নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা যেমনটা আমরা সকলেই জানি এখন কাল খন্ডের চতুর্থ যুগ অর্থাৎ কলি যুগ চলছে। যেই যুগকে হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রে সবথেকে অভিশপ্ত যুগ বলে গণ্য করা হয়েছে। এমনটা মনে করা হয় যে কলিযুগ যত চরমে পৌঁছাবে, ঠিক ততটা পরিমাণে এই পৃথিবী থেকে ধর্ম নাশ হতে থাকবে। আর কলিযুগের শেষে ভগবান বিষ্ণু কল্কি অবতার ধারণ করে পুনরায় এই মর্তলোকে ধর্ম স্থাপন করবেন। বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে এই কলি যুগ নিয়েই আলোচনা করব। আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো তা হল - মহাভারতের দ্বাপর যুগের সময়কালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কলিযুগ সম্পর্কে বেশ কিছু সত্য বলে গিয়েছিল যা অধিকতর মানুষেরাই জানেন না। সেই সকল কথাগুলি আজকের এই লেখাটিতে আলোচনা করব। বন্ধুরা আপনারা এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ুন তাহলে আপনারাও জানতে পারবেন শ্রীকৃষ্ণের মত অনুযায়ী কলিযুগ কেমন হবে।
বন্ধুরা যদি সঠিক বর্ণনা করা হয় তাহলে বলতে হয় মহাভারত শুধুমাত্র হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ নয়। বরং এই ধর্মগ্রন্থটি পাঠের মাধ্যমে সকল মানুষই তার জীবনে অমূল্য জ্ঞান আহরণ করতে পারে। কারণ মহাভারতে মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত কোনো এরকম বিষয় নেই, যার বর্ণনা এই ধর্মগ্রন্থতে নেই। এরই মধ্যে একটি প্রসঙ্গের বর্ণনা আজকের সময় অর্থাৎ কলিযুগ সম্পর্কে রয়েছে।
মহাভারতে বর্ণিত কথা অনুযায়ী এই কথাটি সেই সময়কার যখন পাশা খেলায় পঞ্চপান্ডবরা সবকিছু হারার পর পঞ্চপান্ডব কে বনবাসে যেতে হয়েছিল। যখন পঞ্চপান্ডবেরা বনবাসে যাওয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছিলেন তখন তারা শ্রী কৃষ্ণকে বললেন - হে বাসুদেব! পাশা খেলায় সকল কিছু হেরে যাবার পর আমরা পঞ্চপান্ডবেরা দ্রপদী সহ বনবাসে যাচ্ছি। কিন্তু, আমাদের সকলের মনে একটি প্রশ্ন উঠছে আপনি কি এটি সমাধান করতে পারবেন? পান্ডবদের এই সকল কথা শোনার পর শ্রীকৃষ্ণ তাদেরকে বললেন, এটা তো এই বিষয়ের উপর নির্ভর করে যে তোমরা আমার কাছে কি জানতে চাও!
তখন যুধিষ্ঠির বললেন - হে কৃষ্ণ! যেমনটা আপনি জানেন দ্বাপর যুগের অন্তিম কাল খুবই নিকটে এসে গিয়েছে, কৃপা করে আমাদের বলুন আসতে চলা এর পরবর্তী যুগ অর্থাৎ কলিযুগের প্রকৃতি কেমন হবে? আর এই যুগের মানুষেরা কেমন হবে?
এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পাঁচ পাণ্ডবকে বললেন, বনের পাঁচটি দিকে তোমরা পাঁচ জন ভিন্ন ভিন্ন অভিমুখে যাত্রা শুরু করো এবং ভিন্ন ভিন্ন অভিমুখে যাত্রা করার পর প্রথম যে ঘটনাটি তোমরা লক্ষ্য করবে সেটি আমার কাছে এসে ব্যক্ত করো। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা অনুযায়ী পঞ্চপান্ডবরা জঙ্গলের পাঁচটি অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
সবার প্রথমে যুধিষ্ঠির ফিরে এলেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে একটি অদ্ভুত ঘটনার কথা ব্যক্ত করলেন। তিনি দেখতে পেলেন দুই শুর বিশিষ্ট একটি হাতি জলাশয়ে খেলা করছে। এই ঘটনাটি দেখার পর তিনি শ্রীকৃষ্ণের কাছে এসে সম্পূর্ণ ঘটনাটি ব্যক্ত করেন এবং অদ্ভুত দুই শুর হাতিটির প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলেন শ্রীকৃষ্ণের কাছে। শ্রীকৃষ্ণ তখন বললেন যে, কলিযুগে মানুষ হবে ঠিক এইরকম। কলিযুগের বেশিরভাগ মানুষ হবে মিথ্যেবাদী এবং স্বার্থপর। তারা মুখে এক কথা বললেও কর্ম ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন থাকবে অর্থাৎ কথা, প্রতিশ্রুতি ও কাজের মধ্যে কোন মিল তাদের থাকবে না।
এরপর ভীম ফিরে এসে তার অভিজ্ঞতা ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জানালেন। তিনি বললেন তিনি একটি গরুকে তার বাছুরকে চেটে চেটে আদর করতে দেখেছেন। কিন্তু, গরুটি এত পরিমাণে তার বাছুরটিকে চাটছে যে, বাছুরটির গায়ের ছাল উঠে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এই ঘটনা ভগবান শ্রীকৃষ্ণ শোনার পর বললেন কলিযুগে পিতা-মাতার তাদের সন্তানের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা ও স্নেহই সন্তানের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে।
অন্যদিকে অর্জুন তিনি ফিরে এসে শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, তিনি একটি শকুন দেখেছেন, যার বিশাল আকার ডানায় বেদ লিখিত আছে। কিন্তু, শকুনটি নর মাংস ভক্ষণ করছে। অর্জুন পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ ভগবানের কাছে এর কারণ জানতে চান। তখন শ্রীকৃষ্ণ বলেন কলিযুগে ভন্ড সাধকের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ দেশে যে সব মানুষই জ্ঞানী হিসাবে স্বীকৃত হবে, তাদের বেশিরভাগেরই মনোভাব থাকবে ঐ শকুনের মতো। ওপরে ধর্ম সাধকে মোরা জ্ঞানী মানুষগুলি আদতে নিজেরাই হবে ধর্মভ্রষ্ট।
এরপর নকুল ফিরে এসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে তার অভিজ্ঞতা জানালেন। তিনি শ্রীকৃষ্ণকে বললেন - এক বিশাল আকার পাথরখণ্ড পাহাড় থেকে গড়িয়ে নিচে পড়ছে, কোনো বৃক্ষ তাকে আটকাবার ক্ষমতা রাখছে না। সেই পাথরটি সবকিছু দুমড়েমুচড়ে ভয়ঙ্কর গতিতে নিচের দিকে নেমে আসছে। এইভাবে কিছুক্ষণ নামার পর একটি গুল্ম অর্থাৎ ছোট গাছের গোড়ায় এসে পাথরটি থেমে যায় এবং বন্ধ হয়ে যায় তার তান্ডব লীলা। এই ঘটনা শ্রীকৃষ্ণকে জানালে শ্রীকৃষ্ণ তার পরিপ্রেক্ষিতে বললেন কলিযুগে মানুষের পাপের আকার ওই পাথরের মতন হবে। যা তার জীবনকে তছনছ করে দেবে, ধ্বংসের অভিমুখে চালিত করবে গোটা সমাজকে। কিন্তু, যদি কোনো মানুষ শুদ্ধ মনে শুধুমাত্র আমারই শরণাপন্ন হয় তবে তাকে আমি সর্ববিপদ থেকে রক্ষা করবো। অর্থাৎ সামান্য ওই ছোট গাছের মতো কেউ যদি আমার ভজনা করে তাহলে তার সমস্ত পাপ সেখানেই বিলুপ্ত হবে।
এরপর সহদেব তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা শ্রীকৃষ্ণকে জানালেন। তিনি দেখলেন জঙ্গলের মাঝে বেশ কয়েকটি কুয়ো। কিন্তু, আশ্চর্যের বিষয় হলো এদের মধ্যে সবথেকে গভীরতম যে কুয়োটি তাতেই জল নেই। শ্রীকৃষ্ণ এই কথাটি শুনে বললেন যে, কলিযুগে সমাজের সবথেকে অর্থশালী, ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরাই সেই সমাজে সবচেয়ে বেশি শোষণ করবে। যারা নীচ তারা কাম ও বিনোদনের জন্য সূরা, তামাক প্রভৃতিতে প্রচুর অর্থ ব্যায় করবে। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য থাকবে শুধুই অবহেলা। অতএব গরিবের শোষনই হবে কলিতে প্রবল। ধনীরা হারাবে তাদের বিচার বিবেচনা করার ন্যূনতম বুদ্ধি।
বর্তমান যুগ সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ যে ব্যাখ্যা করে গেছেন তার প্রতিটি যুক্তির বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হবে না। এভাবেই যে আমরা নিজেদের ধ্বংসকে নিজেরাই নিকট থেকে নিকটতম করে তুলেছি তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তার জলন্ত দৃষ্টান্ত উদাহরণ আমরা আমাদের হাতের কাছেই দেখতে পাই। সুতরাং এই পাপের যুগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় কৃষ্ণ ভজনা করা। একমাত্র কৃষ্ণ নামই পারে আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করতে। প্রত্যহ গীতা পাঠ করুন এবং তারি সঙ্গে কৃষ্ণ মন্ত্রে নিজেকে বিভোর করে রাখুন। অন্তত রোজ একটি বার হলেও কৃষ্ণ মন্ত্র জপ করুন।
তো বন্ধুরা, এই ছিল মহাভারতের দ্বাপর যুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা বলা কিছু সত্য কথা বা ভবিষ্যৎ বাণী। আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন। ভালো লাগলে আপন জনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ।। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- ভগবান শিবের শক্তিশালী তিনটি অবতার? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা