নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা ভগবদ্গীতার উপদেশ সব থেকে বড় ধর্মযুদ্ধ মহাভারতের রণভূমিতে নিজের শিষ্য অর্জুনকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দিয়েছিলেন। যাকে আমরা গীতা সারও বলে থাকি। আজকে এক হাজার বছরেরও বেশি সময় কেটে গেছে কিন্তু গীতার এই উপদেশ ও কথাগুলি আজকেও আমাদের জীবনে অতটাই প্রাসঙ্গিক যতটা সেই সময়ে ছিল।
বন্ধুরা গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা বলা কথাগুলি মানবজাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। কিন্তু এটি এই বিষয়টির উপর নির্ভর করে যে, এতে বলা কথাগুলি আমরা কিভাবে ও কতটা পরিমাণে পালন করি। গীতাজ্ঞান সারের সাথে সাথেই মানুষ্য জীবনে জ্ঞানের আরেকটি পুঞ্জি রয়েছে, যা আমাদেরকে এটা বলে যে আমরা কিভাবে আমাদের জীবনে ভালো চিন্তাভাবনা নিয়ে আসতে পারি। তো চলুন বন্ধুরা জেনে নেওয়া যাক ১৮ টি বিষয় সম্পর্কে, যেগুলি পালন করে আপনি আপনার জীবনের চরম পরিবর্তন আনতে পারেন এই পরিবর্তন সব সময় আপনার জীবনে ভালো দিকগুলিকে জাগিয়ে তুলবে।
প্রথম কথাটি হল - যখন রনভূমিতে যুদ্ধের সময় অর্জুনকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন তা হলো আনন্দ মানুষের মধ্যেই নিবাস করে। কিন্তু, মানুষ এই আনন্দ স্ত্রীর মধ্যে, ঘরে ও বাহ্যিক জগতে সুখের মধ্যে খুঁজছে। যে মানুষটি এই বিষয়টি বুঝতে পারে সে সাংসারিক সুখ থেকে উপরে উঠে যায়। বন্ধুরা মানুষেরা ভগবানের উপাসনা শরীর থেকে করে। আর সে উপরে উপরে তো পূজা করছে, কিন্তু তার মন রয়েছে অন্য কোথাও। যার ফলে তার কখনো ভগবান রুপী শক্তির সঙ্গে মিলন হয় না।
দ্বিতীয় কথাটি যা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন কে বললেন, তা হলো - ভগবানের উপাসনা কেবল শরীর থেকে নয় বরং মন থেকে করা উচিত। ভগবানের বন্ধন ব্যক্তিকে প্রেম বন্ধনে বাঁধে। আর যে এমন টা করতে সক্ষম হয় তার পরমাত্মার সান্নিধ্য পাওয়া সহজ হয়।
তৃতীয় যে কথাটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন তা হল - মৃত্যু ও জন্মের এই চক্রটি ততদিন পর্যন্ত চলে যতদিন মানুষ এই সাংসারিক মোহ থেকে মুক্ত না হয়। যতক্ষণ মানুষ এটা বুঝতে সক্ষম না হয় যে সবশেষে তাকে ভগবানের কাছেই যেতে হবে ততদিন পর্যন্ত এই চক্র চলতে থাকে। আর মানুষের বাসনাই তার পুনর্জন্মের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
চতুর্থ যে কথাটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন তা হলো - ইন্দ্রিয়ের অধীনে আসলে মানুষের জীবনে সমস্যা এসে ঘিরে ধরে। এই কারণে মানুষদের ইন্দ্রিয়ের ওপর সংযম রাখা উচিত। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এরপর বলেন সংযম অর্থাৎ ধ্যান, সদাচার, স্নেহ ও সেবার মত গুণ সৎসঙ্গ ছাড়া কখনোই আসেনা। আর এই গুণগুলি মানুষকে পরমাত্মার সঙ্গে মেলানোর সিঁড়ি।
বন্ধুরা আজকালকার দিনে মানুষেরা বস্ত্রকে সব থেকে বেশি মাহাত্ম্য দেয়। পুরনো জামা কাপড় পরা মানুষকে সবসময় তিরস্কার আর নতুন জামা কাপড় পড়া মানুষকে সবসময় সম্মান করা হয়ে থাকে। কিন্তু, শ্রীকৃষ্ণ বলেন মানুষদেরকে বস্ত্রের উপর বেশি নজর দেওয়া উচিত নয়। মানুষদের বস্ত্র পাল্টানো আবশ্যক নয়, আর যেটা আবশ্যক সেটা হল - হৃদয় পরিবর্তনের। হৃদয় এমন হওয়া উচিত যেখানে করুণা থাকবে। আর এরকম মানুষরা জীবনে সবসময় এগিয়ে চলে ও বড় হয়।
শ্রীকৃষ্ণ এরপর বলেন যে মানুষরা যৌবন কালে পাপ করে তার বৃদ্ধ বয়সে ঘুম আসে না। কেননা সেই মানুষ তার অন্তিম কালে তার দ্বারা করা পাপগুলি সম্পর্কে ভেবে খুবই দুঃখিত হয়ে পড়ে এবং কান্নায় ভেঙে পড়ে। অন্তিম কালে সকল মানুষেরই তার দ্বারা করা খারাপ কাজ অথবা পাপগুলি সম্পর্কে মনে পড়তে থাকে। বন্ধুরা এটাই কারণ যে বৃদ্ধ মানুষেরা অন্তিম কালে কম ঘুমায়।
বন্ধুরা আজকালকার দিনে বেশিরভাগ মানুষই বেশি পরিমাণে ধন-সম্পত্তি কামিয়ে নিলে তারপরে দামী গাড়ি-বাড়ি, আশবাস পত্র ও বস্ত্রের লোভ করে। কিন্তু বন্ধুরা শ্রীকৃষ্ণ বলেন যে, যদি ভগবান কাউকে আশীর্বাদ দেন এবং সে প্রচুর ধনসম্পত্তির মালিক হন তাহলে তার উচিত বাড়িতে অবশ্যই গরু পালন করা। এছাড়াও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে আরো বলেন যে জুয়া, মদ্যপান, হিংসা, অসত্য বলা, বিবাদ, আসক্তি ও নির্দয়তা এসবের মধ্যে কলিযুগের বাস। আর যেই ব্যক্তি সকল জিনিস গুলি করছে সে পাপ করছে।
বন্ধুরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আরো বলেন যে শিষ্য তার গুরুর পরম আজ্ঞাকারী ও যেই শিষ্যের মধ্যে শেখার আগ্রহ রয়েছে সেই ধরনের শিষ্যর সদগুরু অবশ্যই প্রাপ্ত হয়। যা তার জীবনে একটি মার্গ দর্শনের আবশ্যক ভূমিকা পালন করে। বন্ধুরা শ্রীকৃষ্ণ আগে বলেন যে, মানুষদেরকে নিজেদের মনকে বারবার বোঝানো উচিত ঈশ্বর ছাড়া তো আর কেউ নেই। এর সাথে এটাও বিচার করা উচিত যে এই সংসারে তার কেউ নেই, আর সেও কারো নয়। যে মানুষ এটা বুঝে যায় সে অবশ্যই বদলে যায়। শ্রীকৃষ্ণ অনুসারে ভোগে ক্ষনিকের সুখ মেলে এবং ত্যাগে স্থায়ী সুখ মেলে। এই কারণে কখনো ত্যাগে ভয় পাওয়া উচিত নয়। শ্রীকৃষ্ণ বলেন সৎসঙ্গ ঈশ্বরের কৃপায় মেলে। কিন্তু কু-সঙ্গে পড়ে যাওয়া মানুষের একটি অন্যতম ধর্ম।
অর্জুনকে এই জ্ঞান দেওয়ার সময় শ্রীকৃষ্ণ স্ত্রী জাতি সম্পর্কে বলেন যে, একজন স্ত্রীর ধর্ম হলো রোজ তুলসী ও পার্বতীর পূজা করা। এমনটা করার ফলে বাড়ির বাতাবরণে পজিটিভ শক্তি বৃদ্ধি পায়। এর সাথে ভগবান এও বলেন যে, মানুষে্র নিজের মন ও বুদ্ধির উপর বিশ্বাস করা উচিত নয়। কারন এই দুটি মানুষকে বারবার ধোকা দেয়। আর নিজেকে নির্দোষ ভাবা মানুষের সব থেকে বড় দোষ। সবশেষে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেন, মানুষের জীবনে একাধিক সমস্যা আসবে কিন্তু সেই সমস্যা গুলি দেখে ভয় পেলে চলবে না , বরং সেগুলিকে সঠিক বিচার বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা ভাবনা করে পার করে যেতে হবে।।
তো বন্ধুরা, আশা করি আজকের এই লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার , ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- এমন কি ঘটল যখন কর্ণের আত্মা - পঞ্চপান্ডবের সামনে এলো? || Karna SOUL meet Pandava's - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা