Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১

তর্পণ করার বিধি ও মন্ত্র || তর্পণ কি - কিভাবে তর্পণ করতে হয় ?

মহালয়ার দিন সর্ব প্রধান কাজ - তর্পণ করার বিধি ও মন্ত্র

নমস্কার বন্ধুরা, অমৃতকথা এই ওয়েবসাইটে জানাই আপনাদের সুস্বাগতম। এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানাবো তর্পণ বিধি সম্পর্কে। কিভাবে তর্পণ করতে হয়, তর্পণ এর সময় কোন মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয় - সম্পূর্ণ তর্পণ সংক্রান্তি বিধি বিস্তারিত আলোচনা করব।




তর্পণ কী :-


তর্পণ শব্দটার উৎপত্তি হয়েছে সংস্কৃত 'তৃপ্' (অর্থাৎ সন্তুষ্ট করা) থেকে। হিন্দুধর্মে দেবতা, ঋষি ও মৃত পূর্বপুরুষদের (পিতৃকুল ও মাতৃকুল) উদ্দেশ্যে জল নিবেদন করে তাঁদের সন্তুষ্ট করার পদ্ধতিকে তর্পণ বলা হয়। বংশের যে সকল‌ পিতৃপুরুষ পরলোক গমন করেছেন, তাঁদের প্রীতির উদ্দেশ্যে মন্ত্র উচ্চারণপূর্বক স-তিল জল (তিল মেশানো জল) দান করে  সাধারণত পুত্রসন্তানেরা পিতৃতর্পণ করে থাকেন। এভাবে তর্পণ করাকে আবার তিল তর্পণও বলে।



এবার আপনাকে জানাবো কিভাবে তর্পণ করবেন সেই সম্পর্কে। তর্পণ করার জন্য যে সমস্ত উপকরণ অবশ্যই প্রয়োজন তা হলো।




কী কী লাগবে: গঙ্গাজল না হলে পরিষ্কার জল, কালো তিল এবং কূশ। ‘প্রাদেশ’ মাপের ছ’টি কূশ প্রথমে জলে ভিজিয়ে রেখে সেটা নরম হলে একত্রে তিনটি কূশ নিয়ে অণামিকা আঙুলে আংটির মতো ধারণ করে তর্পণ করবেন। বাঁ আঙুলেও একই ভাবে কূশাঙ্গরীয় ধারণ করবেন। কূশ ও তিল যদি না পাওয়া যায় তবে শুধু জলেই তর্পণ করতে পারেন।



ভিজে কাপড়ে জলে দাঁড়িয়ে কিংবা শুকনো কাপড় পরেও এক পা জলে এক পা স্থলে রেখে পূর্ব দিকে মুখ করে তর্পণ করতে হয়। প্রথমে দু’বার আচমন করুন।







তর্পণ করার সম্পূর্ণ বিধি মন্ত্র এবং তার অর্থ সহ :-


স্নানাঙ্গ-তর্পণ স্নানান্তেই করিতে হয়। স্নানান্তে পূর্বমুখে নদীতে নাভিমাত্র জলে দাঁড়াইয়া, যজ্ঞোপবীত বাম স্কন্ধে রাখিয়া তিলক ধারণ করিবে।

তর্পণ শুরুতে আচমন ও বিষ্ণু স্মরণ।

করজোড়ে—ওঁ তদ্ বিষ্ণোঃ পরমং পদং, সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ।

দিবীব চক্ষুরা ততম্।। ওঁ বিষ্ণুঃ, ওঁ বিষ্ণুঃ,।

এই মন্ত্রে বিষ্ণুকে স্মরণ করিবেন। আচমন পূবর্বক তিনবার নমো বিষ্ণুঃ বলিধা করজোড়ে বলিবেন—

নমঃ অপিত্রোবা, সর্ববাবস্থাং গতোহপিবা।

যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং, স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।

এই মন্ত্রে বিষ্ণু স্মরণ করিবেন।


।।তীর্থ- আবাহন মন্ত্র।।


যজ্ঞোপবীত ডান স্কন্ধে রাখিয়া দক্ষিণাভিমুখে করজোড়ে নিম্নলিখিত মন্ত্রে তীর্থ- আবাহন করিবেন।

ওঁ নমঃ কুরুক্ষেত্রং গয়া-গঙ্গা-প্রভাস-পুষ্করাণিচ ।

পুণ্যান্যেতানি তীর্থানি তর্পণ-কালে ভবন্তিহ ।।


।।দেব-তর্পণ।।

পূবর্বমুখে প্রথমে দেবতর্পণ করিতে হয়। যজ্ঞোপবীত বাম স্কন্ধে রাখিয়া বামহস্ত ও দক্ষিণ হস্তের অঙ্গুলির করজোড়ে তাম্রকোষ ধরে তিল ও তুলসি সহযোগে নিম্নলিখিত মন্ত্রে প্রত্যেককে এক অঞ্জলি জল দিবেন।

সন্ধ্যা করিতে না পারিলে সবর্বশেষে সূর্য্যার্ঘ্য দিবেন।


দেব-তর্পণ—ওঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতাম্।। ওঁ বিষ্ণুস্তৃপ্যতাম্।।

ওঁ রুদ্রস্তৃপ্যতাম্।। ওঁ প্রজাপতিস্তৃপ্যতাম্।


এরপরে নিম্নলিখিত ন্ত্র পড়িয়া পূবর্বদিকে মুখকরে এক অঞ্জলি জল তিল ও তুলসি সহযোগে প্রদান করবেন।


ওঁ নমঃ দেবা যক্ষাস্তথা নাগা, গন্ধবর্বাপ্সরসোহসুরাঃ।

ক্রুরাঃ সর্পাঃ সূপর্ণাশ্ঢ, তরবো জিহ্মগাঃ খগাঃ ।।

বিদ্যাধরা জলাধারা-স্তথৈবাকাশগামিনঃ ।

নিরাহারাশ্চ যে জীবাঃ পাপে-ধমের্ম রতাশ্চ যে ।

তেষাং আপ্যায়নায়ৈতৎ, দীয়তে সলিলং ময়া ।।

বাংলা অনুবাদ—দেব, যক্ষ, নাগ, গন্ধবর্ব, অপ্সরা, অসুর, ক্রুরস্বভাব জন্তু, সর্প, সুপর্ণ ( গরুড়জাতীয় পক্ষী ), বৃক্ষ, সরীসৃপ, সাধারন পক্ষী, বিদ্যাধর ( কিন্নর), জলচর, খেচর, নিরাহার (ভূতাদি ) এবং পাপে ও ধর্মকার্য্যেরত যত জীব আছে, তাহাদের তৃপ্তির জন্য আমি এই জল দিতেছি ।


।। মনুষ্য-তর্পণ।।

দক্ষিণাবর্তে ( ডানদিকে ঘুরিয়া ) , উত্তরপশ্চিম মুখে (বায়ুকোণে ) নিবীত হইয়া (যজ্ঞোপবীত মালার ন্যায় ঝুলাইয়া ) নিম্নলিখিত মন্ত দুইবার পাঠকরিয়া দুই অঞ্জলি তিল ও তুলসিযুক্ত জল দিবেন ।


ওঁ নমঃ সনকশ্চ সনন্দশ্চ, তৃতীয়শ্চ সনাতনঃ .

কপিলশ্চাসুরিশ্চৈব, বোঢ়ুঃ পঞ্চশিখস্তথা ।

সর্বেব তে তৃপ্তিমায়ান্তু, মদ্দত্তে-নাম্বুদা সদা ।।

বাংলা অনুবাদ—সনক, সনন্দ, সনাতন, কপিল,আসুরি, বোঢ়ু ও পঞ্চশিখ প্রভৃতি সকলে মদ্দত্ত জলে সর্বদা তৃপ্তিলাভ করুন।



।। ঋষি-তর্পণ।।


এরপরে দক্ষিণাভিমুখে পুনরায় পূ্র্ববাস্য হইয়া উপবীতী অবস্থায় দৈবতীর্থ দ্বারা প্রত্যেককে এক অঞ্জলি তিল-তুলসি যুক্ত জল দিবেন।


ওঁ মরীচিস্তৃপ্যতাং, ওঁ অত্রিস্তৃপ্যতাং, ওঁ অঙ্গিরাস্তৃপ্যতাং, ওঁ পুলস্তস্তৃপ্যতাং,


