কলিযুগের সবথেকে বড় 10টি মহাপাপ - মহাভারতের ভীষ্ম যার বর্ণনা আগেই করে গেছেন।

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।   

আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল- কলিযুগে হওয়া সবথেকে বড় 10টি মহাপাপ সম্পর্কে। যার বর্ণনা মহাভারতে ভীষ্ম আগেই করে গেছেন।

বন্ধুরা আমরা সকলেই জানি আমাদের হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী যুগকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সত্য যুগ, ত্রেতা যুগ, দ্বাপর যুগ, কলিযুগ। বিভিন্ন যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষও বিভিন্নভাবে নিজেদেরকে পরিবর্তন করে নিয়েছে। এর সাথে মানুষের চরিত্রেও অনেক বড় পরিবর্তন এসেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে - অসত্য বলা, অন্যকোনো ব্যক্তির বিষয়ে খারাপ ভাবনা প্রভৃতি এই ধরনের বিষয়গুলি সত্যযুগে পাপ বলে মনে করা হতো। কিন্তু বর্তমানে কলিযুগে এই গুলি খুবই সামান্য একটি বিষয়। এটা তো আমরা সকলেই জানি কলিযুগের সাথে অন্যান্য যে কোনো যুগের তুলনা করা ব্যর্থ। কেননা এই কলিযুগে পাপের পরিমাণ ও খারাপ মানুষের সংখ্যা খুবই বেশি। এই কলিযুগের একেকটি লক্ষণ আমাদের শাস্ত্রে পূর্বেই বলা হয়েছে।

বন্ধুরা মহাভারত সময়ের সবথেকে মহামহিম যোদ্ধা ভীষ্ম পিতামহ যিনি অত্যান্ত জ্ঞানী ছিলেন। তিনি যুধিষ্ঠিরকে সেই সময়েই কলিযুগের 10টি বড় মহাপাপ সম্পর্কে ব্যক্ত করেছিলেন। ভীষ্ম পিতামহ দ্বারা বলা এই পাপগুলি তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। যার মধ্যে তিনটি পাপ শরীরের, চারটি পাপ বাণীতে ও বাকি তিনটি পাপ মনের উপর আধারিত ছিল।

মানব শরীর দ্বারা হওয়া মহাপাপ এর মধ্যে সর্বপ্রথম পাপ হল- হিংসা করা। এই গোটা পৃথিবীতে যেসকল প্রাণীগুলি রয়েছে তাদের প্রতি হিংসা করা অথবা তাদের শারীরিক ক্ষতি করা সবথেকে অধিক লজ্জাজনক একটি বিষয়। 

শরীর দ্বারা করা দ্বিতীয় মহাপাপীটি হল- চুরি করা। নিজের অথবা আপনজনদের খুশির জন্য অন্য কারো ধনসম্পত্তি চুরি করা, আর কাউকে অসহায় ছেড়ে দেওয়া অত্যাধিক খারাপ পরিণাম এনে দেয়।

এই শ্রেণীতেই তৃতীয় মহাপাপটি হল -ব্যভিচার। কলিযুগে চরিত্রহীন ব্যক্তির সংখ্যা খুবই বেশি। যে সমস্ত লোক শারীরিক সন্তুষ্টির জন্য নিজের অথবা অন্য কারো বৈবাহিক জীবন বিনাশ করেন তারা এই পাপের ভাগী হন।

কলিযুগের মহাপাপের দ্বিতীয় শ্রেণিটি হল বাণী। যার অন্তর্গত চারটি মহাপাপ রয়েছে। এই শ্রেণীতে সর্বপ্রথম যে পাপটি রয়েছে তা হলো- অন্য কারো প্রতি খারাপ ভাষার প্রয়োগ। বাণীই চরিত্রের পরিচয় দেয়। আমাদের বাণীই আমাদের বিচার তথা আমাদের পালন-পোষণ কেমন হয়েছে সেখানে পৌছানোর দুয়ার।

দ্বিতীয়তঃ হল অনর্থ বলা। অর্থাৎ কারোর উপর ভুল শব্দ প্রয়োগ করা। আবশ্যক্তা থেকে বেশি বলা লোকেরা - কি বলতে হবে তা বুঝে উঠতে পারেনা, আর নিজের শব্দ দ্বারা অন্য মানুষকে দুঃখ দিয়ে এই পাপের ভাগী হয়ে যায়।

বাণী দ্বারা হওয়া তৃতীয় বড় পাপটি হল- গুরুজন অথবা বৃদ্ধ মানুষদের অপমান। মহাভারতে এই বিষয়টি সম্পর্কে উল্লেখ পাওয়া যায় যে, নিজের থেকে বড় গুরুজনদের অপমান করলে তা মৃত্যুর সমান হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কলিযুগে এটি একটি খুবই সামান্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের আশেপাশে আমরা এটা লক্ষ্য করি যে, গুরুজনদের অপমান হচ্ছে।

বাণী দ্বারা করা চতুর্থ মহাপাপটি হলো- অসত্য। অসত্য বলার অর্থ হলো অন্য কাউকে মিথ্যা বলার সাথে সাথে স্বয়ং নিজেকেও মিথ্যের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা। এছাড়াও অসত্য বাণী আমাদের আত্মাকেও ভেতরে ভেতরে দুঃখ দেয়।

কলিযুগের মহাপাপের তৃতীয় শ্রেণি হলো মনের দ্বারা করা পাপ যা মহাভারতের অনুশাসন পর্বে উল্লেখিত। এরমধ্যে প্রথমত হল কারো প্রতি মানসিক হিংসা অথবা কারো প্রতি খারাপ ভাবনা। এই শ্রেণীর মধ্যে দ্বিতীয় পাপটি হল কারো ক্ষতি করার চেষ্টা করা। তৃতীয় প্রকারের বড় পাপ যা ভীষ্ম পিতামহ যুধিষ্ঠির কে বলেছিলেন তা হল- বাসনা। কারোর প্রতি ঘিন্না জনক বাসনার ভাবনা এই শ্রেণীর পাপের অন্তর্গত।

তো বন্ধুরা কলিযুগে যেখানে প্রত্যেকটি পদক্ষেপে পাপের আশঙ্কা রয়েছে সেখানে আমাদের উচিত এমন কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া, যার ফলে অন্যকারো কোনো ক্ষতি হয় আমাদের দ্বারা। আর এর সাথেই আমাদেরকে নিজেদের বিচারে পবিত্রতা আনতে হবে। যার মাধ্যমে আমরা পাপের ভাগীদার হওয়া থেকে বাঁচতে পারি।

বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 

আরো পড়ুনঃ- মাতা সীতার অভিশাপের ফল ভোগ করে যাচ্ছে - আজও এই 4 জন | Curses of Ramayana - CLICK HERE