নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আপনারা শুনেছেন হয়তো যে প্রাচীনকালে ঋষি মুনিরা নিজের অভিশাপের মাধ্যমে যে কোনো মানুষকে ভস্ম করে দিতে পারতো। শুধু তাই নয় তাদের কাছে এরকম শক্তি ছিল যার মাধ্যমে তারা একজন মানুষকে অন্য কোন কীটপতঙ্গে বা কোন প্রাণীতে পরিবর্তন করে দিতে পারতো। বন্ধুরা ঠিক এরকমই একটি অভিশাপের ফল ভোগ করতে হয়েছিল ভগবান শিব কেও। বন্ধুরা আজকের এই লেখাটিতে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হল- পৌরাণিক কালে দেওয়া ১০টি বিখ্যাত অভিশাপ সম্পর্কে।
বন্ধুরা প্রথমেই যে চর্চিত অভিশাপটি নিয়ে আলোচনা করব তা হয়তো আপনি জানেন, সেটি হল - যে অভিশাপের জন্য কেটেছিল বালক গণেশের মস্তক। আমাদের হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে সময় সময়তে ভগবানদেরও একাধিক অভিশাপের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আপনিও এরকম অনেক কথাই হয়তো শুনেছেন যেখানে ভগবানদের অভিশাপ সহ্য করতে হয়েছে - এমনটা বলা হয়েছে। এরকমই একটি অভিশাপ সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আলোচনা করা হয়েছে। এই অভিশাপের কারণে ভগবান শিবকে বালক গণেশের মস্তক পর্যন্ত কাটতে হয়েছিল। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে উল্লেখিত কথা অনুযায়ী একবার নারদজি খুবই জিজ্ঞাসু অবস্থায় শ্রী হরি নারায়ণের কাছে গিয়ে পৌঁছালেন। আর বললেন - হে প্রভু! আমি আপনার কাছে এটা জানতে চাই যে, ভগবান শিব কেন তার পুত্র গণেশের মস্তক ধর থেকে আলাদা করে দিলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রী হরি কৃষ্ণ বললেন - হে নারদ মুনি ! আমি তোমাকে এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটি প্রাচীন কথা শোনাচ্ছি, যার মাধ্যমে তুমি তোমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে। এই বলে শ্রী হরি নারায়ণ সেই কথাটি শোনাতে লাগলেন।
একদা মহাদেবের দুই ভক্ত ছিল, যাদের নাম ছিল - মালী ও সুমালী। তাদের একবার সূর্যদেবের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধে। তখন সূর্যদেব তাদের উপর নিজের তেজ শক্তি প্রয়োগ করেন। তখন মালী ও সুমালী চিৎকার করে মহাদেব কে ডাকতে থাকে, তাদের এই ডাক শুনে মহাদেব অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে সূর্যদেবের উপর ত্রিশূল দিয়ে প্রহার করেন। ত্রিশূলের প্রহারের ফলে সূর্যদেবের চেতনা নষ্ট হয়ে যায় আর সে তার রথ থেকে নিচে পড়ে যায়। যখন কাশ্যপ জি দেখলেন তার নিজের পুত্র মৃত অবস্থায় রয়েছে তখন তিনি বিলাপ করতে লাগলেন। সেই সময় সকল দেবতাদের মধ্যে হাহাকার লেগে যায়। তখন ব্রহ্মার পুত্র তপস্যী কাশ্যপ জি ভগবান শিবকে অভিশাপ দিয়ে বলেন - "যেমনটা আজকে আমার পুত্রের সঙ্গে হয়েছে, ঠিক সেরকমটাই একদিন আপনাকে আপনার পুত্রের সঙ্গে করতে হবে।" এটা শোনার পর ভগবান শিবের ক্রোধ শান্ত হয়ে যায়। তিনি সূর্য দেব চেতনা ফিরিয়ে দেন। এটা দেখার পর ঋষি কাশ্যপ অবাক হয়ে যান এবং ভগবান শিবের কাছে তিনি ক্ষমা চাইতে থাকেন। এরপরে যখন সূর্যদেব তার পিতার ভগবান শিবকে দেওয়া এই অভিশাপের কথাটি জানতে পারেন তখন তিনি সব জিনিস ত্যাগ করার নির্ণয় নেন। এটা শোনার পর দেবতাদের প্রেরণায় ব্রহ্মা জি সূর্যদেবের কাছে গিয়ে পৌঁছায় আর তাকে তার কাজে পুনরায় লিপ্ত করেন। পরে যেমন ঋষি কাশ্যপের অভিশাপ ছিল, বালক গণেশের ভগবান শিবের সঙ্গে বিবাদের ফলে ঠিক সামানটাই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। আর মহাদেবকে তার পুত্রের ধর থেকে মুন্ডু আলাদা করতে হয়েছিল।
( নন্দী দিয়েছিল রাবণকে অভিশাপ )
বন্ধুরা যেভাবে গরুর মধ্যে 'কামধনুকে' শ্রেষ্ঠ মানা হয়, ঠিক সেরকমই ষাঁড়ের মধ্যে ভগবান শিবের বাহন নন্দীকে সবথেকে উত্তম বলে মনে করা হয়। কিন্তু, বন্ধুরা আপনি কি জানেন নন্দী - রাবণকে অভিশাপ দিয়েছিল ! যার ফলে রাবণের সর্বনাশ হয়ে গিয়েছিল। শিব পুরাণ অনুসারে একবার রাবণ ভগবান শংকরের সঙ্গে দেখা করার জন্য কৈলাস পর্বতে যান, সেখানে যাওয়ার পর রাবণ নন্দী কে দেখে তার স্বরূপের হাসি ঠাট্টা করেন। শুধু তাই নয়, রাবণ নন্দী কে "বানরের সমান মুখ" - এই বলে অপমানিত করে। তখন নন্দী রাবনকে অভিশাপ দিয়ে বলেন - হে দুষ্ট ! তুই আমার যেই পশু স্বরূপ দেখে এত হাসি ঠাট্টা করছিস , সেই পশু স্বরূপের জীব তোর বিনাশের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আর বন্ধুরা, এটা তো আমরা সকলেই জানি যে বানর সেনা ও বজরংবলী হনুমানের সাহায্য নিয়েই ভগবান রাম রাবণের বধ করেছিলেন।
(এক ব্রাহ্মণ দম্পতির রাজা দশরথকে দেওয়া অভিশাপ)
বন্ধুরা এটা তো আমরা সকলেই জানি যে রাজা দশরথ তার পুত্র রামের বিয়োগের ফলে দুঃখে কষ্টে কাতর হয়ে নিজের প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন। কিন্তু বন্ধুরা, এটা খুব কম লোকেই জানেন যে এটা রাজা দশরথের হয়েছিল শুধুমাত্র একটি অভিশাপের কারণেই। তো বন্ধুরা চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই অভিশাপটি সম্পর্কে। বাল্মিকী রচিত রামায়ণে একবার যখন রাজা দশরথ শিকারের উদ্দেশ্যে বনে গিয়েছিলেন তখন তিনি ভুলবশত এক ব্রাহ্মণ পুত্রের বধ করে দেন। সেই ব্রাহ্মণ পুত্রের নাম শ্রবণ কুমার ছিল। যখন শ্রবণ কুমারের মাতা পিতা নিজের পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ পান তখন তিনি রাজা দশরথ কে অভিশাপ দেন - যেই প্রকার ভাবে আমরা পুত্র বিয়োগের শোকে এখন আমাদের প্রান ত্যাগ করছি একই প্রকার ভাবে তোমার মৃত্যুও পুত্র বিয়োগের কারণেই হবে।
(রাজা দক্ষ-এর চন্দ্রমাকে অভিশাপ)
বলা হয়ে থাকে মানুষকে সবসময় বুঝেশুনে আচরণ করা উচিত। কোনো মানুষের দ্বারা করা ভুলবশত কার্যও বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর শিব পুরানেও একটি এরকমই কথার উল্লেখ মেলে যেখানে নিজের আচরণের কারণে চন্দ্রমাকে অভিশাপ ভোগ করতে হয়। শিব পুরাণের কথা অনুযায়ী, রাজা দক্ষ - অশ্বিনীসহ নিজের সাতাশটি কন্যার বিবাহ চন্দ্রমার সঙ্গে করিয়েছিলেন, ২৭ টি কন্যার সঙ্গে বিবাহ করার পর চন্দ্রমা অত্যন্ত প্রসন্ন ছিলেন। আর ওই কন্যাগুলিও চন্দ্রমাকে বর হিসেবে পেয়ে খুবই প্রসন্ন ছিল। কিন্তু এই প্রসন্নতা বেশিদিন পর্যন্ত টিকে ছিল না। কেননা কিছুদিন পর চন্দ্রমা তার ২৭ টি পত্নী দের মধ্যে একটি - রোহিনীর উপর বেশি মোহিত হয়ে যায়। এই কথাটি যখন রাজার দক্ষ জানতে পারলেন তখন তিনি চন্দ্রমাকে বোঝাতে গেলেন। চন্দমা তার সকল কথা শুনলেন, কিন্তু তাও কিছুদিন বাদে আবারো চন্দ্রমার রোহিনীর প্রতি আসক্ত-কতা আরো বেড়ে গেল। তখন রাজা দক্ষ এই কথাটি আবারও জানতে পারলেন। তখন সে ক্রোধের বসে চন্দ্রমার কাছে যান ও তিনি চন্দ্রমা কে অভিশাপ দেন - তুমি ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে যাবে (অর্থাৎ ক্যান্সার)। রাজা দক্ষের এই অভিশাপের পর চন্দ্রমা ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে যান। যার ফলে তার আলো চলে যাতে থাকে। এটা দেখার পর ঋষিমুণিরা খুবই চিন্তায় পড়ে গেলেন। এরপর দেবতা ইন্দ্র সহ সকল ঋষি মুনি ভগবান ব্রহ্মার কাছে গেলেন। আর তার কাছে এই অভিশাপের সম্পর্কে পুরোটা জানালেন ও এই সম্পর্কে কিছু উপায় জানতে চাইলেন। এমত অবস্থায় ব্রহ্মাজি একটি উপায় বলেন যে, চন্দ্রমাকে সোমনাথে ভগবান শিবের তপ (তপস্যা) করতে হবে। এরপর ব্রহ্মাজীর দেখানো উপায় অনুসারে চন্দ্রমা ভগবান শিবের তপ করতে লাগলেন। চন্দ্রমা প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত ভগবান শিবের তপস্যা করেন। ছয় মাস পর ভগবান শিব চন্দ্রমাকে দেখা দেন। তখন চন্দ্রমা ভগবান শিবের কাছে ক্ষয় রোগ থেকে বাঁচার বর চাইলেন। তখন ভগবান শিব বললেন আমি তোমাকে এই অভিশাপ থেকে পুরোপুরি মুক্ত করতে না পারলেও এই অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য মধ্যকার একটি রাস্তা বলে দিতে পারি। তখন ভগবান শিব বললেন একটি মাসে দুটি পক্ষ হয়। যেখানে তুমি একটি পক্ষতে কমতে থাকবে এবং আরেকটি পক্ষতে বাড়তে থাকবে। বন্ধুরা এটাই সেই পৌরাণিক কারণ যার জন্য আমরা বর্তমানে কৃষ্ণপক্ষে ও শুক্লপক্ষে চাঁদের আকৃতির হ্রাস বৃদ্ধি হতে দেখি।
(গান্ধারী দিয়েছিল শ্রীকৃষ্ণ কে অভিশাপ)
মহাভারত কথাতে যে সমস্ত মহিলাদের উল্লেখ মেলে তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিলেন গান্ধারী। গান্ধারী ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী ও দুর্যোধনের মাতা ছিলেন। যার একটি অভিশাপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পুরো বংশের নাশ করে দিয়েছিল। মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর যখন গান্ধারী তার একশ পুত্রকে মৃত অবস্থায় সাদা কাপড়ে ঢাকা দেখে তখন সে বিলাপ করতে লাগলো। আর সেই মুহূর্তেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। তখন বিলাপ করতে থাকা গান্ধারী তার চোখের অশ্রু ঝরাতে ঝরাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলেন এই সব কিছু তোমার জন্য হয়েছে। যদি তুমি চাইতে তাহলে এই যুদ্ধটি এড়িয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু তুমি এমনটা করোনি। গান্ধারী শ্রীকৃষ্ণকে আরো বললেন এই কাজের জন্য আমি তোমাকে কোনদিন ক্ষমা করব না। আর যেভাবে আজকে আমার বংশের নাশ হয়েছে ঠিক সেরকম ভাবেই একদিন তোমার বংশও পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিজেদের বিনাশ ঘটাবে। আর গান্ধারীর এই অভিশাপের কিছু সময় পরেই পুরো যাদব বংশ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে মারা যায়। এইভাবে পুরো যদুবংশ পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিবাদ করে সমাপ্ত হয়ে যায়।
(ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অশ্বত্থামাকে দেওয়া অভিশাপ)
বন্ধুরা চলুন মহাভারতে দেওয়া আরেকটি অভিশাপ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। এই অভিশাপটি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ - অশ্বত্থামাকে দিয়েছিল। অশ্বথামা - কৌরব ও পাণ্ডবদের গুরু দোনাচার্যের পুত্র ছিল। যে মহাভারতে পৌর পক্ষ নিয়ে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু, নিজের এই ভুলের জন্য সে একটি অভিশাপের ভুক্তভোগী হন। আর বলা হয়ে থাকে এই অভিশাপের কারণে অশ্বথামা যতদিন পর্যন্ত না এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তার মুক্তি হবে না, সে এই পৃথিবীতে ঘুরতে থাকবে। আসলে দ্রোণাচার্যের পুত্র অশ্বত্থামাকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অমরতার অভিশাপ দিয়েছিলেন। কারন সে ব্রহ্মাস্ত্রের খারাপ ব্যবহার করেছিল। সেই কারণে শ্রীকৃষ্ণ তারপর অত্যন্ত ক্রোধিত হয়ে যান আর তাকে অভিশাপ দেন যে, সে সেই সকল হত্যার পাপী রূপে গণ্য হবে ও ১০০০ বছর পর্যন্ত এই পৃথিবীতে নির্জন জায়গায় ঘুরে বেড়াবে। বন্ধুরা আজও অনেক জায়গায় অশ্বত্থামাকে দেখা গেছে বলে শোনা যায়। কিন্তু এই কথাগুলির সত্যতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
(ভগবান পরশুরামের কর্ণকে দেওয়া অভিশাপ)
কর্ণ না খালি শুধুমাত্র একজন শক্তিশালী যোদ্ধা ছিলেন, তার সাথে তিনি খুব বড় দানবীরও ছিলেন। কিন্তু বন্ধুরা আপনারা কি জানেন যে ভগবান পশুরাম - কর্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। যার ফলে অর্জুনের সঙ্গে যুদ্ধ করার সময় কর্ণ নিজের ধনুর জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে ভুলে যান। ভগবান পশুরাম কর্ণের প্রতিভা জানার পর তাকে নিজের শিষ্য বানিয়েছিলেন। একদিন অভ্যাসের সময় যখন পরশুরাম খুবই ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন, তখন তিনি কর্ণকে বললেন তিনি একটু আরাম করতে চান। তখন কর্ণ বসে পড়েন আর তার উরুতে মাথা রেখে পরশুরাম বিশ্রাম নিতে থাকেন। কিছুক্ষণ বাদে সেখানে একটি বিচ্ছু বা বিছে আসে এবং কর্ণের উরুতে বা জাং-এ কামড়ায়। তখন কর্ণ ভাবলেন সে যদি নড়াচড়া করে আর সেই বিচ্ছুটিকে সরানোর চেষ্টা করে তাহলে তার গুরুদেবের ঘুম ভেঙে যাবে। এই কারণে কর্ণ বিচ্ছুটিকে সরানোর বদলে তাকে কামড়াতে দিলেন। যার ফলে কর্ণের সেই স্থান থেকে রক্ত পড়তে লাগলো। এর ফলে কর্ণের খুব কষ্ট হতে লাগলো এবং রক্তের ধারা বয়ে যেতে লাগল। আর যখন ধীরে ধীরে রক্ত গুরু পরশুরামের শরীরে লেগে যেতে থাকলো তখন গুরু পরশুরামের ঘুম ভেঙে গেল। পরশুরাম দেখলেন কর্ণের (উরু দেশ) জাং থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এই দেখে পরশুরাম অবাক হয়ে গেলেন এবং বললেন এত সহনশীলতা কেবল একজন ক্ষত্রিয়র পক্ষেই সম্ভব। এরপর পরশুরাম কর্ণকে বললেন - তুমি আমাকে মিথ্যে বলে জ্ঞান প্রাপ্ত করেছো। এই কারণে আমি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি - "যখনই তোমার আমার শেখানো বিদ্যার সবথেকে বেশি প্রয়োজন হবে তখন তুমি সেই বিদ্যা ভুলে যাবে।" আর বন্ধুরা সবশেষে যখন মহাভারতে কর্ণ ও অর্জুনের যুদ্ধ চলছিল তখন সেই সময় কর্ণ ভগবান পরশুরামের শেখানো বিদ্যা ভুলে গিয়েছিলেন।
(যুধিষ্ঠিরের স্ত্রী জাতিকে দেওয়া অভিশাপ)
মহাভারতের সময় যুধিষ্ঠির সম্পূর্ণ স্ত্রী জাতিকে একটি অভিশাপ দিয়েছিলেন, তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক যুধিষ্ঠির এমনটা কেন করেছিল। আসলে বন্ধুরা কর নিয়ে মৃত্যুর পর পাণ্ডবরা জানতে পেরেছিলেন যে কর্ণ কোনো সুতপুত্র নয়, বরং সে ছিল পাণ্ডবদেরই জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা (বড় ভাই)। এটা জানার পর যুধিষ্ঠির তার মাতা কুন্তী কে বলেন, আপনি এত বড় একটি কথা আমাদের কাছে কেন লুকিয়ে রেখেছিলেন? আপনি তো আমাদেরকে আমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হত্যার পাপে জর্জরিত করলেন ! যুধিষ্ঠির আরো বলেন - আপনি আমাদের কাছে আমাদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতার পরিচয় লুকিয়ে ছিলেন এই কারণে আমি আজকে সমস্ত নারী জাতিকে অভিশাপ দিয়ে বলছি - আজকের পর থেকে কোনো নারী কোন কথাকে নিজের মনে লুকিয়ে রাখতে পারবেনা।
(মান্ডব্য ঋষির যমরাজকে দেওয়া অভিশাপ)
বন্ধুরা অভিশাপ থেকে যমরাজও বাঁচতে পারেননি। মান্ডব্য ঋষি তাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। যার পরে যমরাজ - মহাভারতে 'বিদূরের' রূপ নিয়ে জন্ম নেয়। মহাভারত অনুসারে একদা এক রাজা মান্ডব্য নামের এক ঋষিকে ভুলবশত চুরির দোষে অভিযুক্ত করে শূলে চরান। অনেকক্ষণ ধরে শুলে চরানো সত্ত্বেও মান্ডব্য ঋষির প্রাণ যখন বেরোয় না তখন রাজা বুঝতে পারে যে তার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তখন রাজা তার ভুল বুঝতে পেরে মান্ডব্য ঋষির কাছে ক্ষমা চান। এরপর ক্রোধিত হয়ে ঋষি মণ্ডব্য - যমরাজের কাছে যান। আর তার কাছে জিজ্ঞাসা করে - আমি আমার জীবনে এমন কি অপরাধ করেছি যে কারণে আপনি আমাকে এত বড় সাজা দিলেন? তখন যমরাজ বলেন - আপনি যখন 12 বছরের ছিলেন তখন আপনি একটি পতঙ্গের পেছনে সূচ ফুটিয়েছিলেন। যে কারণেই আপনাকে আপনার কর্মের সাজা ভোগ করতে হয়েছে। তখন ঋষি মন্তব্য বললেন - ১২ বছর বয়সে কোনো মানুষেরই ধর্ম-অধর্মের জ্ঞান থাকেনা। আর তখন সকল পাপের সাজা মাফ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আপনি আমাকে তা সত্বেও সাজা দিয়েছেন। এমত অবস্থায় আমি আপনাকে অভিশাপ দিচ্ছি - আপনাকে শূদ্র যোনিতে পৃথিবীতে একজন দাসীর গর্ভে জন্ম নিতে হবে। আর বন্ধুরা ঋষি মান্ডবের এই অভিশাপের কারণে যমরাজকে মহাত্মা বিঁদুরের রূপে জন্ম নিতে হয়েছিল। বিচিত্রবীর্যের প্রথম স্ত্রীর দাসীর গর্ভে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
(সরযু নদীকে [Sarayu River] - দেওয়া ভগবান শিবের অভিশাপ)
চলুন বন্ধুরা সবশেষে এমন একটি নদী সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক যাকে ভগবান শিব অভিশাপ দিয়েছিলেন। যেই কারণে আজও এই নদীকে একটি অভিশপ্ত নদীই বলা হয়ে থাকে। বন্ধুরা আমি যে নদীর কথা বলছি সেটি হল - সরযু নদীকে। বন্ধুরা মান্যতা রয়েছে যে ভগবান শ্রী রাম এই নদীতেই স্বয়ং নিজের ইচ্ছায় সমাধি নিয়েছিল। যার পরে ভগবান শিব সরযুকে বলেছিলেন - হে সরযু ! এখন থেকে যদি তোমার জলে কেউ আচমন করে তাহলে সে নরকের ভাগীদার হবে। তোমার জল কোনো কাজেই লাগবেনা, এমনকি তোমার জল দিয়ে কোনো পূজাও হবে না। কেননা তুমি ভগবান রামের মৃত্যুর কারণ হয়েছো। বন্ধুরা এই কারণের জন্য এই ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত এই নদীকে অভিশপ্ত নদী বলে মানে করা হয়।
তো বন্ধুরা আজকের লেখাটি এই পর্যন্তই। আশা করি লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হয়েছেন। লেখাটি পড়ে যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- কল্কি অবতারের এই ১০ টি রহস্য ! CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা