Breaking

Search Content

Follow Us

বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২২

মৃত্যুর সময় আত্মা শরীর থেকে কিভাবে বাইরে বের হয়? || গরুড় পুরাণ

 


নমস্কার দর্শক বন্ধুরা অমৃত কথা এই ওয়েবসাইটে আপনাদের জানাই সুস্বাগতম। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র এবং বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা আর্চনা এই ওয়েবসাইটের প্রধান বিষয়বস্তু। 


বন্ধুরা আপনি আপনার চোখের সামনে কখনো কারো মৃত্যু হতে অবশ্যই দেখেছেন হয়তো। আর সেখানে উপস্থিত মানুষদের এটাও বলতে শুনেছেন হয়তো যে তার প্রাণ বেরিয়ে গেছে। কিন্তু আপনি কি এমনটা জানার চেষ্টা করেছেন, এই প্রাণ শরীর থেকে কেন বাইরে বের হয়? যদি না জেনে থাকেন তাহলে সে ক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। কারণ আজকের এই লেখাটিতে এই বিষয়টি সম্পর্কেই আপনাদেরকে জানাবো। এই বিষয়টির বর্ণনা মূলত গরুড় পুরাণে করা হয়েছে।


বন্ধুরা যেমনটা আপনারা সকলে জানেনই যে মৃত্যু মানুষের জীবনের সেই কঠিন সত্য যাকে বড় বড় জ্ঞানীরাও স্বীকার করতে চান না। কিন্তু সে জানে করো না কোনদিন সকলেরই মৃত্যু হওয়া ঠিক রয়েছে। যেই মানুষ এই সত্যটি স্বীকার করে নেন সে বুদ্ধিমান হয়ে থাকে।


তো চলুন বন্ধুরা এখন যাক আত্মা শরীর থেকে কিভাবে বার হয় ও এর পেছনের প্রক্রিয়া কি রয়েছে? 

গরুড় পুরাণের নবম অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে মানুষের চোখ, মুখ, নাসিকার দুটি ছিদ্র ও কর্ণ ছিদ্র সব মিলিয়ে এই সাতটি এমন মুখ্য দুয়ার সম্পর্কে বলা হয়েছে, যার মধ্যে থেকে কোন একটি দুয়ার দিয়ে আত্মা বা প্রাণ বের হয়। এছাড়াও আপনি যদি ভালো করে লক্ষ্য করে থাকেন দেখবেন মৃত ব্যক্তির সবার প্রথমে পা ঠান্ডা হয়ে আসে। তারপর হাঁটুর অংশ জুড়ে মৃত ব্যক্তির শরীর ঠান্ডা হতে থাকে। এমনভাবেই সেই ব্যক্তির পুরো শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। আর সবশেষে সেই ব্যক্তির সকল উর্জা শরীরের একটি চক্র এসে জমা হয়, যেই চক্রে সে সব থেকে বেশি জীবন অতিবাহিত করেছিল। সেই ব্যক্তির শরীর থেকে সকল প্রকার উর্জা ওই চক্রের মাধ্যমেই দূর হতে থাকে। বন্ধুরা এক্ষেত্রে বোঝার সুবিধার্থে আপনারা ধরে নিতে পারেন একজন ব্রাহ্মণ সে জীবনের বেশিরভাগ সবসময়ই ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিল যেই কারণে মৃত্যুর সময় তার উর্জা মুখ্য রূপে জ্ঞানচক্র দিয়ে বের হয়। আর এর বিপরীতে যে মানুষ নিজের পুরো জীবন ধ্যানের থেকে দূরে রেখেছে ও যেই মানুষটা নিজের সম্পূর্ণ জীবন খাওয়া দাওয়া ও সাংসারিক সুখের লোভে কাটিয়ে দিয়েছেন - এরকম মানুষের প্রাণ মণিপুর চক্র দিয়ে নির্গত হয়। আবার অন্যদিকে কিছু এমন মানুষে, যারা নিজের সারা জীবন শুধুমাত্র সম্ভোগ সম্পর্কেই ভেবেছেন সেই সকল মানুষের উর্যা মূলাধার চক্র দিয়ে নির্গত হয়। এছাড়াও যে সকল মানুষের জীবন জ্ঞান সম্পর্কে জানার জন্য বা শিক্ষা লাভ করতে কেটেছে তাদের উর্যা গলাচক্র অর্থাৎ বিশুদ্ধ চক্র দিয়ে নির্গত হয়। এছাড়াও অন্তিম সময়ে যে সকল মানুষ নিজের ইষ্ট দেবতা অর্থাৎ গুরু কে স্মরণ করতে করতে মারা যান তাদের উর্যা চোখ থেকে নির্গত হয়। বন্ধুরা এছাড়াও সবশেষে কিছু এমন মানুষরা রয়েছেন যাদের উর্জা সহস্ত্রার চক্র দিয়ে নির্গত হয়। এমন মানুষদের খুবই ভাগ্যশালী বলে মনে করা হয়। কেননা শরীর করার সবথেকে উচিত মার্গ বা পথ বলে গণ্য এই সহস্ত্রার চক্র। এই চক্র দিয়ে নির্গত আত্মার মোক্ষলাভ হয়। 


বন্ধুরা মানুষের জীবনের সাতটি চক্র সম্পর্কে আগেই আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি প্রয়োজন বোধে আপনারা সেই লেখাটি দেখে নিতে পারেন- CLICK HERE


এছাড়াও প্রাণ নির্গত হবার বিষয়ে আরো অনেক কথার বর্ণনা গরুড় পুরাণে পাওয়া যায়। যা অনুসারে প্রাণ ত্যাগ করার পূর্বে মানুষকে অন্ন ত্যাগ করা উচিত। আর যদি সে ব্রত আসক্তি রেখে ত্রিজন্মা হয়ে থাকে, তাহলে তাকে আতর সন্ন্যাস নেয়া উচিত। আতর সন্ন্যাস হলো এমন একটি সন্ন্যাস যা সাংসারিক জীবনের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এই সন্ন্যাস মূলত সাংসারিক জীবনের উপর দুঃখী হয়ে নেওয়া হয়। প্রাণ গলা পর্যন্ত আসার পর যেই মানুষ এমনটা বলেন যে, আমি সন্ন্যাস নিয়ে নিয়েছি ! সে মৃত্যুর পরে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়। আর এরকম মানুষের জন্ম দ্বিতীয়বার এই মৃত্যু লোকে হয় না। যে ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে কথিত সকল কার্য সম্পন্ন করে নেয় মৃত্যুর পূর্বে এমন মানুষের প্রাণ উপরের ছিদ্র দিয়ে (নাসিকা) সুখপুর্বক নির্গত হয়। এরই সাথে গরুড় পুরাণে যোগীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, যোগীদের প্রাণ তালুরন্ধ্র দিয়ে নির্গত হয়।


গরুড় পুরাণে শরীর থেকে ঈশ্বররূপি প্রাণ বায়ুর মাধ্যমে বের হওয়ার পর তার তুলনা এমন একটি বৃক্ষের সঙ্গে করা হয়েছে যার আঁধার না হওয়ার কারণে সে নিচে পড়ে যায়। বন্ধুরা আপনি কি জানেন প্রান শরীর থেকে বের হওয়ার পর সে চেষ্টা শুন্য, ঘৃণিত, গন্ধ যুক্ত, অস্পর্শীয় ও নিন্দনীয় হয়ে যায়। মৃত শরীরের তিনটি অবস্থা - ক্রিয়া, বিষ্ঠা ও ভস্ম রূপ। একে আপনারা এভাবে বুঝতে পারেন যে, মৃত শরীরে কীটপতঙ্গ ও একাধিক জীবাণু ঘিরে ধরে। যার ফলে তা থেকে মলের মত দুর্গন্ধ নির্গত হয় এবং সবশেষে চিতায় জ্বলে ভস্ম হয়ে যায়। এই কারণে ক্ষনিকের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাওয়া শরীর নিয়ে গর্ব করা একেবারেই উচিত নয়। মৃত্যুর পরে পঞ্চভূত ধারা নির্মিত এই শরীর পৃথিবী জল, তেজ ও বায়ুতে লিন হয়ে যায়। কিন্তু, সকল প্রাণীর শরীরের স্থিত সর্বব্যাপী শিবস্বরূপ ও জগত সাক্ষী আত্মা একমাত্র এমন একটি জিনিস যা অজর অমর। যার কোনো অন্ত নেই। যা এক শরীর ত্যাগ করার পর অন্য শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে বের হওয়া এই আত্মা নিজের কর্মদোষ কাটিয়ে উঠে নতুন শরীরে প্রবেশ করে। গরুড় পুরাণে এই তত্ত্বটিকে এভাবে বোঝানো হয়েছে, একটি বাড়ি ছেড়ে যেমন কেউ নতুন আরেকটি বাড়িতে গিয়ে বসবাস করতে শুরু করে ঠিক একই প্রকার ভাবে আত্মাও পুরনো শরীর ছেড়ে নতুন শরীর গ্রহণ করে। এরপরে ওই আত্মাটিকে নিতে ছোট ছোট ঘন্টাযুক্ত মালা দ্বারা সুসজ্জিত বিমান নিয়ে দেবদূত আকাশ থেকে নিচে নেমে আসে। ধর্মকে ভালো করে জানা ব্যক্তি ধার্মিক ও বুদ্ধিমান হয়ে থাকে। তাদের প্রিয় এই দেবদূত তাদের কর্ম অনুসারে আত্মাকে স্বর্গলোকে নিয়ে যায়। যেখানে সকল দেবতার দ্বারা সেই জীবাত্মাটিকে স্বাগতম জানানো হয়।


গরুড় পুরাণে এর অতিরিক্ত বিশেষ কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। যা অনুসারে যে সকল ব্যক্তির অপমৃত্যু হয়ে থাকে সেই সকল মানুষের আত্মা অন্যরকম ভাবে শরীর ত্যাগ করে। এরই সাথে কিছু এমন ব্যক্তি যাদের মৃত্যু অনেক বড় রোগব্যাধির কারণে হয়, সেই সকল ব্যক্তির শরীরের ধীরে ধীরে উর্জা কমে যেতে থাকে। এই কারণে এরকম আত্মা শরীর ত্যাগের সময় খুবই দুভিধার মধ্যে পরে।


আশাকরি বন্ধুরা, আত্মার শরীর ত্যাগ কিভাবে হয় সেই সম্পর্কে আপনারা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন। যদি লেখাটি পড়ে সমৃদ্ধ হয়ে থাকেন তাহলে আপনজনের উদ্দেশ্য অবশ্যই শেয়ার করবেন। আজ এখানেই শেষ করলাম। নমস্কার, ধন্যবাদ । ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।


ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুক।


আরো পড়ুন:- অষ্টাঙ্গ যোগ কি? মানুষের জীবনে এর গুরুত্ব?  CLICK HERE



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনরূপ কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট বক্সে অবশ্যই জানাবেন । পরবর্তী আপডেট পেতে সাবস্ক্রাইব করে রাখবেন। এবং সকলের উদ্দেশ্যে শেয়ার করবেন।

If you have any questions or queries then comments in the comment box. To get regular updates subscribe us and please share this wisdom and knowledge.

( Please don't enter any spam link in the comment box.)

Thank You very much.

অমৃত কথা