Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২

হিন্দুধর্মে পশু বলি কেন দেওয়া হয়? || এটি ঠিক নাকি ভুল?


 নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।   


বন্ধুরা আপনারা হয়তো জানেন যে হিন্দু ধর্মে অনেক জায়গাতেই দেবী দেবতাদের খুশি করার জন্য পশু বলি দেওয়া হয়। এখানে এখন এই প্রশ্নটিই উঠে আসে যে যেই ধর্ম জীব হত্যা কে পাপ বলে মনে করে সেই ধর্মেতে আবার পশুবলি কেন দেওয়া হয়? আর সত্যিই কি এর পিছনে কোনো ধার্মিক আধার বা ফলাফল রয়েছে নাকি এই প্রথাটি এমনিই প্রচলিত হয়েছে। এটা কোনো অন্ধবিশ্বাসের বশে এসে করা কাজ নয়তো? - এই সকল প্রশ্নের জবাব নিয়েই আজকের এই লেখাটি। 


বন্ধুরা পশু বলির প্রথা অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এই সামাজিক প্রথাটির প্রচলন কখন আর কিভাবে হয়েছে এটা সুনির্দিষ্টভাবে বলা খুবই মুশকিল। কিন্তু, এই প্রথাতে প্রায়ই পাঠা ছাগল, মোরগ ও মোষ বলি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সবথেকে মহত্বপূর্ণ বিষয়টি হল আমাদের সনাতন ধর্মে কোনো ধর্মশাস্ত্রতেই পশুদের বলি দেওয়া ঠিক বলে মনে করা হয়নি। সনাতন ধর্মে পশু বলি পুণ্য বর্জিত। অর্থাৎ সনাতন ধর্মে পশু বলি দিলে কখনোই পূর্ণ হয়না। সনাতন ধর্মতো বিশ্বকল্যাণ ও প্রাণীদেরকে রক্ষার কথা বলে। কখনোই তাদের হত্যা করার কথা বলে না।


অগ্নি পুরাণের 372 তম অধ্যায়ে এটা বলা হয়েছে যে, কোনো প্রাণীকে হত্যা করা তো দূরের কথা বরং কোনো প্রাণীকে কষ্ট দেওয়াই খুবই বড়ো পাপ। এখানে অহিংসাকেই সবথেকে বড় ধর্ম বলা হয়েছে। অনেক মানুষ দেবতাদের প্রসন্ন করার জন্য হিংসাকে ঠিক বলে মনে করেন। কিন্তু মহাভারতে এর উত্তর স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা রয়েছে শান্তি পর্বের মোক্ষ ধর্মের 271 তম অধ্যায়ে। সেখানে হিংসার বদলে অহিংসাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্ধুরা বেদে এরকম অনেক শ্লোক আছে যার মাধ্যমে হিংসাকে দূর করে নিজের মনে অহিংসা প্রতিষ্ঠা করা যায়। এরই সাথে বেদে এমন অনেক মন্ত্র ও শ্লোক রয়েছে যেগুলি সঠিকভাবে পাঠোদ্ধার করে বুঝতে পারলে এটা বোঝা যাবে যে হিন্দু ধর্মে বলি প্রথা কে নিষিদ্ধ বলে গণ্য করা হয়েছে। আর এই প্রথাটি হিন্দু ধর্মের প্রথা কখনোই নয়। উদাহরণস্বরূপ সামবেদের এই একটি শ্লোকই আপনি দেখে নিন - 

" না কি দেবা ইনিমসি, না কেয়া য়োপয়ামাসি |"

"মন্ত্র শুদ্ধম চরামাসি ||" 


অর্থাৎ হে হৃদয় আমরা হিংসা করি না, আর না কখনো নিজের মনে হিংসা তৈরি হতে দি। শুধুমাত্র বেদের মন্ত্র ও শ্লোক অনুযায়ী নিজেদের মনকে শুদ্ধ করি।


ধর্মগ্রন্থ তে এটাও বর্ণনা পাওয়া যায় যে, যেই মানুষ বলিপ্রথার সমর্থন করে সে ধর্মবিরুদ্ধ ও দানবীয় প্রকৃতির। এইরকম ব্যক্তিদের তাদের কর্মফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকা উচিত।


এছাড়াও গীতা তে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মাংস ভক্ষণ কে ধর্মের বিরুদ্ধে বলেছেন। তিনি বলেছেন মাংস ভক্ষণ করলে আমাদের মন দূষিত হয়ে যায় এবং আমাদের মনে অপরাধীর মত বিচার আসে। সনাতন ধর্মে প্রাণের আধার বলা হয়েছে একমাত্র অন্ন- কে। তথা অন্ন দান করা ব্যক্তির সবসময় সনাতন স্থিতি প্রাপ্ত হয়। এখন আপনি হয়তো ভাবছেন যখন এত জায়গাতেই পশুবলি কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তবে এই প্রথাটি কেন প্রচলিত হলো? 


এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদের সবার আগে 'বলি' শব্দের অর্থটি বুঝতে হবে। বলির সরল অর্থ হচ্ছে নিজের কোনো প্রিয় বস্তু ত্যাগ করে অন্য কাউকে প্রসন্ন করা। কিন্তু, দুর্ভাগ্যবশত অন্য কাউকে প্রসন্ন করার জন্য অর্থাৎ দেবী দেবতাদের প্রসন্ন করার জন্য পশুদেরকে হত্যা করছে বা বলি দিচ্ছে। আর এটাই কারণ যে জন্য মানুষদের মনে এই বিষয়টি নিয়ে এত পরিমাণে সন্দেহ রয়েছে । শাস্ত্রে বর্ণিত বলি শব্দের অর্থের অনর্থ বের করে এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয় যে, হিন্দু ধর্ম পশুবলির অনুমোদন করে; তথা হিন্দু মানুষেরা বলি দিয়ে যোগ্য করে আরতি দিয়ে থাকে। কিন্তু, বাস্তবে এই জিনিসটি কখনোই সত্যি নয়। এটা হল মানুষ্য জাতি দ্বারা করা স্বার্থ সৃষ্টির একটি প্রক্রিয়া মাত্র‌। এমনটা হওয়ার কারণ হচ্ছে সনাতন ধর্ম একটি পুরাতন ধর্ম, এই ধর্মে সময়ের সাথে সাথে অনেক বিচারধারা যুক্ত হয়ে গেছে। যার ফলে এই ধর্মটি তার মূল স্বরূপ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। এই ধর্মের সঙ্গে অনেক এমন পরম্পরা যুক্ত করে দেয়া হয়েছে যেগুলো কখনো এর অংশই ছিলনা। যেভাবে একটি বটগাছে অসংখ্য লতাপাতা বেয়ে ওঠে, একই প্রকার ভাবে হিন্দু ধর্মে হাজার হাজার বছরের পরম্পরা সাথে সাথে কিছু স্থানীয় অশুভ পরম্পরাও যুক্ত হয়ে গেছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে এই পশুবলি প্রথা।


হিন্দু ধর্মের সাধক ও তান্ত্রিকদের মধ্যে এই পশুবলি প্রথার প্রচলন দেখা যায় বেশি। কিন্তু কোথাও এর ধার্মিক আধার নেই। তান্ত্রিক সম্প্রদায় শুরু থেকে এমনটা ছিলেন না। কিন্তু পরবর্তীতে অন্ধ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে উক্ত সম্প্রদায়গুলি এই পশুবলি প্রথার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। বন্ধুরা পশু বলির কারণ গুলির মধ্যে মুখ্য কারণ হলো অন্ধবিশ্বাস ও মোক্ষলাভ। হতে পারে সিদ্ধি লাভের জন্য কেউ পশুবলি দেয় অথবা কেউ সন্তান প্রাপ্তির জন্য পশু বলি দেয়। ধর্ম বিদরা মূলত এটা বলে থাকেন যে, তান্ত্রিকরা সিদ্ধি লাভের জন্য পশুবলি দিয়ে থাকে। নেপালের গধীমাই মন্দিরে পশু বলির জন্য হওয়া ভিড় এই সিদ্ধিলাভের রাস্তা বলে মনে করা হয়। এছাড়াও কামাখ্যা মন্দির পশুগুলির জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু মানুষ নিজের মনোকামনা পূরণ করার জন্যোও পশু বলি দিয়ে থাকে। কিছু মানুষ একে পরম্পরা অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করেন। কিন্তু যে মানুষ সনাতন ধর্মকে সঠিকভাবে জানে সেই মানুষ ভালোভাবেই জানে যে এর পেছনে কোনো ধর্মীয় কারণ যুক্ত নেই। সনাতন হিন্দু ধর্ম কখনোই জীব হত্যা করতে বলেনা। বরং সনাতন হিন্দু ধর্ম জীব রক্ষা করতে বলে। সনাতন হিন্দু ধর্ম হল একটি পবিত্র ধর্ম।


তো বন্ধুরা আপনারা দেখলেন বেদে কোথাও পশু বলির কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু যদি আপনি মাংস ভক্ষণ করেন। তাহলে সে ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা নেই । এটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু ধর্মের পথে গেলে আপনি তা পারবেন না। কেননা ধর্ম অনুযায়ী পশুবলি কে ভুল বলা হয়েছে।


বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 

আরো পড়ুনঃ- ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে - মৃত্যু আসলে কি? | গরুর পুরান - মৃত্যু রহস্য CLICK HERE



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা