়া থাকে তাদের ওপর সূর্যের সাতটি রংয়ের কিরণের লোগো রয়েছে। বিজ্ঞানও এটাই মানে যে, সূর্য রশ্মিতে সাতটি রংয়ের মেল রয়েছে। বন্ধুরা এই কথাটি আপনি হয়তো নিশ্চয়ই জানেন এই পৃথিবীতে উপস্থিত সকল জিনিসের কোনো না কোনো রং অবশ্যই হয়। আর এই রং আপনি তখনই দেখতে পারবেন যখন সূর্যকিরণ সেই বস্তুটির উপর পড়বে। কারণ সূর্যকিরণ বা কোন বৈদ্যুতিক রশ্মি ছাড়া সবকিছু অন্ধকার বা কালো। দিনের বেলা সূর্য রশ্মি থাকাকালীন যে সমস্ত জিনিস রঙিন মনে হয় রাত্তিরের অন্ধকারে সেই সমস্ত জিনিস কালো হয়ে যায়। বলার মানে এমন যে, যদি সূর্য রশ্মি না থাকে তাহলে এই দুনিয়া বেরঙিন।
সূর্যের এই সাতটি রং এর মধ্যে তেজ থাকে। যা মানুষকে লড়ার ক্ষমতা বা পজিটিভ এনার্জি প্রদান করে। সূর্য রশ্মি যখনই কারো ওপর পড়ে সে সেই রশ্মিটিকে নিজের মধ্যে আবদ্ধ করে নেয়। যখন সূর্য ওঠে তখন তার থেকে লাল রঙের কিরণ বের হয়। এই কিরণের সামনে যদি খোলা শরীরের সাথে বসা যায় তাহলে এটি হৃদরোগ ও জন্ডিস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যখন ছোট বাচ্চার জন্ডিস হয় তখন ডাক্তারও তাকে সকালবেলায় সূর্য কিরণে বসানোর পরামর্শ দেন। সকালের প্রথম সূর্যকিরণ মানুষের শরীরের জন্য একটি বরদানের স্বরূপ। এছাড়াও রোদে বসার ফলে বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে মুক্তি মেলে। ভারতে প্রাচীনকাল থেকে ছোট বাচ্চাদের সূর্য কিরণে বসানো হয়। ছোট বাচ্চাদের যাতে জন্ডিস না হয় সেই জন্য তাদের মালিশ করার পর রোদে বসানো হতো। শুধু না তাই নয় এর ফলে তাদের শরীরের হারও মজবুত থাকতো। সূর্যকিরণ মানুষের শরীরে কোষের মধ্যে পরমাত্রই কেমিকাল রিয়াকশন শুরু হয়ে যায়, যার ফলে রোগ একা একাই ঠিক হতে থাকে। এছাড়া শরীরের ভেতরের রোগ ঠিক করার জন্য সূর্য স্নানও করা হয়ে থাকে। যাকে সাধারণ ভাষায় সাধুবাদ বলে। আবার অনেক জায়গায় এই সাধুবাদের বেশ কিছু পদ্ধতিও অবলম্বন করতে বলা হয়।
বন্ধুরা এখন হয়ত আপনি ভাবছেন, এই সাধুবাদ আবার কি? আসলে এই থেরাপিতে সূর্যের এক একটি রশ্মির গুন গুলিকে একত্রিত করা হয়। যেমনটা আপনি আগেই জানলেন যে সূর্য থেকে সাতটি কিরণ বের হয়। আর প্রত্যেকটি কিরণের আলাদা আলাদা গুণ রয়েছে। কারণ সূর্যই হলো একমাত্র এমন নক্ষত্র যার তেজ রশ্মি সকল মানুষদের তার দিকে আকর্ষিত করে। সকালের লাল কিরণ মানুষের এক্সাইটমেন্ট বাড়ায় । নীল রঙের কিরণ শরীরে এনার্জি ভরপুর করে। সাধুবাদ এর ঔষধিকে তৈরি করা খুবই সহজ। সূর্যের উপকারী গুণ পাওয়ার জন্য সাতটি বোতলে সাত রকমের সূর্য কিরণ এর আলাদা আলাদা জল ভরা হয়। তারপরে সেই জল ভরা বোতল গুলিকে রোদে দেওয়া হয়। রোগ অনুযায়ী এই জলগুলিকে এক একটি রোগীকে দেওয়া হয়। এর ফলে কোনো প্রকার সাইডএফেক্টও দেখা যায় না।
তো চলুন বন্ধুরা এখন আপনাদের জানাবো কোন রঙের কিরণের জলে কি হয়?
হালকা সবুজ রঙের কিরণের জলে চোখের সমস্যা সারে। যে সমস্ত ব্যক্তিরা চশমা ব্যবহার করে তাদের চোখের সমস্যা দূর হয়। যারা চোখে কম দেখেন তাদের জন্য এই থেরাপি খুবই কার্যকর। এই সবুজ রঙের জল দিয়ে চোখ ধোয়া আপনার ব্রেনের পক্ষেও ভালো। বেগুনি রংয়ের জল সব রকমের জ্বরের হাত থেকে বাঁচায়। নীল রঙের জল দিয়ে কুলকুচি করার ফলে মুখের ঘা থেকে মুক্তি মেলে। গভীর নীল রঙের জল দিয়ে স্নান করার ফলে থাইরয়েডের সমস্যা দূর হয়। শুধু তাই নয় এটা টিউমার কেউ দূর করে। কমলা রঙের জল আবার ব্লাড প্রেসার কে নরমাল রাখে। এরই সাথে কিডনির সঙ্গে যুক্ত সমস্যা দূর করে। লিভার সংক্রান্ত সমস্যাতেও এই জল খুবই সাহায্য করে। লাল রংয়ের জল শরীরকে active রাখে এবং শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে এনার্জি প্রদান করে। মাথা ব্যথা এবং প্যারালাইসিসের মতো গভীর রোগ কেও লাল রং এর জল সারিয়ে দেয়। এই লাল রঙের জল আমাদের জন্য বরদানের স্বরূপ। সাদা রং শরীরের হাড়কে মজবুত করে এবং শরীরের সমস্ত জীবাণুকে ধ্বংস করে। এই সাধুবাদ বা সান্ত থেরাপিতে নাতো শুধু শরীরকে একাধিক রোগ মুক্ত করে বরং এটা শরীরের একাধিক জীবাণু ধ্বংস করে। এই সাধুবাদ বা সান্ত থেরাপি বর্তমানে বিদেশেও ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়। এই থেরাপির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষ সুবিধা লাভ করছে। কিন্তু, বন্ধুরা সব সময় মনে রাখবেন কখনো করা রোদে বসা উচিত নয়। শুধু সকালের রোদেই বসা উচিত।এর ফলে শরীরের থেকে ঘাম বের হয় যার ফলে শরীরের টক্সিন বাইরে বেরিয়ে যায়।
বন্ধুরা সূর্য শুধু মাত্র তার রশির মাধ্যমে এই দুনিয়াকে শুধুমাত্র আলোকিতই করছে না বরং সূর্য তার রশ্মির মাধ্যমে একাধিক রোগের হাত থেকেও মানুষকে বাঁচাচ্ছে। সূর্যের এই উপকারী গুণগুলি আপনি আপনার জীবনে আপন করে নেওয়ার পর সত্ত্বিক জীবন পেতে পারেন। যেখানে আপনি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বেঁচে থাকতে পারেন। আর আপনার কোনো রোগ হয়ে থাকলে আপনি নিজেকে সারিয়েও নিতে পারেন এই পদ্ধতি অবলম্বন করে।বন্ধুরা আয়ুর্বেদ ও যৌগিক সংস্কৃতিকে পুরো দুনিয়া ধীরে ধীরে গ্রহণ করে নিচ্ছে। কিন্তু এটা আমাদের ভারতীয়দের সংস্কৃতি হওয়া সত্ত্বেও আমরা ভারতীয়রা একে দিন দিন ভুলে যাচ্ছি। আমরা ভারতীয়রা পাশ্চাত্য দৃষ্টিভঙ্গি বা ভাবধারাকে গ্রহণ করতে ব্যস্ত। এই কারণেই বন্ধুরা আমাদের প্রত্যেকের উচিত পাশ্চাত্য ভাবধারা বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ আমাদের প্রাচীন আয়ুর্বেদ পদ্ধতি গ্রহণ করা। যার ফলে আমরা সকলেই সহজ সরল ও সাধারণ সাত্ত্বিক জীবন লাভ করতে সক্ষম হব।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং সূর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝে উঠতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করুন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং - কি? এই ফাস্টিং - এর সময় সাত্ত্বিক খাবার কেন গ্রহণ করা উচিত? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা