নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই চ্যানেল এর প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল-" সন্তান কথা না শুনলে বা অবাধ্য হলে কি করা উচিত"।
বর্তমান দিনের বেশিরভাগ মাতা-পিতারই একই অভিযোগ থাকে। যে তাদের সন্তান কথা শুনছে না, দিনদন অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে। অবাধ্য ছেলে বা মেয়ে কে নিয়ে আত্মীয় মহলেও আলোচনা কম হয়না। সকলেরই একটি অভিযোগ দিনকে দিন ছেলেটি বা মেয়েটি একগুঁয়ে হয়ে যাচ্ছে, কোনো কথাই শুনছে না। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন কেন আপনার সন্তান আপনার কথা শুনছে না। তাতে কি কেবল শুধুমাত্র সেই সন্তানের দোষ, নাকি সেখানেও ফাঁক থেকে যাচ্ছে অভিভাবকের ক্ষেত্রে। সন্তানকে লালন-পালন করার সময় বাবা-মায়েরা ভেবে থাকেন যে সন্তানরাও ঠিক আমাদের মত। সেক্ষেত্রে তারা মনে করে নেয় অভিভাবকরা যা বোঝেন বা যা পছন্দ করেন, সন্তানদেরও ঠিক একই জিনিস পছন্দ হবে। এটা বুঝিনা যে বাচ্চা যদি আমার মতই সমস্ত কিছু পছন্দ করত তাহলে সে বাচ্চা হতো না। এইজন্যই অবাধ্য সন্তানকে যদি বাধ্য করতে চান, সন্তানের এই যে কথা না শোনা এই অবাধ্য মানসিকতাকে যদি বদলাতে চান তাহলে বেশ কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলা প্রয়োজন। সবার প্রথমে যে বিষয়টির কথা বলব সেটি হল- সন্তানকে সবসময় আদেশ-নির্দেশ বা তিরস্কার করতে থাকেন তাহলে সন্তানের মনে এক বড় পরিবর্তন আসে। মনোবৈজ্ঞানিকরা বলেন, আপনি যদি সন্তানকে এইভাবে আদেশ-নির্দেশ করতে থাকেন তাহলে সন্তান ভাবতে থাকে যে আপনি তার প্রতিপক্ষ। তাই সন্তানকে তিরস্কার করা থেকে বিরত থাকুন। তাই আপনি সন্তানের বন্ধু ,এই অনুভূতিটি তার বিকাশের জন্য সব থেকে জরুরি। আর বড়দের মতো ছোটদের জন্যও এই ব্যাখ্যাটা জরুরী- যার জন্য অভিভাবকেরা সন্তানের উপর তিরস্কার করছে, সেই কাজটি সন্তান কেন করবে সেটি তার কাছে পরিষ্কার থাকা দরকার।
দ্বিতীয়তঃ আপনার সন্তানকে বুঝতে দিন, যে আপনি তাকে বোঝেন। যত আপনার সন্তান বুঝবে যে আপনি তাকে বোঝেন সে ততো আপনার অনুগত হবে। আপনার কথা শুনে চলবে। অতএব তাকেই শোনানোর জন্য- আগে তার কথা শুনুন, তার কথায় মনোযোগ দিন। তাকে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে ভালভাবে বোঝেন।
তৃতীয়ত:- সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মার ঐক্যমতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই বিষয় সম্পর্কে যদি বাবা-মা ভিন্নমত পোষণ করেন, তাহলে তা সন্তানকে বিভ্রান্ত করে। বিশেষ করে সন্তানের ক্ষেত্রে যদি এই বিষয়টি প্রযোজ্য হয় , তাহলে সন্তান আরো বেশি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। এর ফলেই সন্তান অবাধ্য হয়ে যায়। তাই আগে সিদ্ধান্তগুলি নিজেরা নিয়ে নিন। তারপর সন্তানকে সেই বিষয়টি নিয়ে জানান। আর কোনো ব্যাপারে দ্বিমত হলে তা নিয়ে কখনোই কন্তু সন্তানের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়বেন না। কারণ সন্তানের সামনে যদি আপনি এই রূপ ঝগড়া করেন বা বিতর্ক করেন, সেটা সন্তানের পক্ষে সবথেকে বেশি খারাপ হয়। কারণ সন্তান যা দেখে যা সনে তাই তারা শেখে।
চতুর্থত:- সন্তানের প্রশ্নের জবাব দিন। এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আপনি যদি আপনার সন্তানের প্রশ্নের জবাব না দেন। তাহলে জবাবের জন্য সে হয়তো খুঁজে নেবে এমন কাউকে বা এমন কিছুকে যার পরিনতি আপনার অতটা সুখকর নাও হতে পারে। তাই আপনার সন্তান আপনাকে অনেক প্রশ্ন করতে পারে চেষ্টা করুন সে সবের হবে উত্তর দিতে। যদি না পারেন তাহলে তাকে অন্তত এই বিষয়টি বলুন- যে পরে এই বিষয়টি সম্পর্কে জেনে আপনি তাকে উত্তর দেবেন।
পঞ্চমত:- জেনারেশন গ্যাপ কে মিটিয়ে ফেলুন। এই বিষয়টি অনেকেই কিন্তু করতে পারেন না। সন্তানের সাথে জেনারেশন গ্যাপ এর একটি কারণ হলো - বাবা-মায়েরা চান যে তারা যেভাবে ছোট থেকে বড় হয়ে এসছে ঠিক তাদের সন্তানেরা সেইভাবেই তাদের মতো করে বড় হয়ে উঠুক। ফলে এই অবাস্তব প্রত্যাশার জন্য সৃষ্টি হয় ভুল বোঝাবুঝি। কাজেই কিছু কিছু ব্যাপারে আপনাকে সহনশীল হতে হবে। সন্তানের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গির সাথে আপনার চাহিদা, পছন্দ ও দৃষ্টিভঙ্গির একটা ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। অনেক সময় বাবা মায়েরা তাদের অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চান তাদের সন্তানের মাধ্যমে। সন্তানের জীবনের লক্ষ্য কি হবে তা তারাই ঠিক করে দেন। সন্তানের চাওয়া-বা সামর্থের বিষয়টিকে কোনো প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে। আর পরবর্তীতে তার মাশুল দিতে হয় সন্তানকে। সে না পারে বাবা মায়ের চাওয়া-পাওয়া পূরণ করতে, না পারে নিজের মেধাকে বিকশিত করতে। আর তখনই সন্তান অবাধ্য হয়ে পড়ে। তাই সন্তান বেড়ে ওঠার একটা নির্দিষ্ট সময় পরে তার নিজের ভবিষ্যতের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করাই ভালো। তাকে তার নিজের ভবিষ্যতের জন্য চিন্তা ও পদক্ষেপ গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন।
ষষ্ঠতঃ মাতা-পিতার এই বিষয়টি অনেকাংশেই ভুলে যান তারা সন্তানকে যা বলেন, তারা হয়তো নিজেরাও তা করেন না। তাই সন্তানকে আপনি তাই বলুন যা আপনি নিজে পালন করতে পারবেন। শিশুরা তাদের বাবা-মা কি বলছে সেটা নয়, বরং তাদের বাবা মা কি করছে সেটাই বেশি অনুকরণ করে। কাজেই আপনার সন্তানকে এমন কিছু করতে বলবেন না যা আপনি নিজেই করেন না।
সপ্তমতঃ যদি আপনার সন্তান জেনে বুঝে কোনো ভুল করে, তাহলে প্রয়োজনে তাকে শাস্তিও দিন। আপনার সন্তান যদি বোঝে সে কথা না শুনেও সে পার পেয়ে যাবে তাহলে অবাধ্য হতে সে উৎসাহ পাবে। তাই সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি না করে, শান্ত থাকুন এবং চিৎকার-চেঁচামেচি বদলে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। কারণ সন্তান যদি বুঝতে পারে এই ভুল কাজ করার জন্য বা অবাধ্য হওয়ার জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। তাহলে সে ভবিষ্যতে ঐ ভুল কাজ করার জন্য সাবধান হবে। তবে হ্যাঁ এই বিষয়টিও মাথায় রাখবেন চিৎকার চেঁচামেচি করে নয় বা বকাবকি করেও নয় ও একই কথা বারবার বলে নয়! কারণ এই বিষয়গুলি করলে আপনার কথার গুরুত্ব অনেক কমে যায়। এর থেকে বড় এক থেকে দু'বার বলুন। তাকে বুঝতে দিন কথা না শোনার শাস্তি সে পাবে। তবে ছোটখাটো ভুলের জন্য সর্বশেষ এই অস্ত্র প্রয়োগ করবেন না। বরং ছোটখাটো ভুলের জন্য তাকে বন্ধুর মত বোঝান দেখবেন নিশ্চিত রূপে আপনার সন্তান আপনার কথা শুনছে।
আর যদি এই সমস্ত কিছু করেও যদি আপনার সন্তান আপনার কথার অবাধ্য থাকছে তাহলে- সর্বশেষ যে বিষয়ের কথা বলব তা হলো কোনো উপযুক্ত মনস্তত্ত্ববিদ এর কাছে সাহায্য নিন ।কারণ অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের মধ্যে যদি নার্ভের সমস্যা থাকে তাহলে সন্তান অনেক সময় উগ্র আচরণ করে থাকে। আর এক্ষেত্রে অবশ্যই তখন চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।
আর হ্যাঁ সন্তানের মধ্যে শৈশব থেকেই ভালো ভালো অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। যেমন ধরুন কাউকে সাহায্য করা, নম্রভাবে কথা বলা, সবার সঙ্গে মিশে চলা ইত্যাদি। তবে এই বিষয়গুলি আপনার মধ্যেও থাকা প্রয়োজন।
আশা করি আজকের লেখা টি পড়ে আপনাদের ভাল লেগেছে। আপনারা এই লেখাটি পড়ে যথেষ্ট সমৃদ্ধি লাভ করতে পেরেছেন। পারলে আপন জন দের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন। ভাল থাকুন ,সুস্থ থাকুন, নমস্কার । ধন্যবাদ ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা