নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা আজকে আপনাদের সঙ্গে যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে চলেছি তা হল - গঙ্গাসাগরের মেলার মাহাত্ম্য সম্পর্কে। গঙ্গাসাগর মেলা কেন আয়োজিত করা হয়? গঙ্গাসাগরের মেলার ইতিহাস ও পৌরাণিক কাহিনী?
সকল নদীর তুলনায় গঙ্গা নদীর একটি আলাদাই মাহাত্ম্য রয়েছে। মা গঙ্গা পাপের নাশ করে মোক্ষলাভ করায়। এই কারণেই হিন্দু ধর্মে গঙ্গাসাগরকে একটি খুব বড় তীর্থস্থান হিসেবে মনে করা হয়। বন্ধুরা আপনারা হয়তো মানুষের মুখে এমনটা বলতে শুনেছেন - সকল তীর্থ যাত্রা বারবার আর গঙ্গাসাগর একবার।
বন্ধুরা গঙ্গাসাগর ভারতের তীর্থ স্থানের মধ্যে অন্যতম একটি মহাতীর্থ। মা গঙ্গা এই স্থানে আসার পরেই সাগরে মিলিত হয়। এই স্থানে রাজা সগরের ৬০ হাজার পুত্রের মোক্ষ লাভ হয়েছিল। এখানে মকর সংক্রান্তির সময় অনেক বড় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে লাখ লাখ ভক্তরা গঙ্গা স্নানের জন্য আসেন। বলা হয়ে থাকে মকর সংক্রান্তির দিন এখানে স্নান করার ফলে ১০০টি অশ্বমেধ যজ্ঞের পূর্ণ লাভ হয় এবং ১০০০ টি গরু দান করার পূণ্য লাভ হয়। ভারতের নদীগুলির মধ্যে সবথেকে পবিত্র হল গঙ্গা নদী। যা গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবাংলার উপর দিয়ে গিয়ে সাগরে মিলিত হয়। মা গঙ্গা যেখানে সাগরে এসে মিলিত হয় সেই স্থানটিকে গঙ্গাসাগর বলা হয়। একে আবার সাগর দ্বীপও বলা হয়ে থাকে। এই স্থানে আয়োজিত মেলাটি ভারতের বড় বড় মেলার মধ্যে একটি। এই কারণেই গঙ্গাসাগর মেলাটি যুগ যুগ ধরে বিশ্ব বিখ্যাত। আমাদের হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এই গঙ্গাসাগরের চর্চা মোক্ষ ধামরুপে করা হয়েছে।
মকর সংক্রান্তির দিন গোটা দুনিয়া থেকে লাখ লাখ ভক্তরা মোক্ষলাভ ও পূর্ণ প্রাপ্তির আশায় এই গঙ্গাসাগরে এসে স্নান করেন এবং তারপরে দানধ্যান করেন। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত এই তীর্থস্থানটিতে কপিলমুনির আশ্রম রয়েছে। একদা কপিলমুনির ক্রোধাগ্নিতে সগর রাজার ষাট হাজার পুত্র ভস্মীভূত হন এবং তাদের আত্মা নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন সংক্রান্তির দিনে এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন। তারপর থেকেই মান্যতা রয়েছে এখানে মকর সংক্রান্তির দিনে পুণ্য স্নান করলে মোক্ষের মার্গ প্রশস্ত হয়।
মনে করা হয় গঙ্গাসাগরে একটি বারের তীর্থযাত্রা অন্যান্য শত শত তীর্থযাত্রার সমান। আর সকল মানুষের কপালে এই গঙ্গাসাগরের পূর্ণ স্নান করার সৌভাগ্য থাকে না। কিন্তু বন্ধুরা এগুলি সব আগের কথা ছিল যখন এই স্থানে পৌঁছানো খুবই কষ্টকর ছিল। বর্তমানে আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার ফলে এখানে এখন যাওয়া খুবই সুগম। এমনটা মনে করা হয় ঋষি মুনির জন্য গৃহস্থ আশ্রম ও পারিবারিক জীবন বর্জিত হয়ে থাকে। কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর বলার ফলে কপিল মুনির পিতা গৃহস্থ আশ্রমে প্রবেশ করেছিলেন। কিন্তু তিনি ভগবান বিষ্ণুর কাছে একটি শর্ত রাখেন যে এরকম অবস্থায় ভগবান বিষ্ণুকে তার পুত্ররূপে জন্ম নিতে হবে। আর ভগবান বিষ্ণুর সেই শর্ত মেনে নেন এবং কপিল মুনির জন্ম হয়। এরপর পরবর্তী সময়ে গঙ্গা এবং সাগরের মিলনস্থলে কপিলমুনি নিজের আশ্রম বানিয়ে তপস্যা করতে থাকেন। এই সময় রাজা সাগর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। এরপর যজ্ঞের অশ্ব গুলিকে স্বতন্ত্র ভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। তখনকার দিনে এমনটা মানা হতো এই অশ্ব যেখান দিয়ে যাবে সেই রাজ্য যজ্ঞ করা রাজার অধীনতা স্বীকার করে। আর যদি কোন রাজ্য এই অধীনতা শিকার না করে তাহলে সেই রাজ্যের রাজাকে যজ্ঞ করা রাজার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হতো নিজের রাজ্য বাঁচানোর জন্য। রাজা সাগর সেই স্বতন্ত্র অশ্বদের সঙ্গে তার ৬০ হাজার পুত্রকে প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎই যজ্ঞের অশ্ব অদৃশ্য হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওই অশ্বগুলি কপিল মুনির আশ্রমে পাওয়া যায়। ফলস্বরূপ সগরের পুত্ররা ঋষির ওপর রাগ করে তাকে যা খুশি তাই বলতে থাকে। যার ফলে কপিলমুনি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হন। আর তিনি তার নেত্রের ক্রোধের মাধ্যমে সকল পুত্র গুলিকে ভষ্ম করে দেন। আর তারপরে সগরের পৌত্র ভগীরথ স্বর্গ থেকে গঙ্গাকে নিয়ে এসে সগরপুত্রদের ভস্মাবশেষ ধুয়ে ফেলেন মকর সংক্রান্তির দিনে এবং তাদের আত্মাকে মুক্ত করে দেন। আর সেই স্থানটি গঙ্গাসাগর নামে পরিচিত হয়। তারপর থেকেই মান্যতা রয়েছে এখানে মকর সংক্রান্তির দিনে পুণ্য স্নান করলে মোক্ষের মার্গ প্রশস্ত হয়। গঙ্গাসাগর মেলা পশ্চিমবঙ্গে আয়োজিত সব থেকে বড় মেলার মধ্যে একটি।
এই মেলাটির আয়োজন কলকাতার নিকটে হুগলি নদীর তীরে ঠিক ওই স্থানেই করা হয় যেখানে রাজা ভগিরথ তার পূর্বপুরুষদের উদ্ধার করেছিলেন। এই মেলাটি প্রতিবছর বিশেষ করে পৌষ মাসে সংক্রান্তির দিনে আয়োজন করা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মেলা বেশ কিছুদিন থাকে। বন্ধুরা গঙ্গার মিলন স্থলে স্নান করা অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়েছে। গঙ্গাসাগরের তীরে ভক্তরা সমুদ্র দেবতাকে নারকেল এবং অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে থাকেন। এর সাথে সেখানে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনার জন্য প্রার্থনা করা হয়। গঙ্গাসাগরে স্নান ও দানের বিশেষ মাহাত্ম্য রয়েছে। আর এই গঙ্গাসাগরের মেলা চলাকালীন সকল ভক্তরা মা গঙ্গার পূজা করেন। এই কারণেই বন্ধুরা আমাদের প্রত্যেকেরই আমাদের জীবনে একবার হলেও গঙ্গাসাগরে মেলায় যাওয়া উচিত এবং সেখানে পুণ্য স্নান করার পর দান অবশ্যই করা উচিত।
বন্ধুরা আশাকরি লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং বুঝতে সক্ষম হয়েছেন গঙ্গাসাগরের মেলার গুরুত্ব। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করছি। নমস্কার , ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- 2023 - সরস্বতী পূজার সময়সূচী? CLICK HERE
আরো পড়ুন:- কাশি তীর্থস্থান এত শক্তিশালী কেন? CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা