নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আমাদের সকলের বাড়িতে যে সমস্ত বড়ো গুরুজনেরা বা বয়স্ক লোকেরা রয়েছেন তারা প্রতিদিন আমাদের কিছু না কিছু ভালো কথা শিখিয়েই যান। বাড়িতে ভালো সংস্কার দেওয়ার কাজটি বাড়ির গুরুজনদের উপরই থাকে। আমাদের বাড়িতে প্রতিদিন যে নিয়মগুলি পালন করা হয়ে থাকে, সেই নিয়ম এর উপরই আমাদের বাড়ির পরিস্থিতি নির্ভর করে। আমাদের বাড়িতে যদি প্রতিদিন ভালো সংস্কার পালন করা হয় আর বাড়ির প্রত্যেকটি লোকই যদি নিয়ম-শৃঙ্খলা, সঠিক সংস্কার মেনে জীবন যাপন করেন তাহলে সেই বাড়িতে সবসময় সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকবে। আর যদি আমাদের বাড়িতে কোনো প্রকার অনুশাসন না থাকে ও বাড়ির গুরুজনদের কথাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া না হয় তবে সেই বাড়িতে দুঃখ, কলহ ও দরিদ্রতা ঘিরে ধরে।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতা তে মানুষ জাতির জীবনের উদ্ধারের জন্য কিছু মহত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। ভগবদ্গীতা অনুসারে মানুষদের নিজের জীবন থেকে দুঃখ ও দরিদ্রতা দূর করার জন্য রোজ সকালে এই 7 টি কাজ অবশ্যই করা উচিত। কেননা যে ব্যাক্তি এই সাতটি কাজ প্রতিদিন করে থাকেন তার জীবনে দুঃখ-দুর্দশা দূর হয়ে সুখ ও সমৃদ্ধিতে ভরে ওঠে। তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক এমন কি কাজ রয়েছে যা মানুষদের রোজ সকালে ওঠার পর করা উচিত।
প্রথমত, আমাদের সকল ধর্মগ্রন্থ তে ব্রম্য মুহুর্তে ঘুম থেকে ওঠা কে সর্বোত্তম বলে মনে করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আজকালকার অনিয়মিত জীবনকালে এটা অত্যন্ত অসম্ভব বলে মনে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদের প্রাতঃকালে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব ততো তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠর চেষ্টা করতে হবে। চোখ খোলার সাথে সাথেই সর্বপ্রথম ঈশ্বরের নাম নিতে হবে। আর নিত্যকর্ম সেরে নেওয়ার পর ঈশ্বরের পূজার্চনার মাধ্যমে নিজের দিনটি শুরু করা উচিত। এমনটা করার ফলে আপনার মনে একটি পজিটিভ শক্তি বিরাজ করে। এই পজিটিভ শক্তিই আপনাকে দিনভর ভালো কাজ করার শক্তি যোগাবে। আর যদি সম্ভব হয় সূর্য উদয়ের সময় সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন অবশ্যই করবেন।
দ্বিতীয়তঃ সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দানের সাথে সাথে সূর্য প্রণামও অবশ্যই করবেন। সূর্য প্রণাম একটি সর্বাঙ্গীণ ব্যায়াম হওয়ার সাথেই সূর্যদেবকে কৃতজ্ঞতা জানানোর একটি মাধ্যম। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে সূর্য প্রণাম করলে একটি মানসিক শান্তি পাবেন ও নিরোগ জীবন যাপন করতে পারবেন।
বন্ধুরা এই সম্পর্কে আরো জানতে আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলের এই ভিডিওটি প্রয়োজন বোধ করলে দেখে নিতে পারেন-
তৃতীয়তঃ বন্ধুরা কিছু গাছগাছলি ভগবানের বিশেষ আশীর্বাদ পেয়ে থাকে । এই ধরনের গাছ গাছালি গুলিকে আমাদের হিন্দু ধর্মে বিশেষ রূপে পূজা করা হয়ে থাকে। এরকমই একটি অত্যন্ত পবিত্র গাছ হল- তুলসী গাছ। এই পবিত্র গাছটি সকল বাড়িতে থাকা উচিত। শাস্ত্র তে বলা হয়েছে যেই বাড়িতে তুলসী গাছ নেই সেই বাড়িতে শ্রী হরির বাস হয় না। আর যেখানে শ্রী হরির বাস নেই সেখানে মা লক্ষ্মীইবা কিভাবে থাকবেন। তুলসী শ্রীকৃষ্ণের অত্যান্ত প্রিয়। প্রাতঃকালে তুলসী গাছে জল অর্পণ করলে ও ওই সময় তুলসী গাছের পাশে বসলে তুলসী গাছের অত্যন্ত পবিত্র হওয়া আমরা প্রতিটি শ্বাসের মাধ্যমে নিতে পারে। দিনভর যা আমাদের পজিটিভ শক্তির যোগান দেয়।
চতুর্থতঃ আমরা সবসময় কোনো পূজাপাঠের পরে নিজেদের কপালে তিলক দেই। কিন্তু আমাদের শাস্ত্রমতে প্রতিদিন কপালে তিলক, কেশর, হলদি, কুমকুম লাগানোর শাস্ত্রীয় ও তান্ত্রিক মাহাত্ম্য রয়েছে। যেই মানুষটি প্রতিদিন নিজের কপালে তিলক লাগিয়ে কোনো কাজের উদ্দেশ্যে বের হয় তবে সেই কাজে তার সফলতা পাওয়ার আশঙ্কা খুবই বেড়ে যায়। এই কারণে নিজের মাথায় তীলক লাগানোর সময় -
"ওঁম নমো ভগবতে বাসুদেবায় নমো।"
এই মন্ত্রটি অবশ্যই বলুন। আপনার সকল কাজে সফলতা অবশ্যই মিলবে।
পঞ্চমতঃ বাড়িতে রোজ শুদ্ধ ও সাত্বিক ভোজন তৈরি করা উচিত । আর সবার প্রথমে ভগবানকে ভোগ দেওয়ার পর পরিবারের খাওয়া উচিত। এর সাথে সাথেই পশুদের প্রতি দয়া দেখানো আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য। তাদের কিছু পরিমাণ খাবার দেওয়া হলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের উপর খুবই প্রসন্ন হন। এর ফলে সেই ব্যক্তির জীবন থেকে সকল প্রকার দুঃখ-দুর্দশা সমাপ্তি ঘটে।
ষষ্ঠতঃ প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় পূজা স্থানে ঠাকুরের সামনে অবশ্যই প্রদীপ জ্বালান। আর তার সাথে সম্ভব হলে পরিবারের সকলে মিলে ঈশ্বরের ভজনা করুন। আপনি চাইলে ভগবদ্গীতা কিংবা রামায়ণের কিছু অংশ পড়তে পারেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলোকে পড়া শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। এর ফলে বাড়ির বাতাবরণ সুখময় ও শুদ্ধ হয়ে ওঠে। এর সাথেই বাড়ির ছোট বাচ্চাদের উপর ভালো সংস্কারের প্রভাব পড়ে।
সপ্তমতঃ যেইভাবে সকাল বেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর আমাদের ঈশ্বরকে স্মরণ করা উচিত ঠিক একইপ্রকার ভাবে রাত্রে বেলায় শোয়ার আগেও ঈশ্বরকে স্মরণ করে তারপর ঘুমানো উচিত। প্রতিদিন শোয়ার আগে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে তাকে ধন্যবাদ জানান। ওই দিনে হওয়া সকল ভালো বিষয়ের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান ভগবান কে এবং আপনি যদি ওই দিনে কোনো খারাপ কাজ করে থাকেন তার জন্য ভগবানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন। যেই মানুষটি রোজ ঘুমানোর আগে ঈশ্বরের কাছে নিজের ভুলের ক্ষমা চেয়ে নেয়, তবে এমন ব্যক্তিকে ভগবান তার সকল ভুল ক্ষমা করে তাকে ভালো পথে চলার রাস্তা দেখান। যার ফলে এমন ব্যক্তি জীবনে কখনো অসফল হয় না। এই কারণেই রোজ ঘুমানোর আগে ঈশ্বরের কাছে নিজের ভুলের ক্ষমা অবশ্যই চেয়ে নিন।
বন্ধুরা আশাকরি এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- হিন্দুধর্মে পশু বলি কেন দেওয়া হয়? || এটি ঠিক নাকি ভুল?CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা