নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু।
বন্ধুরা স্বামী বিবেকানন্দকে কেই বা না জানে; কিন্তু অনেক লোকেই তাঁর ব্যক্তিত্বতা, তাঁর মহানতা ও তাঁর জ্ঞানের গুপ্ত রহস্য কি ছিল - তা জানেন না। এমন কি কারণ ছিল - যার ফলে 'নরেন্দ্রনাথ দত্ত' - 'স্বামী বিবেকানন্দতে' পরিণত হয়েছিলেন? এটা কোন শক্তি ছিল যা বিবেকানন্দের আওয়াজে ঔযশ্যতা, চোখে চমক ও শরীরে পুষ্টতা নিয়ে আসতো !? বন্ধুরা এই শক্তিটি ছিল তাঁর 12 বছরের অখন্ড - "ব্রহ্মচর্যের শক্তি"। তো চলুন বন্ধুরা আজকে আমরা স্বামীজীর শব্দের মাধ্যমেই জেনে নেব - "ব্রহ্মচর্যের" ওপর তাঁর বিচার কি ছিল?
একদা একসময় স্বামী বিবেকানন্দ নিজের ইউরোপ যাত্রাকালের সময়ে জার্মানি গিয়েছিলেন। Keele University (England) - এর প্রফেসর স্বামী বিবেকানন্দের অদ্ভুত স্মৃতিশক্তি দেখে অবাক হয়েছিলেন। তখন স্বামী বিবেকানন্দ তাকে রাসযোগের মাধ্যমে ব্রহ্মচর্যের বর্ণনা করেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, ব্রহ্মচর্যের পালনের মাধ্যমে মনের একাগ্রতা হাসিল করা সম্ভব। আর যদি মনের একাগ্রতা হাসিল করা সম্ভব হয় তাহলে অন্যান্য শক্তি গুলি নিজে নিজেই বিকশিত হতে থাকে। স্বামী বিবেকানন্দ আরো বলেন যে, ব্রহ্মচর্যের বড় অর্থ এটাই যে ব্রহ্মতে বিচরণ করা। যে ব্রহ্মতে বিচরণ করে ও যার মধ্যে জীবভাব বেঁচে থাকে না সেই ব্রহ্মচারী। স্বামীজি বলেন, "আমি হলাম স্বয়ং ব্রহ্ম এবং ব্রহ্ম যে তা শুধু আমিই" - এইরকম মনোভাব যার হবে সেই ব্রহ্মচর্যের উচ্চতর পর্যায়ে পৌঁছানো পরমাত্মার স্বরূপ। যতই বড় দার্শনিক হোক না কেন কিংবা যতই বড় বৈজ্ঞানিক হোক না কেন - জীবনে 'ধৈর্য ও শৃঙ্খলা' জিনিসটির আবশ্যকতা সবার মধ্যেই রয়েছে। কোন ব্যক্তি যতই বড় উপদেশক হোক না কেন কিংবা যতই বড় বেদবান হোক না কেন - প্রত্যেকের জীবনেই 'সাইয়াম বা নিয়ন্ত্রণ' প্রয়োজন রয়েছে। এই কারণে প্রত্যেকেরই সুখে ও সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপন করার জন্য ব্রহ্মচার্যের পালন করা উচিত।
বন্ধুরা কেউ যদি চারটি বেদ পরে এবং তার পুরো অর্থ বুঝে নেয় তাহলেও তার পূর্ণ একদিকে আর কেউ যদি মূর্খ ব্যক্তি হয় কিন্তু ব্রহ্মচর্যের সম্পূর্ণ পালনকর্তা রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তাহলে তার পূর্ণ অন্যদিকে। এক্ষেত্রে সবদিক থেকেই ব্রহ্মচারী ব্যক্তিটির পূর্ণ বেশি হবে। ব্রহ্মচর্য উচ্চ মানের চিন্তাভাবনা নিয়ে আসে। যেই ব্যক্তি ব্রহ্মচর্যের পালন করে তিনি ব্রহ্মচারী রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন। ব্রহ্মচর্যের পালন করা ব্রহ্মচারীরা সবসময় আনন্দময় ও নির্ভীক থাকেন।
বন্ধুরা একই প্রকার ভাবে একটি অন্য স্থানে স্বামী বিবেকানন্দ ব্রহ্মচার্যের মহিমা সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এই শক্তি তাদের মধ্যে আসে যারা ১২ বছর পর্যন্ত অখন্ড ব্রহ্মচার্যের পালন করে। ঈশ্বরকে পাওয়ার একমাত্র লক্ষ্যের সঙ্গে আমি স্বয়ং ওই ধরনের ব্রহ্মচর্যের পালন করেছি। আর এর ফলে মানবের মস্তিষ্কের একটি পর্দা আমার উপর থেকে সরে গিয়েছে। যেই কারণেই আমাকে এখন দর্শনের মত সূক্ষ ভাষণ দেওয়ার জন্য বেশি ভাবতে হয় না। ধরে নাও আমাকে কালকে কোন ব্যাখ্যা দিতে হবে, যাই আমাকে বলতে হোক না কেন সেগুলি আমার চোখের সামনে আজ রাত্তিরেই অনেক চিত্র দ্বারা ভেসে ওঠে। আর পরের দিন আমি ওই গুলোই শব্দের মাধ্যমে ব্যক্ত করি। তো এখন তুমি হয়তো বুঝতে পারবে এটা এরকমই যে কোনো শক্তি নয়, যা শুধুমাত্র আমারই হতে পারে। এক্ষেত্রে যে কেউ ১২ বছর পর্যন্ত অখন্ড ব্রহ্মচর্যের পালন করতে পারবে সে নিশ্চিত রূপেই এই শক্তি লাভ করবে। যদি তুমিও এমনটা করতে পারো তাহলে তুমিও এই শক্তি লাভ করতে পারবে। আমাদের শাস্ত্র এমনটা কখনোই বলে না যে শুধুমাত্র কিছু শ্রেণীর মানুষরাই এটা পাবে। আমার এমনটা বলার উদ্দেশ্য এটাই যে আপনাদের যাতে বোঝাতে পারি প্রত্যেকটি জীবনের একটি করে নৈতিক লক্ষ্য থাকে, আর সেই জীবনে স্রষ্টাচার ও উদ্দেশ্য ভালোভাবে যাতে সম্পন্ন হতে পারে সেই কারণেই ব্রহ্মচর্যের গুরুত্ব ওই জীবনে অপরিসীম।
একটি ছাত্রের জন্য সংস্কৃত শব্দ হল - ব্রহ্মচার্য। ছাত্র মনে করে ব্রহ্মচর্য অর্থাৎ কামের থেকে জিতে যাওয়ার একটি মাধ্যম বা ব্রহ্মচর্য হলো সেই ধ্যান যা কাম নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে বলি জীবনে আমাদের উদ্দেশ্য হলো মোক্ষ লাভ করা। সেটা ব্রহ্মচর্য কিংবা নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কখনোই সম্ভব নয়। যেই কারণেই আমাদের প্রত্যেকেরই ব্রহ্মচর্য পালন করা কর্তব্য।
আশাকরি বন্ধুরা লেখাটি পড়ে আপনারা সমৃদ্ধ হয়েছেন এবং স্বামী বিবেকানন্দ স্বয়ং ব্রহ্মচর্য সম্পর্কে যা কিছু বলেছেন তা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। ভালো লাগলে আপনজনের উদ্দেশ্যে অবশ্যই শেয়ার করুন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।
আরো পড়ুন:- ভগবান কি সত্যিই আছেন ? জানুন আসুন সত্য?CLICK HERE
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।
If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.
( Please don't enter any spam link in the comment box.)
Thank You very much.
অমৃত কথা