নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আপনারা কি কখনো ভেবেছেন যে আপনজনদের আঘাত লাগলে আমরা দুঃখী হয়ে যাই, তাদের কষ্ট দেখে আমাদের চোখ দিয়ে জল ঝরে - সেই আপনজনের যখন মৃত্যু হয় তখন তার অন্তিম সংস্কার জন্য আমরা কেন তাড়াহুড়ো করি। এসবের পেছনে কি আমাদের কোন স্বার্থ আছে? নাকি শাস্ত্রে এমন লেখা আছে? যার কারণে না চাইতেও আমাদের তাড়াতাড়ি করে মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার করতে হয়।
তাহলে বন্ধুরা আজকের এই লেখাটিতে আমরা সবাই এই বিষয়ে জানব যে, মৃতদেহকে তাড়াতাড়ি কেনো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়?
হিন্দু ধর্মের প্রমূখ গ্রন্থের মধ্যে একটি হলো গরুড় পুরান। যেখানে মৃত্যুর সাথে যুক্ত আমাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। আর বন্ধুরা এই ধর্মগ্রন্থে এই কথার উল্লেখ রয়েছে যে, মৃতদেহকে বেশি সময় পর্যন্ত ঘরে রাখা উচিত নয়। আর যদি সম্ভব হয় তাহলে তাড়াতাড়ি মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার করা দরকার। এই গ্রন্থে করা বর্ণনা অনুসারে যখন কোনো গ্রামে বা শহরে কারো মৃত্যু হয় তখন যতক্ষণ না পর্যন্ত মৃতদেহটির অন্তিম সংস্কার করা হয় ততক্ষণ তার ঘর-পরিবারের লোকে ছাড়াও সেই গ্রামের সব মানুষদেরও তার যাওয়ার শোকের কারনে কোনো শুভ কাজ করা উচিত নয়। আসলে এটি হলো একটি নিয়ম - শোকাতর পরিবারের দুঃখে সাথে থাকার। যতক্ষণ পর্যন্ত ওই মৃত ব্যক্তির দেহ ঘরে থাকে ততক্ষণ পুরো গ্রামে না পুজো করা উচিত; না কোন শুভ কর্ম করা উচিত। শুধু এইটুকুই নয় এর কারনে ঘরে চুলা অথবা উনুনও জ্বলে না, এর মধ্যে যদি বেশিক্ষণ ধরে মৃতদেহটিকে ঘরে রাখা হয় তাহলে অন্য লোকেদেরও কষ্ট করতে হয়। আর বন্ধুরা এই কারণেই মৃতদেহকে তাড়াতাড়ি করে অন্তিম সংস্কার করে দেওয়া হয়।
বন্ধুরা তাড়াতাড়ি মৃতদেহ জ্বালানোর আরেকটি কারণ হলো যে, হিন্দু ধর্মে রাতের অন্ধকারে অন্তিম সংস্কার করা হয় না। এরকম মনে করা হয় যে রাতে অর্থাৎ সূর্য অস্ত যাওয়ার পর স্বর্গের দরজা বন্ধ হয়ে যায় আর নরকের দরজা খুলে যায়, এইসময় জীবাত্মাকে নরকের কষ্ট ভোগ করতে হয়। আর এই কারনেই চেষ্টা করা হয় যে মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার তাড়াতাড়ি করে সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে করার।
অন্যদিকে হিন্দুধর্মের শাস্ত্র অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির শবদেহের দেখাশোনা করা খুবই দরকার । কারণ যদি এই সময়, মৃতদেহকে কোনো পশু ছুঁয়ে নেয় তাহলে দুর্গতি দেখা দেয়। এই কারণে বেশিক্ষণ ধরে শবদেহকে রাখলে তার দেখাশোনা করা কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আর এটি হলো একটি কারণ যার জন্য মৃত দেহকে তাড়াতাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু , বন্ধুরা যদি কারও মৃত্যু সূর্যাস্তের পরে হয় তাহলে তখন অন্তিম সংস্কার করায় তাড়াহুড়ো করা হয় না, বরং তখন সূর্য উদয় হওয়ার অপেক্ষা করা হয়। আর এরকম পরিস্থিতিতে মৃতদেহকে সারারাত ঘরেই রাখা হয়। এরপর পরের দিন সূর্যের প্রথম কিরণ দেওয়ার পরেই তার শব যাত্রাও বার করা হয়। আসলে বন্ধুরা যদি কোনো ব্যক্তির মৃত্যু পঞ্চক কালে হয় তখনও অন্তিম সংস্কার করায় তাড়াহুড়ো করা উচিত নয়। এরকম পরিস্থিতিতে যতক্ষণ পর্যন্ত না পঁঞ্চক কাল শেষ হয় ততক্ষণ পর্যন্ত শবদেহকে ঘরেই রাখা হয়। আর কোনো না কোনো পরিজন শবদেহের কাছে থাকে।
গরুড় পুরান ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, পঁঞ্চকে মৃত্যু হলে কি করা উচিত। এই সম্পর্কিত একটি লেখা আপনাদের সঙ্গে অন্য কোনদিন আলোচনা করব।
তাহলে বন্ধুরা আশাকরি আপনারা বুঝে গেছেন যে কোনো স্বার্থের জন্য নয় বরং ধর্মশাস্ত্রে উল্লেখিত নিয়মের কারণেই মৃতদেহের অন্তিম সংস্কার করায় তাড়াহুড়ো করা হয়।
তো বন্ধুরা আজকের লেখা এই পর্যন্তই, আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনর উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন । নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুনঃ- শ্রীকৃষ্ণের অন্তিম সংস্কারের পরেও - কেন আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়নি, এই অঙ্গটি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা