Breaking

Search Content

Follow Us

বুধবার, ১৩ জুলাই, ২০২২

হিন্দু ধর্মে শিশুর মৃত্যুর পর - কেন আগুনে পোড়ানো হয় না? || Why do Hindus bury child after Death



নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা আমরা সবাই জানি যেখানে অন্য ধর্মে মৃত্যুর পরে শবদেহকে কবর দেওয়া হয় সেখানে আমাদের হিন্দু ধর্মে মৃতদেহকে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, বন্ধুরা আপনারা কি জানেন হিন্দু ধর্মে, নবজাত শিশুদের মৃত্যুর পর জ্বালানোর পরিবর্তে মাটি চাপা দেওয়া হয়, যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজ এই লেখাটি সম্পূর্ণ শেষ পর্যন্ত পড়ুন। কারণ আজকের এই লেখার মাধ্যমে আপনাদের যা বলব তার বর্ণনা গরুড় পুরানেও পাওয়া যায়।


বন্ধুরা নবজাতক শিশু অথবা সন্ন্যাসীদের জ্বালানোর বদলে কেন মাটি চাপা দেওয়া হয়, এটা জানার আগে আপনাদের বলে দেই যে - কত বছরের বালক এবং বালিকাদের হিন্দু ধর্মে মৃত্যুর পরে মাটি চাপা দেওয়া হয়? 


গরুড় পুরানে বর্ণিত কথা অনুসারে, পক্ষীরাজ গরুড়ের প্রশ্নে ভগবান বিষ্ণু তাকে উত্তর দেন - হে গরুড় ! যদি কোনো স্ত্রীর গর্ভপাত হয় অথবা যদি জন্মের পরে ২ বছর বয়সের কোনো বালক বা বালিকার মৃত্যু হয় তাহলে তাকে জ্বালানোর বদলে মাটিতে গর্ত করে তাকে মাটি চাপা দেওয়া উচিত। আর এর বেশি বয়স্ক মানুষের মৃত্যু হলে তাদের জ্বালানো উচিত। 


গরুড় পুরান অনুযায়ী, বাস্তবে মানুষ যখন জন্ম নেয় তখন দুই বছর বয়স পর্যন্ত সে জাগতিক অর্থাৎ মায়ার বন্ধন থেকে অজ্ঞাত থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে তার আত্মার শরীরের প্রতি কোনো মায়া থাকে না। এইরকম অবস্থায় যদি কেউ ২ বছরের কম বয়সে মারা যায় তখন সহজেই আত্মা সেই শরীর ত্যাগ করে দেয়, আর পুনরায় ওই শরীরে প্রবেশ করার চেষ্টাও করে না। অন্যদিকে যেসব মানুষের আত্মা বয়স বাড়ার সাথে সাথে মায়ায় জড়িত হয়ে যায় তাদের শরীরে উপর আত্মা মায়ায় জড়াতে থাকে। আর মৃত্যুর পরে আত্মা ওই শরীরে ততক্ষণ প্রবেশ করার চেষ্টা করে যতক্ষণ না পর্যন্ত মৃতের শরীরকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।


গরুড় পুরান অনুযায়ী, অন্তিম সংস্কার অর্থাৎ দাহ সংস্কার শরীর থেকে আত্মার মায়া কাটানোর। যখন শরীরকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তখন সে অগ্নি দ্বারা মুক্ত হয়ে যায়। আর এরপর ওই আত্মার তা কোনোরকম প্রয়োজন থাকে না। বাস্তবে অগ্নিকে হিন্দু ধর্মে এক প্রবেশ দরজা মনে করা হয়, যার মাধ্যমে মৃতদেহকে যখন জ্বালানো হয় তখনই সে আধ্যাত্বিক জগতে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু, বাচ্চারা যারা বেশিদিন বাঁচেনি তাদের আত্মার তাদের শরীরের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না। এই কারণে তাদের মৃত্যু হওয়ার পরে জ্বালানোর বদলে মাটি চাপা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া গরুড় পুরানে এও বলা হয়েছে যে, শিশুদের ছাড়া সন্ন্যাসীদেরও মৃত্যুর পরে জ্বালানোর বদলে মাটি চাপা দেওয়া দরকার। কেননা এরকম মানুষ নিজেদের কঠোর তপস্যার দ্বারা নিজের শক্তিতে নিজের শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রন করতে পারে। আর মোহ, মায়া, ক্রোধ, লোভ ইত্যাদিকে জয় করে নেন। এই সময় ওই শরীরে উপস্থিত আত্মার ওই শরীরের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকে না। আর যখন এরকম মানুষের মৃত্যু হয় তখন তারা বাধাহীন ভাবে বৈকুন্ঠধামে চলে যায়, হরির চরণে চিরদিনের জন্য স্থান করে নেয়। 


এছাড়া ভগবান বিষ্ণু গরুড় পুরানে বলেন যে, যখন কোনো শিশুর মৃত্যু হয়ে যায় তখন তার আত্মার শান্তির জন্য কি কি করা দরকার। ভগবান বিষ্ণুর মতে, যখন কোনো শিশুর মৃত্যু হয় তখন তার মা বাবার উচিত তার উদ্দেশ্যে দুধ দান করা অথবা ওই শিশুটির যত বয়স ছিল ততগুলি বাচ্চাকে তাদের হাতে দুধ পান করানো। কেননা বাচ্চার মৃত্যুর পরে তাদের শ্রাদ্ধ করা হয় না। 


যেকোনো মৃত শিশুর বিধি বিধান অনুযায়ী শ্রাদ্ধ তখনই করা যায় যখন তার উপনয়ন বা পৈতে ধারণ করা সম্পন্ন হয়ে যায়।‌‌ এর সাথে ভগবান বিষ্ণু এও বলেন যে, যদি মা-বাবার ক্ষমতা থাকে তাহলে তাদের উচিত মৃত শিশুর উদ্দেশ্যে বস্ত্র দান করা। মা বাবা অথবা কোনো আত্মীয়-স্বজন মৃত শিশুর উদ্দেশ্যে যত দান করতে পারে ততো তাড়াতাড়িই ওই শিশুর আত্মা অন্য শরীর পেয়ে যায়। কেবল এটুকুই নয় ভগবান বিষ্ণু গরুড়কে এও বলেন যে - হে গরুড় ! যখন কোনো বালকের মৃত্যু হয় এবং তাকে মাটিতে গর্ত করে চাপা দেওয়া হয় তখন তার পরিবারের সদস্যদের উচিত যে, তারা মাটির ওই অংশকে গোবর দিয়ে লেপে গঙ্গাজল ছিটিয়ে তাকে পবিত্র করে দেওয়া এবং তারপরেই তুলসীর একটি চারা সেখানে লাগিয়ে দেওয়া। কেননা এরকম মানা হয় যে, যেখানে তুলসী গাছ থাকে সেখানে ভগবান বিষ্ণুর স্বয়ং বাস করে আর এরকম অবস্থায় মৃত আত্মা তাড়াতাড়িই মুক্তি পেয়ে যায়।

             

তাহলে বন্ধুরা আশাকরি আপনারা হয়তো এখন বুঝে গেছেন যে, হিন্দু ধর্মে দুই বছরের কম বয়সের ছেলে- মেয়েদের এবং সাধু সন্ন্যাসীদের কেনো জ্বালানো হয় না। লেখাটি পড়ে ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পরুন - অর্জুনের মৃত্যু দেখে কেন হাসলেন দেবী গঙ্গা !? CLICK HERE


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা