নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা যখন যখন এই পৃথিবীতে অধর্মের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখন ভগবান বিষ্ণু ধর্মের পুনঃস্থাপনার জন্য অবতারিত হন এই মৃত্যুলোকে। আমাদের ধর্ম শাস্ত্রতে ভগবান বিষ্ণুর দশটি অবতারের উল্লেখ মেলে। যার মধ্যে নয়টি অবতার শ্রী হরির ধারণ করা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, দশম অবতার অর্থাৎ কল্কি অবতার এখনো হওয়া বাকি রয়েছে। তো বন্ধুরা কবে আর কখন জন্ম নেবে কল্কি অবতার? তার এই অবতার দেখতে কেমন হবে? আর তিনি এই অবতরে কার বধ করবেন? আর ভগবান কল্কির সঙ্গে যুক্ত এমন দশটি কথা জেনে নেবো, যা অধিকতর মানুষ জানেন না।
বন্ধুরা কল্কি অবতারের সঙ্গে যুক্ত বিশেষ একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো - ভগবান বিষ্ণুর এটি এমন একটি অবতার যার জন্মের আগেই তার জয়জয়কার করা হচ্ছে। আসলে ভগবান কল্কির জন্ম নিয়ে বহু মতামত রয়েছে, একটি মত অনুসারে কল্কি ভগবানের জন্ম শুক্লপক্ষের দ্বাদশী তিথিতে হবে। অন্যদিকে আরেকটি মতানুসারে শ্রাবণ মাসের বিশেষ তিথিতে কল্কি ভগবান এই পৃথিবীতে জন্ম নেবেন। আর বন্ধুরা এই দুই তিথিকেই আজকের দিনে 'কল্কি জয়ন্তী' হিসেবে পালন করা হয়।
দ্বিতীয়ত, কল্কি অবতারের বিশেষ উল্লেখ আমরা বিষ্ণু পুরাণে পেয়ে থাকি। যা অনুসারে ভগবান কল্কির জন্ম - উত্তর প্রদেশের মুরাদাবাদ জেলার সম্বল গ্রামে হবে। কল্কি ভগবানের পিতার নাম হবে বিষ্ণুজার ও তার মাতা হবেন সুমতি। আর বন্ধুরা এরা দুজনেই ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত হবেন।
তৃতীয়ত, মান্যতা অনুসারে ভগবান বিষ্ণুর এই অবতার ৬৪ টি কলাতে নিপুন হবে। যখন মানুষের হৃদয়ে শুধু অধর্ম ভরে উঠবে ভগবান কল্কি তখন মানুষদেরকে অধর্ম থেকে ধর্মের পথে নিয়ে আসবেন। শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার দ্বাদশ অধ্যায়ে ভগবান কল্কির কথা বিস্তারে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে এই অবতার ভগবান বিষ্ণুর দশম ও শেষ অবতার। যার পরে কলিযুগের অন্ত ও সত্য যুগের সূচনা হবে। শ্রীমৎ ভাগবত অনুসারে শ্রী রামের মতো ভগবান কল্কিরও চার ভাই হবে।
চতুর্থত, বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী ভগবান পরশুরামই ভগবান কল্কির গুরু হবে। এই কারণে আজও ভগবান পশুরাম মহেন্দ্র গিরি পর্বতে তপস্যা করতে করতে কল্কি অবতারের জন্য অপেক্ষা করছেন। যাতে করে ভগবান পরশুরাম কল্কি অবতার কে শস্ত্র ও শাস্ত্রের জ্ঞান দিতে পারে।
পঞ্চমত, বিষ্ণু পুরাণে এই কথাটিরও উল্লেখ মেলে যে ভগবান পরশুরামের আজ্ঞা পালন করে ভগবান কল্কি ভগবান শিবের তপস্যা করবেন। যার পরে কল্কি অবতারের দিব্যশক্তি প্রাপ্ত হবে। আর তার সাহায্যেই কল্কি অবতার অধর্মী মানুষদের নাশ করবে।
ষষ্ঠত, বন্ধুরা কল্কি অবতার সম্পর্কে এও বলা হয়ে থাকে যে তিনি দুনিয়ার সকল পাপী ও অধর্মী রাজাদের পরাজিত করে তাদের বধ করে দেবেন। তিনি শুধুমাত্র এই পৃথিবীর মাটিতে নয় বরং সমুদ্রেতেও রাজ করবেন।
সপ্তমত, বন্ধুরা যেমনটা আপনাদের আগেই জানিয়েছে ভগবান কল্কি ৬৪ টি কলাতে যুক্ত থাকবেন, চিনি শ্বেত রঙের ঘোড়ায় আরোহন করবেন। অগ্নি পুরানের ১৬তম অধ্যায় অনুসারে এই ঘোড়াটির নাম হবে দেব দত্ত। আর এই অবতারের শ্রীহরীর একটি হাতে তলোয়ার ও অন্য হাতে তীর কামান থাকবে। যার মাধ্যমে তিনি দুষ্টের বিনাশ করবেন।
অষ্টমত, এই সকল বিষয়গুলি ছাড়াও ভগবান কল্কির কাছে একটি রহস্যময় তোতা থাকবে। যার নাম হবে - শূক। এই তোতাটি ভূত কাল, ভবিষ্যৎ কাল ও বর্তমান কালের সম্পূর্ণ জ্ঞাতা হবে। যে সময়ে সময়ে নিজের শক্তির মাধ্যমে ভগবান কল্কির সাহায্য করবে। আর অনেক রকমের মুহূর্তপূর্ণ জানকারি দেবে।
নবমত, বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী কল্কি অবতারের জন্ম তখন হবে যখন কলিযুগের অন্ত নিকটে চলে আসবে, যখন এই পৃথিবীতে সব জায়গায় পাপের দেখা দেবে, বেশিরভাগ মানুষেরা অধর্মী হয়ে উঠবে - যারা শুধুমাত্র নিজের বিষয়েই ভাববে, তাদের না তো শাস্ত্রের কোনো জ্ঞান থাকবে আর না তাদের মধ্যে কোনো সংস্কারের ছোঁয়া থাকবে - ঠিক সেরকম সময় তেই কল্কি অবতারের জন্ম হবে। কিন্তু, বন্ধুরা এখনো কলি যুগের প্রথম চরন চলছে কেবলমাত্র। এই কারণেই বন্ধুরা এখনো কল্কি অবতারের জন্ম নিতে বহু সময় বাকি রয়েছে। কিন্তু কিছু লোক আবার এই বিষয়টির উপরেও দাবি জানাই যে ভগবান কল্কির জন্ম হয়ে গিয়েছে, আর কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি সকল পাপীদের নাশ করবেন।
দশমত, বন্ধুরা যেমনটা আমরা জানি সনাতন ধর্মে কালচক্রকে চারটি যুগে বিভাজিত করা হয়েছে। আর দ্বাপর যুগে যখন ভগবান কৃষ্ণ বৈকুণ্ঠে ফিরে গিয়েছিলেন তখন পৃথিবীতে কলি যুগের সূচনা হয়েছিল। এরকম অবস্থা যখন ভগবান কল্কি যখন পাপীদের বিনাশ করবেন ও বিনাশ করার পরে তিনিও যখন বৈকুন্ঠে ফিরে যাবেন তখন এই পৃথিবীতে ভয়ংকর প্রলয় সৃষ্টি হবে। যার ফলে এই পৃথিবী থেকে জীবন শেষ হয়ে যাবে। তখন ১২ বছর পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি হবে। যার পরবর্তীতে আবার পুনর্জীবনের স্থাপনা হবে। আর বন্ধুরা পুনর্জীবনের সূচনা হবে যেই যুগে সেই যুগকেই সত্য যুগ বলা হবে। বন্ধুরা এটা সেই যুগ হবে যেখানে চারিদিকে ধর্মের পুনঃস্থাপনা হবে। সকল মানুষই হবে সৎ এই যুগে। এই যুগে কোন মানুষ মিথ্যা কথা বলা, অসৎ কর্ম করা, কারো সঙ্গে ব্যভিচার - এইসব কিছুই করবে না। এই যুগে সকল মানুষের সত্য কথা বলবে ও ঈশ্বরের ভক্তিতে লিন থাকবে। যেই কারণে এই যুগের নাম হবে সত্যযুগ।
তো বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। আজ এখানেই শেষ করলাম, ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- ভারতের কোথায় রয়েছে পান্ডবদের বংশ? অধিকতর হিন্দু এটি জানেন না || Is Pandav dynasty still Alive - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা