নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণ অনুসারে সৃষ্টির শুরু থেকেই পৃথিবীতে জীবনচক্র চলে আসছে। অর্থাৎ যে এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে তাকে একদিন না একদিন মরতেই হবে। আর এরকম মনে করা হয় যে মৃত্যুর পর আত্মা কে যমদূত তার সাথে যমলোকে নিয়ে যায়। কিন্তু, পৃথিবী থেকে যমলোক যাত্রা জীবাত্মার জন্য খুবই কঠিন হয়ে থাকে, যার বর্ণনা গরুড় পুরান দেওয়া রয়েছে।
গরুড় পুরাণ অনুসারে মৃত্যুর পর জীবাত্মাকে যমলোকের রাস্তায় বিভিন্ন রকমের বাঁধার মুখোমুখি হতে হয়। আর এই বাধার মধ্যে একটি হল যমলোক যাওয়ার পথে আসা - বৈতরণী নদী। এরকম মনে করা হয় যে - পূর্ণ আত্মা খুব সহজেই এই নদী পার করে ফেলে। কিন্তু, পাপী জীবাত্মাকে এই নদীতে বিভিন্ন রকম যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়।
আজকের লেখায় আমরা জানব যে বৈতরণী নদী কেমন হয়? আর পাপী জীবাত্মাদের এখানে কেমন ধরনের যন্ত্রণা সহ্য করে এই নদী পার করতে হয়?
গরুড় পুরাণের ধর্মকান্ডের প্রেৎকল্প অধ্যায় অনুসারে একদিন পক্ষীশ্রেষ্ঠ গরুড় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে জিজ্ঞাসা করেন - হে প্রভু, মর্তলোক ও যমলোকের মাঝে যে বৈতরণী নদী উপস্থিত রয়েছে তার সাথে জীবাত্মার কি সম্পর্ক? আর তাদের এই নদীতে কেমন ধরনের শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং পাপী আত্মা এই নদীকে কিভাবে পার করে?
তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন, হে গরুড়! যমলোক যাওয়ার রাস্তায় উপস্থিত বৈতরণী নদী দেখতে খুবই ভয়ঙ্কর হয়।আর যেসব পাপী আত্মাকে মৃত্যুর পর এই নদী পার করতে হয় তারা খুবই ভয়ভীত হয়। এই মহা ভয়ঙ্কর নদী রক্তরুপি জল দিয়ে পরিপূর্ণ। শুধু এই পর্যন্তই নয়; এই নদী মাংস ও আবর্জনা দিয়ে ভর্তি। এই নদী পাপী আত্মাকে দেখে বিভিন্ন রকমের ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে নেয়। পাপী আত্মা নদীতে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই এই নদীর জল পাপী আত্মাদের দেখে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে । এর জল জীবানু এবং বজ্রের সমান শিং যুক্ত প্রাণী দ্বারা ব্যাপ্ত। তার সাথে এই নদী ঘড়িয়াল এবং তাদের মতই অনেক হিংস্র মাংস ভক্ষণ জলচর দ্বারা ভর্তি। আর নদীতে যখনই পাপী আত্মার প্রবেশ হয় তখন নদীর জল অত্যান্ত গরম হয়ে যায়। পাপী আত্মা আর্তনাদ করে কষ্ট পেতে থাকে। গরম জলের তাপের কারণে পাপী আত্মা আপনজনদের ডাকতে থাকে। আর যখন কেউ তার কাছে না আসে তখন সে ওই ভয়ঙ্কর গরমে এদিক ওদিকে দৌড়াতে থাকে। এরপর যখন তার ওই তাপ একেবারেই সহ্য হয় না, তখন ওই আত্মা দুর্গন্ধ পূর্ণ জলে ডুব দেয়। আর তার আত্মগ্লানি থেকে ব্যথিত হয়।
এরপর শ্রীকৃষ্ণ বলেন - হে গরুড়, কিছু জীবাত্মা এমনও হয় যাদের মৃত্যুর পর এই বৈতরণী নদীতে থাকতে হয়। যেমন- যেই আত্মারা তাদের জীবিত সময়ে আচার্য গুরু মাতা পিতা এবং অন্য গুরুজনদের অবমাননা করে তাকে এই মহা নদীতে থাকতে হয়। এছাড়া যেসব জীবাত্মা নিজের জীবিত কালে তার পবিত্র, ভদ্র ও ধর্ম পরায়ন স্ত্রীকে ত্যাগ করে তাকে সবসময়ের জন্য ওই মহা ঘৃণিত নদীর জলে বাস করতে হয়। তার সাথে যেসব জীবাত্মা জীবিত সময় তার স্বামী, বন্ধু, তপস্বী, স্ত্রী এবং ছেলের বধ করে সে এই মহানদীতেই পড়ে থাকে । এরই সাথে আগুন লাগানো ব্যক্তি, বিষ দেওয়া ব্যক্তি, মিথ্যে প্রমাণ দেওয়া ব্যক্তি, মাদক সেবন কারী ব্যক্তি, অপহরণ করা ব্যাক্তি, সেতুকে ভেঙে ফেলা, অন্যের স্ত্রীকে মনে মনে কামনা করা ব্যাক্তি এবং তৃষ্ণার্ত গরুদের জল দান না করা ব্যাক্তি, মেয়েদের সাথে অত্যাচার করা ব্যাক্তি মৃত্যুর পর বৈতরণী নদীতে বাস করে। এইসব ছাড়া অহংকারী, পাপী এবং নিজের মিথ্যা প্রশংসা করা ব্যক্তি বৈতরনী নদীতে বাস করে। কিন্তু, এই পাপী জীবাত্মাদের মধ্যে যে মকর ও কর্কট সংক্রান্তি ,সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ সংক্রান্তি, অমাবস্যা অথবা অন্নপূর্ণা কাল আসার সময় শ্রেষ্ঠতম দান দিয়েছে - তাকে নির্দিষ্ট সময় পরে যমদূত এই নদী থেকে বের করে নিয়ে যায়। এই কারণে প্রাণীদের উচিত জীবিত কালে দান করা এবং ধর্মের পথে চলা।
এছাড়া যেসব জীবাত্মা জীবিত সময়ে গরুকে খাবার দান করে, ব্রাহ্মণকে দান করে তারও এই নদীর যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভ হয়।
এই কারণে হিন্দু ধর্মে মৃত্যুর আগে গরুকে খাবার দান করা হয়। এরকম মানা হয় যে গরুকে খাবার দান করলে মানুষ ওই গরুর লেজ ধরে বৈতরণী নদী পার করে। আর ওই সুকর্মের প্রভাবে তার পরলৌকিক সুখ প্রাপ্তি হয়।
এই কারণে বন্ধুরা মানুষের দরকার তার জীবিত কালে অধিক থেকে অধিক পরিমাণে ধর্মের পালন করা। যার ফলে তাকে মৃত্যুর পরে কোনো রকম কষ্ট সহ্য করতে হয় না। তাহলে বন্ধুরা আশাকরি যে আপনারা আজকে গরুড় পুরাণের কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন এবং মৃত্যুর পর মানুষকে কোন নদী পার করতে হয় এবং সেই নদীর প্রকৃতি কেমন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।
বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- গরুড় পুরাণ অনুযায়ী মৃত্যুর 47 দিন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির আত্মা সঙ্গে কি হয়ে থাকে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা