নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল- কাশি তীর্থস্থান এর মাহাত্ম্য সম্পর্কে। বারানসির কাশি তীর্থস্থান কেন এত পবিত্র এবং কাশি তীর্থস্থানের ইতিহাস ও তার পৌরাণিক কাহিনী সম্পর্কে।
কাশি এতটাই প্রাচীন যে, যখন এথেন্সের সম্পর্কে ভাবাও যায়নি, যখন মিশরের অস্তিত্ব ছিলনা, যখন রোমের সম্পর্কে লোকে কল্পনাও করেনি তখন এই কাশি ছিল। কাশি একটি অসাধারন যন্ত্রের স্বরূপ। যা এর আগে না কখনো ছিল, না এরপরে কখনো তৈরি হয়েছে। এই কাশি শহরটি শুধুমাত্র একটি থাকার জায়গা না, এটি একটি এমন যন্ত্র যা আপনাকে আপনার চরমসীমারও উপরে নিয়ে যেতে পারে। একটি এমন যন্ত্র যা মানুষকে ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে। এখানে মূলরূপে ৫৪টি মন্দির শুধুমাত্র ভগবান শিবের জন্য রয়েছে। আর ৫৪ টি শক্তির জন্য। এই পুরো শহরটি একটি শরীরের মতো। এটি সংগীত জ্ঞান ও ব্যাপারের একটি মুখ্য কেন্দ্র ছিল।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন, পাশ্চাত্য বিজ্ঞানীরা ভারতীয় গণিত শাস্ত্র ছাড়া এক পাও এগোতে পারবে না। আর সেই গণিতের জন্ম হয়েছিল এই কাশিতেই। হাজার হাছার বছর ধরে পুরো দুনিয়া থেকে মানুষরা এখানে আসতে থাকেন। শুধু তাই নয় গৌতম বুদ্ধ নিজের জীবনের প্রথম শিক্ষা এখানে এসেই দেন। যদি আপনি ভারতে জন্ম নিয়ে থাকেন তাহলে আপনার একটি স্বপ্ন হওয়া উচিত একবার হলেও কাশি যাওয়া। কাশি আমাদের পবিত্র হিন্দু রীতি নিয়মের মধ্যে ভরে রয়েছে। যা একজন মানুষের মন শুদ্ধ করে ও পবিত্রতার ছোয়া আনে। কাশি প্রাচীনকাল থেকেই অনুষ্ঠানের কেন্দ্র হয়ে আসছে। নিজের ভেতরের মনকে শুদ্ধ করার প্রক্রিয়া থেকে ভরসাযোগ্য আর কিছুই নেই। এই কারণে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আপনি যদি কোন দীক্ষা পান তাহলে আপনার সেটার উপরই নির্ভরশীল থাকা উচিত। এই বিষয়গুলি এই কারণেই এতটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ মানুষেরা কিছুই করতে জানেন না। কিন্তু তারা এটা জানেন কিছু করতে হবে। সেটা কি? তা বলে দেবে আপনার ওই দীক্ষা। এই কারণেই একটি এমন যন্ত্র আর যন্ত্রের সাথে যুক্ত জটিল নিয়ম কানুন বা শাস্ত্রীয় বিধি খুবই উপযোগী। কেননা এর থেকে একসাথে বহু মানুষের উপকার হয়।
একটি অনুষ্ঠান রয়েছে যাকে "সপ্তঋষি পূজা" বলা হয়ে থাকে। সপ্ত ঋষি অর্থাৎ সেই সাতটি শিষ্য যারা ভগবান শিবের প্রথম সাতজন শিষ্য হিসেবে ছিলেন। ভগবান শিবের দীক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তারা দূরে যেতে চাইছিলেন। তাই তখন তারা ভগবান শিবের কাছে জিজ্ঞাসা করলেন আমরা আপনার পূজা কিভাবে করব? ভগবান শিব তাদের একটি পদ্ধতির শেখান এবং বলেন এইভাবে আমার পূজা সম্পন্ন করলে তাহলেই আমি সেখানে হাজির হব। এই পূজার পদ্ধতি ওই সাতজন ঋষিদের শেখানো হয়েছিল। যার পরে সেই ৭ জন আরো অন্য লোকদের শেখান, এইভাবে ধীরে ধীরে কালক্রমে চলে আসছে সপ্ত ঋষি পূজা পদ্ধতি। আর আজও কাশিতে ঠিক একই ভাবেই এই পূজা সম্পন্ন করা হয় যেমনটা ভগবান শিব শিখিয়ে দিয়েছিলেন। সেই প্রক্রিয়া ভগবান শিব শুরু করেন আর এমন ভাবে শুরু করেন যে উর্জার ঢের ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে। যেই মানুষরা এই পূজা পদ্ধতি অবলম্বন করছেন তারা হয়তো এর আক্ষরিক অর্থ জানেন না, কিন্তু তারা তাদের শেখানো এই পদ্ধতিটির মাধ্যমে পূজা করে এটিকে একটি সত্যতায় রূপান্তরিত করছেন।
বন্ধুরা আপনারা এই বিষয়টিকে এইভাবে বুঝে নিতে পারেন যে কাশিতে উপস্থিত একজন মাঝি যে নৌকা চালায় সে কিন্তু উন্নত প্রযুক্তিগত নৌকার বা আধুনিক বোটের মোটর চালিত ইঞ্জিন বানাতে জানেন না। কিন্তু সে কিভাবে নৌকার দ্বার ঘুরিয়ে নৌকোটিকে চালাতে হয় তা জানে। ঠিক একই প্রকার ভাবে বর্তমানে পূজা পদ্ধতি এই ভাবেই সম্পন্ন হয়। এখন সেভাবে পুজো করা হয় যেমনটা সপ্ত ঋষিরা করতেন। একাধিক মন্দিরের তুলনায় কাশিতে অবস্থিত ভগবান শিবের মন্দিরে উর্যার পরিমাণ বেশি। কাশিতে অবস্থিত ধ্যান লিঙ্গ মন্দিরে আপনার অবশ্যই একবার যাওয়া উচিত। সেখানে গিয়ে আপনি বসলে শান্তি অনুভব করবেন। সেখানে না তো পূজা পাট না তো কোন রীতি নিয়ম। সেখানে শুধুমাত্র ধ্যান করা হয়। এই মন্দিরটিকে মূলরূপে ধ্যানের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। যে সকল মানুষরা ধ্যানের সম্পর্কে কিছুই জানেন না যারা কোন গুরুদেবের কাছ থেকেও কোনো নির্দেশ পাননি তারা যদি ওখানে গিয়ে একবারও বসেন তারা কোন নির্দেশ না পাওয়া সত্ত্বেও আপনা আপনিই ধ্যানমগ্ন হয়ে যাবেন। তো বন্ধুরা এইরূপ কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। এগুলি শুধুমাত্রই প্রক্রিয়া, নাতো অন্ধবিশ্বাস।
বন্ধুরা আপনি যদি কাশিতে যেতে চান তাহলে কাশি যাওয়ার আগে কম করে তিন মাস একা একা নিজের বাড়িতে ধ্যান করুন। একটু বেশি সংবেদনশীল ও শান্ত প্রকৃতির হন এরপর আপনি কাশি যান। আর সর্বদা মনে রাখবেন কাশি আপনি কোন কিছু চাইতে যাচ্ছেন না। আপনার সকল মনস্কামনা গুলি বাড়িতেই রেখে যাবেন। কাশি হল দুনিয়ার সবথেকে জটিল একটি যন্ত্র। যা মানুষের অন্তরকে শুদ্ধ করে। এটা খুবই অদ্ভুত যে, কেউ এমন একটি জায়গা বানিয়েছেন। এই কাশি তীর্থস্থানটিকে খুবই বুদ্ধিমত্তার সাথে তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরির পেছনে এরকমই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল যে, এটা সবার জন্য যেন উপলব্ধ হয়। এই কারণে আমাদের সেই মানুষদেরকে প্রণাম জানানো উচিত যারা এই শহরটি সৃষ্টি করেছেন। এই দুনিয়ায় এই রকমই তীর্থস্থানের দরকার।
তো বন্ধুরা, আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে আপনারা কাশি তীর্থ স্থানের মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে পারলেন এবং আমাদের এই পৃথিবীতে অবস্থিত কাশি তীর্থস্থান কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সেই সম্পর্কেও জানতে পারলেন। আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। আজ এখানেই শেষ করলাম, ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- দিনের এই বিশেষ সময়ে মা সরস্বতী আপনার সকল মনস্কামনা পূরণ করেন? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা