Breaking

Search Content

Follow Us

রবিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২২

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অনুযায়ী কোন বিষয়গুলি ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দিতে হয় ?



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।    


বন্ধুরা আপনাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই হয়তো কোনো বৃদ্ধ বয়স্ক মানুষের কাছে এটা শুনেছেন ভগবান সবকিছু দেখছেন এবং তিনি সবকিছু ঠিক করে দেবেন। এই জন্য নিজের কর্ম করতে থাকো এবং বাকি সবকিছুই ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দাও। কিন্তু এই সাংসারিক জগতে অনেকবার জীবন আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন করে তোলে আমরা কিছু বুঝে উঠতে পারিনা । শুধু তাই নয় আমরা এতই সমস্যার সম্মুখীন হই যে, ভগবানের উপর থেকে ধীরে ধীরে বিশ্বাস উঠে যেতে থাকে। তাহলে সত্যিই কি কিছু বিষয় সর্বদা ঈশ্বরের উপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত? যদি এটা সত্যি হয় তাহলে কেন এমনটা করা উচিত? আজকে আপনাদের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করব।


বন্ধুরা কখনো কখনো আমাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটে থাকে যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ বলা চলে আমাদের খুবই প্রিয় মানুষ যখন আমাদের ছেড়ে চলে যায়, যাকে আমরা খুবই ভালবাসতাম কিংবা সেই সময়টি যখন কোনো প্রিয় মানুষ আমাদের অপমান করে দেয় যার থেকে আমরা কখনো খারাপ ব্যবহার পাওয়ার আশা করিনি, এরকম পরিস্থিতি আমাদের জন্য খুবই দুঃখময় হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয় জীবন রুপি এই যাত্রাতে আমাদের অনেক সময় লোকসান ভোগ করতে হয় কিংবা এমন কোনো ঘটনা ঘটে যায় যার ফলে মনে হয় এখন এই জীবন একদম বেকার। বন্ধুরা এটা হলো মানুষ জাতির স্বভাব। যখন তার জীবনে সবসময় সবকিছু ভালো হতে থাকে তখন সে তার মধ্যে এত পরিমাণে মগ্ন থাকে সে আর কিছু লক্ষ্যই করে না। কিন্তু, যখন তার জীবনে এমন কিছু হয়ে যায় যা সম্পর্কে সে কখনো ভাবেই নি, তখন সে খু্বই বিচলিত হয়ে পড়ে। সেই বিষয়টি নিয়ে সে লোকেদর সঙ্গে চর্চা করতে থাকে। এখানে দুঃখের কথা বলা হচ্ছে। মানুষ দুঃখের চর্চা প্রচুর পরিমাণে করে থাকে। শুধু তাই নয় মানুষ অনেকবার এমন পরিস্থিতির শিকার হয় সে তখন তার নিয়তিকে দোষ দিতে থাকে। কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়। অনেক সময় লোকে বলেন আমার সময় খুবই খারাপ চলছে, বুঝে উঠতে পারছিনা এখন কি করবো!?


বন্ধুরা মানুষ জাতির এই ভাব গুলিকে আরো স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য আমাদেরকে তুলসীদাস জির এই লেখাতে নজর দিতে হবে যেখানে বলা হয়েছে - জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ মান-সম্মান,খ্যাতি, যশ যা কিছু লাভ করে তাতে তার হাত কখনোই থাকেনা। বিধাতার যখন যেরকম ইচ্ছে সেই অনুযায়ী সেই মানুষকে সেই রকম লাভ অথবা লোকসান ভোগ করতে হয়। মান অপমানও সহ্য করতে হয়। জন্ম আর মৃত্যুতো পরমপিতা পরমেশ্বরের হাতেই রয়েছে। এই কারণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ গীতার নবম অধ্যায়ের ২২তম শ্লোকে উল্লেখ করেছেন - যে মানুষটি আমার ওপর মন লাগিয়ে আমার ধ্যান করেন, আমি তাকে সেই জিনিসটি প্রদান করি যা তার কাছে নেই। এই কারণেই আমাদের খারাপ সময়ে সর্বদা পরমাত্মার উপর বিশ্বাস রাখা খুবই প্রয়োজন।


এছাড়া গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৪তম শ্লোকে উল্লেখ করা হয়েছে সুখ এবং দুঃখের ভাব ইন্দ্রিয় থেকে নির্গত হয়। এগুলি অনেকটা প্রকৃতির আবহাওয়ার মত অর্থাৎ এই সুখ অথবা দুঃখ সারা জীবনের জন্য কখনোই থাকেনা। এই কারণেই সুখ অথবা দুঃখ যাই হোক না কেন আমাদের সমানভাবে এগুলির সম্মুখীন হওয়া উচিত। অনেক কর্মের ফল এমনও আছে যেগুলো নিশ্চিতরূপে পাওয়া যায়। কিন্তু কিছু কর্মের ফল অনেক সময় এমন হয় যা আমরা এই জন্মে ভোগ করতে পারিনা। যে কারণেই সেই কর্মের ফল ভোগ করার জন্য পুনর্জন্ম হয়ে থাকে। কিন্তু, কর্মের এই সিদ্ধান্তটি সবসময় জারি থাকে। খারাপ কর্ম অথবা পুণ্যকর্ম যাই হোক না কেন কর্মের ফল সর্বদা ব্যক্তির প্রাপ্য হয়ই। এটাও সম্ভব কিছু কর্মের ফল আপনি এই জন্মে না পেয়ে পরবর্তী জন্মে পেতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, যদি ধরুন আপনার পেটে ব্যথা হয় আর আপনি তার জন্য ঔষধ গ্রহণ করেছেন তাহলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনি ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে আরাম পেতে শুরু করবেন। কিন্তু যদি আপনি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন কিংবা কারো সাথে মারামারি করেছেন - তাহলে সেই মুহূর্তে এটা জরুরী নয় যে, তার সাজা বা কর্মফল আপনি সেই মুহূর্তেই ভোগ করবেন। হতে পারে কিছু মাস অথবা বছরও কেটে যেতে পারে আপনার সেই কর্মফল ভোগ করার জন্য। এজন্যই আপনার জীবনে যদি এমন কোনো কঠোর সমস্যা এসে উপস্থিত হয় যার কোনো সমাধান আপনি দেখতে পাচ্ছেন না তাহলে সেই মুহূর্ততে ওই বিষয়টি ভগবান বা ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দেওয়াই শ্রেয়। কারণ কখন কিভাবে কি হবে তা কেউ জানে না। 


কিন্তু, হ্যাঁ এই বিষয়টি সব সময় মাথায় রাখবেন আপনি আপনার মন, বচন এবং কর্মের দ্বারা কখনো কোনো ব্যক্তি বা কারো সঙ্গে খারাপ করবেন না। ধরে নিন কেউ কোনো কারণ ছাড়াই আপনাকে খারাপ ভাষায় অপমান করল অথবা কেউ যদি আপনাকে ধোঁকা দিয়ে থাকে, যার ফলে আপনার লোকসান হয়েছে - তখনও সেই মুহূর্তে আপনি তাকে ধোঁকা দেওয়ার বদলে সম্পূর্ণ বিষয়টি ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দিন। কেননা যখন ভগবান ন্যায় করেন তখন পুরো দুনিয়া তা দেখবে। 


এই জন্যই ফলের ইচ্ছা কখনো না করে কর্ম করে যাও। ভগবান কৃষ্ণ দ্বারা এমন কথা এই কারণেই বলা হয়েছে কেননা অনেকবার ইচ্ছানুরূপ ফল না পাওয়ার কারণে আপনি দুঃখী হয়ে পড়েন এবং কর্ম করতে তখন আর ইচ্ছা করে না। আমাদের মনে হয় আমি তো সকলের সঙ্গে ভালো করেছি, কারো সাথে খারাপ করিনি, তাহলে আমার সঙ্গে কেন খারাপ হলো। কেননা বন্ধুরা এটা কখনোই জরুরি নয় যে, যেই ইচ্ছা অনুযায়ী আমরা কার্যটি করছি, সেই কার্য টি আমাদের চোখে মনে হয় আমি ঠিকই করেছি। কিন্তু, দেখা গেল বাস্তবে তেমনটা নয়। কিংবা এটাও হতে পারে আমাদের পূর্ব জন্মের ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে যা আমাদের মনেও নেই হয়তো। এই জন্যই ভগবান কৃষ্ণ দ্বারা ফলের আশা না করতে বলা হয়েছে। যার ফলে ভালো হলে যাতে ব্যক্তির মনে অহংকার না জাগে এবং খারাপ হলে যেন ব্যক্তির দুঃখে কাতর না হয়ে পড়ে। যেই ফলই হোক না কেন সেটা কে আমরা ভগবানের ইচ্ছা মেনে সেটা নিয়েই যেন সন্তুষ্ট থাকি। এইজন্যই বন্ধুরা জীবনের কঠিন থেকে কঠিনতর সময়ে ভগবানের উপর বিশ্বাস রাখুন তিনি সবকিছু ঠিক করে দেবেন। শুধুমাত্র আপনার কর্ম ঠিকঠাক করুন, বাকি সবকিছুই ঈশ্বরের উপর ছেড়ে দিন। তিনি যা করবেন মঙ্গলের জন্যই করবেন।


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।

 

আরো পড়ুন:- শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে মৃত্যুর পরে জীবাত্মার কি হয়?CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা