নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- 'অলক্ষী দেবী'- কে এবং 'অলক্ষী বিদায়'- কি, 'অলক্ষী বিদায় প্রক্রিয়া'- কিভাবে করা হয় ||
অলক্ষী দেবী- সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্মের একজন দেবী হলেন এই অলক্ষী। এই অলক্ষী দেবী মূলত দুর্ভাগ্য বহন করে। তার দৃষ্টিতে মূলত দুর্ভাগ্য ও অমঙ্গল নেমে আসে। এই কারণে অলক্ষীকে ধ্বংস করার মন্ত্র বা অলক্ষী নাশন মন্ত্রও পাঠ করা হয়। অলক্ষী হলেন দুর্ভাগ্যের দেবী এবং মা লক্ষ্মীর জ্যেষ্ঠা ভাগিনী। এছাড়াও কল্কি পুরাণ এবং মহাভারতেও উল্লেখ আছে এই অলক্ষ্মী দেবীর কথা। সেখানে উল্লেখিত অলক্ষী হলেন- দৈত্য কলির দ্বিতীয়া স্ত্রী। 'কলি' হলেন নরকে বসবাসকারী অশুরু ও ভগবান বিষ্ণুর দশম অবতার কল্কির রূপের শত্রু হলো এই -কলি। এই অলক্ষী দেবীর অন্যান্য কিছু নাম হল- নৈর্ঋতা বা নির্ঋতি, জ্যেষ্ঠা। কৈলাস মন্দির, কাঞ্চিপুরমে অলক্ষ্মী বা জ্যেষ্ঠা দেবীর খোদাই করা মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। এই অলক্ষী দেবীর বাহন হল- গাধা।
অলক্ষী বিদায়- অলক্ষী মূলত দুর্ভাগ্য এবং অমঙ্গলের দেবী। তার দৃষ্টিতে প্রতিটি বাড়িতে দুর্ভাগ্য ও অমঙ্গল নেমে আসে। সে কারনে হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী দীপাবলির দিন সন্ধ্যাবেলায় হিন্দু ঘরের রমণীদের এই অলক্ষী বিদায়ের জন্য বিভিন্ন ক্রিয়া করতে দেখা যায়। এই অলক্ষী বিদায় প্রক্রিয়ার জন্য মূলত হিন্দু ঘরের রমণীরা নিজে করে না। এর জন্য প্রয়োজন পড়ে পুরোহিতের। এই অলক্ষী কে অমঙ্গল ও দুর্ভাগ্যের দেবী বলে মনে করা হলেও তিনি হলেন- অন্যব্রতদের লক্ষ্মী বা শস্য দেবতা। সেই কারণে মাতৃশক্তির জ্যৈষ্ঠা রূপকে অর্থাৎ মা লক্ষ্মীর জ্যেষ্ঠা ভগিনীকে বিদায় দিয়ে লক্ষীকে বরণ করা হয় এই ক্রিয়ার মাধ্যমে।
অলক্ষী বিদায় প্রক্রিয়া- মূলত দীপান্বিতা অমাবস্যার তিথিতে লক্ষ্মী পূজা করার পূর্বে 'অলক্ষ্মী বিদায়' প্রক্রিয়া করা হয় দীপাবলি সন্ধ্যেবেলায়। বাম হাতে গোবর নিয়ে তাতে দুটি করি দিয়ে দেবীর চোখ তৈরি করা হয় এবং গোবরের বাকি অংশটিকে ছেঁড়া চুল দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়। এইভাবে একটি অলক্ষী দেবীর মূর্তি নির্মাণ করা হয়। সেই মূর্তিটিকে গৃহের উঠানের এক কোণে রাখা হয় অথবা ঘরের বাইরের দিকের দেয়ালে রাখা হয়। মূর্তিটিকে ঘরে নেওয়া হয় না। তারপরে সেই মূর্তিটিকে পূজা করা হয়। পূজার জন্য তৈরি করা মূর্তিটির সামনে শুদ্ধ আসন পেতে ভক্তিপূর্ণ মনে বসতে হয়। তারপরে আবার বাম হাতে ফুল নিয়ে পূজা করা হয়। প্রথমে বা হাতে ফুল নিয়ে অলক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র পাঠ করতে হয় -
[অলক্ষ্মীর ধ্যান মন্ত্র]
"ওঁ অলক্ষ্মীং কৃষ্ণবৰ্ণাং কৃষ্ণবস্ত্রপরিধানাং কৃষ্ণুগন্ধানুলেপনাং
তৈল্যাভ্যািক্তশরীরাং মুক্তকেশীং দ্বিভুজাং বামহস্তে গৃহীত
ভস্মনীং দক্ষিণহস্তে সন্মার্জনীং গর্দভারূঢ়াং লৌহাভরণভূষিতাং বিকৃতদ্ৰংষ্ট্ৰাং কলহপ্ৰিয়াম''||
এই অলক্ষী ধ্যান মন্ত্রটি পাঠ করে অলক্ষী দেবী কে আহবান করে তারপরে পূজা করা হয়। ধ্যান মন্ত্রটি পাঠ করে অলক্ষী দেবীকে আহবান করার পর আরেকটি মন্ত্র জপ করা হয়-
"ওঁ অলক্ষ্মী ত্বং কুরূপাসি কুৎসিতস্থানবাসিনী
সুখরাত্ৰৌ ময় দত্তাং গৃহ পূজ্যঞ্চ শাশ্বতীম্" ||
এই মন্ত্রটি পাঠ করার পর এই পূজা শেষে কুলা পিটাতে পিটাতে গৃহবধূ বা রমণীরা একত্রে তিন রাস্তার মোড়ে পাটকাঠি পুড়িয়ে সেই মূর্তিটিকে ফেলে দেওয়া হয় এবং সবে মিলে একত্রে ধনী তুলে বলা হয়-
"লক্ষী ঘরে আয়, অলক্ষী যা ।
অথবা, অলক্ষী বাইরে যা, লক্ষী ঘরে আয়" ||
আশাকরি লিখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে যারা অলক্ষী বিদায় প্রক্রিয়া করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটি ফলো করতে পারেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার, ধন্যবাদ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা