Breaking

Search Content

Follow Us

রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০২২

জীবনের সকল পরিস্থিতিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কৌশল || বিকাশের সূত্রের নবম ভাগ।

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।  


জীবন আমাদের সামনে সব সময় যেকোনো পরিস্থিতিতেই বিকল্প প্রস্তুত করে। এরকমটা করব; নাকি ওরকম টা করব। যদি আমরা সঠিক বিকল্পটি বেছে নিতে পারি তাহলে সফলতা, আনন্দ ও তৃপ্তিকে প্রাপ্ত করতে পারি। আর যদি ভুল বিকল্পটি বেছে নি তাহলে দুঃখ-শোক আর নিরাশার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের।

আমাদের সামনে যে বিকল্পগুলি এসে উপস্থিত হয় তার মাহাত্ম্য কি; আর কিভাবে সঠিক বিকল্পটি বেছে নেওয়া যায় এই বিষয়টির উপরেই আজকে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করবো। 


আমাদের ভারতের ইতিহাসে একজন মহান সন্ত গোস্বামী তুলসীদাস। যিনি রামায়ণ কে হিন্দি ভাষায় লিখেছিলেন। যার নাম দেন তিনি রামচরিতমানস। কিন্তু, যুবক অবস্থায় তিনি এরকম ছিলেন না। বরং তিনি স্ত্রী আসক্ত ছিলেন। নিজের পত্নীর উপর তাঁর এতটাই টান ছিল যে, একদিন তাঁর পত্নী বাবার বাড়ি গেলে তখন রাত্রে তুলসীদাস জির মনে বিচার এল পত্নীকে ছাড়া তো তিনি থাকতেই পারবেন না। তিনি সেই রাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন তার পত্নীর কাছে যাবেন এই উদ্দেশ্যে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছিল কিন্তু তিনি সেই বৃষ্টিরও পরোয়া করলেন না। এরপর তিনি নদীর তীরে পৌঁছালেন নদী পার করেই তিনি তাঁর পত্নীর কাছে যেতে পারতেন। কিন্তু, অত রাত্তিরে কোনো মাঝি তার নৌকা নিয়ে নদী পারাপার করতে রাজি ছিল না। কিন্তু, তুলসীদাস জির সৌভাগ্য তিনি একটি কাঠের টুকরো ভেসে যেতে দেখলেন, তখন তিনি সেটা ধরেই সাঁতরে নদী পার হয়ে গেলেন। এরপর তিনি তার শ্বশুর বাড়ি পৌঁছালেন। তিনি অত্যন্ত তাড়াহুড়ায় ছিলেন যে তিনি তার পত্নীর সঙ্গে দেখা করবেন। তিনি একটি দড়ি বাড়ির উপরের দিকের থেকে নিচের দিকে ঝুলতে দেখলেন, সেই দড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন। তিনি ভেবেছিলেন তাঁর পত্নী তাকে দেখে প্রসন্ন হবে। কিন্তু তার পত্নী তাকে জানালা দিয়ে ভিতরে আসতে দেখে তার উপর রাগ দেখালো, তাকে বকাঝকা করল। তার পত্নী তাকে বলল, যেই প্রকারে আপনি আমার জন্য এত কিছু করে আমার কাছে আসলেন ঠিক একই প্রকার ভাবে এই আসক্তি যদি আপনার ভগবানের উপর থাকতো তাহলে আপনার অনেকবার ভগবত প্রাপ্তি হত। এরপর তাঁর পত্নী কথা শোনার পর গোস্বামী তুলসীদাস একটি সিদ্ধান্ত নিলেন-আমার এখন যে পরিস্থিতি আমি আর আপস করবো না। আমার নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনতেই হবে। এরপর তিনি নিজেকে পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে অনেক জ্ঞান অর্জন করলেন এবং বিশ্ব বিখ্যাত সন্ত রূপে নিজেকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হলেন।


 গোস্বামী তুলসী দাসের জীবনে এই যে পরিবর্তন আসলো এর কারণ কি ছিল? এর কারণ ছিল তার নিজের ভেতর থেকে নেওয়া একটি বিচার বা একটি নির্ণয়। 


আপনি ভাবুন 15 বছর আগে আপনি কেমন ছিলেন। আর আপনার জীবনে বিভিন্ন বিচার অথবা নির্ণয় আসার ফলে (যেমন ধরুন- ইঞ্জিনিয়ারিং করবো না কি করবো না, ডাক্তার হব নাকি ডাক্তারি পরব না, বিবাহ করবো নাকি করবো না, এখানে থাকবো নাকি অন্য জায়গায় থাকবো।) এই সমস্ত বিষয়ের উপর আপনি যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে এখন আপাতত আপনি জীবনযাত্রার পথে নিজেকে একটি স্থানে পান। বর্তমানে এখনো আমাদের সামনে বিকল্প রয়েছে। আমরা যেমনটা বেছে নেব 15 বছর পরে অমনটা নিজেকে পাব। কিছু নির্ণয় পরিবর্তন করা যায়, আবার কিছু নির্ণয় অপরিবর্তনীয় হয়।


একজন বিখ্যাত পাশ্চাত্য কমেডিয়ান ছিলেন জেরি লুইস। তার বিবাহিত জীবনে একাধিক সমস্যা ছিল। সে বলতো সে যখন সমস্যায় জর্জরিত অবস্থায় কোনো দিশা খুঁজে পেত না, তখন সে তার বিয়ের ভিডিও ক্যাসেট উল্টো করে দেখতো অর্থাৎ, পেছন থেকে সামনের দিকে দেখত। এমন ভাবে দেখার পর তার মনে হতো সে তার এই বিবাহিত জীবনের ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে গেছে। সে পরিস্থিতি বুঝতে পেরেছিল যে, সে যা নির্ণয় নিয়েছিল তা পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু, তার কাছে বিকল্প ছিল- নিজের পরিস্থিতির উপর নিজেই হাসা অথবা ডিভোর্স করে নেওয়া। ঠিক এই ভাবেই সব সময় জীবন আমাদের সামনে বিকল্প প্রস্তুত করে।


আপনিও কি গোস্বামী তুলসীদাসের মতো এই মুহূর্ত থেকে নিজেই এই বিকল্পটি বেছে নিতে পারবেন যে, আপনিও নিজের ভেতর থেকে আত্ম পরিবর্তন আনবেন। যদি মনে করেন আপনি পারবেন তাহলে অবশ্যই চেষ্টা করুন। এর ফল আপনি 15 বছর পর পাবেন। আপনার মনে হয় তো প্রশ্ন জাগতে পারে, আত্ম পরিবর্তন আনা কি এতই সহজ- যে একবার নিজের মন থেকে নির্ণয় নিয়ে নিলাম তার ভিত্তিতে নিজের মধ্যে আত্ম পরিবর্তন এলো ‌‌?

না - একেবারেই সহজ নয়। শুধুমাত্র বিকল্পগুলি কে বেছে নিলেই আত্মবিকাশ হবে না। এর জন্য প্রয়োজন সেই পরিস্থিতিতে আপনার সামনে যে ক'টি বিকল্প এসে উপস্থিত হয়েছে প্রত্যেকটি বিকল্পকে দৃঢ়তার সাথে বিচার করে সঠিক বিকল্পটি বেছে নেওয়া। এই জিনিসটি করতে পারলে জীবনে ধীরে ধীরে আত্মবিকাশ সম্ভব। প্রত্যেকটি বিকল্প কে দৃঢ়তার সঙ্গে বিচার করে যাচাই করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র নির্ণয় নিয়ে নিলেই হবে না। 


এই জিনিসটি আপনি এখন থেকেই আপনার জীবনে প্রয়োগ করতে শুরু করুন। আপনার সামনে প্রত্যেকটা মুহূর্ত বা পরিস্থিতিতে যে বিকল্পগুলি উঠে আসবে সেই বিকল্পগুলি দৃঢ়তার সঙ্গে বিচার করুন, এগুলিকে সম্পূর্ণ ভালভাবে যাচাই করুন এবং সঠিক বিকল্পটিকে বেছে নিন।  


সব সময় এই জিনিসটি একটু ভেবে দেখবেন আপনি যে বিকল্পটি কে বেছে নিচ্ছেন সেটা কি শ্রেষ্ঠ বিকল্প নাকি তার থেকেও ভালো কিছু বিকল্প ছিল?  এই জিনিসটির উপর গুরুত্ব দিন। এটা ছিল পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচার করার প্রথম ধাপ। এই জিনিসটি ভালোভাবে বুঝুন আমরা এর পরবর্তী লেখাতে কিভাবে বিচার করতে হয় এই বিষয়টি সম্পর্কে আরো গভীরভাবে আলোকপাত করব।


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- একটি সরল উপায় আনন্দময় জীবনের জন্য- CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা