নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।
বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো - " প্রভু শ্রীরাম ও লক্ষণ কিভাবে মানব শরীর পরিত্যাগ করলেন ? "
শ্রীরাম পৃথিবীতে 10 হাজার বছরেরও বেশি রাজত্ব করেছিলেন। নিজের এই লম্বা সময় রাজত্বকালে ভগবান রাম অনেক মহান কাজ করেছেন এবং তিনিই হিন্দুধর্মকে একটি গৌরবময় ইতিহাস প্রদান করেছেন। বন্ধুরা তাহলে কিভবে তিনি তাঁর সকল আপনজন ও প্রজাদের ছেড়ে এই পৃথিবী থেকে চলে গেলেন। কি এমন কারণ ছিল যার কারণে তাকে নিজের পরিবার ছেড়ে বিষ্ণুলোক পুনরায় ফিরে যেতে হলো?
পদ্মপূরাণে বর্ণিত একটি কথা অনুযায়ী একদিন এক বৃদ্ধ সাধু ভগবান শ্রী রামের দরবারে এসে পৌঁছায় এবং শ্রী রামের সঙ্গে একা কিছু কথা বলতে চান। ওই সাধুর কথা অনুযায়ী শ্রী রাম তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। আর ওই কক্ষের দুয়ারে শ্রীরাম তার ছোটভাই লক্ষণকে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং তাকে বলেন যদি ওই সাধুর সঙ্গে শ্রী রামের কথার বলার সময় কেউ যদি মাঝখানে বিরক্ত করে বা কথা বলা ভঙ্গ করতে চায় তাহলে শ্রীরাম তাকে সে মৃত্যুদণ্ড দেবেন। এরপর লক্ষণ তার জ্যেষ্ঠ ভাইয়ের আদেশ পালন করার জন্য শ্রীরাম ও ওই সাধুকে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে সে নিজে কক্ষের বাইরে দুয়ারে দাঁড়িয়ে পাহারা দিতে থাকে। ওই সাধু আর কেউ নয় সে ছিল বিষ্ণুলোক থেকে পাঠানো - কালদেব। সে ভগবান শ্রী রাম কে এই সংবাদটি দিতে এসেছিল তার এই পৃথিবী লোকে সময় সম্পূর্ণ হয়ে গেছে এখন তাকে পুনরায় বিষ্ণুলোক ফিরে যেতে হবে। হঠাৎই সেখানে দুর্বাসা মুনি এসে উপস্থিত হয়। সে লক্ষণ কে বলে তাকে কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করতে দিতে , সে শ্রী রামের সঙ্গে কিছু কথা বলতে চায়। কিন্তু, বড় ভাইয়ের আজ্ঞা পালন করার জন্য লক্ষণ তাকে এমন টা করতে বাধা দেয়।
ঋষি দুর্বাসা সবসময়ই তার অত্যান্ত ক্রোধের জন্যই পরিচিত। যার ফল একে-ওকে ভোগ করতে হয়। লক্ষণের বারবার বারণ করা সত্ত্বেও ঋষি দুর্বাসা পিছু হটেন না এবং সবশেষে ঋষি দুর্বাসা লক্ষনকে বলেন যদি তাকে কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করতে না দেয়া হয়, তাহলে তিনি শ্রীরাম কে অভিশাপ দেবেন। এরপর লক্ষণ বুঝতে পারছিলো না , সে তার বড়ো ভাইয়ের আজ্ঞা পালন করবে নাকি তার ভাইকে অভিশাপ থেকে বাঁচাবে! সবশেষে লক্ষণ একটি কঠোর সিদ্ধান্ত নিল; লক্ষণ কখনোই চাইতেন না তার কারণে তার বড় ভাইয়ের কোনো প্রকার হানি ঘটুক। এই কারণে তিনি নিজেকেই কাঠগড়ায় তুললেন , তিনি ভেবেছিলেন যদি ঋষি দুর্বাসা কে তিনি কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেন তাহলে ঋষি দুর্বাসার অভিশাপ এর প্রভাব শ্রী রামের উপর পড়বে। যাতে শ্রীরামের কোনো প্রকার অভিশাপের ভুক্তভোগী না হতে হয় সেই কারণে তিনি নিজেই কক্ষের ভিতর প্রবেশ করবেন বলে ঠিক করেন এবং শ্রীরাম তাকে মৃত্যুদন্ড দিলে তাতে শ্রী রামের কোনো ক্ষতি হবে না। এমন কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে লক্ষণ কক্ষের দুয়ার খুলে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করলেন।
লক্ষণ কে কক্ষের ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে শ্রীরামই ধর্ম সংকটে পড়ে গেলেন। এক দিকে তিনি নিজের দেওয়া আদেশ পালন করতে বাধ্য ছিলেন এবং অন্যদিকে নিজের ছোট ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসার কারণে নিরুপায় ছিলেন। ওই সময় শ্রীরাম মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার স্থানে নিজের ভাই লক্ষণকে রাজ্য থেকে বেরিয়ে যেতে বললেন। সেই সময়ের যুগে রাজ্য বা দেশ থেকে বার করে দেওয়া কে মৃত্যুদণ্ডের সমান বলে মনে করা হতো।
কিন্তু, লক্ষণ যে কখনো নিজের বড় ভাই শ্রীরাম কে ছাড়া একটি মুহূর্তও একা থাকেনি সে তখন এই দুনিয়া ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবলেন। সে সরীয়ূ নদীর কাছে এরপর নদীর ভিতরে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি শেষ নাগের অবতারে রূপান্তরিত হয়ে বিষ্ণুলোকে চলে গেলেন। নিজের ছোট ভাই চলে যাওয়ার কারণে ভগবান শ্রী রাম খুবই উদাস হয়ে পড়েন। যেভাবে-
রাম ছাড়া লক্ষণ নয়, ঠিক একই রকমভাবে লক্ষণকে ছাড়া রামের বেঁচে থাকা প্রভু শ্রী রামের উচিত বলে মনে হলো না। তখন ভগবান শ্রীরামও এই পৃথিবীলোক থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
প্রভু শ্রী রাম তখন রাজ্যপাটের দায়িত্ব নিজের পুত্রসহ নিজের ভাইয়ের পুত্রদের হাতে সঁপে দেন। প্রভু শ্রী রাম তিনিও সরীয়ূ নদীর তীরে চলে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর ভগবান শ্রী রাম ওই নদীর একদম গভীরে চলে যান এবং হঠাৎই তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। এর কিছুক্ষন পর নদীর ভেতর থেকে ভগবান শ্রী বিষ্ণু প্রকট হন এবং তিনি তার সকল ভক্তদের দর্শন দেন। এইভাবে প্রভু শ্রী রাম নিজের মানব শরীর পরিত্যাগ করে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর অবতার ধারণ করে বিষ্ণুলোকে ফিরে যান।
আরো পড়ুন:- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কিভাবে মানব শরীর পরিত্যাগ করলেন? Click here
আরো পড়ুনঃ- কলিযুগের সমাপ্তি হবে কিভাবে / কলি যুগের পর পুনরায় কি সত্য যুগ শুরু হবে ?পুনরায় সত্য যুগের সূচনা কিভাবে হবে - কেমন হবে সেই সত্য যুগের প্রকৃতি ? Click here
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা