দিনের এই বিশেষ সময়ে মা সরস্বতী আপনার সকল মনস্কামনা পূরণ করেন

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 

বন্ধুরা আপনারা বয়স্ক মানুষদের মুখে বলতে শুনেছেন সব সময় ভালো এবং শুভ কথা বলতে হয়। আর আমাদের হিন্দু ধর্ম এটাই শিক্ষা দেয় যে কখনো কারো খারাপ চাইতে নেই। এরই সাথে যতটা সম্ভব নেতিবাচক কথা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। বন্ধুরা কখনো কি একবার ভেবে দেখেছেন কেন এরকমটা বলা হয়ে থাকে? এর পেছনে একটি বড় রহস্য লুকিয়ে রয়েছে। 

বহু ক্ষেত্রেই আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন আপনার বলা কথাগুলো অনেক সময় সত্যি হয়ে যায়। এইরকমটা মূলত তখন হয়ে থাকে যখন আপনি ওই কথাটি বলছেন তখন হয়তো আপনার জিহবাতে সরস্বতী বাস করছেন। আর সেই কারণেই আপনার বলা কথাগুলো অনেক সময় সত্যি হয়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল এটা কি বাস্তবে সত্য, নাকি ভিত্তিহীন কাল্পনিক ধারণা। এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো আমরা এই লেখাটিতে। পৌরাণিক এবং বৈজ্ঞানিক দুটি দিক দিয়েই এই বিষয়টি আজকে আমরা আলোচনা করব এবং জানার চেষ্টা করব দিনের কোন সময় বাগদেবী সরস্বতী আমাদের জিহবাতে অবস্থান করে এবং আমাদের বলা কথাগুলি কে - সত্যি তো রূপান্তর করে ! আশাকরি দর্শক বন্ধুরা আজকের লেখাটি আপনাকে সমৃদ্ধ করবে। 

বন্ধুরা দেবী সরস্বতী যাকে বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞান এবং বিবেকের দেবী বলা হয়ে থাকে। হিন্দু পুরানে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে পিতামহ ব্রহ্মা সমস্ত সৃষ্টির রচনার পর অনুভব করলেন সৃষ্টিতে গতি দেওয়া প্রয়োজন। এজন্য তিনি ভগবান বিষ্ণুর কাছে যান এবং তার কাছ থেকে অনুমতি নেন তারপর তিনি এক চতুর্ভূজা স্ত্রীর সৃষ্টি করলেন। যার একহাতে বিনা ও অন্য হাতে কমন্ডুলু। এছাড়াও অপর দুই হাতে বেদ ও অক্ষমালা দ্বারা সুসজ্জিত। সরস্বতী দেবীর প্রকটের পরই ব্রহ্মা দেবীকে অনুরোধ করেন তার বিনা দ্বারা তিনি যেন সমস্ত সৃষ্টিকে সুরময় করে তোলেন। এরপর দেবী সরস্বতী যখন প্রথমবার বিনার তার স্পর্শ করলেন তখনই সর্বপ্রথম যে বর্ণের উৎপত্তি হল সেটি হল 'সা'। বন্ধুরা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন সংগীতের সাত সুরের মধ্যে প্রথম শব্দ হল 'সা'। দেবী সরস্বতীর এই বিনার দ্বারা স্বর সৃষ্টির মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টি সুরময় হয়ে উঠল। এতে ব্রহ্মদেব খুবই প্রসন্ন হলেন এবং তিনি দেবীকে বাণীর দেবী অর্থাৎ বাগেশ্বরী নাম দিলেন।

বন্ধুরা পুরাণে দেবী সরস্বতীকে পদ্মের উপর বসে থাকতে দেখা যায়। পদ্ম পাকে জন্মালেও পদ্মকে কাদা স্পর্শ করতে পারেনা। "কমলে বিরাজিত দেবী" - এর মাধ্যমে আমাদের এটাই বলতে চাই যে, আমরা যদি কোনো খারাপ জায়গায় থাকি তাহলে আমাদের এমন ভাবে সেখানে থাকা উচিত যাতে কোন খারাপ জিনিস আমাদের ছুঁতে না পারে। সনাতন ধর্মে দেবী সরস্বতী যেহেতু বাণীর দেবী তাই আমাদের প্রত্যেকটি কথা তথা বাণীতে তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। সারাদিনে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত এক থেকে দুবার তিনি আমাদের সকলের জিহবাতে অবস্থান করেন। আর এই সময় বলা কথাগুলি সব সত্যি হয়ে যায়। আর এই কারণেই বয়স্ক লোকেরা তথা গুরুজনেরা বার বারই এই কথা বলে থাকেন কখনো নিজের অথবা কারোর সম্পর্কে খারাপ কথা বলতে নেই। তারা মনে করেন যে, হয়তো সেই সময় দেবী সরস্বতী আমাদের জিহবাতে অবস্থান করতে পারেন। আর এর ফলেই আমাদের বলা কিছু ভালো-মন্দ কথা অনেক সময়ই সত্যি হয়ে যায়। বন্ধুরা এটা সত্য এবং বর্তমানে প্রমাণিত।

বৈজ্ঞানিকরা এ বিষয়ে গবেষণা করে দেখেছেন - যে সমস্ত কথা দিনের কোনো সময়ে আপনা আপনি মনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে সেই সমস্ত কথাগুলি আমাদের অবচেতন মনে থেকে যায় এবং এই সমস্ত কথাগুলি অনেক সময় আমরা নিজের অজান্তেই রিপিট করে যাই। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এই সমস্ত কথা গুলি বাস্তবে সত্যি হয়ে যায়। এই কারণে শুধুমাত্র আমাদের ধর্মে নয় সমস্ত ধর্মেই বলা হয়েছে কখনো কারো সম্পর্কে খারাপ চিন্তা ভাবনা করা উচিত নয়। বন্ধুরা গবেষণা করে এটি দেখা গিয়েছে ব্রহ্মমুহূর্তে অর্থাৎ ভোরবেলায় বলা কথাগুলি বাক্যগুলি সত্যি হয়ে যায়। এই কারণেই অনেক সময় আপনি এটা হয়তো অনেকের মুখেই শুনেছেন যে ভোরের স্বপ্ন কখনো মিথ্যা হয় না। তাই কোনো বিষয়কে যদি সত্যি করতে চান তাহলে ভোর বেলায় ব্রহ্ম মুহূর্তে সেই কথাটিকে বারবার রিপিট করা প্রয়োজন। দেখবেন একটা সময় পর সেই কথাটি সম্পূর্ণ সত্যি হয়ে যাবে।

আমাদের শাস্ত্রে এই বিষয়েরও উল্লেখ রয়েছে যে, বাগদেবী সরস্বতী মাকে কেউ যদি শুদ্ধ মনে পূজা করে এবং তাকে যদি আহ্বান করে তাহলে তিনি তার ভক্তদের উপর খুবই প্রসন্ন হন এবং তাদের বিদ্যা ও বুদ্ধি দান করেন। বিশেষ করে মাঘ মাসের শুক্ল পক্ষের বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে দেবী সরস্বতীর নিষ্ঠা সহকারে পূজা করা যায়। তাহলে তিনি তার ভক্তদের উপর অপার কৃপাদৃষ্টি বর্ষণ করেন। 

এই বসন্ত পূর্ণিমা তিথিতে কিভাবে সহজ সরল পদ্ধতিতে সরস্বতী পূজা করবেন তার সম্পর্কে পূর্বেই আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রয়োজন বোধ করলে সেটি দেখে নিতে পারেন - CLICK HERE

বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করলাম। লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

আরো পড়ুন:- ২০২৩ সালে সরস্বতী পূজার পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী -CLICK HERE