ওঁ পুলহস্তৃপ্যতাং, ওঁ ক্রুতুস্তৃপ্যতাং, ওঁ প্রচেতাস্তৃপ্যতাং, ওঁ বশিষ্ঠস্তৃপ্যতাং,


ওঁ ভৃগুস্তৃপ্যতাং, ওঁ নারদস্তৃপ্যতাং।


।। দিব্য-পিতৃ-তর্পণ।।

বামদিকে ঘুরিয়া দক্ষিণ মুখে, পৈতা দক্ষিণ স্কন্ধে লইয়া নিম্নোক্ত সাতটি মন্ত্র পড়ায়া প্রত্যেককে এক অঞ্জলি সতিল জল দিবেন ।


১। ওঁ অগ্নিষ্বত্তাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।


২। ওঁ সৌম্যাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।


৩। ওঁ হবিষ্মন্তঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।


৪। ওঁ উষ্মপাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।


৫। ওঁ সুকালিনঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।


৬। ওঁ বর্হিষদঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।


৭। ওঁ আজ্যপাঃ পিতরস্তৃপ্যন্তা- মেতৎ সতিল-গঙ্গোদকং তেভ্যঃ স্বধাঃ ।


।।যম- তর্পণ।।

নিম্নলিখিত মন্ত্রস্থ নামগুলির প্রত্যেকের যথাক্রমে পিতৃতীর্থদ্বারা দক্ষিণ-মুখে প্রাচীনাবীতি হইয়া ওঁ যমায় নমঃ বলিয়া এইভাবে তিন অঞ্জলি করিয়া স-তিল জল দিবেন ।—


ওঁ নমঃ যমায় ধর্ম্মরাজায়, মৃত্যবে চান্তকায় চ, বৈবস্বতায় কালায়, সর্ব্বভূতক্ষয়ায় চ ।

ঔডুম্বরায় দধ্নায়, নীলায় পরমেষ্ঠিনে, বৃকোদরায় চিত্রায়, চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ ।।




।। পিতৃ- তর্পণ।।


তর্পণ সমাপ্তি পর্য্যন্ত দক্ষিণ মুখে প্রাচীনাবীতী অবস্থায় পরম ভক্তিসহকারে করপুটে বলিবেন –

ওঁ আগচ্ছন্তু মে পিতরঃ ইমং গৃহ্ণন্ত্বপোহঞ্জলিং । ( গৃহ্ণন্তু অপঃ অঞ্জলিং )


বাংলা অনুবাদ– হে আমার পিতৃগণ ( পূর্ব্বপুরুযগণ ) আসুন, এই অঞ্জলি পরিমিত জল গ্রহণ করুন।

———

আবাহনের পরে পিতৃতীর্থযোগে নিম্নলিখিত প্রকারে গৌত্র, সম্বন্ধ ও নাম উল্লেখ করতঃ ভক্তিসহকারে পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, প্রপিতামহী, এই নয়জনের প্রত্যেককে তিন অঞ্জলি করিয়া সতিল জল দিবেন, মন্ত্রও যথাক্রমে তিনবার পিঠ করিবেন ।

পরে মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী, প্রভৃতিকে এক এক অঞ্জলি জল দিয়া, গুরু, জ্যেঠা, খুড়া, বিমাতা, ভ্রাতা, ভগ্নী, জ্যেঠী, খুড়ী, পিসি,মাসী, মাতুল, মাতুলানী, শ্বশুর, শাশুড়ী, ভগ্নিপতি, জ্ঞাতি, প্রভৃতি প্রত্যেককে এক অঞ্জলি সতিল-জল ।

গঙ্গাজলে তর্পণ করিলে ‘’ এতৎ সতিল-গঙ্গোদকং’’ বলিবেন নচেৎ সতিলোদকং বলিতে হইবে ।


বিষ্ণুরোঁ অমুক গোত্রঃ পিতা অমুক দেবশর্ম্মা তৃপ্যতামেতৎ সতিলগঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা।


” ” ” পিতামহ ” ” ” ” ” ”

” ” ” প্রপিতামহ ” ” ” ” ” ”

” ” ” মাতামহ ” ” ” ” ” ”

” ” ” প্রমাতামহ ” ” ” ” ” ”

” ” ” বৃদ্ধপ্রমাতামহ ” ” ” ” ” ”

” ” গোত্রা মাতা অমুকী দেবী ” ” ” ”


” ” ” পিতামহী ” ” ” ” ” ”

” ” ” প্রপিতামহী ” ” ” ” ” ”

” ” ” মাতামহী ” ” ” ” ” ”

” ” ” প্রমাতামহী ” ” ” ” ” ”

” ” ” বৃদ্ধপ্রমাতামহী ” ” ” ” ” ”

বিশেষ উল্লেখযোগ্য এই যে উপরি লিখিত দ্বাদশ জনের কেহ জীবিত থাকিলে তাঁহাকে বাদদিয়ে তৎ-ঊর্দ্ধ্ব্রতন ব্যক্তিকে ধরিয়া দ্বাদশ সংখ্যা পূরণ করিতে হইবে ।


অতঃপর নিম্নলিখিত মন্ত্র পাঠ পূর্ব্বক অঞ্জলিত্রয় সতিল জল, জলাভাবে একবার মাত্র সতিল জল দিবেন, যথা– ওঁ নমঃ অগ্নিদদগ্ধাশ্চ যে জীবা, যেহপ্যদগ্ধাঃ কুলে মম ।

ভূমৌ দত্তেন তৃপ্যন্তু, তৃপ্তা যান্ত পরাং গতিং ।।


বাংলা অনুবাদ– আমার বংশে যে সকল জীব অগ্নিদ্বারা দগ্ধ হইয়াছেন, ( অর্থাৎ যাঁহাদের দাহাদি সংস্কার হইয়াছে ) এবং যাঁহারা দগ্ধ হন নাই ( অর্থাৎ কেহই তাঁহাদের দাহাদি-সংস্কার কার্য্য করেনাই ) তাঁহারা তৃপ্ত হউন ও স্বর্গ লাভ করুন ।


ওঁ নমঃ যে বান্ধবা অবান্ধবা বা, যে অন্য জন্মনি বান্ধবাঃ ।

তে তৃপ্তিং অখিলাং যান্ত, যে চ অস্মৎ তোয়-কাঙ্খিণঃ ।।


বাংলা অনুবাদ–যাঁহারা আমাদের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা বন্ধু নহেন, যাঁহারা জন্ম-জন্মান্তরের আমাদিগের বন্ধু ছিলেন, এবং যাঁহারা আমাদের নিকট হইতে জলের প্রতাশা করেন , তাঁহারা সম্পূর্ণরূপে তৃপ্তিলাভ করুন ।


।। ভীষ্ম- তর্পণ।।


ইহা ‘’পিতৃ- তর্পণের ‘’ পরে করিবেন এবং পরে কৃতাঞ্জলি হইয়ি প্রার্থনা করিবেন। যথা—


ওঁ নমঃ বৈয়াঘ্রপদ্য- গোত্রায়, সাঙ্কৃতিপ্রবরায় চ ।

অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্ম্মণে ।।


এই মন্ত্র পাঠ করিয়া উক্তরূপে এক অঞ্জলি সতিল- গঙ্গোদক দিবেন এবং পরে কৃতাঞ্জলি হইয়া প্রার্থনা করিবেন । যথা— ওঁ নমঃ ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ , সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়ঃ ।

আভিরদ্ভি- রবাপ্নোতু, পুত্র-পৌত্রৌচিতাং ক্রিয়াং ।।





বাংলা অনুবাদ— বৈয়াঘ্রপদ্য যাঁহার গোত্র,সাঙ্কৃতি যাঁহার প্রবর, সেই অপুত্রক ভীষ্মবর্ম্মাকে এই জল দিতেছি।

শান্তনু-তনয় বীর, সত্যবাদী, জিতেন্দ্রিয় ভীষ্মবর্ম্মা এই জল দ্বারা পুত্র-পৌত্রচিত তর্পণাদি-ক্রিয়া-জনিত তৃপ্তি লাভ করুন ।


।। রাম-তর্পণ ।।

সম্পূর্ণ তর্পণে অশক্ত হইলে , এই তর্পণ করতে হয় । বনবাসকালে শ্রীরামচন্দ্র এই মন্ত্রে তর্পণ করিতেন ।

তিনবার জল দিবেন, গঙ্গাজলে তর্পণ করিলে তোয়েন স্থলে গঙ্গোদকং বলিবেন । এর পরে এই মন্ত্র —


ওঁ নমঃ আ-ব্রহ্মভুবনাল্লোকা, দেবর্ষি-পিতৃ-মানবাঃ ,

তৃপ্যন্তু পিতরঃ সর্ব্বে , মাতৃ-মাতামহাদয়ঃ ।

অতীত-কুলকোটীনাং, সপ্তদ্বীপ-নিবাসিনাং ।

ময়া দত্তেন তোয়েন, তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ং ।।


বাংলা অনুবাদ– ব্রহ্মলোক অবধি যাবতীয় লোক সমীপে অবস্থিত জীবগণ , ( যক্ষ, নাগাদি ) , দেবগণ, ( ব্রহ্মা , বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি ) , ঋষিগণ ( মরীঢি, অত্রি, অঙ্গিরাদি ), পিতৃগণ ( দিব্য- পিতৃগণ অর্থাৎ অগ্নিষ্বাত্তাদি ), মনুষ্যগণ ( সনক, সনন্দ প্রভৃতি ), পিতৃ-পিতামহাদি এবং মাতামহাদি সকলে তৃপ্ত হউন ।

আমার কেবল এক জন্মের নহে এবং কেবল আমারও নহে , আমার বহুকোটিকুল, বহু জন্মান্তরে গত হইয়াছেন, সেই সেই কুলের পিতৃ-পিতামহাদি , ও সপ্তদ্বীপবাসী ( জম্বু, প্লক্ষ, শাল্মলি, কুশ, ক্রৌঞ্চ, শাক, পুষ্কর, এই সপ্তদ্বীপ ) সমুদয় মানবগণের পিতৃ-পিতামহাদি এবং ত্রিভুবনের যাবতীয় পদার্থ ( স্থাবর-জঙ্গমাদি ) আমার প্রদত্ত জলে তৃপ্ত হউক ।


।। লক্ষণ-তর্পণ ।।


রাম-তর্পণেও অশক্ত হইলে সকলে এই তর্পণ করিবেন, কারণ বনবাসকালে রাম ও সীতার শুশ্রূষায় নিযুক্ত থাকায় সময়াভাবে, লক্ষণ এই বলিয়া তর্পণ করিতেন । তিনবার সতিল জল দিলেই হবে ।

বলতে হবে—ওঁ নমঃ আব্রহ্মস্তস্বপর্য্যন্তং জগৎ তৃপ্যতু ।


বাংলা আনুবাদ—ব্রহ্মা হইতে তৃণ পর্ষ্যন্ত জগৎ , জগতের লোকে, স্থাবর জঙ্গমাদি, সকলে তৃপ্ত হউক ।


।। বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদক ।।


স্নানের পরে বস্ত্র নিংড়ানো জল পয়ে দিতে নাই, যেহেতু বস্ত্র নিংড়ানো জলে যাঁহাদের কেহ কোথাও নাই তাঁহাদের তর্পণ করিতে হয়।

যথা—ওঁ নমঃ যে চাস্মাকং কুলে জাতা, অপুত্রা-গোত্রিণো মৃতাঃ ।

তে তৃপ্যন্তু ময়া দত্তং, বস্ত্র-নিষ্পীড়নোদকং ।।

বাংলা অনুবাদ—যাঁহারা আমাদের বংশে জন্মিয়া পুত্রহীন ও বংশহীন হইয়া গত হইয়াছেন, তাঁহারা মদ্দত্ত বস্ত্র-নিংড়ানো জলে তৃপ্ত হউন ।


উপরোক্ত মন্ত্র পাঠ করিয়া জল হইতে তীরে উঠিয়া স্থলে একবার মাত্র বস্ত্র নিংড়ানো জল দিবেন ।


।। পিতৃস্তুতি ।।

ওঁ নমঃ পিতা-স্বর্গঃ পিতা-ধর্ম্মঃ, পিতাহি পরমং তপঃ ।

পিতরি প্রীতি-মাপন্নে, প্রীয়ন্তে সর্ব্ব-দেবতা ।।

বাংলা অনুবাদ—(স্তুতি) পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম্ম, পিতাই পরম তপস্যা (অর্থাৎ পিতা সেবাই তপস্যা ) পিতা প্রসন্ন হইলে সকল দেবতাই প্রীত হন ।


।। পিতৃপ্রণাম ।।


ওঁ নমঃ পিতৃন্নমস্যে দিবি যে চ মূর্ত্তাঃ,

স্বধাভুজঃ কাম্যফলাভিসন্ধৌ ।

প্রদানশক্তাঃ সকলেপ্সিতানাং, বিমুক্তিদা যেহনভিসংহাতেষু ।।


বাংলা অনুবাদ—যাঁহারা স্বর্গে মূর্ত্তি ধারণ করিয়া বিরাজ করিতেছেন, যাঁহারা শ্রাদ্ধান্ন ভোজন করেন, অভীষ্ট-ফলের কামনা করিলে যাঁহারা সকল বাঞ্ছিত-ফল দান করিতে সমর্থ এবং কোন ফলের কামনা না করিলে যাঁহারা মুক্তি প্রদান করেন , সেই পিতৃগণকে প্রণাম করি ।


।। সূর্য্যার্ঘ্য ।।


সূর্য্যদেবের উদ্দেশে পূর্ব্বদিকে মুখ করে একবার জল দিবেন ।

ওঁ নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ, ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে ।

জগৎসবিত্রে শুচয়ে, সবিত্রে কর্ম্মদায়িণে, ইদমর্ঘ্যং ওঁ শ্রীসূর্য্যায় নমঃ ।।


বাংলা অনুবাদ– হে পরম ব্রহ্মস্বরূপ সবিত্রিদেব ! আপনি তেজস্বী, দীপ্তিমান ; বিশ্বব্যাপী তেজের আধার, জগতের কর্ত্তা, পবিত্র, কর্ম্মপ্রবর্ত্তক; আপনাকে প্রণাম করি ।।


।। সূর্য্য-প্রণাম ।।


ওঁ নমঃ জবাকুসুম-সংঙ্কাশং, কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং ।

ধ্বান্তারিং সর্ব্বপাপঘ্নং প্রণতোহস্মি দিবাকরং ।।

বাংলা অনুবাদ—জবাফুলের ন্যায় রক্তবর্ণ, কশ্যপের পুত্র, অতিশয় দীপ্তশালী, তমোনাশী, সর্ব্বপাপ নাশকারী দিবাকরকে প্রণাম করি ।।


।। অচ্ছিদ্রাবধারণ ।।


অর্থাৎ যে কর্ম্ম করা হইল, তাহা যে অচ্ছিদ্র অর্থাৎ ছিদ্রহীন, নির্দোষ হইল সেই বিষয়ে অবধারণ করাকে ( নিশ্চয় করাকে ) অচ্ছিদ্রাবধারণ বলে । সুতরাং করজোড়ে বলিবেন—

ওঁ কৃতৈতৎ তর্পণকর্ম্মাচ্ছিদ্রমস্তু।।


।। বৈগুণ্য-সমাধান ।।


অচ্ছিদ্রাবধারণের পরে বৈগুণ্য-সমাধান করিতে হয় । বামহস্তে সংযুক্ত দক্ষণ হস্তে জল, হরীতকী, কুশ স্পর্শ করিধা ( নদীতে তর্পণ করিলে, কেবল জল স্পর্শ করিবেন ), তারপরে বলিবেন—

বিষ্ণুরোঁ তৎসৎ অদ্য অমুক মাসে অমুক পক্ষে অমুক তিথৌ অমুক গৌত্রঃ শ্রী অমুক দেবশর্ম্মা কৃতেহহস্মিন্ তর্পণকর্ম্মণিষদ্বৈগুণ্যং জাতং তদ্দোষ প্রশমনায় শ্রীবিষ্ণু স্মরণষ্মহং করিষ্যে । এরপরে নিচের মন্ত্র দশবার জপ করবেন—-


ওঁ তদ্ বিষ্ণোঃ পরমং পদং, সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ । দিবীব চক্ষুরাততং । ওঁ বিষ্ণুঃ , ওঁ বিষ্ণুঃ , ওঁ বিষ্ণুঃ বলিধা দশবার জপ করিবেন ।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা