নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা হিন্দু ধর্মের ১৮ টি পুরাণের মধ্যে একটি গরুর পুরানে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও নিয়মের সাথে সাথেই মৃত্যুর পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। যখন কারো বাড়িতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হয়ে যায় তখন ১৩ দিন পর্যন্ত গরুড় পুরান পাঠ করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু, আপনি কি এটা জানেন যে সনাতন ধর্মের মৃত্যুর পরে কেন করা হয় গরুড় পুরানের পাঠ?
শাস্ত্র অনুসারে কখনো কখনো এমনটা হয় যে মৃত্যুর পরে আত্মা সাথে সাথেই নতুন জন্ম নিয়ে নেয়। যাতে কারো ৩ দিন সময় লাগে, কিংবা কারো ১৩ দিন সময় লাগে। কিন্তু যেসব আত্মার স্মৃতি খুবই অটুট কিংবা যে সব জীবাত্মা অপমৃত্যু মারা যায় তাদের পরবর্তী জন্ম পেতে প্রায় এক বছর সময় লেগে যায়। আবার এরই মধ্যে কিছু জীবাত্মা এমনও হয় যারা কোনো পথ খুঁজে পায় না, তারা সবসময় এদিক-ওদিক ঘুরতে থাকে। কিন্তু, বন্ধুরা এই সকল কিছুর আগে আপনাদের জানাই গরুড় পুরাণের মাহাত্ম্য সম্পর্কে। গরুর পুরানে উল্লেখ রয়েছে কোন মানুষের মৃত্যুর পর তার জীবাত্মা প্রায় ১৩ দিন পর্যন্ত তার নিজের বাড়িতেই থাকে। এমত পরিস্থিতিতে যদি বাড়িতে গরুর পূরণের পাঠ নিয়মিত করা হয়ে থাকে তাহলে এটি শ্রবন করা মাত্রই আত্মার শান্তি ও মোক্ষ্যলাভ হয়। আর এতে জীবনের এমন কিছু মাহাত্ম্যপূর্ণ নিয়ম বলা হয়েছে যা খুবই সহজে কোনো ব্যাক্তি আপনাতে পারে। বন্ধুরা এই প্রসঙ্গে বলে দেই যে গরুড় ভগবান - শ্রী হরির থেকে প্রাণীর মৃত্যু, যোমলোক যাত্রা, নরক যোনি তথা সদগতি সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। শ্রী হরি এই সকল প্রশ্নের উত্তর বিস্তারের সঙ্গে দিয়েছেন। আর এই সকল প্রশ্ন ও উত্তরের শৃঙ্খলাকেই একত্রিত ভাবে গরুর পুরান বলা হয়েছে।
গরুড় পুরাণের ১৯ হাজার শ্লোকের মধ্যে ৭ হাজার শ্লোকই ধর্ম, জ্ঞান, নীতি, রহস্য, ব্যবহারিক জীবন, আত্মা, স্বর্গ, নরক ও অন্য নতুন জীবনের সূচনা সম্পর্কে আলোচনা বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়। একদিকে এতে মৃত্যুর রহস্য রয়েছে, আবার অন্যদিকে জীবনের রহস্যও রয়েছে। এই পুরাণ শ্রী হরির ভক্তি ও তার জ্ঞানের উপর আধারিত।
চলুন বন্ধুরা এবার জেনে নেওয়া যাক - মৃত্যুর পরেই কেন করা হয় গরুর পুরানের পাঠ। এই পুরাণে মৃত্যুর আগের ও পরের পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই কারণে এই পুরাণ টি কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হওয়ার পরে পাঠ করা হয়। আবার এদিকে ১৩ দিন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির জীবাত্মা মৃত্যুর পরেও নিজের পরিবারের কাছেই থাকে। এই কারণেই সেই সময়ে ঘরে গরুড় পুরাণের পাঠের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জীবাত্মার সদগতি, অধঃগতি, দুর্গতি ইত্যাদি জ্ঞানলাভ হয়ে যায়। এরই সাথে সামনের যাত্রাপথে তাকে কোন কোন বিষয়ের সম্মুখীন হতে হবে সেই সকল কিছু সে এই গরুড় পুরাণের পাঠের মাধ্যমে জানতে পারে। শুধু তাই নয় কোন ধরনের কার্যতে স্বর্গ লাভ হয় এবং মৃত্যুর পর উচ্চ লোকের যাত্রা করার জন্য কোন ধরনের কার্য করার প্রয়োজন তা সকল কিছু জানা যায় এই গরুড় পুরণের মাধ্যমে। এছাড়াও এই পানে মানুষের খারাপ কর্ম করার জন্য যে সমস্ত দন্ড মেলে তার বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায়। এরই সাথে মেলে নরকের বিস্তারিত বর্ণনা। অনেকটা এই ভাবেই সকল মানুষের উদ্দেশ্যে গরুড় পুরাণে আলোচনা করা হয়েছে কোন কর্মগুলো মানুষকে সদ্গতির দিকে নিয়ে যায়।
ভগবান শ্রী হরি, এই গরুড় পুরাণে আমাদের জীবন সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। এই কথাগুলির মুখ্য উদ্দেশ্য হল মানুষের আত্মজ্ঞানকে জাগরিত করা। এর মধ্যে ভক্তি, বৈরাগ্য, সদাচার, নিষ্কাম কর্মের মহিমার সঙ্গে যজ্ঞ, দান, কর্ম, তীর্থ, আদি জ্ঞান ইত্যাদি সকল মানুষের উদ্দেশ্যে গ্রহণ করানোর জন্য বিভিন্ন লৌকিক এবং অলৌকিক ফলগুলি সম্পর্কে বিস্তারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। এই কথাগুলি মৃতক ও তার পরিবার জেনে নিয়ে নিজের জীবনকে ভালো ও সুন্দর করে তুলতে পারে। এছাড়াও এতে আয়ুর্বেদ, নীতিকথা ও আদি বিশ্ব সম্পর্কে বিস্তারের সঙ্গে জীব মৃত্যুর সময় করণীয় শেষ মুহূর্তের কার্যাবলী সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় বন্ধুরা এমনটাও মানা হয় যে গরুড় পুরাণের পাঠ করার পরেই মৃতকের আত্মা শান্তি পায় এবং সে মুক্তির রাস্তা খুঁজে পায়। সেই মৃতকের আত্মা নিজের সকল ক্লেশ ভুলে গিয়ে ঈশ্বরের দেখানো পথে এগিয়ে গিয়ে পিতৃ লোকে স্থান পায় কিংবা তার কর্ম খারাপ হলে তার কর্ম অনুযায়ী তাকে আবারো এই মৃত্যু লোকে জন্ম নিতে হয়। কোন মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গরুড় পুরাণের পাঠ করলে তাকে পিশাচ হয়ে এদিক-ওদিক ঘুরতে হয় না, কারণ সে এই গরুড় পুরাণের পাঠের মাধ্যমে জেনে যায় তার সঙ্গে হওয়া মৃত্যুর পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে।
বন্ধুরা গীতাতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুন কে বলেন, হে পার্থ ! আত্মা সর্বদা অমর হয়। না তো একে কেউ আগুনে পোড়াতে পারবে, না তো একে কেউ কোন অস্ত্র দিয়ে কাটতে পারবে। আত্মার বিনাশ কেউ কখনোই করতে পারবেনা। মানুষের শরীর বিনাশি হয়, কিন্তু আত্মা হয় - অবিনাশী। জন্ম এবং মৃত্যু কেবল শরীরের হয়, আত্মার নয়। এখানে বাসুদেবের এ কথা বলার অর্থ হচ্ছে - মানুষ যাকে জন্ম বলে মনে করে, বাস্তবে তেমনটা কোন কিছুই হয় না। জন্ম আর মৃত্যু কেবলমাত্র এই শরীরের হয়, আর অন্যদিকে আত্মা সবসময় অমর হয়। শুধু তাই নয় এই পুরাণ অনুসারে যখনই কোন ব্যক্তি মারা যায় কিংবা আত্মা তার শরীর ত্যাগ করে নিজের যাত্রা শুরু করে তখন এমত অবস্থায় তাঁর তিন ধরনের মার্গের প্রাপ্তি হয়। সেই আত্মাকে কোন মার্গে চালানো হবে এটা শুধুমাত্র তাঁর মানুষ জন্মের সময় করা কর্মের উপর নির্ভর করে। বন্ধুরা শুধু তাই নয়, গরুড় পুরাণে এটাও উল্লেখ রয়েছে যে জমদূত মৃতক ব্যক্তির আত্মাকে বৈতরণী নদী পার করান। বন্ধুরা এটা শুধু হয় কর্মের উপর ভিত্তি করে, যদি কর্ম ভালো থাকে তাহলে যাত্রাপথে কোন জ্বালা যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় না এবং সবশেষে নরক যন্ত্রণাও ভোগ করতে হয় না। এই কারণেই বন্ধুরা আমাদের সকলকে নিজেদের কর্ম ঠিক রাখা উচিত।
বন্ধুরা গরুড় পুরাণের মাধ্যমে মূলত মৃত্যুর পরবর্তী পর্যায়ে গুলি সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে মৃত ব্যক্তি আত্মা ও তার পরিবারের লোকেরা জানতে পারেন - এই কারণেই গরুর পুরাণের পাঠ মৃত্যুর আগে না করিয়ে - মৃত্যুর পরেই করানো হয়। তাহলে সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর পরবর্তী 13 দিন পর্যন্ত নিজের বাড়িতে থাকা জীবাত্মা গরুড় পুরাণের পাঠ শুনে সঠিক মার্গের দর্শন পায় এবং তাকে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে হয় না। এই গরুড় পুরণের পাঠ করা হয় মৃত ব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনার জন্য।
বন্ধুরা আশা করি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন যে গরুড় পুরণের পাঠ মৃত ব্যক্তির পরিবারে কতটা জরুরি। বন্ধুরা লেখাটি ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
নমস্কার। ধন্যবাদ ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- জবা ফুল গাছের ধার্মিক ও আয়ুর্বেদিক গুণাবলী? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা