নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- "ভূত চতুর্দশীর"- পৌরাণিক গল্প বা রহস্য ; 'ভূত চতুর্দশী দিন'- কেন ১৪ রকমের শাক খেতে হয় এবং কেন ১৪ টি প্রদীপ বাড়িতে জালতে হয় ||
পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে আমাদের বর্তমান বাংলা নিয়মরীতি কানুন বেশ আলাদা । তাদের আদব-কায়দা সাথে আমাদের আদব-কায়দার মিলও খুব কম পরিমাণে দেখা যায়। কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সমাজের মিল প্রত্যক্ষ করা যায়। সেটি হল 'ভূত চতুর্দশী' বলে যা আমাদের হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বীরা মেনে চলেন, সেটাই পশ্চিমী দুনিয়াতে 'হ্যালোইন উৎসব' নামে পরিচিত।
এই 'ভূতচতুর্দশী' মূলত কালী পূজার আগের দিন অর্থাৎ দীপান্বিতা অমাবস্যা তিথিতে হয়। হিন্দু সনাতন ধর্ম অনুযায়ী বিশ্বাস করা হয় এই ভূতচতুর্দশীর দিন আমাদের মৃত পূর্বপুরুষেরা মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন। তাই তাদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য ও তাদের খুশি করতে এবং অতৃপ্ত আত্মার অভিশাপ থেকে বাঁচতে এই ভূত চতুর্দশীর দিন বিভিন্ন আচার-আচরণ পালন করা হয়।
ভূত চতুর্দশীর পৌরাণিক গল্প বা রহস্য :-
পুরানে একটি দৈত্য বা দানবের উল্লেখ পাওয়া যায়। তার নাম হল- বলি। সে ছিল সমস্ত রাক্ষসদের প্রধান রাজা। রাক্ষসরাজ বলি একসময় তার সর্ব ক্ষমতা দিয়ে যখন একসঙ্গে স্বর্গ, মর্ত, পাতাল দখল করে নিল তখন চারিদিকে শুরু হলো ভয়ঙ্কর হত্যালীলা। এর থেকে রেহাই পেল না দেবতারাও। শেষমেষ দেবতারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে সাহায্য কামনা করল এবং দেবগুরু বৃহস্পতি ভগবান বিষ্ণু কে একটি উপায় বলে দিলেন যে কিভাবে দানবরাজ বলিকে হত্যা করা যায়। এরপর ভগবান বিষ্ণু বামুনের ছদ্দবেশ নিয়ে দানবরাজ বলির সম্মুখে গিয়ে উপস্থিত হলেন। এরপরে ভগবান বিষ্ণু তার কাছে ৩ পায়ের সমান জমি ভিক্ষা চাইলেন। দানবরাজ তা শুরুতেই বুঝতে পেরে যায় যে বামুনের ছদ্মবেশে জমি ভিক্ষা চাইতে এসেছেন স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু। বুঝে যাবার পর তাও দানবরাজ বলি জমি দিতে রাজি হয়ে যান। এরপর ভগবান বিষ্ণু তার দু-পা দিয়ে স্বর্গমর্ত দখল করেন। এরপর তার তৃতীয় পা বের হয়ে এলো তার নাভি থেকে যা রাখলেন বলিরাজ এর মাথার উপর। সঙ্গে সঙ্গেই পাতালে নেমে গেলো দানবরাজ বলি। সেই পাতালি হলো দানবরাজ বলির আবাস। কিন্তু যেহেতু দানবরাজ বলি জেনেশুনে জমি দান করেছিলেন এবং ভগবানের কাছে তার আনুগত্য স্বীকার করায় ভগবান বিষ্ণু তার উপর কিছু করুনা করলেন। প্রতিবছর পৃথিবীতে তার পূজা হবে বলে এই বর তাকে দিলেন ভগবান বিষ্ণু। সেই থেকেই কালী পূজার আগের দিন রাত্রে ভূতচতুর্দশীর দিন পাতাল থেকে উঠে আসে নিজের পুজো নেওয়ার জন্য দানবরাজ বলি। তার সহচর হিসেবে তার সাথে থাকে শত ভূত, প্রেআত্মা এবং অশরীরী। মূলত এগুলিই তার প্রতীক। এই কারণেই আমরা হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বীরা এই ভূত চতুর্দশীর দিন বেশ কিছু আচার-আচরণ পালন করে থাকি। যাতে সমস্ত নেগেটিভ শক্তি থেকে আমরা নিজেদেরকে দূরে রাখতে পারি।
ভূতচতুর্দশীর বিভিন্ন আচার আচরণ বা রীতিনীতি:-
ভূত চতুর্দশীর দিন ১৪ প্রকার শাক ভক্ষণের রীতি
ভূত চতুর্দশী দিন পালিত সবথেকে প্রধান রীতি হল ১৪ প্রকার শাক ভক্ষণ করা। বেশিরভাগ সনাতন ধর্মালম্বী হিন্দুরা মনে করেন মৃত্যুর পর মানুষের দেহ পঞ্চভূমিতে বিলীন হয়ে যায়। পঞ্চভূমি অর্থাৎ মাটি, জল, আকাশ,বায়ু ও অগ্নি। এর মানে আমাদের পূর্বপুরুষেরাও এই পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে আছে। তাই এই পঞ্চভূমির অন্তর্গত প্রকৃতির কোল থেকে তুলে আনা এই ১৪ প্রকার শক খেয়ে পূর্বপুরুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয় এই ভূতচতুর্দশীর দিনটি।
১৪ শাক ধোয়ার জন্য যে জল ব্যবহার করা হয়, তা ছিটিয়ে দেওয়া হয় বাড়ির অন্ধকার কোনা গুলোতে। এই ১৪ প্রকার শাক গুলি হল -ওল, পুঁই, বেতো, সর্ষে, কালকাসুন্দে, নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, হিলঞ্চ, পলতা, শৌলফ, গুলঞ্চ, ভাঁটপাতা ও শুষণী- এই ১৪ রকমের শাক একসঙ্গে রান্না করার প্রথা রয়েছে ভূত চতুর্দশীতে। মূলত দুপুর বেলায় এই শাক রান্না করে খাওয়া হয়।আবার ঋতুর পরিবর্তনের কারণে এই সময়টা অসুখ বিসুখ হয় বেশি, তাই ১৪ রকমের শাক খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। সেই বিশেষ ১৪ রকমের শাক এখন আর পাওয়া যায় না বললেই চলে।
ভূত চতুর্দশীর দিন ১৪ টি প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের নীতি
সনাতন ধর্ম মতে ভূত চতুর্দশী দিন রাতে মর্ত্যে নেমে আসেন আমাদের ১৪ পুরুষরা। ভূত চতুর্দশীতে তাই গৃহস্থ বাড়িতে সন্ধের পর ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি আছে।আবার অনেকে মনে করেন অশুভ শক্তি দূর করতে এই দিন সারা রাত আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়।
এছাড়া অন্যান্য খুঁটিনাটি বিভিন্ন রীতিনীতি পালন করা হয় এই ভূত চতুর্দশীর দিন।
এ সম্পর্কিত বিস্তারিত অধিক জানতে আমাদের এই অমৃত কথা ওয়েবসাইটে ইতিপূর্বেই ধনতেরাসের দিন থেকে ভূতচতুর্দশী, কালীপূজা-দীপাবলি প্রত্যেকটি দিনে করণীয় নিয়ম বিধি সম্পর্কে একটি লেখনি প্রকাশ করা হয়েছে প্রয়োজন বোধ করলে সেটি দেখে নিতে পারেন-CLICK HERE
আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার,ধন্যবাদ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা