Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৩

সাত্ত্বিক জীবন কেন গ্ৰহন করা উচিত || নিজের খাবারের মাধ্যমে বুঝে নিন আপনি কোন প্রকৃতির? || কোন খাবার আমাদের জীবনে কি প্রভাব ফেলে?




নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


শ্রীমদ্ভগবদগীতা - এমন কোন ব্যক্তি নেই যে এই গ্রন্থের নাম শোনেননি। বেদ এবং উপনিষদের সার গ্রন্থ হল এই গীতা। 18 টি অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জীবনের সমস্ত কিছুই ব্যক্ত করেছেন এই গীতায়। শ্রীমদ্ভগবদগীতা আজও আমাদের কাছে ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক যতটা ১০০০ বছর পূর্বে ছিল। গীতায় উল্লেখিত ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাণী মানুষের জীবনে সঠিক পথ দেখাতে সাহায্য করে। এমনটা বলা হয় যদি কোন ব্যক্তি একবার গীতা গ্রন্থটি পাঠ করে থাকেন তাহলে জীবনে চলার পথে তিনি সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হন। কিন্তু বন্ধুরা, আমরা এখানে গীতার আলোচনা কেনই বা করছি !? আসলে আজকে যে বিষয় নিয়ে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব তার সূত্রপাত এই গীতাগ্রন্থ থেকে শুরু হয়েছিল। যখন মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হয় তখন যুদ্ধের প্রারম্ভেই অর্জুন যুদ্ধ করতে অনীহা প্রকাশ করে। কারণ যুদ্ধ করতে গিয়ে সে দেখে - যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হবে তারা তার একান্ত প্রিয় আত্মীয়-স্বজন। সেই সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথাগুলি তাকে সেই শক্তি প্রদান করে যার দ্বারা সে সত্যের সম্মুখীন হতে পারে এবং যুদ্ধে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারে।


শ্রীমদ্ভগবদগীতার বাণী গুলি ব্যক্ত করার সময় 14 চোদ্দ নম্বর অধ্যায়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানুষের তিনটি গুণের কথা বলে থাকেন। আর এই তিনটি গুণ হল - সত্য গুণ, রজগুণ ও তম গুণ। এই যে গুণ তিনটি এগুলি সমস্ত মানুষের মধ্যেই বিরাজ করে। সত্য গুনকে বলা হয় সাত্ত্বিক গুণ। যার অর্থ শুদ্ধ তত্ত্ব অর্থাৎ যার মধ্যে শুদ্ধতা রয়েছে। সাত্ত্বিক ভোজন করা অর্থাৎ সাত্ত্বিক কোন কিছু খাবার খাওয়া আমাদের মধ্যে শুদ্ধতা এবং সন্তুলান নিয়ে আসে। যা আমাদের জীবনে নিয়ে আসে আনন্দ ও মানসিক সুখ। আর রাজষিক খাবার আমাদের মধ্যে নিয়ে আসে উত্তেজনা ও উদ্দীপনা এবং তামশিক খাবার আমাদের মধ্যে আলস্য ও দুর্বলতাকে বৃদ্ধি করে। বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব - কোন খাবার আমাদের জীবনে কি প্রভাব ফেলে?


বন্ধুরা সাত্ত্বিক এমন একটি শব্দ যা আমাদের মন, মস্তিষ্ক এবং বুদ্ধির সঙ্গে যুক্ত। বন্ধুরা আজ অধিকাংশ মানুষ সাত্ত্বিক জীবন যাপন করতে আগ্রহী। কিন্তু, বন্ধুরা এটা কিন্তু ততটা সহজ নয়। আর বন্ধুরা অনেকেই কিন্তু এই বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেনই না! 


সাত্ত্বিক জীবন যদি আপনি গ্রহণ করতে চান তাহলে আপনার মন, শরীর এবং বুদ্ধি এই তিনটেকেই সাত্ত্বিক রাখা প্রয়োজন এবং এর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু, প্রশ্ন হল এই সাত্ত্বিক শব্দটি আসলে এলো কোথা থেকে এবং এই সাত্ত্বিকতার মধ্যে এমন কি আছে যার জন্য সকলেই বলছি এটিকে আজকের দিনে আমাদের জীবনে গ্রহণ করা দরকার!


আমাদের সনাতন ধর্ম বলে, আত্মা সর্বদা অজেয় এবং অমর। যার না তো কখনো জন্ম হয়, আর না তো কখনো মৃত্যু হয়। আত্মাকে কখনো ধ্বংস করা যায় না। কখনো তাকে নষ্ট করা যায় না। এটি কেবলমাত্র একটি শরীর থেকে অন্য শরীরে প্রবেশ করে। আর এই তিন প্রকার গুন অর্থাৎ সত্য, রজ, তম আত্মাকে কোনো শরীরের সাথে বেঁধে রাখে। এই তিনটি গুণই সমস্ত মানুষের মধ্যে বিরাজ করে। তবে এটি সম্পূর্ণরূপে ব্যক্তির উপর নির্ভর করে সে এই তিনটি গুণের মধ্যে কোন গুণটিকে নিজের উপর প্রভাব বিস্তার করতে দেবে। বন্ধুরা আপনি কি তামসিক না রাজসিক নাকি সাত্ত্বিক গুণের প্রকৃতির এটা আপনি জানবেন কিভাবে? 


বন্ধুরা সবার প্রথমে আপনাদের জানাই তামসিক গুণের প্রকৃতি সম্পর্কে। তামসিক গুন বা তম গুণ মানুষকে আলস্য প্রকৃতির তৈরি করে। যদি অত্যাধিক নিদ্রা আসে, মেজাজ খিটখিটে প্রকৃতির হয়ে যায় এবং কোন কাজের প্রতি যদি মন না আসে তাহলে এই সমস্ত গুণগুলি তামসিক প্রকৃতির বলে মনে করা হয়। তবে এই ধরনের মানুষেরা কিন্তু সময় মতো খাবারও খেয়ে নেয় এবং আমিষ ও বাসী খাবার খেতে এরা বেশি পছন্দ করে। শুধু তাই নয় এই তামসিক গুণের প্রকৃতির লোকেরা ক্রমশ ক্রোধ পরায়ণ হয়ে থাকে। নিজের রাগকে তারা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। যাকে যা খুশি তাই বলে দেওয়ার খারাপ অভ্যাসও তাদের থাকে।


এবার বন্ধুরা, রজ গুন সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো। এই গুণ যদি আপনার উপর প্রভাব বিস্তার করে তাহলে কাজের প্রতি আপনি যথেষ্ট সিরিয়াস হলেও কিছুক্ষণ কাজ করার পর অধৈর্য হয়ে পড়েন এবং কাজের মধ্যে যদি ভুল ত্রুটি হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার মধ্যে রাগও তৈরি হয়। এই রাজসিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিজেদের নিয়ে যথেষ্ট গর্ব প্রকাশ করে। তারই সঙ্গে এরা যথেষ্ট উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং আক্রমণাত্মক প্রকৃতির হয়ে থাকে। এই ধরনের মানুষ না মূলত যে সমস্ত খাবার পছন্দ করে তা হল - অতিরিক্ত টক, ঝাল, নোনতা এবং তেলে ভাজা জাতীয় খাবার। এই ধরনের মানুষেরা ফাস্টফুড খাবারও অত্যন্ত পছন্দ করে এবং অনেকেই মিষ্টি জাতীয় খাবারও পছন্দ করে থাকে। 


এবার বলি সাত্বিক গুণ সম্পর্কে। কোনো ব্যক্তির মধ্যে সাত্ত্বিক গুণের বৈশিষ্ট্য হিসাবে প্রথমেই বলা যায় - শুদ্ধতাকে‌।এই শুদ্ধতা কেবলমাত্র শরীরের ক্ষেত্রেই নয়, তার আত্মা মন সকল ক্ষেত্রেই এই শুদ্ধতা নিয়ে আসে। এই ধরনের ব্যক্তিরা খুবই ক্রিয়েটিভ অর্থাৎ সৃজনশীল প্রকৃতির হয়ে থাকে। তারই সঙ্গে এরা যথেষ্ট সহানুভূতিশীলও হয়ে থাকে। নিজের চিন্তা ভাবনার মধ্যে যেমন এতে স্বচ্ছতা থাকে তেমনি খাবারের মধ্যেও এদের যথেষ্ট স্বচ্ছতা থাকে। এরা মূলত যে সমস্ত খাবার পছন্দ করে থাকে তা হল - তাজা ফল, টাটকা শাকসবজি, দানাশস্য প্রভৃতি এই সমস্ত খাবার। আর এই সমস্ত ব্যক্তিরা সারাদিনই যথেষ্ট এনার্জেটিভ প্রকৃতির হয়ে থাকে।বন্ধুরা যাদের মধ্যে সাত্ত্বিক গুণের প্রভাব বেশি রয়েছে তারা নিজের জীবনকে সম্পূর্ণ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়।


বন্ধুরা মানুষের জীবনের এই তিনটি গুন সম্পর্কে জেনে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কেন আমাদের সাত্ত্বিক জীবন গ্রহণ করা প্রয়োজন। অনেক সময় আমরা সাত্ত্বিক জীবন গ্রহণ করতে চাইলেও রজগুণ এবং তামসিক গুন তার উপর প্রভাব বিস্তার করে। যে কারণেই আমরা সাত্ত্বিক জীবন গ্রহণ করতে পারিনা। কিভাবে এই রজ ও তম গুণের প্রভাব কমিয়ে আমরা সাত্ত্বিক জীবন গ্রহণ করতে পারি পরবর্তী লেখাতে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব। আপনার মধ্যে কোন গুণের প্রভাব সব থেকে বেশি তা নিশ্চয়ই যাচাই করুন। আর লেখাটি ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করুন।


আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।।


আরো পড়ুন:-সূর্যের রশ্মি থেকে কিভাবে আমরা মহাজাগতিক শক্তি গ্রহণ করতে পারি? সূর্যকিরণ আমাদের কোন কোন রোগ থেকে মুক্তি দেয়?  CLICK HERE



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা