নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
বন্ধুরা আজকের এই লেখাটিতে আপনাদের সামনে আলোচনা করব 2022 সালের মহাশিবরাত্রির পূর্ণ তিথি কবে পড়েছে, কোন সময়ে পড়েছে এই মহা শিবরাত্রির বিভিন্ন পর্বের পূজার সময় এবং সবথেকে যেটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেটি হলো এই মহা শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়?
মহা শিবরাত্রি যেদিন তার জন্য আমরা প্রত্যেক বছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে। যে দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে আমরা যেমন সর্ব সিদ্ধি লাভ করতে পারি ঠিক তেমনি আমাদের জীবনের বিভিন্ন প্রকার বাধা খুব সহজেই আমরা দূর করতে পারি। এই কারণেই মূলত প্রত্যেক বছর এই মহা শিবরাত্রির দিন থেকে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
• মহা শিবরাত্রি কেন পালন করা হয়?
বন্ধুরা ভগবান শিব হলেন পরমসত্তা। সৃষ্টি, স্থিতি, লয় এই তিনেরই মূল কারণ হলেন ভগবান শিব। তিনি হলেন পরমেশ্বর ভগবান দেবাদিদেব মহাদেব। আমাদের পবিত্র গ্রন্থ বেদে ভগবান শিব প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি হলেন - সমস্ত সৃষ্টির মূল কারণ। উপনিষদে বলা হয়েছে যখন আলো ছিল না, অন্ধকারো ছিল না, দিনও ছিল না, রাত্রিও ছিল না, সৎ ছিল না, অসৎ-ও ছিল না তখন কেবলমাত্র ভগবান-শিবই ছিলেন। বেদান্ত অনুসারে তিনি হলেন মহেশ্বর ; যার অর্থ হলো মহা ঈশ্বর। বন্ধুরা সংস্কৃত এই শিব শব্দের অর্থ হলো শুভ, দয়ালু এবং মহৎ। যার নাম স্মরণ করলে সমস্ত কিছু মঙ্গলময় হয়ে ওঠে। সেই দেবাদিদেব মহাদেবেরই আরাধ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হল এই মহা শিবরাত্রির দিন। কিন্তু, প্রশ্ন হল বছরের আর পাঁচটা দিন অপেক্ষা কেন এই দিনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ? কেন প্রত্যেক বছর এই বিশেষ দিনে মহা শিবরাত্রি পালন করা হয়ে থাকে?
এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের অনেকের কাছেই আজও অজানা। বন্ধুরা আপনারা নিশ্চয়ই জানেন প্রত্যেক বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালন করা হয়ে থাকে মহাশিবরাত্রি। মূলত এই দিনটিতে মহা শিবরাত্রি পালন করার পেছনে বেশ কতকগুলি কারণ রয়েছে। শিবরাত্রি কথার অর্থ হল ভগবান শিবের রাত্রি।
শিব পুরাণ অনুসারে এই বিশেষ দিনেই সমস্ত ব্রম্ভান্ডের সৃষ্টি হয়। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু পূজনীয় মহাদেব কে শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়ে পবিত্র পরম বস্তু সহযোগে পুজো করেন। এই বিশেষ দিনে এই ভগবান শিব শিব লিঙ্গ রূপে আত্মপ্রকাশ করেন। এই দিনেই শিব ও পার্বতীর মধ্যে মিলন হয়ে এই সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে ভগবত পুরানে উল্লেখ রয়েছে সমস্ত দেবতা ও অসুরেরা মিলে সমুদ্র মন্থন করছিলেন তখন তার থেকে অনেক বস্তুই নির্গত হয়েছিল যা দেবতা ও অসুরেরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেন। কিন্তু, তা থেকে যখন গরল বা বিষ নির্গত হয় কেউই তা নিতে সম্মত হয়নি। যখন সেই বিষ বা গরোলের দ্বারা সমগ্র সৃষ্টি বিপন্ন, সেই সময় ভগবান-শিব ই এই সমগ্র বিশ্বের সৃষ্টি কে বাঁচানোর জন্য এই মহা শিবরাত্রির বিশেষ দিনটিতে যোগসূত্রের দ্বারা সেই গরল বা বিষ কে নিজের গলায় ধারণ করেন। সেই থেকেই ভগবান শিবের নাম হয়- 'নীলকন্ঠ'।
মহা শিবরাত্রির ব্রত পালনের মাহাত্ম্য
দেবাদিদেব মহাদেবের এই পরম উপকারের জন্যই সকল দেবতা দেবীগণ সেই বিশেষ রাত্রে ভগবান শিবের আরাধনা করেন। তখন থেকেই এই মহা শিবরাত্রির ব্রত পালন করা হয়।
লিঙ্গ পুরাণেও এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে যে ভগবান শিব এই দিনে শিবলিঙ্গ রূপে আত্মপ্রকাশ করে সমগ্র বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি করেন।
শিবরাত্রি ব্রতকথা অনুযায়ী এক শিকারির দ্বারা মর্তলোকে এই শিবরাত্রির ব্রত প্রচলিত হয়। সনাতন ধর্মের সকল শাস্ত্রে উল্লেখ করা রয়েছে এই মহা শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে অশুভ শক্তি থেকে যেমন মুক্তি পাওয়া যায়, ঠিক তেমনি সর্ব সিদ্ধি লাভ হয়। এই দিনের গুরুত্ব প্রসঙ্গে ভগবান শিব নিজেই একদিন মাতা পার্বতী কে বলেন - আমাকে স্নান করানো পূজা-অর্চনা করা বা বস্ত্র দেওয়াতে আমি যতটা না খুশি হই, তার থেকে বেশি খুশি হয় মনুষ্য জগতে অর্থাৎ পৃথিবীবাসীর ফাল্গুন মাসের চতুর্দশী তিথিতে এই ব্রত পালনের মাধ্যমে। সনাতন ধর্মে যত গুরুত্বপূর্ণ ব্রত রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ হলো এই শিবরাত্রি ব্রত।
আরো পড়ুনঃ- ভগবান শিব কেন গণেশের মস্তকটি কাটলেন? বালক গণেশের মস্তক কাটার পর পুনরায় জীবিত হল কিভাবে? Click here
2022 মহাশিবরাত্রি পূর্ণাঙ্গ সময়সূচী
বন্ধুরা এই বছর অর্থাৎ 2022 সালে ১৪২৮ বঙ্গাব্দে মহাশিবরাত্রির এই বিশেষ দিনটি পড়েছে আগামী ১ লা মার্চ মঙ্গলবার।
১লা মার্চ মহাশবরাত্রি শুরু হচ্ছে - ৩ টে বেজে ১৬ মিনিট থেকে।
এই মহাশিবরাত্রি সমাপ্ত হচ্ছে পরের দিন ২রা মার্চ সকাল ১০ টায়।
এখানে একটি বিষয় বলে রাখি এই মহা শিবরাত্রি পালন করা হয় রাত্রি বেলায়। কারণ শিবরাত্রির মধ্যেই রাত্রি কথাটি উল্লেখ রয়েছে। তাই ভগবান শিবের পূজা করা প্রয়োজন সন্ধ্যার পর।
১লা মার্চ মঙ্গলবার দিন সন্ধার পর ৬ টা বেজে ২২ মিনিট থেকে শুরু হচ্ছে প্রথম পর্বের পূজা। এই প্রথম পর্বের পূজা করা যাবে রাত্রি ৯ টা বেজে ২৭ মিনিট পর্যন্ত।
এরপর দ্বিতীয় প্রহরের পূজা শুরু হচ্ছে ওইদিনই রাত্রি ৯টা বেজে ৩২ মিনিট থেকে রাত্রি ১২ টা বেজে ৩৩ মিনিট পর্যন্ত।
এরপর তৃতীয় প্রহরের পূজা শুরু হচ্ছে রাত্রি ১২ টা বেজে ৩৩ মিনিট থেকে ভোর ৩ টে বেজে ৩৯ মিনিট পর্যন্ত।
বন্ধুরা মহা শিবরাত্রি বিষয়ে আরও অধিক জানতে অথবা এই ধরনের নিত্য নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলটিকে ফলো করতে পারেন-
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সম্বৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- ভগবান শিব কেন গণেশের মস্তকটি কাটলেন? বালক গণেশের মস্তক কাটার পর পুনরায় জীবিত হল কিভাবে? Click here
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা