Breaking

Search Content

Follow Us

শনিবার, ২৮ মে, ২০২২

গুরু বৃহস্পতির - বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা || Brihaspativar Vrat Katha

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।  


বৃহস্পতিবার দিনটি ভগবান বিষ্ণু আর গুরু বৃহস্পতিকে সমর্পণ করা হয়। বৃহস্পতিবার এর ব্রত গুরু বৃহস্পতির জন্যই করা হয়। মানা হয় যে এই দিন ব্রত করলে বিবাহ সংক্রান্ত সমস্ত বাধা নষ্ট হয়, তার সাথে সুযোগ্য স্বামী প্রাপ্ত হয়।


আজ আমরা আলোচনা করবো বৃহস্পতিবারের ব্রত সম্পর্কে। এই ব্রত কেন রাখা হয় ? এই ব্রত পালনের মাহাত্ম্য কি? আর এই ব্রত কিভাবে রাখা উচিত? - এইসব প্রশ্নের উত্তর আপনারা এই লেখার মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।

                     

তাহলে চলুন বন্ধুরা সবার প্রথমে জানা যাক বৃহস্পতিবারের ব্রত কথা সম্পর্কে।


{বৃহস্পতিবারের ব্রত কথা}

একদা একসময় একটি গ্রামে এক মহাজন' ছিলেন। তার ঘরে অনেক ধনসম্পত্তি ছিল। মহাজন ছিলেন একজন খুবই দয়ালু ব্যক্তি। তার সাথে সেই মহাজন দাতা এবং ধার্মিক স্বভাবের ছিলেন। তিনি অনেক দান ধ্যান করতেন, আর যে তার দরজায় সাহায্যের জন্য আসতেন তাকে কখনোই নিরাশ করতেন না। কিন্তু, অন্যদিকে তার স্ত্রী খুবই কঞ্জুস ছিলেন। সে সাধুদের কেও কিছু দান করতেন না। শুধু তাই নয় সে মহাজনকেও বারণ করতেন কাউকে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করতে। এক দিন মহাজন কোনো কাজে বাইরে গিয়েছিলেন, তখন এক সাধু তার বাড়িতে আসেন আর ভিক্ষা চান বাড়িতে শুধুমাত্র মহাজনের স্ত্রীই ছিলেন। সে সেই সময় তার ঘর মুচ্ছিলেন। তখন সে সাধুকে বলল, হে বাবা আমি এখন আমার ঘর মুচ্ছি এখন আপনাকে কিছু দিতে পারবো না। আপনি পরে আসুন! তখন সাধু চলে যান। কিছু দিন পর পুনরায় সাধু তার বাড়ি আসে আর ভিক্ষা চাইতে থাকে, এইবার মহাজনের স্ত্রী বললেন আমি এখন আমার পুত্রকে খাওয়াচ্ছি আমার কাছে কোনো সময় নেই এখন আমি আপনাকে ভিক্ষা দিতে পারব না। আপনি দয়া করে অন্য কোনো সময় আসবেন। মহাত্মা আবার কিছু না নিয়েই চলে গেলেন আর কিছুদিন পর পুনরায় তার দরজায় গিয়ে ভিক্ষা চাইতে লাগলেন। আর এইবারও মহাজনের স্ত্রী কিছু বাহানা বানায় সে বলে আমি খুবই ব্যস্ত আছি আপনাকে ভিক্ষা দিতে পারব না। তখন সাধু বলেন যে যদি তুমি প্রতিদিন আর প্রতি সময়ের অবকাশ পাও আর তোমার কাছে কিছু করার না থাকে তখন কি তুমি আমাকে দান করবে ? 


মহাজনের স্ত্রী তখন বললেন- হ্যাঁ মহারাজ। যদি আমি সব সময়ের অবকাশ পেয়ে যাই তাহলে খুবই ভালো হয়। তখন সাধু বলেন যে ঠিক আছে! যা আমি বলব সেরকমই করবে। সাধু বললেন, যে তুমি প্রত্যেক বৃহস্পতিবার দিন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম থেকে ওঠে তারপর ঘর ঝাড় দিয়ে নোংরা গুলোকে এক কোণে জড়ো করে রাখবে, সেগুলিকে বাইরে ফেলো না। সেদিন ঘরও মুছবে না, খাবার রান্না করার পরে তা উনুনের পেছনে রাখবে, এইদিন হলুদ রঙের বস্ত্র ভুলেও পরবে না, সন্ধ্যাবেলায় অন্ধকার হওয়ার পরে দীপ জ্বালাও, বৃহস্পতিবার দিন কোনো হলুদ রঙের ভোজনও গ্রহণ করো না। এইসব করার পর তুমি একটুও ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকবে না। তোমার কাছে সময়ই সময় থাকবে। এরপর যেরকম সাধুবাবা বলেছেন - মহাজনের স্ত্রী ঠিক তেমনই করে । কিছু বৃহস্পতিবার পার করার পর তার ঘর থেকে ধনসম্পত্তি সব চলে যায়। এমনকি এক একটি অন্নদানার জন্য তাদের কষ্ট পেতে হয় হয়। কিছুদিন পর সাধু পুনরায় আসেন, তখন মহাজনের স্ত্রী তাকে বলেন- হে সাধুবাবা! আমার ঘরে একটিও অন্নদানা নেই। আমি আপনাকে কি দেবো! সাধু বলেন- যখন তুমি সমৃদ্ধ ছিলে তখনও তুমি আমাকে খালি হাতে পাঠিয়েছিলে কেননা তোমার কাছে সময় ছিলনা আর এখন যখন তোমার কাছে পুরো সময় পড়ে রয়েছে তখনও তুমি আমায় ভিক্ষা দিতে পারছ না। তুমি কি চাও? তখন মহাজনের স্ত্রী হাতজোড় করে বললেন- আমাকে ক্ষমা করুন সাধু বাবা। কৃপা করে এমন কোন উপায় বলুন যাতে আমার ঘরে আগের মত ধনসম্পত্তি এবং সমৃদ্ধি আসে। আমি কখনোই আপনাকে খালি হাতে পাঠাবো না। 


তখন সাধুবাবা বলেন, প্রত্যেক বৃহস্পতিবার ভোরবেলা তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে হলুদ বস্ত্র ধারণ করো। গৃহের পুরো উঠানে গরুর গোবর দিয়ে লেপা পোছা কোরো। সন্ধ্যাবেলা অন্ধকার হওয়ার আগেই দ্বীপ জ্বালাও। এরকম করলে তোমার সমস্ত ইচ্ছা গুরু বৃহস্পতি পূরণ করবে।


মহাজনের স্ত্রী সাধুবাবার কথা অনুযায়ী এই সবকিছু করে, আর তারপর তার ঘরে পুনরায় ধনসম্পত্তির আগমন ঘটে। এইভাবে সমস্ত কাজ করে বৃহস্পতির ব্রত আর পূজার্চনা করলে গুরু বৃহস্পতি খুবই প্রসন্ন হন। আর গৃহে সমৃদ্ধি বাস করে।


আসুন বন্ধুরা এখন জানব বৃহস্পতি ব্রতের পূজার বিধি নিয়ম সম্পর্কে।

     

{ব্রতের নিয়ম বিধি}     

সবার প্রথমে লক্ষ্য রাখতে হবে যে এই ব্রতের আরম্ভ শুক্লপক্ষের বৃহস্পতিবার থেকে করা দরকার। কেননা শুক্লপক্ষকে ব্রত এবং পূজা পার্বণের জন্য খুবই শুভ মানা হয়। উপবাস পালন করার দিন ভোরবেলা তাড়াতাড়ি উঠে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে স্নান করতে হবে। আর পরিষ্কার এবং হলুদ রঙের বস্ত্র ধারণ করতে হবে। গুরু বৃহস্পতি হলেন দেবতাদের গুরু। হলুদ রং হল সমৃদ্ধির প্রতীক। এই কারণে এই দিন হলুদ রঙ সমর্পণ করা হয়। হলুদ রংয়ের বস্ত্র পরিধান করার পরে ঘট এবং কলাগাছের নীচে ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি অথবা চিত্র রেখে শ্রী নারায়ন কে প্রণাম করুন। আর ভগবানের সামনে ঘির প্রদীপ প্রজ্বলন করুন। ভগবানকে তিলক এবং চাল লাগান। তিলক এর জন্য আপনি হলুদ এবং কেশর ব্যবহার করতে পারেন। এরপর তাকে কোন নতুন হলুদ রঙের বস্ত্র অর্পণ করুন। একটি কলসে জল ভরে তাতে হলুদ দিয়ে পূজার জায়গায় রাখুন পুজোতে হলুদ ফল, খেজুর, হলুদ মিষ্টি এবং হলুদ ফুল রাখুন। ভগবান কে পুষ্পাঞ্জলী দিন এবং তার ধ্যান করুন। এরপর ভগবান বিষ্ণু কে গুড় আর ছোলার ডালের ভোগ দিন। আর যে বিষয়টি কখনোই করতে ভুলবেন না তাহলো - ব্রত পাঠ। বৃহস্পতিবার ব্রত কথা পাঠ করুন। তারপর

"ওম গুরুবে নমঃ" 

মন্ত্র জপ করুন। আপনি যখন এগারো বার কিংবা সম্ভব হলে এক মালাও (১০৮ বার) জপ করতে পারেন।


(বন্ধুরা কোনো -১০৮ বার কেন‌ মন্ত্র জপ করা হয়? এই সম্পর্কিত একটি লেখা আমাদের অমৃতকথা ইউটিউব চ্যানেলে দেখতে পারবেন। প্রয়োজন বোধ করলে সেটি দেখে নিতে পারেন) - 



 তারপর বৃহস্পতির দেব এবং ভগবান বিষ্ণুর আরতি করুন তারপরে প্রণাম করে সেই হলুদ জল কলাগাছে বা অন্য কোন গাছে ঢেলে দিন। তারপর ছোলার ডাল এবং গুড়ের ভোগ প্রসাদ হিসেবে ঘরের সবার মধ্যে ভাগ করে দিন।


এরপরে নুন ছাড়া যেকোনো হলুদ রংয়ের খাবার গ্রহণ করুন। বৃহস্পতিবার ব্রতে একবারই ভোজন করা যাবে। আর যদি আপনি ভোজন করতে না চান - তাহলে হলুদ ফল বা হলুদ মিষ্টি খেয়েও ব্রত পালন করতে পারেন। বৃহস্পতিবার হলুদ বস্ত্র দান করলে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি এবং প্রসন্নতার আগমন হয়। এই ব্রত পালন করা ব্যক্তিদের কিছু কথা মনে রাখতে হবে, যেমন- আপনি সমস্ত দিন মনে খারাপ বিচার আনবেন না।ভগবান বিষ্ণু কে স্মরণ করতে থাকুন। বৃহস্পতিবার দিন ঘর মোছা যাবে না এবং জামা কাপড়ও ধোয়া যাবে না। এইদিন কাউকে টাকাপয়সা দেবেন না। তার সাথে পুরুষদের চুল কাটতে নেই আর দাড়ি কামাতেও নেই। এই দিন নুনও খাওয়া যাবেনা কেবলমাত্র হলুদ খাবারই খাবেন।

            

বন্ধুরা এই ভাবেই সম্পূর্ণ হয় বৃহস্পতিবার এর ব্রত। আশাকরি গুরু বৃহস্পতির উদ্দেশ্যে করা ব্রত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক। 

আরো পড়ুনঃ- হিন্দু ধর্মে বিবাহের পরে শাখা পলার গোপন রহস্য || শাখা পলা ভেঙ্গে গেলে যা করতে হয় - CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা