নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব তা হলো - 2023 সালে বা ১৪২৯ বঙ্গাব্দে পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি কবে? মকর সংক্রান্তি তিথিতে গঙ্গা স্নানের শুভ সময় কখন? এছাড়াও জীবনে সুখ সমৃদ্ধি লাভ করার জন্য মকর সংক্রান্তির দিন কি কি কাজ করবেন আর কি কি কাজ ভুলেও করবেন না ?
প্রত্যেক বছর জানুয়ারি মাসের ১৪ কিংবা ১৫ তারিখে এই মকর সংক্রান্তি পালন করা হয়ে থাকে। এই পর্বটি ভগবান সূর্যকে সমর্পিত করা হয়েছে। যাকে ছাড়া এই সৃষ্টি পুরো অন্ধকারে ঢাকা। এই দিন সূর্য দেব ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে প্রবেশ করেন। এই কারণে একে মকর সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে। মকর সংক্রান্তির দিন সূর্যের দক্ষিণায়ন শেষ হয় এবং উত্তরায়ন শুরু হয় এমনটা জ্যোতিষীরা মনে করে থাকেন। সূর্যদেব দক্ষিণের যাত্রা শেষ করে উত্তরের দিকে এগিয়ে চলেন। এই দিন বহু মানুষ ব্রতও পালন করে থাকেন এবং ভরপুর দান-ধ্যান করে থাকেন। এটি একটি মহত্ত্বপূর্ণ দিন এই কারণে এই দিন করা দান অন্যান্য দিনের তুলনায় ১০০ গুন বেশি শুভ ফলদায়ক। বন্ধুরা এই দিনে আপনারা তিল দান করতে পারেন।
বন্ধুরা এই মকর সংক্রান্তির বর্ণনা আমরা পুরাণেও পেয়ে থাকি। ভবিষ্যপুরাণ অনুসারে এই দিন ব্রত পালন ও গঙ্গা স্নানের পরম্পরা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সংক্রান্তির প্রথম দিনে ব্রত পালনের সময় একবার ভোজন করা যায়। সংক্রান্তির দিনে তেল ও তিল দ্বারা মিলিত গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করার বিধান রয়েছে। এরপরে সূর্যদেবের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করা হয়। এই দিন বহু মানুষেরা গঙ্গাসাগরে স্নানের উদ্দেশ্যে যান এবং বিভিন্ন গরীব দুস্থদের উদ্দেশ্যে দান ধ্যান করে থাকেন। এর ফলে অধিক পূর্ণ লাভ হয় ও মোক্ষ লাভের দুয়ার খুলে যায়।
সংক্রান্তির দিন পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যেও তর্পণ করা হয়ে থাকে। ভবিষ্য পুরাণে মকর সংক্রান্তির ব্রত কথা ও তার পুরো বিধান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এই ব্রত কথা অনুযায়ী ঐদিন সূর্যদেব নিজের পুত্র শনির (শনিদেব) সঙ্গে দেখা করতে যান। বন্ধুরা শনিদেব হলেন মকর রাশির দেবতা। এই কারণেই এই দিনকে মকর সংক্রান্তি নাম দেয়া হয়েছে। বন্ধুরা শনিদেব মানুষের কর্মের বিচার বিবেচনা করে তার উপর দৃষ্টি দেন। এই কারণেই এই দিনে করা সমস্ত রকম দান ধ্যান সবকিছুই শুভ ফলদায়ক।
মকর সংক্রান্তির বর্ণনা মহাভারতেও পাওয়া যায়। মহাভারতের কথা অনুযায়ী গঙ্গা পুত্র ভিষ্ম পিতামহ ইচ্ছামৃত্যুর বরদান পেয়েছিলেন। ভীষ্ম পিতামহ মহাভারতের যুদ্ধে কৌরবদের সেনাপতি ছিলেন। তিনি একজন মহা যোদ্ধা ছিলেন। যখন তিনি অর্জুনের বানে মৃত্যুশয্যার কোলে ঢলে পড়েন তখন তিনি মকর সংক্রান্তির মাহাত্ম্যটি জানার কারণে সেই দিনটিকে বেছে নেন তার মৃত্যুর দিন হিসাবে। মহান জ্ঞানী হওয়ার কারণে তিনি জানতেন সূর্যদেব দক্ষিণায়নে থাকার সময় মৃত্যুর পর মোক্ষ লাভ হয় না। যার ফলে পুনরায় এই মৃত্যু লোকে জন্ম নিতে হয়। যেই কারণেই যখন মহাভারতের যুদ্ধের পর সূর্যদেবের উত্তরায়ন ঘটে তখন ভীষ্ম পিতামহ প্রাণ ত্যাগ করেন।
বন্ধুরা একটি অন্য কথা অনুযায়ী হিন্দুদের মধ্যে এই কথাটি ছড়িয়ে রয়েছে যে মকর সংক্রান্তির দিন মা গঙ্গা এই মর্তলোকে নেমে আসেন এবং তিনি কপিল মুনির আশ্রম হয়ে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত আসেন। মা গঙ্গা মর্তলোকে আসার ফলে রাজা ভাগীরথ সেই গঙ্গার জল দিয়ে নিজের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেছিলেন। যার পর থেকেই ধীরে ধীরে গঙ্গাসাগর মেলার উৎপত্তি হয়।
বন্ধুরা আবার একটি তৃতীয় কথা অনুযায়ী এই দিন মাতা যশোদা সন্তান প্রাপ্তির জন্য ব্রত রেখেছিলেন। এই দিন মহিলারা তিল, গুড় ইত্যাদি অন্যান্য মহিলাদের দিয়ে থাকেন। তিলের উৎপত্তি ভগবান বিষ্ণু দ্বারা হয়েছিল। এই কারণেই তিল দান করলে পূর্ণ প্রাপ্তি হয়। এটা শরীরকে রোগমুক্ত রাখে। এই সংক্রান্তির দিন তিল দান করা অতি শুভ। এই দান রাহু এবং শনির দশা থেকে মুক্তি দেয়। শুধু তাই নয় এই দান করার ফলে সূর্যদেবের পজিটিভ প্রভাব পড়ে সেই মানুষের উপর।
২০২৩ সালে মকর সংক্রান্তির শুভ মুহূর্ত :-
বন্ধুরা এই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে এই মকর সংক্রান্তি বা পৌষ সংক্রান্তি পরছে - ১৪ই জানুয়ারি শনিবার দিন। ওই দিন সূর্যদেব মকর রাশিতে প্রবেশ করবেন রাত্রি ৮টা বেজে ১৪ মিনিটে। যেহেতু রাত্রিকালে স্নান ও দান নিষিদ্ধ এই কারণেই মকর সংক্রান্তির তারিখ নিয়ে মানুষের মধ্যে একটু জল্পনা রয়েছে। তাই ১৪ই জানুয়ারির বদলে পরের দিন অর্থাৎ ১৫ই জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির উৎসব উদযাপন করা উচিত। ১৫ই জানুয়ারি সকাল ৭টা ১৫ মিনিট থেকে সন্ধে ৫টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত মকর সংক্রান্তির শুভ সময় থাকবে। এছাড়া ওইদিন দুপুর ১২টা ০৯ মিনিট থেকে ১২ টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত অভিজিৎ মুহুর্ত থাকবে। এর পাশাপাশি ওই দিনেই দুপুর ২টো ১৬ মিনিট থেকে দুপুর ২টো ৫৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে বিজয় মুহুর্ত।
তো বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- শ্রী কৃষ্ণ দেবকী ও বাসুদেবের ঘরে কেন জন্ম নিয়েছিলেন? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা