নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল- বডি ডিটক্স কি? আর কেনই বা আমাদের শরীরকে ডিটক্স করা প্রয়োজন? তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক আজকের এই বিশেষ লেখাটির মাধ্যমে।
বডি ডিটক্স:-
বন্ধুরা যখন আপনি আপনার খাবার-দাবরের প্রতি নজর দেন না এবং জাঙ্ক ফুডকে নিজের প্রতিদিনের খাবার রূপে গ্রহণ করেন, তখন এর ফলে আপনার বডিতে টক্সিন জমা হতে শুরু করে। এই টক্সিন আপনার শরীরের আলাদা আলাদা বিশেষ বিশেষ অঙ্গে জমা হতে থাকে। যা আপনাকে ধীরে ধীরে অসুস্থ করে ফেলে। এগুলি পরবর্তীতে বড় আকারের রোগ নিয়ে যেমন - কিডনিতে পাথর, গলব্লাডারে পাথর ইত্যাদি রূপে সামনে আসে। এই টক্সিন এর ফলে আপনার হার্টে বা হৃৎপিণ্ডতে কোলেস্টেরল জমা হতে থাকে ও লিভার ফ্যাটি হতে থাকে। যার ফলে অনেক ধরনের বড় বড় রোগব্যাধি হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। শুধু তাই নয় এই টক্সিন আপনার ব্রেনকেও দুর্বল করে দিতে পারে। যখন বডিতে প্রচুর পরিমাণে টক্সিন জমা হতে থাকে তখন আপনার বডি আপনাকে অনেক প্রকার ভাবে সংকেত দেয়। এই সংকেত গুলি বুঝে নেওয়া খুবই জরুরী। যার ফলে আপনি আপনার বডিকে ডিটক্সিফাই করতে পারেন। এই ডিটক্সিফাই করার অর্থ হলো শরীর থেকে টক্সিন এর মাত্রা কমিয়ে ফেলা।
আপনার যদি প্রতিনিয়ত এই সমস্যাগুলি হয়ে থাকে যেমন ধরুন - কোষ্ঠকাঠিন্য, লুজ মোশন বা আমাশয়, শ্বাস নিতে সমস্যা, সামান্য পরিমাণ কাজ করলেই হাঁপিয়ে ওঠা, মুখে ব্রণ ইত্যাদি হয়ে থাকে। তাহলে এই সময়েই আপনি সতর্ক হয়ে যান। আর নিজের শরীর থেকে টক্সিন এর মাত্রা কমিয়ে ফেলুন এবং বডিকে ডিটক্সিফাই করুন। কিন্তু, এখন প্রশ্ন ওঠে নিজের বডিকে কিভাবে ডিটক্সিফাই করা যায়? এর জন্য আপনার কোনো ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই। বরং আপনি ঘরে বসেই নিজের বডিকে ডিটক্সিফাই করতে পারেন। যৌগিক সংস্কৃতি ও আয়ুর্বেদে বডি ডিটক্সিফাই করার জন্যে অনেক পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
বন্ধুরা আমাদের শরীর একটি মেশিনের মতনই। আর শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ একত্রিতভাবে মিলিত হয়ে এই মেশিনটিকে চালনা করে। মেশিনের যদি কোন যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যায় তাহলে মেশিন যেমন আওয়াজ করতে শুরু করে এবং একটা সময়ে গিয়ে বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক সেরকমই মানুষের শরীরের ভেতরে থাকা অঙ্গগুলিও যদি খারাপ হয়ে যায় তাহলে মানুষের শরীরও রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। এই কারণে শরীরের সময়ে সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা প্রয়োজন। একটি রিসার্চে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে বছরে অন্তত দুবার আপনাকে আপনার বডি ডিটক্সিফাই করানো প্রয়োজন। কারন আপনার শরীর যদি ভেতর থেকে পরিষ্কার হয় তাহলে তাতে কোনো প্রকার রোগের আশঙ্কাই থাকবে না।
যৌগিক সংস্কৃতি ও আয়ুর্বেদে বডি ডিটক্সিফাই করার পদ্ধতি:-
বডিকে ডিটক্সিফাই করানোর সবথেকে ভালো পদ্ধতি হল- "ইন্টারমিটেন্ড ফাস্টিং"। যেখানে আপনাকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কিছুই খেতে নেই। বন্ধুরা যখন আপনি ফাস্টিং করছেন তখন আপনার বডি নিজেকে হিল করে নেওয়ার সময় পায়। কারন আপনার শরীর একটি সময়ে একটি কাজই করতে পারে। যখন আপনি খাবার খেতে থাকেন তখন শরীরের পুরো এনার্জি সেই খাবারটিকে হজম করার কাজে লেগে থাকে। যে কারণে শরীর নিজেকে হিল করার সময়ই পায় না। কিন্তু যখন আপনি ফাস্টিং করে থাকেন সেই সময় আপনার শরীর রোগ ব্যাধিকে আপনার থেকে দূরে রাখতে এবং নিজেকে হিল করার কাজ করতে পারে। এই কারণেই যখন আপনি আপনার বডিকে ডিটক্সিফাই করতে চান সেই সময়ে "ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং" অবশ্যই করুন। কারণ এটি আপনার শরীরকে পুরোপুরি ভাবে পরিষ্কার করার কাজ করে থাকে। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং কিভাবে করা হয়ে থাকে এবং এর কি উপকারিতা রয়েছে এই সম্পর্কে একটু পরে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করছি। কিন্তু ১৬ ঘণ্টা উপবাস করার সময় যদি আপনি ৮ ঘন্টার মধ্যে কিছু খান তাহলে তখন সাত্ত্বিক খাবারই গ্রহণ করুন। কারণ এটাকে হজম করতে আপনার শরীরের কম সময় লাগবে। আর শরীর হিল করার সময় বেশি পাবে। যার ফলে আপনি আপনার শরীরের অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলিকে কম সময়ের মধ্যে বাইরে বের করতে পারবেন।
নিজের বডিকে ডিটক্সিফাই করার দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল - অ্যানিমা। বন্ধুরা আপনাদের মধ্যে অনেক মানুষই এমনটা ভাবছেন হয়তো যে, এই অ্যানিমা আবার কি ! আসলে অ্যানিমা হল একটি - ন্যাচারাল প্যাথি। যার মাধ্যমে আপনি আপনার বডি ডিটক্সিফাই সহজেই করতে পারবেন। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই এই ন্যাচারাল পথের মাধ্যমে শরীর থেকে সকল দূষিত পদার্থ বাইরে বেরিয়ে আসবে।
বডিকে ডিটক্সিফাই করার তৃতীয় পদ্ধতিটি হল - জল নীতি। জল নীতিও একটি - ন্যাচারাল প্যাথি। যার মাধ্যমে নাক পরিষ্কার করা হয়। জলনীতি করার ফলে মাইগ্রেন, সাইনাস, সর্দি কাশি ও দূষণের থেকে হওয়া শরীরের ক্ষতি গুলিকে দূর করা যায়। অস্তমা, নিউমোনিয়া অথবা যেকোনো ধরনের এলার্জি, ব্রংকাইটিস প্রভৃতি এই ধরনের রোগ থেকেও শরীরকে সাড়িয়ে তুলতে জলনীতি অনেক সাহায্য করে। জলনীতির মাধ্যমে নাকের একটি ছিদ্র দিয়ে জল শরীরে প্রবেশ করিয়ে আরেকটি ছিদ্র দিয়ে জল বাইরে বের করা হয়। এর জন্য ঘটির মতো একটি পাত্র ব্যবহার করা হয়, যেখানে একটি পাইপ লাগানো থাকে। আর এই পাইপের সাহায্যে জলকে নাকের ছিদ্র দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করানো হয়।
বন্ধুরা এছাড়াও আপনি অনেক প্রকার ভাবে আপনার শরীরকে ডিটক্স করতে পারেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে - লেবুর সাহায্যে। রোজ সকালে এক গ্লাস লেবুর জল অবশ্যই খান। এটি আপনার শরীরের মধ্যে উপস্থিত সকল রকম অপ্রয়োজনীয় বা দূষিত পদার্থ গুলি বাইরে বের করার কাজ করে। এই কারণে সকাল বেলায় চা ও কফির বদলে লেবু জলকে নিজের ডেইলি রুটিনে সামিল করুন। যদি আপনি সকালে লেবু জল নাও খেতে পারেন তাহলে সেক্ষেত্রে আপনি অন্তত দু গ্লাস পানীয় জল অবশ্যই পান করুন। এটি আপনার বডিকে বিশুদ্ধ করে তোলে। যার ফলে শরীরে জমে থাকা নোংরা বাইরে বেরিয়ে আসে। সাধারণ চায়ের বদলে -"Herbal Tea" -পান করুন। এটি আপনার সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এরই সাথে এটি আপনার মেটাবলিসও বাড়ায়।
বন্ধুরা লেবু ছাড়াও আরেকটি খুবই ভালো ও স্বাস্থ্যকর সবজি রয়েছে। যার রস করে আপনি যদি প্রতিদিন খেতে পারেন তাহলে আপনার শরীরে কোন রকমের রোগ ব্যাধি চট করে আসতে পারবে না। বডিকে ডিটক্সিফাই করতে - "Ash Gourd" অর্থাৎ চাল কুমড়োর রস করে যদি আপনি খেতে পারেন তাহলে সেটা আপনার শরীরের পক্ষে খুবই ভালো। এটি সবুজ রঙের এমন একটি সবজি যার ভেতরে পুরোটাই সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। চাল কুমড়ো খুব সহজেই আপনি বাজারে পেয়ে যাবেন। একে টুকরো টুকরো করে কেটে নিয়ে জুসারের মধ্যে দিন ও তার রস বার করে নিয়ে সেটিকে রোজ সকালে পান করুন। এতে আপনার বডি খুব সহজেই ডিটক্সিফাই হবে। কিন্তু খেয়াল রাখবেন এতে সাত বাড়ানোর জন্য নুন, লেবু অথবা চিনি কোনো কিছুই যেন না দেওয়া হয়। বরং একে প্রতিদিন সকালে ফ্রেশ বানিয়ে ঝটপট পান করে নেবেন। এই টেস্ট একদম সাধারণ হয়ে থাকে। যদি আপনি চাল কুমড়ো না পান সেক্ষেত্রে আপনি লাউয়ের ব্যবহার করতে পারেন। বন্ধুরা এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যখন আপনি এই রসটি পান করলেন, তার পরবর্তী দু'ঘণ্টা আপনি কিছুই খাবেন না। কারণ সেই সময় সেই রসটি আপনার বডিকে ডিটক্সিফাই করার কাজটি করতে থাকছে।
যখন আপনি বডি ডিটক্সিফাই করার প্রক্রিয়া করছেন সেই মুহূর্তে চা, কফি, সিগারেট অথবা কোন অ্যালকোহল জাতীয় দ্রব্য একদমই পান করা উচিত নয়। কারণ এই জিনিসগুলি বডিকে ডিটক্সিফাই করতে বাধা সৃষ্টি করে। বডিকের ডিটক্সিফাই করার সময় কিছু টাটকা শাকসবজি ও ফলের সেবন আপনি করতে পারেন। "Vitamin C" - যুক্ত আহার গ্রহণ করুন। এটি আপনার বডিতে উপস্থিত সমস্ত দূষিত পদার্থ গুলিকে বাইরে বের করে।
বডিকে ডিটক্সিফাই করার আরেকটি পদ্ধতি হলো - ব্যায়াম বা (yoga)। এটি আপনার বডিকে হিল করে। যার মাধ্যমে আপনি ভেতর থেকে ভালো ও তরতাজা অনুভব করতে পারবেন। এই কারণেই রোজ ১৫ মিনিট হলেও, ব্যায়াম করুন।
তো বন্ধুরা এটাই ছিল বডিকে ডিটক্সিপাই করার কিছু বিশেষ প্রক্রিয়া। আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে এবং প্রত্যেকটি প্রক্রিয়া আপনারা ভালোভাবে নিজেদের মধ্যে প্রয়োগ করে দেখবেন। তো বন্ধুরা আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো লাগলে লেখাটি আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করুন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:-ভগবান শিবের কৃপা লাভের সংকেত? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা