ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে করতে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরলে কি হয় || ভগবানের সংকেত।

 

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- কিছু কিছু ভক্তের ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে করতে চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বইতে থাকে কেন ?

বন্ধুরা আমরা সকলেই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি একটি নির্দিষ্ট মন্ত্র জপের মাধ্যমে। আবার কেউ কেউ এমন আছেন যারা মন্ত্র জানেন না তারা শুধু ভগবানের সামনে হাত জোড় করে প্রণাম করেন। তবে যাই হোক না কেন ভগবান মন্ত্র বা বিশেষ কোনো দ্রব্যের প্রতি তেমন খুশি হন না, ভগবান শুধুমাত্র ভক্ত বা ব্যক্তির ভাব এর প্রতি তথা শ্রদ্ধা ও ভক্তির ওপর সন্তুষ্ট  হন।

বন্ধুরা আপনারা অনেক সময় দেখবেন কোনো কোনো ব্যক্তি ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে করতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু ধারা বইতে থাকে। আপনারা কি কখনো এটি ভেবেছেন অথবা এই প্রশ্নটা কি আপনাদের মনে কখনো এসেছে যে- 

ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে করতে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরলে কি হয়?  

প্রথমতঃ-  বন্ধুরা ভগবানের পূজা করার অর্থ হলো ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য প্রদান করা নয়। বরং পূজা করার মানে হলো নিজের মনের সঙ্গে ভগবানকে যুক্ত করা। অর্থাৎ নিজেকে ভগবানের কাছে সমর্পণ করাই হল আসল সাধনা। এই ধ্যান বা সাধনা করতে করতে কিছু কিছু ভক্তরা ভগবানের স্বরূপ নিজের সামনে দেখতে পান, তখন সেই ভক্তের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে।

দ্বিতীয়তঃ যদি আপনি নিজেকে ভগবানের সঙ্গে যুক্ত বলে অনুভব করছেন, কোনো সমস্যায় পড়লে নিজের ইষ্ট দেবতা কে স্মরণ করছেন। তাহলে সেক্ষেত্রে তে অনেক সময় আপনার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে ভগবানের সামনে।

অনেক সময় এমন হয় যখন আপনি সমস্যায় পড়েন তখন চিৎকার করে কান্না করেন। ঠিক একইভাবে যদি আপনার জীবনে কিছু এমন কষ্ট আসে যার সমাধানের রাস্তা আপনি দূর দূর পর্যন্ত খুঁজে না পান, আপনি তখন মনে মনে একা ভাবতে থাকেন যে কোনো প্রকারে এই কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়া যায় কিভাবে, তখন আপনি ভগবানকে স্মরণ করেন। কিন্তু সেই সময় আপনার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে থাকে।

তৃতীয়তঃ বন্ধুরা তৃতীয়ত যে বিষয়টির কথা বলব সেটি বুঝতে গেলে আপনাকে মন্দির নির্মাণের কৌশলটি বুঝতে হবে। আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন মন্দির নির্মাণের সময় যে ভগবানের উদ্দেশ্যে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় তাকে মন্দিরের মাঝামাঝি বরাবর প্রতিষ্ঠা করা হয় । কেননা মানা হয় যে ভূমির অপর মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা হবে সেই ভূমির মাঝামাঝি বরাবর রোজ মন্ত্র পাঠের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে পজিটিভ উর্যা সৃষ্টি হয়, যে কারণে মন্দিরের মুখ্য মূর্তিটিকে মাঝামাঝি বরাবর প্রতিষ্ঠা করা হয়।

যখন কোনো ভক্ত ভগবানের কাছে যান তখন মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই তার শরীরের সমস্ত নেগেটিভ উর্যা গুলি বাইরে বেরিয়ে যেতে থাকে। আর এই নেগেটিভ উর্যা বেরোনোর আর একটি মাধ্যম হলো ভগবানের সামনে ভক্তের কান্না করার ফলে নেগেটিভ উর্যা বেরিয়ে যেতে থাকে এবং ভক্তের মধ্যে পজিটিভ এনার্জি সূত্রপাত ঘটে।

মন্দিরে যখন প্রাণপ্রতিষ্ঠক মূর্তি স্থাপন করা হয় তখন সেখানে ভগবান আপনার কষ্টগুলি শোনার পর তার হৃদয়টিও কষ্টে দোলা দিয়ে ওঠে। ভক্তের করুন ডাক শুনে ভগবান এমনিতেই খালি পায়ে দৌড়ায় আসেন। সেখানে ভগবানের সামনে কান্না করলে আপনার মনোকামনা পূর্ণ হবে না এটা কি করে সম্ভব।

বন্ধুরা এটাও বলা হয়-

 "ভগবানের সামনে যে ব্যক্তি কান্না করেন, তাকে দুনিয়ার সামনে কান্না করতে হয় না।"

এগুলো ছিল সদর্থক কিছু কারণ, যার মাধ্যমে আপনারা বুঝতে সক্ষম হলেন ভগবানের সামনে ভক্তের চোখ দিয়ে অশ্রু কেন ঝরে।

বন্ধুরা উপরিক্ত কারণগুলো ছাড়াও কিছু নঞর্থক কারণও রয়েছে ভগবানের সামনে কান্না করার।

অনেকবার বন্ধুরা আপনারাও হয়তো লক্ষ্য করেছেন মানুষেরা কিছু না কিছু বিষয় নিয়ে ভগবানের সামনে কান্না করতেই থাকে। এটি আসলে কান্না নয়। বরং এটাকে এভাবে বুঝুন - বারবার ওই মানুষরা ভগবানের কাছে কান্নার ছলে কিছু জিনিস চাইতে থাকে।

ভগবান তুমি আমাকে এটা করে দাও; তাহলে আমি তোমার এইভাবে সেবা করব। আমার চাকরিটা হয়ে গেলে কিংবা মেয়ের বিয়েটা হয়ে গেলে অথবা গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি এলে ৫৬ ভোগ চড়াবো তোমার উদ্দেশ্যে। আর নিজের এই চাওয়া গুলো ভগবানকে বলার সময় সেই ব্যাক্তি বা মানুষেরা কান্না করতে থাকে। যার মাধ্যমে ভগবান তাদের চাওয়া টি যাতে শুনে নেয়। কিন্তু আপনাকে এই কথাটি বুঝতে হবে ভগবান কখনো লোভে পড়ে কোনো ব্যক্তির অধীনে আসে না। ভগবান কোনো বস্তু, মোদক, ৫৬ ভোগ অথবা রকমারি প্রসাদের লোভী নন। বরং ভগবান ভক্তের মনের ভাবের উপর অধিক গুরুত্ব দেন।

সবথেকে বড় কথা হল আপনি ভগবানের সামনে মনের মধ্যে কি নিয়ে যাচ্ছেন, কী চাইতে চলেছেন এবং কি বিষয় নিয়ে তার সামনে সুখ অথবা দুঃখের প্রকাশ করবেন, এসব তো ভগবানের আগে থেকেই জানা থাকে। তারপর আপনার তরফ থেকে দেওয়া ভগবানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের ভেট বা উত্কোচ প্রদান (ঘুষ) যা ভগবানের কাছে একটি তুচ্ছ বস্তুর সমান। তার জন্য ভগবান আপনার মনস্কামনা কি করেই বা পূর্ণ করবে!

তার জন্যই বন্ধুরা এটা কখনোই ভাববেন না মনের মধ্যে লোভ বা লালসা নিয়ে ভগবানের কাছে গিয়ে চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরিয়ে করুণভাবে ভগবানের কাছে কিছু চাইবেন আর ভগবান এতে প্রসন্ন হবেন এটা কখনই নয় । এরকম ভুল কখনোই করবেন না, কেননা ভগবান হলেন অন্তর্যামী। তিনি সব কালের অর্থাৎ ভূত, ভবিষ্যৎ, বর্তমান সম্পর্কে সবকিছুই জানেন।

আশা করি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন ভগবানের সামনে মানুষের চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরে কেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।