Breaking

Search Content

Follow Us

সোমবার, ৩০ মে, ২০২২

গরুড় পুরাণ অনুযায়ী মৃত্যুর 47 দিন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির আত্মা সঙ্গে কি হয়ে থাকে?

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - গরুড় পুরাণ অনুযায়ী মৃত্যুর পরবর্তী 47 দিন কি ঘটে?


বন্ধুরা মৃত্যু আমাদের জীবনের এক অটল সত্য। এর মানে হল যারা এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে তাদের এক না এক দিন এই পৃথিবী ছেড়ে যেতেই হবে। ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণও বলেছেন যে, আত্মা একটি নিশ্চিত সময় পরে একটা শরীর ত্যাগ করে অন্য আর একটি শরীর ধারণ করে। অর্থাৎ শরীর নষ্ট হয়ে যায় ঠিকই কিন্তু, আত্মা হয় অমর।

                                        

বন্ধুরা এখন আপনাদের মনে এই প্রশ্নটি আসছে যে, যদি আত্মা অমর হয় তাহলে কারও মৃত্যু বা শরীর নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে আত্মার কি হয়? তো বন্ধুরা আমি আপনাদের বলে দেই যে, মৃত্যুর পরে আত্মাদের সাথে কি হয় এর বর্ণনা হিন্দুদের পুরাণের মধ্যে অন্যতম গরুড় পুরাণে পাওয়া যায়। যেখানে লেখা আছে মৃত্যুর কতদিন পর আত্মা যমলোকে পৌঁছায় আর রাস্তায় তাকে কত রকমের যন্ত্রণা পেতে হয়। মৃত্যুর পরে একটি আত্মার যমলোক যেতে 47 দিন লাগে। আর তখন কি কি হয় এই জীবাত্মার সাথে সেই সম্পর্কেই জানাতে চলেছি আজকের এই লেখাটিতে।


গরুড় পুরানে বর্ণিত কথা অনুসারে, একদিন ভগবান বিষ্ণুর বাহন গরুড় তাকে জিজ্ঞাসা করে যে, হে নারায়ন! আমি জানতে চাই যে, মৃত্যুর পরে আত্মার সাথে কি হয়? আর ওই জীবাত্মা কতদিন পরে যমলোকে পৌঁছায়। 


তখন শ্রী হরি গরুড়কে বলেন, হে গরুড়! যখন কোনো জীবের মৃত্যু হয় তখন তার আত্মা 47 দিন পর্যন্ত এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায় আর অনেক যন্ত্রণা সহ্য করার পর যমলোকে পৌঁছায়। তারপর তিনি এও বলেন যখন কোনো জীবের মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসে তখন সবার প্রথমে তার আওয়াজ চলে যায়, আর যখন অন্তিম সময় চলে আসে তখন সেই মৃত ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য ঐশ্বরিক দৃষ্টি লাভ করে। এই ঐশ্বরিক দৃষ্টি পাওয়ার পরে মানুষ সমস্ত সংসারকে একরূপে দেখতে পায়। তার সমস্ত ইন্দ্রিয় শিথিল হয়ে যায়। যার পরে মৃত্যুর সময় যমলোক থেকে দুজন যমদূত আসে। যমদূতদের দেখেই আত্মা ভয়ে হা হা করতে থাকে আর শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়। যখনই আত্মা শরীর ত্যাগ করে, তখনই যমরাজের দূত ওই জীবাত্মার গলায় দড়ি বেঁধে দেয় আর তারপর ওই জীবাত্মাকে নিয়ে যমলোকে চলে যায়।  


গরুড় পুরাণের মতে, যদি মৃত ব্যক্তির আত্মা পবিত্র হয় তাহলে পরমাত্মা নিজে তার বাহন নিয়ে তাকে নিতে আসে। কিন্তু যদি আত্মা পাপী হয় তাহলে গরম বায়ু আর অন্ধকার রাস্তার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। পাপী আত্মাদের যমলোক নিয়ে যাওয়ার সময় বিভিন্ন রকমের যন্ত্রণা দেওয়া হয়। তারপর সেই দিনই ওই আত্মাকে আকাশ পথ থেকে আবার সেই ঘরেই রেখে আসা হয় যে ঘরে সে তার শরীর ত্যাগ করেছিল। সেই ঘরে এসে জীবাত্মা নিজের শরীরে আবার প্রবেশ করার চেষ্টা করে; কিন্তু যমদূতের দড়ি দিয়ে বাধা থাকার কারণে প্রবেশ করতে পারে না। আত্মা না চাইলেও তাকে তার নিজের অন্তিম সংস্কার চোখের সামনে দেখতে হয়। অর্থাৎ 12 দিন পর্যন্ত আত্মা তার আপনজনদের মধ্যেই থাকে। 13 তম দিন যখন আত্মার পিণ্ডদান করা হয়, তখন যমদূত তাকে পুনরায় নিতে আসে। 


এই কারণেই বন্ধুরা হিন্দু ধর্মে মানা হয় যে মানুষের মৃত্যুর 13 দিন পর্যন্ত পিন্ডদান অবশ্যই করা উচিত। পিন্ডদানের ফলে মৃত ব্যক্তির আত্মা যমলোকে যাওয়ার রাস্তা তে চলার শক্তি পায়। 


তবুও এরপরে আত্মার যমলোক পর্যন্ত যাত্রা কঠিনই হয়। এরপরে শুরু হয় বৈতরণী নদী পার করার যাত্রা। যদি মানুষ বেঁচে থাকাকালীন গরুকে খাবার দেয় তাহলে সেই গরুর লেজ ধরে সে বৈতরণী নদী পার করে। তাছাড়া এই নদী পার করার সময় পাপী জীবাত্মাকে বিভিন্ন যন্ত্রণার সাথে যেতে হয়। গরুর পুরাণে বৈতরণী নদীকে গঙ্গা নদীর উগ্র রূপ বলা হয়েছে। এই নদী দিয়ে সব সময় গরম লাভার মত পদার্থ বের হতে থাকে যার কারণে এটা দেখতে লাল বর্ণের আকৃতির ন্যায়। এই নদী পার করার সময় জীবাত্মাকে অনেক ভয়ঙ্কর জীবের সম্মুখীন হতে হয়। এই নদী পার করার সময় আত্মা অনুভব করে যে, কেউ তাকে এই নদীর মধ্যে ডোবাতে চায়। এইভাবে পাপী জীবাত্মাদের এই নদী পার করতে 34 দিনেরও বেশি সময় লাগে। যার পরে জীবাত্মা যমদূতের সাথেই যমলোকে পৌঁছে যায়। যেখানে তাকে তার কর্ম অনুসারে শাস্তি ভোগ করার জন্য নরকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।


এই কারণে বন্ধুরা যদি আপনি মৃত্যুর পরে এরকম ধরনের কষ্ট ভোগ করতে না চান, তাহলে আপনার জীবিত সময়ে ভালো কাজ করুন। কেননা আপনি যার জন্যই সারা জীবন খারাপ কাজ করবেন - এটা মনে রাখবেন যে, মৃত্যুর পর কষ্ট ভোগ করার সময় আপনার সাথে সেখানে কেউ থাকবে না। 


তো বন্ধুরা এই ছিল গরুর পুরাণে বর্ণিত মানুষের মৃত্যুর পরের পরবর্তী 47 দিনের ঘটনা।


বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 


আরো পড়ুনঃ- গুরু বৃহস্পতির - বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা || Brihaspativar Vrat Katha  CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা