Breaking

Search Content

Follow Us

মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০২১

ছটপূজা সম্পর্কে কিছু অজানা কথা- ছট পূজা কি, ছট পূজার নির্ঘণ্ট, নিয়মবিধি ও সময় || chhath puja

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- ছট পূজা। ছট পূজা আসলে কি ? কেনইবা এই পূজা করা হয়ে থাকে || কারা কিভাবে এই ছটপূজা করেন ? ‌‌ কেনই বা এই পূজার নাম ছট পূজা || এছাড়াও সনাতন ধর্মে এই ছট পূজার গুরুত্ব কতখানি এবং এই বছর ছট পূজা কোন দিনে পড়েছে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এই লেখাটির মাধ্যমে ।




 সনাতন ধর্মে যে পাঁচজন নিত্য দেবদেবীর পূজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে একজন হলেন সূর্য দেবতা। সেই সূর্যদেবতা এবং তাঁর পত্নী ঊষা তথা প্রত্যুষার উদ্দেশ্যেই এই ছট পূজা করা হয়ে থাকে। সূর্যের রশ্মি কে -'ছটা' বলা হয়। আর এই 'ছটা' থেকেই 'ছটি' কথাটি এসেছে। অন্যদিকে সূর্যের পত্নী উষা দেবীকেও ছটি মাইয়া হিসেবে গণ্য করা হয়।আর যেহেতু হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে প্রত্যেক বছর অমাবস্যার কালীপূজা শেষ হলে, কালী পূজার ছয় দিন পরে কার্তিক মাসের ষষ্ঠীর দিন এই সূর্য দেবতার পূজা করা হয়ে থাকে সেই কারণেই এই পূজার নাম- ছটপূজা।


আমরা বাংলা ভাষায় যাকে "৬ বা ষষ্ঠ" বলে থাকি, 'মৈথিলী' ভাষায় বা 'ভোজপুরি' ভাষায় এই ছয় কেই বলা হয়- ছটি। তাই এই পূজার অপর নাম- ছটি মাইয়ার পূজা। এই পূজাকে অনেক জায়গায়- ডালা পূজা, ডালা ছট বা সূর্য ষষ্ঠী  বলে থাকে।


 সনাতন ধর্ম অনুসারে যে দেবকে প্রত্যক্ষ দেখা যায় তিনি হলেন সূর্যদেব। তিনি সমস্ত শক্তির উৎস। যেহেতু সূর্যদেবকে প্রত্যেকদিন প্রত্যক্ষ করা যায় সেই কারণে এই ছট পূজায় কোনো মূর্তির প্রয়োজন পড়ে না। ভারতবর্ষে হিন্দু ভাষাভাষী অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে এই পূজার চল বেশি থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ এমনকি বিভিন্ন দেশেও এই ছটপূজা করা হয়ে থাকে। তবে এই পূজা সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেখা যায় মূলত উত্তর ভারতের-বিহার, ঝাড়খন্ড, রাজস্থান এবং পশ্চিমবঙ্গের হিন্দিভাষী মানুষদের মধ্যে। এছাড়াও নেপাল এবং ভুটানে এই পূজার যথেষ্ট প্রাধান্য দেখা যায়। 

 

হিন্দি ভাষীদের মধ্যে ছটপূজার প্রাধান্য দেখা দিলেও সনাতন ধর্মে এই ছটপূজার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ ঋকবেদে সর্বপ্রথম সূর্য বন্দনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রামায়ণ এবং মহাভারতের কাহিনীতেও এই ছট পূজার বর্ণনা পাওয়া যায়। রামায়ণে শ্রীরামচন্দ্র লংকা থেকে অযোধ্যায় ফিরে আসার পর রামচন্দ্রের রাজ্য অভিষেক করা হয়। রামচন্দ্র তখন তার পত্নী সীতার সঙ্গে  প্রজা কল্যাণের উদ্দেশ্যে রামরাজ্য স্থাপনের জন্য কার্তিক মাসের এই শুক্ল ষষ্ঠীতে সূর্যের উপাসনা করেছিলেন।


অন্যদিকে মহাভারতেও উল্লেখ পাওয়া যায় পঞ্চপান্ডবের স্ত্রী দ্রোপদী কৌরব দের হাত থেকে হস্তিনাপুরের রাজ্যপাট ফিরে পাওয়ার জন্য এই ছটপূজা তথা সূর্যদেবতার বন্দনা করেছিলেন। এছাড়া আমরা প্রায় প্রত্যেকেই জানি দানবীর কর্নের কথা। মহাভারতের দানবীর কর্ণ প্রত্যেকদিন সকালবেলায় স্নান সেরে তার অঙ্গরাজ্যের কল্যাণের জন্য সূর্যের উপাসনা করতেন।


এছাড়াও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুযায়ী মা অন্নপূর্ণার ছটপূজার উল্লেখ পাওয়া যায়। একবার আষাঢ় মাসে বর্ষার কারণে চাষীরা খেতে শস্য বুনে দেয়। কিন্তু ধীরে ধীরে বর্ষা নিশ্চুপ হয়ে পড়ে। তখন সূর্যের প্রবল দাবদাহে মাঠ-ঘাট পুড়ে যাবার উপক্রম হয়। চাষীদের ঘরে অন্নাভাব বা অন্নের অভাব দেখা যায়। চাষিরা তখন মা অন্নপূর্ণা শরণাপন্ন হন। মা অন্নপূর্ণা উপায় না দেখে সূর্যদেবের ধ্যানে মগ্ন হন। কিন্তু সূর্য দেবের ধ্যান করে বিশেষ ফল পাওয়া যায় না। ধরিত্রীর অবস্থা সূর্যের প্রখর রোদে ক্ষীণ্য হয়ে যায়। এই অবস্থা দেখে সকল দেবতারা সূর্য শরণাপন্ন হন। সূর্যদেব তখন মা অন্নপূর্ণা কে কার্তিক মাসের শুক্ল ষষ্ঠীতে গঙ্গাতীরে গিয়ে সূর্য উপাসনা করার বিধান দেন। এরপর মা অন্নপূর্ণা চাষীদের কল্যাণে ভক্তি ভরে সূর্যের উপাসনা করেন এবং ধরণীকে শস্য-শ্যামলা করে তোলেন। সেই থেকেই পরিবারের মহিলারা মূলত পরিবার ও বিশ্বের কল্যাণের উদ্দেশ্যে ছট পূজার মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন।


ছটপূজার প্রধান দিন ষষ্ঠীর দিন হিসেবে গণ্য করা হলেও মূলত এই পূজা শুরু হয় চতুর্থীর দিন থেকেই এবং তা চলে সপ্তমীর দিন পর্যন্ত। 


মোট এই চারদিন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে এই ছটপূজা পালন করা হয়ে থাকে। যারা ছট পূজার ব্রত করে থাকেন তারা ভাইফোঁটার পরের দিন থেকেই নিরামিষ খাবার খেতে থাকে। ছট পুজোর প্রথম দিন অর্থাৎ চতুর্থীর দিন যারা ছটপূজা করে থাকেন তারা শুদ্ধ বস্ত্রে ছট পূজার জন্য ব্রতী হন এবং সেই দিন লবন ছাড়া ছোলার ডাল ও মিষ্টি কুমড়ো দিয়ে ভাত রান্না করে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে প্রসাদ হিসেবে সেটি গ্রহণ করেন।

ছটপূজার দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ পঞ্চমীর দিন ঘরোয়া ব্রত পালনের দিন। এই দিন থেকে ছট পূজার নির্জলা ৩৬ ঘন্টা উপবাস শুরু হয়। এইদিন ছট ব্রতীরা প্রথমে কাঠের আঁচে মাটির উনুনে গুড়ের পায়েস রান্না করে খেয়ে তারপর ছট পূজার ব্রত রাখেন এবং ঠেকুয়া, নাড়ু ইত্যাদি তৈরি করে থাকেন প্রসাদ হিসাবে।

ছট পূজার তৃতীয় দিনটি হলো সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটিকে ষষ্ঠীর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। এই দিনে ছট ব্রতীরা সূর্যাস্তের সময় ডুবিত সূর্যকে গঙ্গা ঘাটে ঘামা অথবা ডালা ভর্তি করে গোটা আখ,  গোটা হলুদ, নারকেল ,কলা এছাড়াও পূজার বিভিন্ন উপকরণ নিয়ে গিয়ে সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে ভক্তিপূর্ণ মনে নিবেদন করেন।

ছট পূজার চতুর্থতম দিন অর্থাৎ সপ্তমীর দিন ছট ব্রতীরা সূর্যোদয়ের সময় ঘাটে গিয়ে আবারও সূর্য দেবতার উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য নিবেদন করে ছট উপবাস ভঙ্গ করেন।  

 

[ছট পূজার সময় 2021]

এই বছরে 2021 ছটপূজার ষষ্ঠীর দিন পড়েছে 10ই নভেম্বর বুধবার। এবং এই ছট পূজা শেষ হবে পরের দিন বৃহস্পতিবার অর্থাৎ 11 ই নভেম্বর সকালবেলায়।


এমনটা বিশ্বাস করা হয় কোন ব্যক্তি যদি এইসকল যথার্থ নিয়ম মেনে ছট ব্রত পালন করেন তাহলে তার সকল মনস্কামনা পূর্ণ হয়।

এছাড়াও ছট পূজার একটি বৈজ্ঞানিক দিকও রয়েছে। ছটপূজার ব্রতর মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রাণ শক্তি কে আরো উজ্জীবিত করতে পারি। সমস্ত কজে উৎসাহ নিয়ে আসতে পারি। তাই সূর্যের উপাসনা আমাদের প্রত্যেক দিনই করা প্রয়োজন। সম্পূর্ণ সুস্থ এবং নিরোগ থাকতে সূর্যের উপসনা কিভাবে করতে হয় সেই সম্পর্কে একটি লেখা আগেই প্রকাশ করেছি। প্রয়োজন বোধ করলে দেখে নিতে পারেন-CLICK HERE



আশাকরি লেখা টি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

 ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

 নমস্কার, ধন্যবাদ।।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা