Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

মা লক্ষী ও ভগবান বিষ্ণুর বিবাহ হলো কি করে?

 



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু । 

আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - " মাতা লক্ষী ও ভগবান বিষ্ণুর স্বয়বর হলো কি করে ? "


বন্ধুরা মা লক্ষী কে ধন এবং সমৃদ্ধির দেবী বলা হয়। আর হিন্দু ধর্মে এমনটা মানা হয়েছে যদি মা লক্ষী কারো উপর প্রসন্ন হয়ে যায় তাহলে তার সমৃদ্ধি এবং ধন প্রাপ্তি নিশ্চিত। আর এই ধন সম্পত্তির মালিক হওয়ার জন্যই বহু মানুষ মাতাল লক্ষ্মীপুজো করে থাকেন। যাইহোক বন্ধুরা এটা তো ছিল মা লক্ষী তে প্রসন্ন করা সম্পর্কে কিছু কথা। কিন্তু, বন্ধুরা আপনারা কি জানেন পৌরানিক কাহিনী অনুযায়ী অন্যান্য দিবিও স্ত্রীদের মত মা লক্ষীরও স্বয়ম্বর সভা হয়েছিল। কিন্তু, আপনারা কি জানেন কীভাবে হলো এই সয়ম্বর? 

যদি না জেনে থাকেন তাহলে আমাদের এই লেখাটি পুরোটা পড়ুন। 


বন্ধুরা আমরা সবাই এটা তো জানি ভগবান বিষ্ণুর অর্ধাঙ্গিনী হলেন মা লক্ষী। কিন্তু, ভগবান বিষ্ণু সঙ্গীতার স্বয়ম্বর কিভাবে হল? চলুন বন্ধুরা এই প্রশ্নের উত্তরটি জানা যাক- 


বন্ধুরা হিন্দু ধর্মের দেবতা এবং ওষুধের মধ্যে যুদ্ধের অনেক কথা প্রচলিত। কিন্তু, সবথেকে বেশি যে বিষয়টির কথা মানুষ জানে তা হলো - সমুদ্র মন্থন। এই সমুদ্রমন্থনের মাধ্যমেই মা লক্ষ্মীর উৎপত্তি হয়েছিল। সমুদ্র মন্থন দেবতা এবং অসুররা একসাথে মিলিত হয়ে করেছিল। কিন্তু এই সমুদ্র মন্থনের আগে পর্যন্ত ওষুধের সবসময় দেবতাদের সঙ্গে লড়াই করতেই দেখা গেছে।


বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী রাজা বলির রাজ্য তে দৈত্য, রাক্ষস ও দানব খুবই শক্তিশালী হয়ে যায়। যার কারণ ছিল দৈত্য ও অসুরদের গুরু শুক্লাচার্যের- "মৃত্যু সঞ্জিবনী" বিদ্যা। এই বিদ্যার মাধ্যমে শুক্লাচার্য সকল মৃত অসুরদের জীবিত করে দিতেন। অন্যদিকে ঋষি দুর্বাসার অভিশাপ এর ফলে দেবরাজ ইন্দ্র শক্তিহীন হয়ে পড়েছিলেন। যার ফলে অসুররাজ বলির ত্রিলোকেই তার অধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। যার ফলে ইন্দ্র সহ সকল দেবতা এতে ভয়ে ভীত থাকতেন সব সময়। এমন পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র ভগবান বিষ্ণুই বাঁচাতে পারতেন সকলকে। যার ফলে সবশেষে সকল দেবতা ব্রহ্মার সঙ্গে ভগবান বিষ্ণুর কাছে এসে উপস্থিত হয়। ভগবান বিষ্ণুর কাছে সকল দেবতা তাদের সমস্যার কথা জানান। তখন ভগবান বিষ্ণু যাদেরকে বললেন এখন তোমাদের সংকটকাল চলছে এরকম সময়ে তোমরা অসুরদের সঙ্গে মিত্রতা পূর্ণ ভাব বজায় রাখো এবং শীর সাগর থেকে অমৃত জল বের করে তা পান করো। মনে রাখবে অসুরদের সহায়তা ছাড়া এই কার্যটি সম্পন্ন হবে না। এই কাজটির জন্য অসুরদের সব কথা মেনে নাও এবং সব শেষে তাদের সহায়তার মাধ্যমে অমৃত জল বার করে তা পান করো। ভগবান বিষ্ণুর থেকে এই কথা শোনার পর দেবতারা অসুরদের কাছে গেলেন এবং তাদের কাছে মিত্রতা করার প্রস্তাব রাখলেন। অসুররা তা মেনে নিল। এরপর শুরু হলো সমুদ্র মন্থন। বন্ধুরা সমুদ্রমন্থনের সময় 14 টি আলাদা আলাদা রত্ন বের হয়েছিল। যার মধ্যে অষ্টম রত্ন মহালক্ষ্মী স্বয়ং নিজেই ছিলেন। যখন মা লক্ষ্মী সমুদ্রমন্থনের ফলে বেরিয়ে এলেন তখন দেবতা এবং অসুরেরা তার সৌন্দর্য দেখে তার ওপর মোহিত হয়ে গেলেন। তখন অসুরদের রাজা সেখানে সকল দেবতা ও অসুরদের মাঝে প্রচার করলো এই সুন্দর নারীকে সে নিজের করে নেবে। কেননা সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হওয়া এই বস্তুর উপর অসুরদের অধিকার বেশি। এই শুনে দেবতারা বললেন মা লক্ষ্মী একজন দেবী এবং দেবী সবসময় দেবতাদের সঙ্গেই থাকবে। দেবতাদের মুখে এমন কথা শোনার পর অসুররা রেগে যান এবং তারা বলেন যদি দেবতারা তাদের কথা না শোনেন তাহলে তারা দেবতাদের সঙ্গে মিত্রতা ভেঙ্গে ফেলবে, যার ফলে তাদের মধ্যে পুনরায় আগের মতো যুদ্ধ শুরু হবে। এই শুনে দেবরাজ ইন্দ্র বললেন দেবতারা অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চান না। কিন্তু, যদি অসুররা এটাই চায় তাহলে তারাও যুদ্ধ করার জন্য তৈরি। ইন্দ্রদেবের এই কথার পর সকল অসুর এবং দেবতারা পরস্পরবিরোধী হয়ে সামনাসামনি মুখোমুখি হলো। এইভাবে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে যুদ্ধ চলার পর দেবতারা যুদ্ধটি থামিয়ে ব্রহ্মার কাছে গেলেন এবং ব্রম্ভা জিকে এই সকল ঘটনাটি জানালেন। তখন ব্রহ্মা সকল দেবতাকে জানালেন সমুদ্র থেকে বেরিয়ে আসা মা লক্ষ্মী হলেন বোন। আর এটা তার সম্পূর্ণ নিজের অধিকার সে তার বর নিজে বেছে নেবে। ব্রহ্মা তখন সকল নারীর কথা চিন্তা করে তিনি জারি করলেন সকল স্ত্রীরই তার নিজের বর বেছে নেওয়ার অধিকার থাকবে; আর এর সূচনা হবে দেবী মা লক্ষ্মীর থেকে। সাগর পুত্রী যাকে চায় তাকে নিজের বর বেছে নিতে পারেন। 


ভগবান ব্রহ্মার এমনটা বলার পর মা লক্ষীর স্বয়ংবর সভা আয়োজন করা হলো। যেখানে অসুর এবং দেবতা সকলেই যোগ দিলেন। কিন্তু, মা লক্ষ্মী তো প্রথম থেকেই ভগবান বিষ্ণু কে নিজের প্রতি হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। মা লক্ষ্মী শুধু তাকেই বিবাহ করতে চান। কিন্তু স্বয়ম্বরসভায় ভগবান বিষ্ণু উপস্থিত ছিলেন না। যার ফলে মা লক্ষী ভয় পাচ্ছিল। তখনই অসুরদের রাজা মা লক্ষীকে গিয়ে বললেন এই মালাটি আমার গলায় পরিয়ে দাও। আর তখনই ভগবান বিষ্ণু সেই স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হলেন আর মাতা লক্ষী তখনই ভগবান বিষ্ণুর গলায় পুষ্পের মালাটি পড়িয়ে দিলেন। আর এই ভাবেই মা লক্ষী এবং ভগবান বিষ্ণুর স্বয়বর সভা সম্পন্ন হল। 


এছাড়াও হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে মাতা লক্ষীর স্বয়ংবর এর আরেকটি বর্ণনা মেলে। একবার নারদ মুনি তার একটি কাজে বিজয় প্রাপ্ত হন এবং তিনি বিজয় প্রাপ্ত হওয়ার পরে সেই কাজের বর্ণনা সবার কাছে এদিকসেদিক করতে লাগলেন। তখন ভগবান বিষ্ণু নারদ মুনির এই অহংকার টিকে ভেঙে তাকে সঠিক পথে আনার সিদ্ধান্ত নেন। বিষ্ণু এর উপায়ও খুঁজে পেয়ে গেলেন - যখন মাতা লক্ষীর স্বয়ংবরের আয়োজন করা হলো তখন আগে থেকেই মনে মনে মাতা লক্ষী ভগবান বিষ্ণু কে নিজের প্রতি বলে মেনে নিয়েছিলেন। এদিকে নারদ মুনি যখন মাতা লক্ষীকে দেখলেন তখন তিনি মাতা লক্ষ্মীর সুন্দরতায় মুগ্ধ হয়ে যায় এবং তাঁর সেই কার্যের কথাটি ভুলে যান, যা তিনি সবার কাছে অহংকারের সঙ্গে বর্ণনা করছিলেন। নারদজি তখন নিজের মনে মনেই মাতা লক্ষ্মীর সঙ্গে তার বিবাহর কথা ঠিক করে নিয়েছিলেন। কিন্তু, তিনি জানতেন হরিরূপ প্রাপ্ত হওয়ার পরেই তিনি লক্ষীকে বিবাহ করতে পারবেন। এইজন্য নারদ মুনি ভগবান বিষ্ণুর কাছে হরির মত রুপ চাইতে গেলেন। ভগবান বিষ্ণু নারদ মুনির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে হরি রূপের বর প্রদান করেন।এইরূপে নারদ মুনি যখন মাতা লক্ষীর স্বয়ংবর সভা তে গিয়ে পৌঁছালেন তখন তার বিশ্বাস ছিল যে এই রূপের কারণে মাতা লক্ষী তার গলাতেই বরমালা প্রদান করবে। কিন্তু, এমনটা হয় না; মাতা লক্ষী নারদ মুনি কে ছেড়ে ভগবান বিষ্ণু কেই বরমালা প্রদান করেন। আর নারদ মুনির তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার এই অদ্ভুত রূপকে মাতা লক্ষী কিভাবে রোহন করল না। নারদজির হাবভাব দেখে সভায় উপস্থিত বাকিরা তাকে দেখে হাসতে লাগল, তার উপহাস করতে লাগলেন এবং তাকে পরিষ্কার জলে নিজের মুখ দেখতে করতে বললেন। এরপর নারদ-জি রেগে গিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। এর পরে তিনি যখন একটি জলাশয় নিজের চেহারাটি দেখলেন তখন তিনি অবাক হলেন। কারণ তার চেহারাটি বানরের মত লাগছিল। এবার তো তার রাগের কোনো সীমাই ছিল না। সে প্রচুর রেগে গিয়ে বৈকুন্ঠতে পৌঁছালো।


সে ভগবান বিষ্ণুর কাছে গিয়ে বলল- হে প্রভু , আপনি আমার সঙ্গে ছলনা করেছেন। আমি আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি আপনাকে মানুষের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে যেতে হবে। আর যেভাবে আমাকে স্ত্রী বিয়োগ সহ্য করতে হলো, সেভাবে আপনাকেও সহ্য করতে হবে।


নারদ জির এই কথা শোনার পর ভগবান বিষ্ণু বললেন-হে দেবর্ষি নারদ, আপনার এই অভিশাপ আমি স্বীকার করলাম। কিন্তু, আমি আপনার সঙ্গে ছলনা করিনি। হরির একটি অর্থ হল -বিষ্ণু এবং এর আরেকটি দ্বিতীয় অর্থ হল বানর। আমি তো আপনার ইচ্ছামত কার্য করেছি। প্রভুর এই কথা শোনার পর নারদ জির নিজের ভুলের উপর পশ্চাতাপ হলো এবং তার সেই অহংকার চুর চুর হলো। তার নেত্র দিয়ে অশ্রু ধারা বইতে লাগলো।


আর বন্ধুরা এমনটা মনে করা হয় নারদ জির অভিশাপ এর ফলেই ত্রেতা যুগে শ্রীরাম এবং সীতার রূপে জন্ম নেওয়ার পরেও ভগবান বিষ্ণু এবং মাতা লক্ষীকে বিয়োগ অর্থাৎ একে অপরের থেকে আলাদা হওয়ার কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল।


আরো পড়ুন:- এমন ৩ টি কর্ম যা করলে পুরুষদের স্ত্রী রূপে জন্ম নিতে হয়? - Click here


আশাকরি বন্ধুরা লেখা টি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন কি করে মা লক্ষী ও ভগবান বিষ্ণুর স্বয়ংবর হল। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা