Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ৯ জানুয়ারী, ২০২৩

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং - কি? || ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং - এর সময় সাত্ত্বিক খাবার কেন গ্রহণ করা উচিত?



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - বন্ধুরা আজকাল ওজন কমানোর অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি চলে এসেছে, কিন্তু যা সব থেকে বেশি পরিমাণে জনগণের মধ্যে খাতি লাভ করেছে তা হচ্ছে -"ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং"। সিনেমার পর্দার হিরো হিরোইনদের থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও বর্তমানে এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং জনপ্রিয়। কিন্তু, আপনি যদি এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর সঠিক নিয়ম না জানেন তাহলে এটা আপনার উপকারের বদলে ক্ষতি করবে। এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং- টা আসলে কি? 


বন্ধুরা মানুষের মধ্যে বর্তমানে যে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং টি জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে সেটি হিন্দু ধর্মে অনেক প্রাচীন একটি প্রথা। এটি হিন্দু ধর্মে যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মে যে ব্রত ও উপবাসের বিধান রয়েছে সেগুলিই বলতে গেলে বর্তমান কলিযুগে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নামে পরিচিত। কিন্তু, এটি সম্পূর্ণ উপবাস করার থেকে একটু আলাদা প্রক্রিয়ার। এটা কে আপনি এইভাবে বুঝে নিতে পারেন যে, অল্প উপোস করা। এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ধর্মীয় উপবাসেরই একটি নতুন মাধ্যম বা কৌশল বা প্রক্রিয়া। এই কারণেই বন্ধুরা আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন - যে মানুষেরা ব্রত পালন ও উপবাস রাখেন তাদের বড় বড় রোগব্যাধির সহজে আক্রমণ করতে পারে না। একটি কথা তো আপনি জানেনই যে, যখন আমরা ব্রত পালন করি তখন আমরি সাত্ত্বিক খাবারই গ্রহণ করি। এটা আপনার শরীর ও মন দুটিকেই এনার্জি দেয়। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এক ধরনের - এমন প্ল্যান বা রুটিন, যার মধ্যে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের পরিমাণ, খাবারের সময় ও খাবারের তালিকা থাকে। 


ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং - এ এটা খুবই জরুরী যে আপনি দিনে নির্ধারিত সময়েই খাবারটি যেন খান। আর বাকি টাইমে ফাস্টিং কিংবা উপবাস করুন। এই ফাস্টিং এর সময় ৮ ঘন্টা/ ১৬ ঘন্টার প্যাটার্ন ফলো করা হয়। যেখানে ৮ ঘন্টা খাওয়ার সময় হয়ে থাকে, আর বাকি ১৬ ঘন্টা ফাস্টিং করা হয়। এই ডায়েট প্ল্যান অনুযায়ী আপনি ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কিছুই খেতে পারবেন না। শুধুমাত্র জল পান করতে পারবেন। আর অন্য ৮ ঘন্টা খাওয়ার জন্য হয়ে থাকে। বন্ধুরা ধরে নিন, যদি আপনি রাতের খাবার রাত্রি ৮ টার সময় খেয়ে থাকেন তাহলে তার পরের দিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত আপনি কিছুই খেতে পারবেন না। কিন্তু ১২ টার পর আপনি একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাস্থ্যকর ভারী খাবার গ্রহণ করতে পারেন। যার মধ্যে - ডাল, শাকসবজি, রুটি ও ভাত ইত্যাদি থাকবে। কিন্তু ১২টার আগে আপনি কিছুই খাবেন না। যদি খুব প্রয়োজন হয় তাহলে আপনি ডাবের জল কিংবা সবজির জুস তৈরি করে খেতে পারেন। কিন্তু বন্ধুরা এই সময়ে ফলের জুস, চা- কফি ইত্যাদি কিছুই খাওয়া যাবেনা। এই ১৬ ঘণ্টা ফাস্টিং করার সময় আপনি কোন প্রকার ভারী খাবার গ্রহণ করবেন না। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এ ৮ ঘন্টা যদি খাওয়ার সময় হয়ে থাকে তো এমনটা নয় যে আপনি কিছুই খেতে পারবেন না। বরং এই সময়তে আপনি আপনার ডায়েটের সঙ্গে প্রোটিন, ভিটামিন, ফাইবার ও অন্যান্য নিউট্রিশন এর পুরোপুরি খেয়াল রাখুন। 


অনেক মানুষরা এমনটা মনে করেন যে ফাস্টিং করা খুবই কষ্টকর। কিন্তু, ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এতটাও কষ্টকর নয়। যখন আপনি একবার এটা করা শুরু করে দেন তখন ধীরে ধীরে এর অভ্যাস হয়ে যায়। আপনাকে এখানে দিনের মধ্যে তেমন উপবাস থাকতে হয় না। শুধুমাত্র সকালবেলার দিকে যদি আপনার ভারী খাবার খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে আপনার একটু অসুবিধা হতেই পারে। এক্ষেত্রে আপনি একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে পারেন - রাত্তিরে খাবার তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন, তাহলে পরদিন সকালবেলায় আপনি তাড়াতাড়ি ফাস্টিং সম্পূর্ণ করে খেতে পারবেন।


ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর সম্পর্কে অনেক রিসার্চ করা হয়েছে। ওজন কমানোর জন্য এটা খুব ভালো একটি প্রক্রিয়া। বিদেশে অনেক মানুষ এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে বড় বড় রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ফলে ডায়াবেটিসও কন্ট্রোলের মধ্যে থাকে। খাবারের সময় নির্ধারিত হওয়ার ফলে শরীর নিজেকে হিল করার সময় পায়। আপনি যদি আপনার নির্ধারিত খাবারের সময়তে সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করেন তাহলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি আপনার ওজন কমাতে পারবেন। আপনি নিজের ওজনের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারবেন, যার ফলে আপনি সবসময় ফিট ও তরতাজা থাকবেন। আপনি যদি তিন মাস পর্যন্ত সঠিকভাবে এই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়মের সঙ্গে পালন করেন তাহলে আপনার মধ্যে থাকা রোগ গুলি কে আপনি গোরা থেকে মুক্ত করতে পারবেন।


ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর সময়ে ব্যায়াম (yoga) ও শরীর চর্চা করা হয়ে থাকে। যা আপনার মধ্যে খুবই পজিটিভ ভাব নিয়ে আসবে। এই কারণে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর সময়ে সুস্বাস্থ্যকর খাবার গ্ৰহন ও শরীর চর্চা অবশ্যই করা উচিত। বিভিন্ন ফিটনেস ট্রেনার এই ফাস্টিং লম্বা সময় পর্যন্ত করতে মানা করেন। কিন্তু তিন মাস পর্যন্ত একে একটানা করাই যায়। তিন মাস পর আপনি একটু ব্রেক নিতে পারেন। কারণ বেশি লম্বা সময় পর্যন্ত এটা করলে আপনার মাংসপেশিগুলির ওজন ধীরে ধীরে কমতেও পারে। যার ফলে অন্যান্য অনেক সমস্যাও উঠে আসতে পারে। বর্তমানে আজকালকার দিনে অধিকাংশ মানুষ এই ফাস্টিং এর মাধ্যমে ওজন কমাতে সক্ষম হচ্ছে।


তো চলুন বন্ধুরা, এখন আপনাদেরকে জানাবো এই "ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং" এর সময় সাত্ত্বিক খাবার কেন গ্রহণ করা উচিত? আর এর ফলে আমাদের কি কি লাভ হতে পারে?


সাত্ত্বিক খাবারের গুরুত্ব সম্পর্কে আয়ুর্বেদে বিস্তারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। বর্তমানে বহু ডায়েটেশন ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এর সময়ে সাত্ত্বিক খাবারই গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। কেননা এই ধরনের খাবার আপনার মেটাবলিজমকে বাড়ায় ও শরীরকে প্রয়োজনীয় নিউট্রেশন দেয়। যার ফলে আপনি স্বাস্থ্যকর ও তরতাজা অনুভব করেন। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-এ সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণ করলে আপনার ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ে। সাত্ত্বিক খাবারে ফাইবার, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিজেন ও প্রোটিন ভরপুর মাত্রায় পাওয়া যায়। সাত্ত্বিক খাবারের সব থেকে বড় গুরুত্ব এটাই যে, এই খাবার আপনার শরীরে উপস্থিত রোগগুলিকে দূর করে। সাত্ত্বিক খাবার গ্রহণের ফলে হাই ব্লাড প্রেসার, হাই কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের সম্ভাবনা দূর হয়। 


ক্যালিফোর্নিয়াতে একটি রিসার্চ এর সময় এই কথা উঠে আসে যে ফাস্টিং করার ফলে ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ে। কেননা ফাস্টিং করার সময় শরীর যে ফাঁকা সময় পায় সেই সময়ে শরীর নিজের নষ্ট হয়ে যাওয়া ইমিউন সিস্টেম‌ ঠিক করার জন্য ব্যবহার করে। ফাস্টিং করার সময় যখন আপনি কিছু খান না তখন শরীর নিজের এনার্জি ঠিকঠাক রাখার জন্য স্টোর করা গ্লুকোজকে ব্যবহার করে যার ফলে বডি ফ্যাট ভাঙতে থাকে।


সবশেষে বন্ধুরা বলবো, "ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং" সবার জন্য নয়। যেই মানুষগুলির ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেসার, আমাশয় অথবা অন্যান্য কোন পেটের গোলযোগ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তাদের ফাস্টিং কোন ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই করা উচিত। তো বন্ধুরা, এটা ছিল ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং এর সঠিক পদ্ধতি। আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা এই ফাস্টিং সম্পর্কে সবকিছু বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- বডি ডিটক্স - কি?আমাদের শরীরকে কেন ডিটক্স করা প্রয়োজন? CLICK HERE



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা