নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- 'সূর্য প্রণাম' 'সূর্য নমস্কার' || সূর্য নমস্কার এর উপকারিতা কি কি? সূর্য প্রণাম কিভাবে করবেন ; আর কখনই বা করবেন ?? কারা করবেন এবং এই সূর্য নমস্কার বা প্রণাম করার সময় কোন বিষয়গুলি আমাদের মেনে চলা প্রয়োজন -এই সমস্ত কিছু নিয়ে এই লেখাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করব।
দীর্ঘ পাঁচ হাজার বছর ধরে চলে আসা একটি নিয়ম- যা অনেকে জেনে থাকলেও বেশিরভাগ মানুষ এই বিষয়টি করেন না। অথচ আপনি শুনলে আশ্চর্য হবেন এই একটি বিষয় কেউ যদি নিয়মিত করতে পারে, তাহলে সমস্ত প্রকার মারণ রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । ঠিক তেমনই দীর্ঘদিন শরীরকে সুস্থ ও নীরোগ রাখা সম্ভব হয়। এমনকি শরীরের মধ্যে যদি আগে থেকে এমন কিছু জটিল রোগ থেকে থাকে সেই রোগও দূর করা সম্ভব হয় এই সূর্য নমস্কার এর মাধ্যমে।
এই বিষয়টি আমরা সকলেই জানি এই পৃথিবীর সমস্ত শক্তির উৎস হলেন সূর্যদেব। যাকে সূর্য নারায়ন হিসেবেও আমরা গণ্য করে থাকি। সেই সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে প্রণাম নিবেদন এর একটি নির্দিষ্ট ভঙ্গিমাকেই, সূর্য প্রণাম বা সূর্য নমস্কার বলা হয়। কাকে ভারতীয় যোগশাস্ত্রে আবার বলা হয়ে থাকে, সূর্যের উপাসনা। সনাতন যোগশাস্ত্র অনুযায়ী সূর্যের কিরণ সকল রোগের জীবাণু থেকে বস্তুকে বিশুদ্ধ করে। তাই সূর্যের এইরূপ উপাসনা করা হয়। এটি আসলে একটি যোগাসন এবং যোগব্যায়ামের সমন্বয়ে সৃষ্ট উপাসনা। এটি এমন এক প্রকার উপাসনা যা পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত শরীরের প্রতিটি অঙ্গের উপকার সাধন করে।
সূর্য নমস্কার এর অভ্যাসের ফলে যে উপকার গুলো আমরা পেয়ে থাকি তা হল-রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, পরিপাকতন্ত্র সঠিকভাবে কার্যকর থাকে, হৃদপিন্ড ও ফুসফুস এবং স্নায়ু সবলতা বৃদ্ধি পায়। যকৃতের গোলমাল, বহুমূত্র, সর্দি- কাশি, হাঁপানি, বুক ধড়ফড়ানি, হৃদযন্ত্র, ফুসফুসের ক্রিয়া- বৈষম্য, মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের দুর্বলতা জনিত রোগ সমূহ, সামান্য ক্রমে বেশি কাতরতা প্রভৃতি নিরাময় হয়ে থাকে এবং সেইসঙ্গে মন, শরীর ও আত্মাকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এই সূর্যের উপাসনা।
ভারতীয় বৈদিক জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে কারো জন্ম কুণ্ডলীতে যদি সূর্যদেব পিরিত দুর্বল অথবা মারক অবস্থায় থাকে তাহলে সেই ব্যক্তির মধ্যে- আত্মবিশ্বাসের অভাব, পিতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব, সরকারি বিভিন্ন ঝামেলা অথবা এনার্জির অভাব দেখা দিয়ে থাকে। এই অবস্থায় জাতকের জন্ম কুণ্ডলীতে সূর্যের প্রতিকারের জন্য সূর্য নমস্কার একটি মোক্ষম উপায়। এই সূর্য নমস্কার পাঁচ বছরের উর্ধ্বে যে কোন ব্যক্তি করে এর উপকার পেতে পারেন। তবে এটি নিয়মিত অভ্যাস করা প্রয়োজন। এমনটা নয় যে দুটি দিন করার পর আপনি বন্ধ করে দিলেন। নিয়মিত অভ্যাস এর দ্বারাই আপনি এর সম্পূর্ণ বেনিফিট পেতে সক্ষম হবেন।
এই সূর্য নমস্কার আসলে সূর্যের প্রতি প্রণাম জানানোর আলাদা আলাদা অঙ্গবিন্যাস। যার প্রতিটির আলাদা আলাদা উপকার রয়েছে। একমাত্র এই আসনের মাধ্যমে সমগ্র শরীরের প্রসারণ হয়। এই আসন করার নিয়ম হলো এটি খালি পেটে করতে হয় এবং সঠিক সময়টি হলো ভোর বেলায় অথবা সকালবেলায়। বিশেষ করে সূর্য উদয়ের সময়। সূর্যের দিকে মুখ করে এই আসনটি করতে হয়।
এই সম্পর্কে অধিক বিস্তারিত জানতে আমাদের অমৃত কথাই ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওটি প্রয়োজন বোধ করলে দেখে নিতে পারেন-CLICK HERE
মোট 12 টি যোগের ভঙ্গিমায় এই আসনটি করা হয়ে থাকে।
যার প্রথম ধাপে নমস্কার এর ভঙ্গিতে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হয়। ভঙ্গিটি করার কারণ হলো এমন টা করলে মন এবং শরীর শান্ত হয় এবং সেইসঙ্গে সূর্য প্রণামের বাকি ভঙ্গি গুলি করার জন্য শরীরকে তৈরি করে। সূর্য নমস্কার এর এই প্রথম ভঙ্গিমা কে বলা হয়, প্রণাম আসন। এরপর যেতে হয় দ্বিতীয় ভঙ্গিমায়।
দ্বিতীয় ভঙ্গিমায় ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে, ধীরে ধীরে দুই হাত উপরের দিকে তুলে আস্তে আস্তে পেছনর দিকে নিতে হয়। এই ভঙ্গিমাতে পায়ের গোড়ালি থেকে হাতের আঙ্গুল পর্যন্ত যথাসম্ভব স্ট্রেচিং বা প্রসারণ করতে হয়। আর এই দ্বিতীয় ভঙ্গিমার নাম হল -হস্তউত্তানাসন।
এরপর তৃতীয় ভঙ্গিমায় শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মেরুদন্ড সোজা রেখে কোমর থেকে সামনের দিকে ঝুঁকতে হয়। শ্বাস পুরোপুরি ছাড়া হলে মেঝেতে পায়ের দুপাশে দুই হাত রাখতে হয়। প্রথম প্রথম যদি দুই হাত রাখতে অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে হাঁটু ভাঁজ করে রাখতে পারেন। তৃতীয় এই ভঙ্গিমার নাম- হস্তপদাসন।
এরপর চতুর্থ ভঙ্গিমায় শ্বাস নিতে নিতে ডান পা যতখানি সম্ভব পেছনের দিকে ঠেলুন, ডান হাঁটু মেঝের উপর রাখুন। বা পায়ে হাটু ভাঁজ অবস্থায় থাকে এবং উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিমাকে বলা হয়- অশ্বসঞ্চালন আসন।
পঞ্চম ভঙ্গিমায় শ্বাস নিতে নিতে বাম পা ডান পায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে শরীরকে এক সরলরেখায় আনুন, দুইহাত মেঝের সঙ্গে লম্বালম্বি করে রাখুন। এই ভঙ্গিমাকে বলা হয়- দন্ডাসন।
এরপর ষষ্ঠ ভঙ্গিমায় হালকা ভাবে দুই হাটু মেঝেতে রেখে শ্বাস ছাড়ুন। সামনের দিকে শরীরটি আনুন এবং বুকটি মেঝেতে রাখুন। দুই হাত, দুই পা, দুই হাটু, বুক এবং মুখ শরীরের এই আটটি অংশ যেন মেঝেতে বা মাটিতে ঠেকে থাকে বা স্পর্শ করে। এই আসনের নাম- অষ্টাঙ্গ নমস্কার।
এরপর সপ্তম ভঙ্গিমায় দেহের উপরিভাগ অর্থাৎ বুক থেকে মাথা পর্যন্ত সাপের আকারে উপরের দিকে তুলুন। এই ভঙ্গিতে হাতের কনুই ভাঁজ করে রাখতে পারেন অথবা সোজা করে রাখতে পারেন। তবে দৃষ্টি যেন উপরের দিকে থাকে। শ্বাস নিতে নিতে এই প্রক্রিয়াটি করুন। এই প্রক্রিয়াটি নাম- ভুজঙ্গাসন।
এরপর অষ্টম ভঙ্গিমাতে নিতম্ব উপরের দিকে তুলে পেছন দিকে ঠেলুন শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে। ইংরেজি 'V' -অক্ষরের উলটো আকারের ভঙ্গিতে শরীর থাকবে। এই ভঙ্গীমাটির নাম হল- পর্বতাসন। এই ভঙ্গিমাতে দেখতে অনেকটা পর্বতের আকারের মত দেখতে হয় মানুষের শরীর।
এরপর নবম ধাপে ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে দান পা সামনের দিকে এনে দুই হাতের মাঝখানে রাখুন। বা হাটু এবং নিতম্বকে নিচের দিকে চাপ দিন। দৃষ্টি রাখুন উপরের দিকে। এর নামও- অশ্বসঞ্চালন আসন।
এরপর দশ নম্বর ভঙ্গিমায় পুনরায় হস্তপদাসন টি করুন। তারপর এগারো নম্বর ভঙ্গিমায় পুনরায় হস্তউত্তাল আসনটি করুন এবং সর্বশেষে পুনরায় প্রথম আসনটি করুন। অর্থাৎ প্রণাম আসনটি করুন। এই সর্বশেষ আসনটিকে- তদাশনও বলা হয়। ভাবে 2 থেকে 4 বার করুন, অভ্যাস হয়ে গেলে এটি অবশ্যই 12বার করা প্রয়োজন।
আশাকরি এই লিখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন - যারা সূর্যদেবকে প্রণাম বা নমস্কার করতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশ্যে পারলে শেয়ার করবেন অথবা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার, ধন্যবাদ।।
ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা