কেমন হয়ে থাকে - যমলোক !? || হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী যমলোকের বর্ণনা।

নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 

গরুড় পুরানে বেশিরভাগ বর্ণনা এই জগত থেকে চলে যাওয়া মানুষদের সম্পর্কে দেওয়া রয়েছে, আপনি কি জানেন কেন? 

বন্ধুরা এটা একটি এমন পুরাণ যেখানে মানুষের মৃত্যুর পরে আত্মার সাথে কি হয়, আত্মা কোথায় যায় আর কোন প্রকার আত্মাদের যমলোক প্রাপ্ত হয় ইত্যাদির বিস্তার পূর্বক বর্ণনা রয়েছে। কিমবা এও বলা যেতে পারে যে, মৃত্যুর পরে আত্মার সম্পূর্ণ যাত্রা বিস্তারিত ভাবে এই পুরাণের মাধ্যমে বলা হয়েছে। গরুড় পুরানে বলা হয়েছে যে যেই আত্মারা পাপ করেছে তাদের কোন প্রকারের যন্ত্রণা দেওয়া হয়। এছাড়াও উল্লেখ রয়েছে যে, আত্মাদের দ্বারা করা পাপের অনুসারে যমলোকে কোন যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। আজ আমরা জানবো গরুড় পুরান অনুসারে যমলোক কেমন হয়? আর এখানে কি হয়?

গরুড় পুরানে, যখন গরুড় ! ভগবান শ্রী হরি বিষ্ণুকে যমলোকের ব্যাপারে প্রশ্ন করে তখন উত্তরে ভগবান যমলোক যাওয়ার রাস্তা এবং যমলোকের ব্যাখ্যা করেন। তাহলে আসুন জানা যাক ভগবান বিষ্ণু, যমলোকের বর্ণনা কিভাবে করেছেন।

বাস্তবে সেই সব আত্মাদেরই যমলোকে নিয়ে যাওয়া যায় যারা পাপী হয়। যমলোকে যমরাজ বাস করেন। যেসব আত্মারা ভালো কর্ম করেছে ; যেমন- দয়া, দান ইত্যাদি করে থাকে তাদের স্বর্গলোক প্রাপ্ত হয়। যখন কোনো পাপী ব্যক্তির মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসে তখন যমরাজের দূত তার কাছে আসে এবং যখন আত্মা শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে যায়, যমদূত আত্মাকে তার সাথে যমলোক নিয়ে যায়। যমদূতের রূপ খুবই ভয়ঙ্কর হয়।‌‌ এরা ভয়ংকর দেখতে হয় আর আত্মাকে প্রতারিত করতে করতে যমলোক নিয়ে যায়। এর অর্থ হল যে, শরীর ত্যাগ করার সাথে সাথেই পাপী আত্মাদের প্রতারণা পাওয়া শুরু হয়ে যায়।

যমদূত যে রাস্তা দিয়ে আত্মাদের যমলোকে নিয়ে যায় সেই রাস্তা খুবই ভয়ঙ্কর আর কষ্টদায়ক হয়, আর তাকে শান্তি প্রদান করার মতো একটিও বস্তু এই রাস্তায় পাওয়া যায় না। এই রাস্তা ভয়ংকর গরম হয় আর জলের একটি বিন্দু থেকে শুরু করে গাছের ছায়া পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায় না। এই রাস্তা গলে যাওয়া লাভার সমান উত্তপ্ত, আর কাঁটা দিয়ে ভর্তি থাকে আর ভুমি হয় আগুনের সমান গরম। রাস্তায় পাওয়া প্রতারণার জন্য আত্মার, তার আত্মীয় পরিজনদের কথা খুবই মনে পড়ে আর ভাবনায় জড়িয়ে কষ্ট পেতে থাকে আর বন্ধুরা এরকম কষ্টকে সহ্য করে ওই আত্মা যমলোকে পৌঁছায়।

আসুন এখন জানি গরুড় পুরান অনুসারে যমলোক কেমন হয়।

যমলোক ৮৬ হাজার যোজন ক্ষেত্র নিয়ে বিস্তারিত। আমাদের গণনা অনুসারে, ১ যোজন হল প্রায় ১ লাখ কিলোমিটারের সমান। যমলোকের চারটি দরজা রয়েছে, দক্ষিণ আর দক্ষিণ পশ্চিমে রয়েছে যমপুরী। যমপুরীর দেওয়াল এত শক্তিশালী যে তাকে ভেদ করা অসম্ভব আর এখানে যমরাজের অনুমতি ছাড়া দেবতাদের প্রবেশও নিষেধ। যমপুরী হল যমরাজ সমেত তার সমস্ত দূতের বাসস্থান। গরুড় পুরানে উল্লেখ রয়েছে যে,যমপুরী বিদ্যুতের সমান চমকায়। ভগবান বিষ্ণু যমরাজ ভবনের ব্যাখ্যা করতে করতে বলেন যে, যমরাজ ভবনের চমক সোনার মতন আর এখানে সব সময় কর্ণ প্রিয় ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। অগুণিত প্রকারের ফুল এই ভবনকে সুগন্ধিত করে থাকে। এই ভবনে একটি বিশাল আকারের সিংহাসনও রয়েছে, যেখানে স্বয়ং যমরাজ বিরাজমান হয় আর অনেক অপ্সরা তার সেবার জন্য উপস্থিত থাকে। এখানে যমরাজের সভাও বসে, গরুড় পুরান অনুযায়ী এই সভায় শুধুমাত্র ধর্মের পথে চলা আত্মাই প্রবেশ করতে পারে। এমন আত্মা যারা কখনও অসত্য কথা বলেনি আর যারা আধ্যাত্মিক প্রবৃত্তির হয়ে থাকে, শান্ত স্বভাবের হয়ে থাকে আর যেসব আত্মা দান,পূণ্য করেছে তাদেরকেই যমরাজের সভায় আসার অধিকার প্রাপ্ত হয়, এই প্রকার আত্মাদের সাথে যমরাজ বন্ধুত্বের ব্যবহার করেন, এরকম আত্মা আর যমরাজ সমেত এই সভায় অনেক ঋষি মুনি আর তপস্বী ব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকে।

যমপুরীর মধ্যে চিত্রগুপ্তের ভবন রয়েছে যা খুবই আকর্ষণীয়। এখানে সব সময় বাদ্যযন্ত্র বাজতে থাকে আর এই ভবনে মনি আর রত্ন দিয়ে তৈরি খুবই আকর্ষণীয় সিংহাসন রয়েছে, যার ওপর বসে চিত্রগুপ্ত আত্মাদের কর্মের লেখা লেখি করেন, আর এতে লেখা কর্মের অনুসারেই আত্মাদের যন্ত্রণা দেওয়া হয়

তাহলে বন্ধুরা এই ছিল গরুড় পুরান অনুযায়ী যমলোকের বর্ণনা।

আরো পরুন - হিন্দু ধর্মে শিশুর মৃত্যুর পর - কেন আগুনে পোড়ানো হয় না? || Why do Hindus bury child after Death CLICK HERE