Breaking

Search Content

Follow Us

বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে - মানুষের মনে, আপনজনের থেকে পরমানুষ অধিক আপন - এমন ভাবনা কেন আসে?

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


বন্ধুরা এই সংসারে কোনো মানুষই সর্বগুণ সম্পন্ন হয় না। আমাদের সবার মধ্যে কোনো না কোনো ত্রুটি বা খারাপ গুণ অবশ্যই থাকে। আর আমাদের আপনজনেরাই শুধুমাত্র আমাদের এই খারাপ গুণ থাকা সত্ত্বেও আমাদেরকে নিজের বলে মেনে নেয় ও আপন করে নেয়, যতই কোনো বাঁধা আসুক না কেন। কিন্তু, বন্ধুরা এই সবের পরেও আমরা আপনজনদের থেকে পর মানুষদের বেশি বিশ্বাস করি। শুধু এটাই নয় আজকাল আমারা -পর মানুষদের আপন মনে করার সাথে সাথে আমরা আপনজনদেরও খারাপ ভাবতে থাকি।



আজকের এই লেখাতে আমরা জানবো যে, কেন মানুষ তার আপনজনদের খারাপ ভাবে এবং কেন তারা আপনজন থাকতেও পর মানুষদের বেশি আপন করে নেয়? 


আজকে আমরা সেই কারণের কথা বলব যার কারণে আমরা আপনজন ও আত্মীয়দের দূর করছি এবং পর মানুষদের কাছে টানছি। 


কর্মের ব্যাপারে বলার আগে আমরা মহাভারতের সেই অধ্যায়ের কথা বলব যখন মহাভারতের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে অর্জুনের মন ছটফট করছিল। তিনি অস্ত্র নীচে রেখে দিয়েছিল আর দুঃখী মনে ভগবান কৃষ্ণ কে বলেছিলেন, হে কৃষ্ণ! যুদ্ধে আসা এইসব আত্মীয় এবং বন্ধুদের উপস্থিত দেখে আমার শরীরের সমস্ত অঙ্গ কাঁপছে আর মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। অর্জুন আরও বলেছিলেন যে , কৌরব পক্ষেও আমার আত্মীয়রা রয়েছে। আমি তাদের ওপর অস্ত্র চালাতে পারবো না। আমি তাদের সাথে যুদ্ধ করতে পারবো না।

                           

তখন ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনকে গীতার উপদেশ দিয়েছিলেন, যার পরে অর্জুন যুদ্ধের জন্য রাজি হয়েছিল।


বন্ধুরা সেইসময় ছিল যখন নিজের আত্মীয়দের কাছে প্রতারিত হওয়া পরেও অর্জুনের মন যুদ্ধের জন্য রাজি ছিল না, তিনি পরিবারের বন্ধনে এমনভাবে জড়িত ছিল যে - তাঁর কাছে মহাভারতের যুদ্ধ বৃথা মনে হয়েছিল। আর বর্তমান সময় হল আরেক রকম, যেখানে মানুষের কাছে তার আত্মীয়-স্বজন খারাপ হয়ে গেছে এবং আজকাল মানুষ জীবনে শান্তি - আত্মীয়দের সাথে নয়; বরং পর মানুষদের সাথে সময় কাটিয়ে পায়। এর পেছনের সবার প্রথম কারণ হলো-  


বন্ধুরা বলতে গেলে আজকালকার মানুষের নিজের ভালো ও নিজের দিকটা সবথেকে অধিক প্রিয়। কোনো মানুষ এটা চায় না যে, কেউ তার ভালোর পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াক কিংবা তার নিষ্ঠার হনন করুক এবং কেউ তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে যেন কথা না বলে। তাই এই সময় যখন আপনজনের দ্বারা সীমার উল্লঙ্ঘন হয়, তখন মানুষের মনে সেই আপনজনকে নিয়ে চিন্তার অবকাশ ঘটে এবং তখন পরিবারের মানুষকেও শত্রু বলে মনে হয়। 


বন্ধুরা আপনারা দেখেছেন হয়তো, যে আপনার অধিকাংশ প্রতিবেশী অথবা সহকর্মী আপনার ব্যক্তিগত ব্যাপারে দখলদারি করেনা। হয়তো তারা আপনাকে ভালোবাসে না, আর না হয় তারা তাদের নিজের ব্যক্তিগত জীবনে এমন ভাবে ফেঁসে থাকে যে, তার কাছে আপনার জন্যে সময় থাকে না। আর এই কারণে মানুষ এইসব লোক বেশি পছন্দ করে , যে তার সীমা উল্লংঘন করে না। 


এখন বলি দ্বিতীয় কারণটি - আপনিও দেখেছেন যে, মানুষ সেইসব মানুষদের বেশি খারাপ মনে করে যারা তার নিন্দা করে। আর এটাই কারন - খারাপ কথা বলে  আমাদের ভালো রাস্তায় নিয়ে যাওয়া আপনজনদের আমরা খারাপ ভাবি। 


বন্ধুরা আশাকরি আপনাদের রাবণের ভাই বিভীষণের সম্পর্কে জানাই আছে। যিনি লঙ্কাপতি রাবনকে বুঝিয়েছিলেন যে, আমাদের সমস্ত লঙ্কাবাসীদের ভালো হবে যদি আমরা মাতা সীতাকে সম্মানসহ প্রভু শ্রী রামের কাছে পাঠিয়ে দেই। বিভীষণের এই কথা শুনে রাবণ ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। আর তিনি বিভীষণকে লাথি মেরে লঙ্কা থেকে বার করে দিয়েছিলেন। বিভীষণ তখন লঙ্কা থেকে বেরিয়ে রামের কাছে পৌঁছায় এবং নিজের পরিস্থিতির কথা ভগবান রামকে বললেন। তখন প্রভু শ্রী রাম বিভীষণ কে তার কাছে রেখেছিলেন। এই ঘটনাটির থেকে আমরা এটা উপলব্ধি করতে পারি যে, যখন কোনো আপন মানুষ খারাপ কথার মাধ্যমে সঠিক পথ দেখায় তখন সেটা আমাদের পছন্দ হয় না। আমাদের সেই আপনজন শত্রু বলে মনে হতে থাকে। ঠিক সেরকমটাই রাবণেরও মনে হয়েছিল 'বিভীষণকে' নিয়ে। তাই বিভীষণকে সে তাড়িয়ে দিয়েছিল।


বন্ধুরা তৃতীয় কারণটি বলার আগে, আমি আপনাদের একটি প্রশ্ন করতে চাই! আপনি কি আপনার প্রতিবেশীদের কাছে আশা রাখেন যে, তারা আপনাকে খাবার খাওয়াবে এবং শরীর খারাপ হলে আপনার খেয়াল রাখবে? 


আশাকরি বন্ধুরা আপনাদের সবার উত্তর না-ই হবে। কেননা এমনটাও অনেক সময় হয় যে, আমরা আপনজনদের কাছ থেকে অনেক বেশি বেশি আশা রাখি আর যখন তা পূরণ হয় না তখন তারা আমাদের কাছে খারাপ হয়ে যায়। অন্যদিকে যেমন পর মানুষদের কাছ থেকে কোনো আশাই থাকে না, তাই তাদের সাথে কোনো ঝামেলাও হয় না। 


এছাড়াও "পর মানুষকে আপন ভাবা" এবং "আপনদের থেকে দূরে যাওয়ার" আরেকটি কারণ হল যে, কলিযুগে অনেক মানুষের মধ্যে রাবণ লুকিয়ে আছে। অর্থাৎ বর্তমানে মানুষের অনেক রূপ রয়েছে। তার পরিবার-পরিজনেরা সেইরূপ সম্পর্কে জানেন । অন্যদিকে পর মানুষ আমাদের অন্যান্য রূপ থেকে অজানা থাকে। এই কারণে "আপনজনেরা পর হওয়া" এবং "পর মানুষেরা কাছে থাকা" - স্বাভাবিক ব্যাপার।


আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুনঃ-খেতে বসে খাবার আগে বলুন এই একটি কথা - জীবনে কখনো অন্নের অভাব হবে না 🔥🔥🔥 CLICK HERE



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা