Breaking

Search Content

Follow Us

বৃহস্পতিবার, ৪ নভেম্বর, ২০২১

2021 ভাইফোঁটার নির্ঘণ্ট ও সময়; ভাইফোঁটা নিয়মবিধি ও ভাই ফোটার রহস্য, ভাতৃদ্বিতীয়া || Bhai fota, Bhai Dooj -2021

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- 2021 সালে ভাইফোঁটার নির্ঘণ্ট ও সময়; ভাইফোঁটা কিভাবে দেওয়া হয়; ভাইফোঁটা দেওয়ার সঠিক নিয়ম ও ভাই ফোটার রহস্য বা  পৌরাণিক ইতিহাস এবং ভাইফোঁটা রীতিনীতি সম্পর্কে ||


ভাইফোঁটার যথার্থ নিয়মবিধি অনুসরণ করে ভাইফোঁটা দেওয়া আবশ্যক, নচেৎ ভাইফোঁটা দেওয়া বা না দেওয়া সমান। 




পরিবারে ভাই ও বোনের সম্পর্ক মজবুত করতে এবং ভাইয়ের দীর্ঘ জীবন কামনার উদ্দেশ্যে ভাইফোঁটা পালন করা হয়ে থাকে। মূলত যোমদেবের উদ্দেশ্যে এইদিন অর্ঘ্য নিবেদন এর মাধ্যমে ভাইফোঁটা করা হয়। শাস্ত্র অনুযায়ী এই দিন যোম দেবকে ভাইফোঁটা দিয়েছিলেন তার বোন- যমুনা। মূলত ভাইয়ের মঙ্গল কামনা এবং নিজের আত্মরক্ষার্থে ভাইফোঁটা দিয়েছিলেন যমুনা। এর পেছনে একটি স্বতন্ত্র কারণও রয়েছে। 


অন্যদিকে এই ভাইফোঁটার রীতি চালু হওয়ার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ভাইফোঁটার দিনেই নরকাসুর নামে এক দৈত্যকে বধ করার পর তার বোন সুভদ্রার কাছে যায় তখন সুভদ্রা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কপালে একটি ফোটা দিয়ে তাকে মিষ্টি খেতে দেয়। তখন থেকেই ভাইফোঁটা উৎসবের প্রচলন শুরু হয়। প্রত্যেক বছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে কালী পূজার পরে এই ভাইফোঁটা উৎসব পালন করা হয় বা অনুষ্ঠিত হয়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকায় এই ভাইফোঁটা কে বলা হয়- ভাতৃদ্বিতীয়া, ভাইদুজ (Bhai Dooj) অথবা ভাই টিকা। পৃথিবীর সমস্ত স্থানে এই ভাইফোঁটা উৎসবটি একটি পবিত্র উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। আর এই প্রবিত্রতাই হলো ভাই ও বোনের পবিত্র সম্পর্কের বন্ধন।


 2021 সাল অর্থাৎ ১৪২৮ বঙ্গাব্দতে এই বছরে দ্বিতীয়া তিথিটি পড়েছে আগামী 5 ই নভেম্বর শুক্রবার রাত্রি 11টা বেজে 14 মিনিট থেকে এবং এই দ্বিতীয় তিথিটি শেষ হচ্ছে 6 নভেম্বর রাত্রি 7 টা বেজে 44 মিনিটে। এই সূত্রে এই বছর ভাইফোঁটার দিন পড়েছে ১৯ শে কার্তিক 6-ই নভেম্বর শনিবার। এই দিন সন্ধ্যার পূর্বে যে কোন সময় ভাইফোঁটা দেয়া গেলেও একটি নির্দিষ্ট সময়ে এই দিন ভাইফোঁটা দেওয়া সব থেকে উত্তম। এই উত্তম সময়কাল টি হল 6 নভেম্বর শনিবার দুপুর 12টা বেজে 27 মিনিট থেকে দুপুর 2 টো বেজে 42 মিনিট পর্যন্ত। অর্থাৎ এই 2 ঘন্টা 15 মিনিট সময় কাল অত্যন্ত শুভ হিসেবে গণ্য। তাই সম্ভব হলে এই সময়ের মধ্যে ভাইফোঁটা দেওয়ার চেষ্টা করুন।


ভাইফোঁটার বিধি 

ভাইফোঁটার বিধি এই বিষয়টি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভাইফোঁটা যেহেতু ভাই এবং বোনের পবিত্র সম্পর্কের বন্ধন তাই এক্ষেত্রে উভয় কেই এই বিধি মেনে চলা প্রয়োজন। 


প্রাতঃকালে ঘুম থেকে উঠে যে জিনিসটি সবার আগে সংগ্রহ করা প্রয়োজন তাহলো ভোরের শিশির এবং দূর্বা। এরপরে প্রয়োজন চন্দন এবং মিষ্টি দই। এই সামগ্রী গুলি একটি কাঁসা অথবা পিতলের থালায় রাখবেন। সঙ্গে রাখবেন কিছুটা ধান,এক ছড়া কলা,একটি পান ও সুপারি এবং একটি খোসা ছাড়ানো নারকেল। ভাইফোঁটার এই বিধিটি যদি উপোস করে করতে পারেন তাহলে খুবই ভালো। আর যদি না পারেন সেক্ষেত্রে ফল আহার, সাবু অথবা দুগ্ধ সেবন করে করা যেতে পারে। এই দিন অবশ্যই সকাল-সকাল স্নান পর্ব সেরে নেওয়া প্রয়োজন।


ভাইফোঁটা কিভাবে দেওয়া হয়

ভাইফোঁটা দেওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। তাই অনেকেই কিন্তু যেমন তেমন ভাবে এই কাজটি করে থাকেন। একটি করা কিন্তু একদমই উচিত নয়। এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলি অবশ্যই এই সময় মেনে চলতে হয়। সেগুলি হল- 

     যেখানে বা যে স্থানে এই ভাইফোঁটার ক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে সেখানে অবশ্যই গঙ্গাজল ছিটিয়ে নেবেন এবং ভাই যতে পূর্ব দিকে থাকে সেই রূপ বসার ব্যবস্থা করতে হবে। 

ভাই ও বোনের মাঝে প্রয়োজনীয় উপকরণ গুলি রাখুন। উক্ত স্থানে একটি প্রদীপ এবং ধূপকাঠি প্রজ্জলন করুন। আর মনে মনে গণেশ জি কে স্মরণ করে বলুন-

 "ওম শ্রী গনেশায় নমঃ" || 


এরপর চন্দন, দই এবং শিশিরের মিশ্রণ করে মিশ্রণটি বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে স্পর্শ করে বলুন- 

" ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা ।

যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা ||

যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা ।

আমি দেই আমার ভাইকে ফোঁটা "||



"যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হলো চিরজীবী। 

আমার হাতে ফোঁটা পেয়ে আমার ভাই হোক দীর্ঘজীবী" ||


এই মন্ত্রটি তিনবার উচ্চারণ করে তিনবার কনিষ্ঠা আঙ্গুল দিয়ে আপনার ভাইকে ফোঁটা দিন এবং ফোঁটা দেওয়ার সময় পাশ থেকে শঙ্খের ধ্বনি এবং উলুর ধ্বনি প্রদান করুন।


ফোটা দেওয়ার পর আপনি আপনার বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে প্রদীপের তাপ নিয়ে তিনবার আপনার ভাইয়ের মাথায় স্পর্শ করুন। তারপর ফুল, ধান-দূর্বা আপনার ভাইয়ের মাথায় দেবেন এবং আপনার সাজানো তত্ত্বটি অর্থাৎ কাঁসা বা পিতলের থলাটি মাটি থেকে তিনবার তুলে ভাইয়ের কপালে স্পর্শ করবেন। 


এই সমস্ত পর্ব শেষ হয়ে যাবার পর ভাইকে পান-সুপারি এবং গোটা নারকেল নিবেদন করবেন। সমস্ত প্রক্রিয়াটি করার সময় অবশ্যই তিনবার শঙ্খধ্বনি এবং আরতী প্রদান করবেন। এরপর ভাই ও বোন অবশ্যই পরস্পরকে মিষ্টিমুখ করাবেন এবং ছোট-বড় হিসাবে প্রণাম করবেন।


অবশেষে যে বিষয়টি করতে হবে তা হল ভাই এবং বোন তাদের পছন্দ অনুযায়ী দুজন দুজনকে উপহার প্রদান করবেন। ভাই যদি ভগিনীকে বস্ত্র প্রদান করে তাহলে সেটি অত্যন্ত শুভ। এই দিন বোনের হাতে ভজন বা রান্না খাওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। তাই ভাইয়ের একপ্রকার পছন্দের রান্না করে অবশ্যই খাওয়াতে হয় বোনেদের।


এই ক্ষেত্রে আরেকটি কথা বলে রাখি ভাই যদি বড় হয় অর্থাৎ দাদা কে কেউ যদি ফোটা দেন তাহলে সেক্ষেত্রে হাতের অনামিকা আঙ্গুল টি দিয়ে ফোটা দেবেন এবং উভয় ক্ষেত্রেই বাম হাতের আঙুল ব্যবহার করবেন। কারণ মেয়েদের ক্ষেত্রে বাম হাতকেই শুভ বলে গণ্য করা হয়ে থাকে।


আশা করি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা যারা ভাইফোঁটা দিতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন। 

আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।

 ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 নমস্কার, ধন্যবাদ।। 

ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা