Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২

5 টি এমন জিনিস - যা মৃত্যুর পরেও থেকে যায় মানুষের সাথে | গরুড় পুরান


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


আজকে আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করব যে বিষয়টি নিয়ে তা হল- মৃত্যুর পরেও জীবাত্মার সাথে যায় এই পাঁচটি জিনিস। 


বন্ধুরা যেমন আমরা সবাই জানি - যে এই মর্তলোকে জন্ম নিয়েছে তার একদিন না একদিন অবশ্যই মৃত্যু হবে। সাধারনত এটা মানা হয় যে, যখন কারো মৃত্যু হয় তখন তার আত্মার সঙ্গে 'কর্ম' ছাড়া আর কিছু যায় না। কিন্তু, এরকম নয়।


গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, যখন কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয় এবং তার শরীরকে যখন পুড়িয়ে ফেলা হয় তখন থেকেই ওই আত্মার যমলোক যাত্রা শুরু হয়। আর ওই রাস্তায় তার কর্মের সাথে সথে জীবিত সময় করা আরো চারটি জিনিস তার সাথে যায়। অর্থাৎ মৃত্যুর পরে প্রেতাত্মার সাথে পাঁচটি জিনিস সবসময় থাকে। আর যখন ওই আত্মার পুনর্জনম হয় তখন এই পাঁচটি জিনিস উচিত সময়ে আত্মার সাথে আবার নতুন শরীরে প্রবেশ করে।


বন্ধুরা তাহলে চলুন জানা যাক ওই পাঁচটি জিনিস কী কী? - যা মৃত্যুর পরেও মানুষের পেছন ছাড়ে না।


গরুড় পুরাণে যে পাঁচটি জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে সর্ব প্রথম জিনিসটি হল কামনা। 


১) কামনা- গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, পুনর্জনমের সময় 'কামনা' মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের পুনরায় নতুন শরীর ধারণ করায় সহযোগিতা করে। কামনা অনুসারেই মানুষের নতুন শরীর প্রাপ্তি হয়। অর্থাৎ মৃত্যুর সময় মানুষ যে যে জিনিসের কামনা করে মৃত্যুর পরেও সেসব তার সাথে যায়। আর ওই কামনার কারণেই মৃত আত্মাকে পুনরায় কোনো না কোনো শরীরের রূপ নিয়ে ফিরতে হয়। এই কারণে গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে - মৃত্যু আসলে সমস্ত ইচ্ছা ত্যাগ করে কেবল ব্রহ্ম অর্থাৎ পরমেশ্বরের ধ্যান করা উচিত। যদি কেউ ইচ্ছে নিয়ে চলে যায় তাহলে নতুন শরীর নিয়ে ফিরতে হবে। 


কামনার পরে যেসব জিনিস মানুষের সাথে যায় তা হল বাসনা।


২) বাসনা- গরুড় পুরাণ অনুযায়ী কামনা হল বাসনারই সাথী। বাসনা হল এমন একটি জিনিস যার কোনো শেষ নেই। মৃত্যু সজ্জাতে থেকেও মৃত আত্মা বাসনা থেকে মুক্ত হতে পারে না। বন্ধুরা আপনাদের বলি, সাংসারিক চাহিদার সুখই হল বাসনা। বেশিরভাগ মানুষ বাসনাকে শুধু শারীরিক ইচ্ছা মনে করে। কিন্তু, তা একদমই নয়। 


গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, যে মানুষ মৃত্যুর সময়ও তার জীবন সাথী, সন্তান, স্ত্রী ও পরিবারের কথা ভাবে এবং তাদের সাথে তার জীবনে পাওয়া সুখ দুঃখের কথা ভাবে আর অসম্পূর্ণ ইচ্ছার কথা ভেবে ছটফট করে - এই ছটফট করতে করতে তার প্রাণ বেরিয়ে যায়। 


গরুড় পুরাণে, এর সাথে জড়িত কিছু কথা রয়েছে, যা অনুসারে - রাজা ভরতের চাহিদা এক মিষ্টি হরিণের প্রতি ছিল। তা ভাবতে ভাবতে রাজা ভরতের মৃত্যু হয়। যার পরিণামে পরের জন্মে রাজা ভরত স্বয়ং হরিণের রূপে জন্ম নেয়। এই কারণে মৃত্যুর সময় মনের মধ্যে কোনো কামনা-বাসনা রাখতে নেই। না হলে মৃত্যুর সময় আপনি যে জিনিসের ইচ্ছা নিয়ে প্রাণ ত্যাগ করেন পরের জন্মে সেই যোনিতে জন্ম নেওয়া নিশ্চিত।


৩)  বাসনার পরে যে জিনিস মৃত্যুর পরে মানুষের সাথে জড়িত থাকে তা হলো তার দ্বারা জীবনভর করা- 'কর্ম' । গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, মানুষ জীবনভর অনেক কর্ম করে। যতই সেই কাজ ভালো হোক কি খারাপ হোক সেই কাজ মৃত্যুর পরও তার সাথে থাকে। গীতাতেও বলা হয়েছে কোনো মানুষ কোনো কাজ না করে একটু সময়ও থাকতে পারে না। মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে আত্মা শরীর দ্বারা করা কর্মগুলো নিজের মধ্যে সীমিত করে নেয়। এই কর্মই পরলোকে মানুষকে সুখ ও দুঃখ দেয়। আর এর পরিণামেই পরের জন্মে ভালো-খারাপ ফল প্রাপ্ত হয়।

     

শ্রীকৃষ্ণের মতে, কর্মের গতি এমন যা সাতজন্ম পর্যন্ত পেছনে ছাড়ে না। যার সবথেকে ভালো উদাহরণ মহাভারতে পাওয়া যায়। তীর লাগা শরীর নিয়ে মৃত্যুশয্যায় লুটিয়ে থাকা 'ভীষ্ম' - শ্রীকৃষ্ণকে যখন জিজ্ঞাসা করেন আমার মৃত্যু এমন করে কেনো হল? তখন শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে 101 জন্ম পূর্বের ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে বললেন- 101 জন্ম আগে আপনার কারণে এক  মৃত্যু এভাবেই হয়েছিল। এই কারণে আজ আপনি তীর শয্যায় পড়ে আছেন।


বন্ধুরা এই কারণে মানুষের উচিত জীবনে ভালো কর্ম করা। যার কারণে তার ভালো কর্মের জন্য অন্য জন্মে ভালো ফল লাভ হয়।


৪) কর্মের পরে গরুড় পুরানে ঋণের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। যা অনুসারে মানুষের উচিত যদি সে জীবিত সময়ে কারো কাছে ঋণী থাকে তাহলে মৃত্যুর আগে অবশ্যই তা শোধ করা উচিত। কেননা ধার করা এবং ধার দেওয়া দুটোই জন্ম-জন্মান্তর পর্যন্ত পিছন ছাড়ে না।


গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে যে, ধার বা ঋন নিয়ে মারা গেলে ঋণদাতা যখন পরলোকে আসে তখন তার ঋণ শোধ করতে বলে। সেই সময় যমদূত ঋণ নেওয়া ব্যক্তির মাংস কেটে ঋণদাতাকে দেয়। কিন্তু, ঋণের বোঝা এখানেই শেষ হয় না। পরের জন্মেও এই ঋণ পেছন ছারে না। আর তাকে তা কোনো না কোনো রূপে মেটাতেই হয়। 


এই কারণে বন্ধুরা যদি আপনি কখনো কারো কাছ থেকে ধার নিয়ে থাকেন, তাহলে মৃত্যুর আগে তা অবশ্যই শোধ করে দিন। যাতে পরের জন্মে আপনাকে কোনো রকমের কষ্ট না পেতে হয়।


৫) ঋণের পরে যে পঞ্চমতম যে জিনিসের কথা বলা হয়েছে তা হল- 'পুণ্য'যা মৃত্যুর পরে মৃত আত্মার সাথে যমলোক থেকে দ্বিতীয় জন্ম পর্যন্ত থেকে যায়।

 

গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে যে , আপনার দ্বারা করা দান এবং পরোপকারের পুণ্য অনেক জন্ম পর্যন্ত সাথে থাকে। জীবনে যদি কোনো অপরিচিত ব্যক্তি আপনাকে সাহায্য করে তাহলে বুঝে নেবেন যে সে আপনার পূর্ব জন্মের পুণ্য মিটিয়ে দিল। শাস্ত্রে দান পুণ্য কে ব্যাংকে রাখা টাকার সাথে তুলনা করা হয়েছে। যা খারাপ সময়ে কাজে লাগে। এই কারণে মানুষের পুণ্যরূপ টাকাকে জীবনভর জমানো উচিত। অক্ষয় তৃতীয়া, অক্ষয় নবমী, মাঘী পূর্ণিমা, কার্তিক পূর্ণিমা, গঙ্গা দশেরা, মকর সংক্রান্তি কিছু এমন দিন আসে যেদিন করা দান-পুন্য বহু জন্ম পর্যন্ত ব্যক্তিকে সুখ দেয়। আর এই 'পুন্য' জন্ম জন্মান্তর আপনার সাথে থাকে। 


এই কারণে বন্ধুরা মানুষরুপি জীবনে গরুড় পুরাণে বলা এইসব জিনিসের ওপর বিশেষ মনোযোগ রাখুন যাতে মৃত্যুর পরে আপনি সদ্গতি লাভ করতে পারেন।


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুনঃ- শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে - মানুষের মনে, আপনজনের থেকে পরমানুষ অধিক আপন - এমন ভাবনা কেন আসে?  CLICK HERE



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা