Breaking

Search Content

Follow Us

শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০২২

রামায়ণের সঙ্গে যুক্ত 9টি গোপন রহস্য - যা হয়তো আপনিও জানেন না ! || Unheard stories from Ramayan.



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।


বন্ধুরা প্রভু শ্রী রামের জীবনের বৃত্তান্ত বাল্মিকী দ্বারা রচিত রামায়ণ ও তুলসী দাসের রামচরিত মানসে পাওয়া যায়। হালেই রামায়ণকে আবারো ছোট পর্দায় টেলিকাস্ট করা হয়েছে। তখন সকল ভক্তবৃন্দ পুনরায় আবার রাম ভক্তিতে ডুবে যান। কিন্তু, রামায়ণের কিছু এমনও রহস্য রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আজও অধিকতর মানুষজন অজানা রয়ে গেছেন। আজকের এই লেখাটির মাধ্যমে আমরা এমনই কিছু রহস্য থেকে পর্দা সরাতে চলেছি। 


১) (রাজা দশরথের এক পুত্রী ছিল) 

বন্ধুরা, এটা তো বেশিরভাগ লোকই জানেন যে, প্রভু শ্রী রামকে যুক্ত করে তারা চার ভাই ছিলেন। কিন্তু, শ্রীরামের একটি বোনও ছিল। যার সম্পর্কে খুবই কম মানুষেরা জানেন। তার নাম ছিলো শান্তা। সে বয়সে চার ভাইয়ের থেকে বড় ছিল। দশরথ ও কৌশল্যার প্রথম সন্তান হলেন শান্তা। আর একটি মান্যতা অনুযায়ী অঙ্গ দেশের রাজা ও রানী একবার অযোধ্যা রাজ্যে রাজা দশরথের সঙ্গে দেখা করতে। তারা ছিলেন নিসন্তান। তাদের সঙ্গে কথোপকথনের সময় রাজা দশরথ যখন এই বিষয়টি জানতে পারলেন তখন রাজা দশরথ বললেন - আমি আমার পুত্রী শান্তাকে আপনাদের সন্তান স্বরূপ দান করলাম। এটা শুনে অঙ্গ দেশের রাজা ও রানী দুজনা খুবই প্রসন্ন হন। আর তারা শান্তাকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে চলে যান। তখন শান্তা খুবই ছোট ছিল। অঙ্গদেশের রাজা ও রানী খুব ভালোভাবে শান্তার পালন পোষণ করলেন। আর শান্তাকে একজন পিতা-মাতার মতো ভালোবাসা দিয়ে ছোট থেকে ধীরে ধীরে বড় করে তুললেন।


২) (১৪ বছর পর্যন্ত ঘুমাননি লক্ষণ) 

বন্ধুরা, একটি মান্যতা অনুসারে যখন বনবাসের প্রথম রাত্রে শ্রীরাম ও মাতা সীতা ঘুমিয়ে পড়লেন ,তখন লক্ষণ ঘুমালেন না। তখন কিছুক্ষণ পরে নিদ্রা দেবী লক্ষণের সামনে প্রকট হন। আর তাকে জিজ্ঞাসা করল  - আপনি কেন ঘুমাচ্ছেন না ? তখন লক্ষণ উত্তর দিয়ে বলল আমাকে আমার বড় ভাই ও সীতা মাতার দেখাশোনা করতে হবে। এইজন্য আপনার কাছে অনুরোধ আমাকে এমন বরদান করুন যাতে করে আমার বনবাসের ১৪ বছর পর্যন্ত ঘুমই না পায়। আর আমি আমার প্রিয় বড়ভাই ও মাতা সীতার খেয়াল রাখতে পারি। নিদ্রাদেবী তার এই কথাতে অত্যন্ত খুশি হলেন। আর তাকে বললেন, আমি তোমাকে এই বরদান তখনই দিতে পারব যখন কেউ তোমার বদলে ১৪ বছর পর্যন্ত ঘুমানোর সংকল্প নেবে। তখন লক্ষণ তার পত্নীর নাম বললেন। আর এই ভাবেই উর্মিলা ১৪ বছর পর্যন্ত ঘুমানোর সংকল্প গ্রহণ করেন ও পুরো ১৪ বছর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে। এত বছর পর্যন্ত না ঘুমানোর ফলেই লক্ষণের আরেকটি নাম ছিল গুডাকেশ। যার অর্থ এসে দাঁড়ায় নিদ্রায় বিজয়প্রাপ্ত হওয়া।


৩) (রাবণের যুদ্ধ রথে কেন ছিল বিণা?) 

বন্ধুরা, রাবণের নাভিতে অমৃত ছিল আর তার দশটি মাথা ছিল - এই কথা তো সবাই জানে। কিন্তু, রাবণের যুদ্ধরথে কেন ছিল বিনা সেটা কেউ জানতো না। তো বন্ধুরা আপনাদেরকে বলি, রাবণ ছিল খুবই সংগীত প্রিয় এবং তিনি বিনা বাজাতে পছন্দ করতেন। এই কারণে তার যুদ্ধরাতে প্রতীকের রূপে বিনা অঙ্কিত ছিল। রাবন খুব ভালো বীণা বাজানো সত্ত্বেও তিনি তার এই কলাটিকে বেশি প্রদর্শন করেননি। এই কারণে এর উল্লেখ খুব কম পাওয়া যায়।


৪) (এত কেন ঘুমাতো কুম্ভকর্ণ?) 

বন্ধুরা, কুম্ভকর্ণ রাবনের ছোট ভাই ছিল। বেশিরভাগ মানুষেরা জানেন যে, সে খুব খেতো এবং ছয় মাস পর্যন্ত ঘুমাতো। কিন্তু, এর পিছনে রয়েছে খুবই মজাদার একটি রহস্য। যা সাধারন জনমানুষের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। আসলে ব্রহ্মাজিকে প্রসন্ন করার জন্য কুম্ভকর্ণ অনেক তপস্যা করেছিল। তখন একদিন ব্রহ্মাজি প্রকট হন এবং কুম্ভকর্ণকে বর চাইতে বলেন, অন্যদিকে দেবরাজ ইন্দ্র যখন এই কথা জানতে পারেন তখন তিনি মনে মনে ভয় পান যে কুম্ভকর্ণ বর হিসাবে ব্রহ্মাজীর কাছে যেন ইন্দ্রাসন না চেয়ে বসে। তখন ইন্দ্রদেব - দেবী সরস্বতীর কাছে অনুরোধ জানান যে বর চাওয়ার সময় দেবী সরস্বতী যেন কুম্ভকর্ণের জিভে অবস্থান করেন। যার ফলে কুম্ভকর্ণ ইন্দ্রাসনের বদলে নিদ্রাসন চেয়ে নেন। আর বন্ধুরা দেবরাজ ইন্দ্রের কারণেই কুম্ভকর্ণ বরদান হিসেবে চাইতো কিছু অন্য বিষয়, আর সে পেয়ে গেল অন্য কিছু।


৫) (শ্রী রামের অন্যান্য ভাইয়েরা কার অবতার ছিলেন?)

বন্ধুরা, হিন্দুধর্ম গ্ৰন্থ অনুযায়ী ভগবান রামকে বিষ্ণুর অবতার বলে মানা হয়। কিন্তু, তার অন্যান্য ভাইয়েরা কে, কার অবদার ছিলেন - তার চর্চা খুব কমই হয়। বন্ধুরা, আপনাদের উদ্দেশ্যে বলি যে - লক্ষণকে শ্রী বিষ্ণু ভগবানের বাহন শেষ নাগের অবতার হিসেবে মানা হয়। যেখানে ভরত ছিল সুদর্শন চক্রের অবতার।


৬) (রাবণের মৃত্যুর পিছনে ছিল সূর্পনখার অভিশাপ) 

বন্ধুরা এটা আমরা সকলেই জানি যে, লক্ষণ দ্বারা সূর্পনখার নাক কাটার কারণে লঙ্কাপতী রাবণ মাতা সীতার হরণ করেছিলেন। কিন্তু বন্ধুরা আপনাদের মধ্যে খুব কম মানুষ এটা জানেন হয়তো সূর্পনখা লঙ্কাপতী রাবণকে নাশ হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দেন। কেননা রাবণের বোনের পতির নাম বিদ্যুৎ ছিল। আর তিনি রাজা কালকেয়'র সেনাপতি ছিলেন। যখন রাবণ বিশ্বজয়ের উদ্দেশ্যে বের হয় তখন তার রাজা কালকেয'র সঙ্গেও যুদ্ধ হয়। তখন এই যুদ্ধে রাবণের হাতে তার বোনের পতি বিদ্যুতের মৃত্যু হয় । এতে রাবণের বোন সূর্পনখা খুবই দুঃখিত হন। আর সে মনে মনে রাবনকে অভিশাপ দেয় যে, একদিন আমার কারনেই তোর সর্বনাশ হবে।


৭) (লঙ্কায় বিনা অন্ন-জলে কি করে থাকলেন দেবী সীতা?) 

একদিন অশোক বাটিকায় শ্রীরামের শোকে কাতর হয়ে থাকা দেবী সীতা অন্নজল ত্যাগ করে দেন। এটা দেখে ব্রহ্মাজি অত্যন্ত ঘাবড়ে গেলেন। আর তিনি ইন্দ্রকে দেবী সীতার খাওয়ার ব্যবস্থা করতে বললেন। ব্রহ্মাজির আদেশ পালনের উদ্দেশ্যে দেবরাজ ইন্দ্র বিশেষ ক্ষীর দিয়ে ভরা একটি পাত্র ও নিদ্রা দেবীর সঙ্গে লঙ্কায় পৌঁছান। তখন নিদ্রাদেবী নিজের শক্তি দিয়ে সকল রাক্ষসদের ঘুম পাড়িয়ে দেন। যার পর দেবরাজ ইন্দ্র মাতা সীতার কাছে নিজের আসল পরিচয় দিয়ে তার কাছে ক্ষীর খাওয়ার অনুরোধ জানান। আর বলেন এই ক্ষীরটি খাওয়ার ফলে আপনার অনেকদিন পর্যন্ত খিদে ও তৃষ্ণা পাবেনা। তখন দেবী সীতা ইন্দ্রদেবের করা অনুরোধের ফলে ইন্দ্রের আনা সে বিশেষ ক্ষীরটি খান। আর বন্ধুরা এই কারণেই দেবী সীতা দুমাস পর্যন্ত অশোক বাটিকায় কিছু না খেয়ে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত অবস্থায় থাকতে পেরেছেন।


৮) (মাতা সিতার আগেও রাবণ করেছিল আরেকটি নারীর অপহরণ) 

বন্ধুরা, রাবণ দ্বারা করা ছল-পূর্বক মাতা সীতার অপহরণের ঘটনা তো আমরা সকলেই জানি। আনন্দ রামায়ণ অনুসারে, রাবণ শুধুমাত্র মাতা সীতারই অপহরণ করেননি বরং একবার কৌশল্যাকেও অপহরণ করেছিল। আসলে ব্রহ্মাজি রাবণ কে প্রথমেই এটা বলে দিয়েছিল যে, দশরথ ও কৌশল্যার পুত্র তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। নিজের মৃত্যু এড়িয়ে যাওয়ার জন্য রাবণ কৌশল্যার অপহরণ করেছিল। রাবণ কৌশল্যাকে অপহরণ করার পরে একটি দ্বীপে ছেড়ে দেন। পরবর্তী সময়ে অনেক কষ্ট করে রাজা দশরথ তাকে খুঁজে বার করে আবার পুনরায় নিজের মহলে নিয়ে আসেন।


৯) (লক্ষণ রেখার বর্ণনা বাল্মিকির রামায়ণে নেই) 

 ভগবান রাম বনবাসে যাওয়ার পর বনে মারিচ নামক হরিণের বেশে এক রাক্ষসের উপর যখন প্রহার করেন, তখন সেই রাক্ষসটি শ্রী রামের আওয়াজ বার করতে থাকে। যা শোনার পর মাতা সীতা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন। আর তিনি লক্ষণকে শ্রী রামের কাছে যাওয়ার জন্য বলেন। কিন্তু, লক্ষণ কোথাও না কোথাও সেই মায়াজালটিকে বুঝতে পেরেছিল। লক্ষণ মাতা সীতাকে অনেকবার বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলেন যে, শ্রীরামের কখনো কোনো কিছু হবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও মাতা সীতা তা মানতে রাজি ছিলেন না। তখন লক্ষণ বনবাসে তাদের সেই কুঠিটির চারপাশে গোল করে একটি রেখা কাটলেন। আর মাতা সীতার কাছে অনুরোধ জানালেন সে যেন সেই রেখার মধ্যেই থাকে। আর যদি কোনো অন্য ব্যক্তি এই রেখা পার করার চেষ্টা করে তাহলে সে পুরে ছাই হয়ে যাবে। বন্ধুরা এই কাহিনীটি আমরা বেশিরভাগ মানুষই জানি। কিন্তু, অবাক করার বিষয় হলো - এই কাহিনীটির বাল্মিকী দ্বারা রচিত রামায়ণে কোথাও বর্ণনা পাওয়া যায় না। কিন্তু বন্ধুরা রামচরিত মানসের লঙ্কাকাণ্ডে এই কথার বর্ণনা পাওয়া যায় রাবণের পত্নীর মুখে।


তো বন্ধুরা এই হল রামায়ণের সেই ঘটনাগুলি যা খুবই মহত্ত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু , এইসব ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা খুব কমই হয়। আশাকরি বন্ধুরা আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। আজ এখানেই শেষ করলাম ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো দেখুন - এই 10 রকমের মানুষের গৃহে কখনো করবেন না ভোজন - হয়ে যাবেন পুরোপুরি বরবাদ ! || Places Where you must Never Eat -  CLICK HERE

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা