শ্রীকৃষ্ণের মতে, কেন খারাপ সময়ে ভগবানকে ডেকে আমরা কোনো ভালো ফল পাই না ||

  নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম।ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই চ্যানেল এর প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল-" শ্রীকৃষ্ণের মতে কেন খারাপ সময়ে আমরা ভগবানকে দেখে কোনো ভালো ফল পাইনা।" খারাপ সময় থেকে বেরোনোর উপায় কী?

বন্ধুরা আমরা জীবনের অনেক পরিস্থিতিতে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাই, কিন্তু সেই সময় ভগবানকে ডেকেও আমরা কোনরূপ ভালো ফল পাই না। কিছুতেই কিছু ফল হয় না বরং সমস্যা যেন আরো দিন দিন বাড়ছে। বন্ধুরা এ রকম আরো অনেক মানুষ আছেন যারা প্রতিদিন ঠাকুরের ভজনা করে, কিন্তু তা সত্বেও তাদের জীবনে সুখ নেই, জীবনের কোনো সমস্যা যেন কিছুতেই দূর হয় না। অথচ এরকম মানুষও আছে যারা ঈশ্বরের কোন ভজনা বা পূজার্চনা করে না অথচ তারা অনেক সুখে আছেন, শান্তিতে আছেন, জীবনে কোন সমস্যা নেই এইরকম দেখে অনেকেরই ঈশ্বরের প্রতি অভিমান হয় এবং বলে যে ভগবান আমি তোমাকে এত ডাকি অথচ আমার কপালে এত কষ্ট। কিন্তু অপরে তোমায় বিশ্বাসও করেনা।তুমি তাকে কত সুখে রেখেছো। আবার অনেকের এরকম খারাপ সময়ে ঈশ্বরকে শতবার ডেকেও কোন ভাল ফল না পাওয়ায় ,ঈশ্বরের উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায়। এরকমটা কেনো হয় সেই প্রসঙ্গে শ্রী শ্রী ঠাকুর দূর্গাপ্রসন্ন পরমহংসদেব   -ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বলা অতি মূল্যবান কথাগুলো বলেন ,যেটি জানলে আপনারাও খারাপ সময় কাটিয়ে ভালো ভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন।

আসলে শ্রী শ্রী পরমহংসদেব- শ্রীকৃষ্ণের এই মূল্যবান কথাগুলি তার শিষ্যদের বলেছিলেন। আসলে 'ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে' এই প্রশ্নটি নারদ মুনি একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসা করেছিলেন।

 ঘটনাটি হল এক গ্রামে দুইজন ভিকারি ছিল। একজন গ্রামে রাজার গুনগান করে ভিক্ষা করতো। ভগবানের নাম মুখে উচ্চারণ করত না। অন্যজন ভিকারির সদাসর্বদা ভগবানের নাম করতো এবং সে ভগবানের নাম করেই ভিক্ষা করতো। দেখা যেত যে প্রথম জনের কাছে বেশি পরিমাণে ভিক্ষা যুটতো । উপরন্তু যে ভগবানের নাম করে ভিক্ষা করত, তার কপালে প্রতিনিয়ত ভিক্ষা যুটত না। হঠাৎ একদিন যে ভগবানের নামে ভিক্ষা করত না, শুধুমাত্র রাজার গুনোগান করে ভিক্ষা করতো তার কপালে একটি মোহর যুটে গেল। অন্যদিকে যে ভিক্ষুক সর্বদা ভগবানের নাম করত তার বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল কেটে গেল। এই দেখে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ভগবানের এ কী রকম বিচার? নারদ মুনির মনেও এই প্রশ্নটিই জেগেছিল, তিনি সরাসরি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করল আপনার কেমন বিচার? এই ঘটনার কারণ কি? তখন শ্রীকৃষ্ণ বলল, যে আমার নাম করে না ,তার এই জন্মে রাজা হওয়ার কথা কিন্তু তার ওই কর্মের জন্য সে রাজা হওয়ার বদলে শুধুমাত্র ওই একটি মাত্র মোহরে এসে ঠেকেছে। আর যে আমার নাম করে তার পুরো বাম পা টাই কেটে যাওয়ার কথা। সে আমার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও আমার নাম করে বলে তার অশুভ কর্ম কমতে কমতে শুধুমাত্র তার বাম পায়ের বুড়ো আঙ্গুল কাটা গেছে। এর ফলে ভগবান শ্রী শ্রী পরমহংসদেব বলেন আমাদের সাধারন দৃষ্টিতে যেটি অমঙ্গল, ভগবানের দৃষ্টিতে সেটি মঙ্গল। কখনই এমনটা ভাবা উচিৎ নয় যে আমি ভগবানকে ডাকছি তা সত্বেও আমার সমস্যা কমছে না বরং আরো বাড়ছে। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভজনা করার ফলেই আমাদের খারাপ কর্মের ফল গুলি আমরা কম-এর উপর দিয়ে পেয়ে যাচ্ছি । হয়তো এই খারাপ সময়ের পরে কোনো ভালো কিছু অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য। এর জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ- অর্জুনকে উদ্দেশ্য করে সকল মানব জাতিকে বলেছিলেন সব সময় ভগবানের সাথে যুক্ত থাকার জন্য ।তাই আমাদের সবসময় ভগবানের সাথে যুক্ত থাকতে হবে তার ভজনা করা, তার প্রতি শ্রদ্ধা এবং নিষ্ঠা রাখতে হবে। ভগবান যা কিছু করেন আমাদের মঙ্গলের জন্যই করেন।

সবশেষে একটি বিষয়ে বলবো নিজের প্রতি আর নিজের ইষ্ট দেবতার প্রতি আস্থা রাখুন সমস্ত প্রকার সংকট তিনি দূর করে দেবেন। তিনি আমাদের সঙ্গে সর্বদায় রয়েছেন তবে সময় বিশেষে তিনি কেবল মাত্র পরীক্ষা করেন। আজ এখানেই শেষ করলাম । নমস্কার, ধন্যবাদ । ভগবান আপনার মঙ্গল করুক।