ভগবান পরশুরাম কেন তার মাকে হত্যা করলেন? || Why did parshuram killed his own mother

 

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু ।

আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করব তা হল- "ভগবান পরশুরামের মাতৃহত্যা কাহিনী " সম্পর্কে।ভগবান পরশুরাম কেন তার মাকে হত্যা করলেন?

বন্ধুরা মহাজ্ঞানী মহাশক্তিশালী ধর্মরক্ষক ভগবান পরশুরাম যিনি রামায়ণ ও মহাভারত দুটি ধর্মগ্রন্থেই নিজের ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে এই সংসারের মার্ক দর্শন করেছিলেন।  বন্ধুরা আপনারা কি জানেন তিনি নিজের মায়েরই ধড় থেকে মুণ্ড আলাদা করেছিলেন। কিন্তু, এর পিছনে কি কারণ ছিল? সবসময় ধর্মের পথে চলা ভগবান পরশুরাম যে মায়ের আঁচলে ছোট থেকে বড় হলেন তারই হত্যা করতে তিনি উঠে পড়ে লাগলেন কেন? 

বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী পরশুরাম - ঋষি জমদগ্নি ও মাতা রেনুকার পুত্র ছিলেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে পরশুরাম সবথেকে ছোট ও আজ্ঞাকরি পুত্র ছিল। ভগবান শিব তাকে কুঠার বা পরশু প্রদান করেছিলেন, যাকে সব সময় নিজের সাথে রাখার জন্য তিনি 'পরশুরাম' বলে পরিচিত ছিলেন। 

একদা ঋষি জমদগ্নি নিজের পত্নী রেনুকা কে জঙ্গল থেকে কিছু কাঠ সংগ্রহ করে নিয়ে আসতে বলল। যখন মাতা রেনুকা যখন জঙ্গলে পৌঁছালেন সেখানে ওই জঙ্গলের পাশে একটি নদী ছিল। সেখানে তাঁর দেখা হল একটি রাজার সঙ্গে। রাজা ছিল খুবই রূপবান। রেনুকা ওই রাজাকে দেখার পর আকর্ষিত না হয়ে থাকতে পারলেন না আর দুজন একে অপরের মধ্যে হারিয়ে গেলেন। কিন্তু, এদিকে ঋষি জমদগ্নি নিজের পত্নী রেনুকার অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করতে করতে তার পথ চেয়ে বসে ছিলেন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর রেনুকা ফিরে এল। তখন ঋষি তাকে দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করল। তখন রেনুকা থাকে মিথ্যে কথা বলে দেয়। কিন্তু, ঋষি জমদগ্নি ছিলেন অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও প্রকাণ্ড বেদবান। ঋষি জমদগ্নি নিজের দিবিয় দৃষ্টির মাধ্যমে এটি জেনে নেন যে রেনুকা কোনো রাজার সুন্দরতায় মুগ্ধ হয়েগিয়েছিল। তার(ঋষির) - মা রেনুকার এরূপ মিথ্যা কথা বলা খুবই খারাপ লাগে এবং তিনি খুবই ক্রুদ্ধ হন। এরপর তিনি তাঁর চার পুত্র কে বলেন তোমরা তোমাদের মায়ের হত্যা করে দাও। কিন্তু, ওই চার পুত্র মায়ের প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে এই কাজ করায় না করে দেয়। তখন ঋষি জমদগ্নির ক্রোধ আরও বেশি পরিমাণে বেড়ে যায়। তখন তিনি তার ছোট পুত্র পরশুরামের অপেক্ষা করতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পরেই পরশুরাম সেখানে এসে হাজির হলেন এবং জমদগ্নি তাকে বললেন- হে পুত্র, আমি খুবই দুঃখিত। কেননা কোনো একটি পুত্রও আমার কথা শুনছে না। 

তখন পরশুরাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন- কি হয়েছে পিতা? আদেশ করুন আমাকে? আমি আপনাকে বচন দিচ্ছি আমি আপনার সকল আদেশ পালন করব। তখন জমদগ্নি বললেন - তোমাকে নিজের মায়ের মুণ্ড; ধর থেকে আলাদা করতে হবে পুত্র। এই শুনে পরশুরাম হঠাৎই ধাক্কা খেলেন এবং অবাক হয়ে গেলেন। কিন্তু, তিনি যে তার পিতাকে পূর্বেই কথা (বচন) দিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনার পর পরশুরাম তার মায়ের কাছে গেলেন এবং কান্না করতে করতে সেই কুঠারটি দিয়ে তার মায়ের মুণ্ড ধর থেকে আলাদা করে দেন। এই দৃশ্য দেখে বাকি চার ভাইয়ের চক্ষু দিয়ে অশ্রু ধারা বইতে থাকে। এমনটা করার পর পরশুরাম জিও আত্মগ্লানিতে (নিজেকে দোষী মনে করা) ভোরে উঠলেন এবং খুব জোরে জোরে কান্না করতে লাগলেন। কিন্তু,ঋষি জমদগ্নি খুব খুশি হলেন এবং সে তার পুত্রের কাছে গিয়ে বলল- হে পুত্র, আমি খুবই খুশি হয়েছি। এরপর তিনি তার পুত্র পরশুরাম কে বললেন-হে পুত্র, তুমি কি বরদান চাও? বল আমাকে। কিন্তু, ভগবান পরশুরাম নিজের মায়ের মৃত্যুর ফলে মানসিক দিক থেকে অত্যান্ত ভেঙে পড়েছিলেন এবং তার খুবই কষ্ট হচ্ছিল। এই জন্য সে তার কাছে বলল - হে পিতা আমি যা চাইবো; তা আপনি আমাকে দেবেন ? 

তার পিতা তখন বলল-  হ্যাঁ অবশ্যই দেব। তখন পরশুরাম বলল তাহলে আপনি আমার মাতাকে পুনর্জীবিত করে দিন। যেহেতু ঋষি জমদগ্নি উচ্চ শ্রেণীর বেদব্যান ও নিজের দেওয়া কথার দাম রাখতেন - অনুযায়ী তিনি তার পুত্রের এই কথাটি মানা করতে পারলেন না। তিনি অদ্ভুত শক্তির মাধ্যমে নিজের পত্নী রেনুকা কে পুনরুজ্জীবিত করে দেন। 

আরো পড়ুনঃ- পাণ্ডবরা কেন খেয়েছিল তাদের পিতার মাংস?

কিন্তু, পরশুরাম জির ওপর মাতৃহত্যা পাপ লেগে যায়। আর এই মাতৃহত্যা পাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য পরশুরাম জি ভগবান শিবের কঠিন সাধনা করতে থাকেন। আর মহাদেব তার এই কঠিন তপস্যায় প্রসন্ন হয়ে তার ডাকে সাড়া দেন এবং তাকে এই পাপ থেকে মুক্ত করে দেন। 

বন্ধুরা এই ছিল মূলত ভগবান পরশুরামের মাতৃহত্যার কাহিনী। আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজন দের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।