নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা যখনই কোনো প্রাণী মৃত্যুর পর মানুষের যোনি প্রাপ্ত হয় তখন সবার প্রথমে তার স্থান হয় নারী বা স্ত্রী দেহের উদরে। এরপর এইভাবে একমাস কেটে গেলে ধীরে ধীরে তার মস্তিষ্ক গঠিত হয় এবং দ্বিতীয় মাসে তার হাত-পা ও অন্যান্য অঙ্গ গঠিত হয়। আর বন্ধুরা তৃতীয় মাসে তার হাতে পায়ের নখ, অস্থি, চর্ম ও হাড়গুলি ধীরে ধীরে গঠিত হতে শুরু করে। এই ভাবেই চতুর্থ মাসে তার শরীরে মাংস গঠিত হতে থাকে। এরপরে পঞ্চম মাসে গর্ভে থাকা শিশুটির ক্ষুধা ও তৃষ্ণা লাগে। আর ষষ্ঠ মাসে বাচ্চাটি তার মায়ের গর্ব ঝিল্লির মধ্যে থেকে এদিক-ওদিক নড়াচড়া করতে থাকে। বন্ধুরা বলে রাখি যে এই সময়ে মা যেসব খাবার খায় সেই খাবারগুলি থেকেই বাচ্চাটি তার ক্ষুধা ও তৃষ্ণা মেটায়। বন্ধুরা এরপর সপ্তম মাসে ওই ছোট্ট শিশুটির মধ্যে জ্ঞানশক্তি আসে। তখন সেই শিশুটি ভগবানকে বলে - হে প্রভু, মানছি আমি খুবই অধর্মী। আমি খুব বড় পাপী আর আপনি আমাকে এই যে গতি দেখিয়েছেন তা আমারই যোগ্য।
বন্ধুরা ভগবত পুরাণে বলা হয়েছে দেহধারী জীব অর্থাৎ সেই ছোট্ট শিশুটি মায়ের গর্ভে মলমূত্র দ্বারা ঘেরা থাকে। এছাড়াও মায়ের শরীর থেকে নির্গত হওয়ার পাচন ক্রিয়া সম্পন্ন করার রস সেই ছোট্ট শিশুটিকে সন্তপ্ত করে। এই সমস্যাগুলির কারণে সেই ছোট্ট জীবটি মায়ের শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসার জন্য মাসের পর মাস গুনতে থাকে। সে নিজেকে খাঁচায় বন্দি পাখি বলে মনে করতে থাকে। আর ভগবানকে প্রার্থনা করে সে বলে - হে প্রভু, আমাকে এখান থেকে কবে বার করা হবে।
এরপর নবম ও দশম মাসে যখন সেই বাচ্চাটি মায়ের শরীরের বাইরে আসে তখন তার সকল স্মৃতি নষ্ট হয়ে যায়। সে বিপরীত গতি প্রাপ্ত হয়ে বারবার জোরে জোরে কান্না করতে থাকে। এরপর মাতা পিতা দ্বারা তার পালন পোষণ করা হয়ে থাকে। শিশু অবস্থায় যখন মানুষকে খাটে শুইয়ে দেওয়া হয় তখন তাকে বিভিন্ন পতঙ্গ যেমন মশা, মাছি কাটতে থাকে। তখন সেই ছোট্ট শিশুটি খুবই কষ্ট পায়। এরপরে মানুষ বাল্য অবস্থা থেকে যুবক অবস্থায় পৌঁছায়। এই সময় যদি তার কোন নিশ্চিত ভোগ পূরণ না হয় তাহলে অজ্ঞানতা বসত সে খুবই ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠে। দেহ যেমন বাড়তে থাকে ঠিক সেরকমই মানুষের দেহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রোধ ও অভিমানও বাড়তে থাকে। মানুষেরা নিজেদেরই নাশ করার জন্য অন্যান্য মানুষের সঙ্গে বিবাদ করে নেয়। শুধু তাই নয়, ছোট বুদ্ধি ও অজ্ঞানতার কারণে মানুষদের মধ্যে শুধুমাত্র নিজেরটা নিয়ে ভাবার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এছাড়াও মানুষ অনেক ধরনের খারাপ কাজ করে থাকে যেমন চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি। এই কাজ গুলির ফলে তাকে জীবনের শেষ পর্যন্ত একাধিক খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পরতে হয়। যেই শরীর মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত মানুষকে একাধিক পীড়া দেয়, সেই শরীরের জন্যই মানুষ এই খারাপ কাজগুলি করে থাকে। আর এই খারাপকর্ম গুলি করার ফলে মানুষের পুণ্যের ভাণ্ডারের থেকে পাপের ভান্ডার অধিক বৃদ্ধি পায়, যে কারণে তাকে বারবার এই জন্ম মৃত্যুর চক্রের মধ্যে পড়তে হয় এবং এই সংসারে বারংবার জন্ম নিতে হয়।
শুধু তাই নয় মানুষের যোনিতে জন্ম নেওয়ার পরে যদি কোনো মানুষ ভোগের সঙ্গে লিপ্ত বিষয়ি পুরুষের সঙ্গে সমাগম হয়ে যায়, আর সেই মানুষ যদি তারই অনুগমন করা শুরু করে তাহলে প্রথমের মতই সেই জীবাত্মাটি নরকীয় যোনিতে জন্ম নেয়। যার ফলে মানুষের পবিত্রতা, দয়া, বানির সাইয়ম, বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়ের সাইয়ম নষ্ট হয়ে যায়। এই কারণে ভগবত পুরনে বলা হয়েছে যে, কোনো স্ত্রীর এমন কোনো পুরুষের সঙ্গে মিত্রতা করা উচিত নয়, যে সবসময় স্ত্রীর সঙ্গে সমাগমে রত থাকে।
অশান্ত ও মূর্খ, অর্থাৎ মূর্খ। কেননা জীবকে অন্য কারো সংঘ করার ফলে এমন মোহ বন্ধন হয় না, যেমনটা স্ত্রী ও স্ত্রীর সঙ্গীদের সংঘ করার ফলে হয়। এর সঙ্গে যুক্ত একটি কথা রয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, এমন কোন পুরুষ নেই যার বুদ্ধি স্ত্রী রুপি মায়ার ফলে মোহিত হবে না। শুধু তাই নয় স্ত্রী রূপিণী মায়াতে এতটা শক্তি যে সে তার ভ্রুকুটি অর্থাৎ নয়ন দিয়ে বড় বড় দ্বিগবিজয় বীরদের ধ্বংস করে দিতে পারে। যেই পুরুষ যোগের পরম পদে অটুট হতে চায় অথবা যার আত্মা ও অনাত্মার বিবেক হয়ে গেছে সেই পুরুষ স্ত্রীর সংঘ কখনো যেন না করে। কেননা এমনটা করলে সেই ধরনের পুরুষদের জন্য রয়েছে নরকের খোলা দুয়ার।
যেই মানুষ তার জীবনে সবসময় স্ত্রীর প্রতি আসক্ত থাকে, তথা মৃত্যুর সময়েও স্ত্রীর কথা ভাবতে থাকে তার পরের জন্মে স্ত্রী যোনিই প্রাপ্ত হয়। মানুষের জীবন প্রাপ্ত হওয়ার পর নিজের ভৌতিক সুখের জন্য কোনো মানুষ যদি অন্যান্য জীবের হত্যা করে থাকে তাহলে সেই মানুষকে পরবর্তী জন্মে সেই জীবটির যোনিতে জন্ম নিয়ে সেই কষ্ট ভোগ করতে হয়। এরপর মানুষের যখন বয়স বাড়তে থাকে ও আয়ু কমে আসতে থাকে অর্থাৎ মানুষ যখন জীবনের অন্তিম পর্যায়ে এসে পৌঁছায় তখন তার জীবনে সেই বয়স পর্যন্ত করা কর্মের ভিত্তিতে এই মৃত্যুলোকেই শারীরিক ও মানসিক পীড়া ভোগ করতে হয়। অর্থাৎ যদি কোন মানুষ তার মা বাবার বৃদ্ধ বয়সে সেবা না করে তাহলে তার সন্তানও তার সাথে ঠিক সেরকমটাই করবে। আর এই জীবন চক্র নিরন্তর চলতে থাকে।
আর যখন সবশেষে মানুষ মৃত্যু শয্যায় থাকে তখন সে মায়ের গর্ভের মতো আরেকবার দিব্য শক্তি লাভ করে। আর তখন তার অনেক জন্মের কর্ম মনে পড়ে যায়। যা জানার পরে মানুষ নিজেই নিজেকে ঘেন্না করতে থাকে। তখন সে প্রভুর উদ্দেশ্যে বলে - হে প্রভু, এই কষ্টরূপী জীবন থেকে আমি কবে মুক্তি পাবো ! আমি এমন কি করতে পারি? যার ফলে আমি আপনার চরনে ঠাঁই পাবো ? সেই অন্তিম সময়ে মানুষ তখন নিজের দ্বারা করা খারাপ কর্ম গুলির কথা চিন্তা করে কান্না করতে থাকে। একদম শেষ সময়ে মানুষ ভাবে সে তার খারাপ কর্মগুলির সম্পর্কে তার পরিবারের কাছে বলে দেবে, কিন্তু এমনটা সে করতে পারে না। কারণ ভগবান তখন তাকে বলে তোমার কাছে যখন সময় ছিল তখন তুমি একটিও ভালো কাজ করনি, আর এখন যখন তোমাকে সেই খারাপ কর্ম গুলির জন্য কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে , তখন তুমি শেষ সময়ে এসে কাঁদছো ! এখন তুমি আমার কাছে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছো? এমনটা কখনো সম্ভব নয়। হে দেহধারী , এই কারণেই নিজের পরের জন্মে ভালো কর্ম করো। যার ফলে তুমি আমার স্মরণে আসতে পারো। এরপরে জমদূতেরা এসে সেই মানুষটির শরীর থেকে জীবাত্মা টিকে নিয়ে যায় যমলোকে। আর পড়ে থাকে শুধুমাত্র সেই শরীরটি। এই সকল বিষয়ের জন্য একটি মানুষের উচিত ভগবান দ্বারা প্রাপ্ত মানুষরূপী জীবনটিকে সবসময় সৎকর্মে নিয়োগ করা। আর এই ভালো কর্মগুলোই তাকে এই জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি দেবে।
তো বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। আজ এখানেই শেষ করলাম, ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। নমস্কার, ধন্যবাদ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার এই কথা গুলি যদি আপনি একবার জেনে যান, তাহলে আপনার জীবন সফল হয়ে যাবে || Lesson from Bhagavad Geeta - CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা