নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
আজকে আপনাদের সামনে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল - সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে কেন আমাদের হাতের তালু দর্শন করা প্রয়োজন?
বন্ধুরা যদি এই একটি কাজ নিয়মিতভাবে কেউ করতে পারেন তাহলে নিশ্চিত রূপে তার চিন্তাজগতে এক বিরাট পরিবর্তন আসবে। ভগবানের কৃপায় অভাবনীয় উন্নতি হবে এবং তার নিশ্চিত রূপে সারাদিন ভালো কাটবে। তাই বন্ধুরা এই সামান্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজটি আমাদের প্রত্যেকেরই করা প্রয়োজন। কয়েকদিন নিষ্ঠা সহকারে এই ক্রিয়াটি করার পর এর প্রভাব আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন।
আজ এরকমই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আজকের লেখাতে আলোচনা করতে চলেছি। আশাকরি এই লেখাটির মাধ্যমে সনাতন ধর্মের একটি নতুন বিষয় সম্পর্কে আপনি জানতে সক্ষম হবেন এবং এই লেখাটি পড়ে আপনি নিজের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করতে সক্ষম হবেন।
বন্ধুরা মহাভারত রচয়িতা মহর্ষি বেদব্যাস তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে আমাদের প্রতিটি মানুষেরই সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠার পরে যে কাজটি অবশ্যই করা প্রয়োজন তা হলো - নিজের হাতের করতল দর্শন করা। কারণ সমস্ত দেবদেবীর অবস্থান আমাদের এই হাতের করতলেই। তাই নিজের হাতের করতল দর্শন করার অর্থ হলো- সমগ্র দেবদেবীকে দর্শন করা। করতল দর্শন অত্যন্ত শুভ ফলদায়ক। কারণ শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে -
" কারাগ্রে ভাসাতে লক্ষ্মী, কারামধ্যে সরস্বতী, কারামূলে স্থিতা-গৌরি, মঙ্গলাম কারাদর্শনাম ।। "
অর্থাৎ হাতের তালুর একদম উপরে অবস্থান করছে স্বয়ং মা লক্ষ্মী। হাতের তালুর মধ্যে কানে অবস্থান করছেন দেবী সরস্বতী। আর একেবারে নিচে অবস্থান করছে মা গৌরী এবং সমগ্রতলের মূল ভাগে রয়েছে শ্রীকৃষ্ণ। তাই হাতের তালু দর্শন করার অর্থ হলো সমগ্র দেবদেবীকে দর্শন করা।
সনাতন ধর্মে বারবার এই বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে যে - সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অতি অবশ্যই নিজের হাতের করতল দর্শন করা প্রয়োজন। আর করতাল দর্শন করার পর এই মন্ত্রটি আমাদের উচ্চারণ করা প্রয়োজন। মন্ত্র টি হল -
" কারাগ্রে ভাসাতে লক্ষ্মী, কারামধ্যে সরস্বতী, কারামূলে স্থিতা-গৌরি, মঙ্গলাম কারাদর্শনাম ।। "
মন্ত্রটি ৩ বার উচ্চারণ করা প্রয়োজন। কেউ যদি নিয়মিত সকাল বেলায় ঘুম থেকে ওঠার পর হাতের তালু দর্শন করে এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করে থাকেন তাহলে তিনি নানাবিধ উপকার পান। এই মন্ত্রটি সকালবেলায় পাঠ করলে আমাদের আশেপাশের পজিটিভ শক্তির মাত্রা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, নেগেটিভ শক্তি আমাদের ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেনা। ফলে সারাটা দিন যেরকম আনন্দে কাটে ঠিক সেরকমই কাজকর্মোও ঠিক মত হয়। শুধু তাই নয় ভাগ্য আপনার সঙ্গে থাকার কারণে আপনার কোনো বিপদ ঘটার আশঙ্কাও কমে। এর পাশাপাশি শাস্ত্র অনুসারে যখন মা সরস্বতী কোনো কারোর উপর সদেব হন তখন তার সমস্ত রকমের সমস্যা কমে যেতে বিন্দুমাত্রও সময় লাগে না। হারিয়ে যাওয়া মানসিক শান্তি যেরকম ফিরে আসে ঠিক সেরকমই পড়াশোনার জন্য সু-পথ প্রশস্ত হয়। মা স্বরসতীর আশীর্বাদে সামাজিক ক্ষেত্রে মান সম্মান বৃদ্ধি পায়। এমনকি এটা মনে করা হয় যে এই মন্ত্র পাঠ করার সাথে সাথেই মা দুর্গার আশীর্বাদ সেই ভক্তের ওপর বর্ষিত হয়। মাতৃ শক্তির প্রভাবে মনের জোর বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে যেকোনো ধরনের ভয়, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয় মন। মন্ত্রটি উচ্চারণের মাধ্যমে মা লক্ষ্মী দেবীও অত্যন্ত প্রসন্ন হন এবং তিনি তার কৃপা দৃষ্টি সর্বদা বর্ষণ করেন। আর মা লক্ষ্মীর কৃপা যার ওপর থাকে তিনি সর্বদাই সুখ-শান্তিতে থাকেন। মন্ত্রটির নিয়মিত উচ্চারণ করলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটতে সময় লাগে না। মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদেও কোনো ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও এই ক্রিয়াটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই বিষয়টি পরীক্ষিত সত্য যে, কোনো ব্যক্তির ঘুম ভাঙার পর হঠাৎ করে উঠে তিনি যদি খাট থেকে নেমে পড়েন তাহলে তার শরীরের উপর এক বিরাট প্রভাব পড়ে। আর এই বিষয়টি যদি কারো সাথে প্রায়শই ঘটতে থাকে তাহলে তার হার্টের উপর নিয়মিত চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে হৃদপিন্ডের মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এই কারণেই বর্তমানেও বিভিন্ন ডাক্তার বিদদের দ্বারা এই কথাটি বলা হচ্ছে যে, ঘুম থেকে একেবারে সটান উঠে না পড়ে বরং ঘুম থেকে আস্তে করে উঠে কিছুক্ষণ বসে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু এই কথাগুলি আমাদের সনাতন ধর্মে বহুকাল পূর্বেই বলা রয়েছে।
আধ্যাত্বিক দিক থেকে এই বিষয়টির গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠার পরে যদি কোনো ব্যক্তি ঈশ্বর চেতনাকে নিজের মনে স্থান দিয়ে থাকেন তাহলে তার মন সর্বদাই ভগবত চিন্তায় আবৃত থাকে এবং সৎকাজ করার প্রেরণা লাভ করে। মনের মধ্যে এই বিষয়টি বদ্ধমূল হয় যে, সমস্ত কাজের পেছনেই রয়েছে স্বয়ং ভগবান। এই কারণেই তো বলি বন্ধুগণ যদি এই মানবজীবনকে সবদিক থেকে সুন্দর বানাতে চান তাহলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এই ক্রিয়াটি কে কখনোই যেন ভুলবেন না।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- মৃত্যুর পর সবাইকে পার করতে হয় এই নদী || কেমন দেখতে হয় - বৈতরণী নদী?
CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা